আন্তর্জাতিক : সিরিয়া সংকট-'সুতার ওপর ঝুলছে বাশারের শাসনামল' by শ্রাবণ সরকার
সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি গৃহযুদ্ধের প্রান্তসীমায় পেঁৗছে গেছে বললে হয়তো অতিশয়োক্তি হবে না। প্রাণক্ষয়, রক্তপাত আর সংঘাত-সংঘর্ষের খতিয়ান দিন দিন লম্বা-চওড়া হচ্ছে দেশটিতে। স্বতঃস্ফূর্ত গণ-আন্দোলনের নিরীহ চেহারা ক্রমেই সশস্ত্র ও ভয়ংকর সর্বনাশী রূপ পরিগ্রহ করছে। বলাই বাহুল্য, ক্ষমতার মোহে মত্ত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অস্ত্রনির্ভর ও নৃশংস দমননীতির কারণেই দেশটির শান্তিপূর্ণ গণবিক্ষোভ আজ সহিংসতাময়।
পরিণতিতে আসাদ ক্রমেই বহির্বিশ্ব, আন্তর্জাতিক মহল, এমনকি ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং প্রতিবেশীদের কাছ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। সিরিয়া আর গোটা দুনিয়ার মধ্যকার দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে। এর পরও গদি ছাড়ার কোনো লক্ষণ এখনো দৃশ্যমান হয়ে ওঠেনি বাশারের আচরণে। সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে পরিবর্তনকামীদের দমন করতে এখনো প্রথম দিনের মতো সমান তালে খৰহস্ত ও অস্ত্রনির্ভর তিনি।
'সুতার ওপর ঝুলছে'
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের ভাষাটি ধার করে বলতে হয়, 'বাশারের শাসনামল সুতার ওপর ঝুলছে।' তবু সার্কাসের কুশলী পারফর্মারের মতো সেই সুতার ওপর এক হাতে ক্ষমতা, অন্য হাতে অস্ত্র ধরে ভারসাম্য বজায় রাখছেন বাশার! কিন্তু এভাবে কতক্ষণ টিকে থাকবেন তিনি_এ প্রশ্নটাই এখন ঘুরেফিরে বিশ্বব্যাপী উচ্চারিত হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বাশার বোধ করি একবারের জন্যও অনুধাবন করতে পারছেন না, মাত্র একটিবার ভারসাম্যের এদিক-সেদিক হলেই ধপাস। সোজা নিচে পড়তে হবে তাঁকে। এতে মুঠো আলগা হয়ে শুধু 'জাদুদণ্ড'ই খোয়াবেন না তিনি, কোমর ভাঙার আশঙ্কাও রয়েছে ষোলো আনা!
বুদ্ধিমান কাক!
তথ্যাভিজ্ঞরা জানেন, সুদূর ইতিহাসকে সাক্ষী না মেনেও সাম্প্রতিক 'আরব বসন্তের' জোরে ও জেরে ঘটে যাওয়া ঘটনা-দুর্ঘটনা প্রবাহের দিকে তাকালে এ সত্যই প্রতীয়মান হয় যে নির্দোষ মানুষের লাশের ওপর গড়ে তোলা মসনদ আজ হোক কাল হোক ধসে পড়তে বাধ্য। নির্বিচারে হত্যা এবং হাজারেবিজারে মানুষকে জেলবন্দি করে কোনো শাসনামল টেকসই হতে পারে না।
মিসরের একনায়ক হোসনি মুবারক এবং তিউনিসিয়ার বেন আলি ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর লিবিয়ার স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে দুনিয়া থেকেই চলে যেতে হয়েছে। এই কঠিন বাস্তবতায় টানা আট মাসের গণ-আন্দোলনের রক্তারক্তি পরিস্থিতিতেও বাশারের মধ্যে নমনীয়তার আভাস মাত্র নেই। তাঁর এই একগুঁয়ে অবস্থানের সঙ্গে কাকের চোখ বুজে থাকা বুদ্ধিমত্তার তুলনা চলে বলে অনেকের অভিমত।
বলা দরকার, ঘটনাচক্রে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন বাশার। সড়ক দুর্ঘটনা বড় ভাই বাসিলকে কেড়ে না নিলে এত দিনে চক্ষুচিকিৎসক হিসেবেই পরিচিত হতেন তিনি। লন্ডনে গিয়েছিলেন সে লক্ষ্যেই। কিন্তু ১৯৯৪ সালে বাসিল নিহত হওয়ায় বাবার নির্দেশে পড়ালেখা ফেলে একছুট। সেনা কর্মকর্তা হিসেবে জীবন শুরু। বাবার মৃত্যুর পর ২০০০ সালের জুনে বসেন ক্ষমতায়।
সুযোগ হাতছাড়া...
আরব লিগের মধ্যস্থতায় গত ২ নভেম্বর একটি শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজি হয়েছিল সিরিয়া কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এর পরও আন্দোলনকারীদের হত্যা এবং তাদের ওপর সরকারি দমন-পীড়ন বন্ধ হয়নি বরং তা আরো বেগবান হয়েছে। এ অবস্থায় গত সপ্তাহের শনিবার আরব লিগ থেকে সিরিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে বহিষ্কার করা হয়। রক্তপাত বন্ধে সরকারকে তিন দিনের সময়ও বেঁধে দেয় আরব বিশ্বের ২২টি দেশের এই সংস্থাটি। তারা দাবি জানায়, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অবশ্যই সিরিয়ায় প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে দামেস্ককে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সংস্থাটি। কিন্তু বাশারের মধ্যে কোনো হেলদোল নেই! সরকারের রুদ্ররূপ অপরিবর্তিত, 'রক্তাক্ত দমননীতি' বন্ধ হয়নি। গত শুক্রবার আরব লিগের দেওয়া সময়সীমার মেয়াদ শেষ হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, সুযোগটি হাতছাড়া করলেন বাশার। সামনে আরো কঠিন সময় হয়তো অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য!
সামরিক অভিযান নেই, তাই...!
মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটো এরই মধ্যে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, সিরিয়ায় বাশারবিরোধী আন্দোলনে লিবিয়ার মতো কোনো সামরিক সহায়তা দেবে না তারা। জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহও বলেছেন, কোনো দেশই আপাতত সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপের কথা চিন্তা করছে না। কাজেই নিরস্ত্রবিরোধীরা যে বহিঃশক্তির সহায়তা-সহযোগিতায় বাশারকে কাবু করবে, সেই সম্ভাবনা আপাতত ক্ষীণ। বলা যায়, সব মিলিয়ে পরিবর্তনকামী সিরীয়দের বিক্ষোভ-আন্দোলন এখন অনিশ্চয়তার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, সামরিক অভিযানের সম্ভাবনাহীনতাই আসাদকে তাঁর দমনমূলক কঠোর অবস্থান ধরে রাখতে সাহস জোগাচ্ছে।
পিতা-পুত্রের রাজযোটক!
প্রশ্ন উঠেছে, সিরিয়ায় ক্রমেই বেগবান সরকারবিরোধী আন্দোলন এবং সরকারের অব্যাহত দমন অভিযান কৌশলগতভাবে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই দেশটিকে কোন পথে নিয়ে যাচ্ছে? ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশটির চারদিকে ইরাক, তুরস্ক, লেবানন ও জর্ডানের অবস্থান। সিরিয়ার ভূ-প্রকৃতিও বৈচিত্র্যে ভরা_একদিকে যেমন রয়েছে উর্বর সমভূমি, তেমনি রয়েছে পাহাড় ও মরুভূমি। ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এই দেশটিতে শতকের পর শতক ধরে বাস করছে নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কুর্দি, আর্মেনীয়, আসিরীয়, দ্রুজ, খ্রিস্টান, শিয়া ও আরব সুনি্ন। এসব জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সুনি্নরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।
১৯৪৬ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে সিরিয়া। কিন্তু স্বাধীনতাত্তোর সিরিয়ায় শুরু থেকেই লেগে ছিল অস্থিরতা। প্রাধান্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত লেগেই ছিল। ১৯৬৩ সালে ক্ষমতায় আসে বাথ পার্টি। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত গদিতে দলটি। সত্তরের দশকে সেনাশক্তি পুঁজি করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন হাফিজ আল-আসাদ, বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশারের বাবা। শুরু থেকেই ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে বেজায় তৎপর ছিলেন হাফিজ। প্রতিবেশী লেবাননে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রেক্ষাপটে সিরিয়া ওই অঞ্চলে রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পায়।
ছেলের মতো বাবাও বিরোধীদের দমনে ছিলেন সমান সিদ্ধহস্ত। ১৯৮২ সালে হামা শহরে বিদ্রোহ দমনে হাফিজের রক্তক্ষয়ী পদক্ষেপ এর উদাহরণ। সে সময় কয়েক হাজার বিরোধী নিহত হয়।
তবে ক্ষমতায় আরোহণের পর পরই শত শত রাজবন্দিকে মুক্তি দিয়েছিলেন বাশার। স্বাধীনভাবে সংবাদপত্র প্রকাশেরও সুযোগ দেন তিনি। সুতরাং সাধারণ সিরীয়রা ধরে নেয়, শাসক হিসেবে বাবার চেয়ে উদারতার পরিচয় রেখে মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো একে একে প্রতিষ্ঠা করবেন তিনি। কিন্তু পরবর্তীকালে গণেশ উল্টে গেল!
বাশারপন্থীদের আস্ফালন
সিরিয়ার সদস্যপদ বহিষ্কার করা সংক্রান্ত আরব লিগের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বাশার-সমর্থকরা ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে। ঘোষণার দিনই দামেস্কে সরকারপন্থীরা আরব লিগের সদস্য রাষ্ট্র সৌদি আরব ও কাতার দূতাবাসে হামলা চালায়। এ দুই দেশই আরব লিগের ভোটাভুটিতে সিরিয়ার সদস্যপদ স্থগিত করার পক্ষে রায় দেয়। পরদিন রাস্তায় নামে হাজারো সরকারপন্থী। এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় সিরিয়া সরকারও। যুক্তরাষ্ট্রকে সংস্থাটির 'অঘোষিত সদস্য' হিসেবে অভিযোগ করে দেশটি। তাদের দাবি, ওয়াশিংটনের কুমন্ত্রণায়ই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরব লিগ।
সর্বস্তরের সমর্থন
স্বভাবতই আরব লিগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় সরকারবিরোধী সিরিয়ার জাতীয় পরিষদ (এসএনসি)। অন্তর্বর্তী সময় নিয়ে আরব লিগের সঙ্গে বৈঠক করারও আগ্রহ দেখায় তারা। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও আরব লিগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। তবে এই সিদ্ধান্তকে অগ্রহণযোগ্য বলে নিন্দা জানিয়েছে ইরাক।
এদিকে বাশার সরকারের একসময়কার ঘনিষ্ঠ মিত্র তুরস্কও এখন দামেস্কের ওপর বেজায় নাখোশ। গত মঙ্গলবার সিরিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও ঘোষণা দিয়েছে তুরস্ক সরকার। আংকারা জানায়, সিরিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে তেল অনুসন্ধান বন্ধ করাসহ তুরস্ক থেকে সিরিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্থগিত রাখবে তারা। প্রথমবারের মতো সরাসরি সীমান্তে 'বাফার জোন' ঘোষণার কথাও বলেছে দেশটি। এটা সামরিক পদক্ষেপের শামিল। তবে সিরীয় উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিতে আন্তরিক প্রয়াস অব্যাহত রাখবে তুরস্ক। ইতিমধ্যে অন্তত আট হাজার সিরীয় দেশটিতে আশ্রয় নিয়েছে। অন্যসব প্রতিবেশীর মতো জর্ডানও সিরিয়ার শরণার্থীদের জন্য তাদের সীমান্ত খুলে দিয়েছে। সিরিয়া জর্ডানের জন্য নানাভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। দেশটি জর্ডানের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রুট। এই পথে খাদ্য এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আনে জর্ডান।
অভ্যন্তরীণ সংকট ঘনীভূত
দেশের মধ্যে সরকারি শক্তির রাশ কিছুটা আলগা হতে শুরু করেছে বাশারের। ইতিমধ্যে বেশ কিছু সেনাসদস্য সপক্ষ ত্যাগ করে সরকারবিরোধীদের দলে শামিল হয়েছেন। ফ্রি সিরিয়ান আর্মি (এফসিএ) নামে পরিচিত ওই সেনাদলটি সরকারি বাহিনীর ওপর দু-চার জায়গায় হামলাও চালিয়েছে। রাজধানী দামেস্কে বিমানবাহিনীর গোয়েন্দা ঘাঁটিতেও পক্ষত্যাগকারী সেনারা হামলা চালানোর দাবি করেছেন। তাঁদের হামলায় দামেস্কের অদূরে তল্লাশি চৌকিও হয়েছে লণ্ডভণ্ড। তুরস্কের সীমান্ত এলাকায় আসাদের ক্ষমতাসীন দলের কার্যালয়গুলোয়ও হামলা চালিয়েছেন পক্ষত্যাগী সেনারা।
আট মাসে নিহত চার হাজার
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আট মাস ধরে চলা এই আন্দোলনে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি সিরীয় নিহত হয়েছে। সরকারবিরোধীদের হিসাবে এই সংখ্যা চার সহস্রাধিক। মানবাধিকারকর্মীদের ধারণা, মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। তাদের দাবি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আসাদ ক্রমেই একঘরে হয়ে পড়ছেন। গত জুলাই মাসে সরকারবিরোধীদের বিক্ষোভ কঠোরভাবে দমনের প্রতিবাদে দামেস্ক থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে কাতার। একই কারণে সৌদি আরবও তাদের রাষ্ট্রদূতকে সরিয়ে নেয় গত আগস্টে। তুরস্ক এবং জর্ডানও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এ অবস্থায় বাশার যতই একঘরে হয়ে পড়ছেন, সিরিয়ায় সহিংসতা ততই বেড়ে চলেছে।
বাড়ছে চাপ
সিরিয়ার বিরুদ্ধে আরব লিগের কঠোর অবস্থানের পর প্রেসিডেন্ট বাশারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। ইতিমধ্যে বাশারকে পদত্যাগ করতে আহ্বান জানিয়েছেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহও। তাঁর এই আহ্বানে ক্ষুব্ধ বাশারপন্থীরা দামেস্কে জর্ডান দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করে।
বেশির ভাগ আরব নেতার মতো বাদশাহ আবদুল্লাহ সিরিয়ার সংকট নিরসনে করণীয় নির্ধারণে হিমশিম খাচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত নিজেদের স্পষ্টাপষ্টি অবস্থান ব্যক্ত করে বাশারকে পদত্যাগের আহ্বান জানান তিনি। শুধু তা-ই নয়, বাশারের পর যিনি আসবেন, তিনি যেন বিদ্যমান অস্থির পরিস্থিতির পরিবর্তন আনার ক্ষমতা রাখেন, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে তাঁকে।
আরব লিগের কড়া অবস্থান, প্রতিবেশী জর্ডানের স্পষ্ট বক্তব্য এবং ঘনিষ্ঠ মিত্র আরেক প্রতিবেশী তুরস্কের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া_এই তিনটিকে সিরিয়া পরিস্থিতির ব্যাপারে মধ্যপ্রাচ্যের দৃষ্টিভঙ্গিতে নতুন একটি বাঁকবদল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরাও এ কথা মানছেন, প্রতিবেশী দেশের নেতা হিসেবে আবদুল্লাহর মন্তব্য চমক জাগানিয়া। তিনি বলেছেন, সহসা আলটপকা এ কথা বলেননি। তিনি নিজে এবং আরব লিগের বেশ কয়েকজন নেতা বাশারের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বাশার নিজ অবস্থানে অটল থেকেছেন। ক্রমেই একঘরে হয়ে পড়া বাশার অবশ্য এখনো দাবি করছেন, সংস্কারের ব্যাপারে তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ। তবে ইতিমধ্যে বিরোধীদের কয়েকটি দাবি মেনে নিয়েছেন বাশার। এর মধ্যে টানা ৪৮ বছর ধরে বহাল থাকা জরুরি আইনের অবসান ঘটানো। গত ২১ এপ্রিল আইনটি প্রত্যাহারের পর ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার আওতায় ৩১ মে কয়েক শ রাজবন্দিকেও মুক্তি দেন তিনি।
প্রসঙ্গত, নিজ দেশে রাজনৈতিক সংস্কারের সূচনা করার জন্য আবদুল্লাহও নজিরবিহীন চাপের মুখে রয়েছেন। ক্ষমতাসীন হাশেমি রাজবংশের শাসনের অবসানের জন্য এখনো কোনো জোরালো দাবি ওঠেনি ঠিকই, কিন্তু বিরোধী গোষ্ঠীগুলো আরো শক্তিশালী ও প্রতিনিধিত্বমূলক একটি সংসদ এবং নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর দাবি জানাচ্ছে।
আসাদের বিদায়ের পর...
বেশ কয়েকটি জাতিগত এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী থাকায় অনেকেই মনে করেন, বাশার পদচ্যুত হলে গোলযোগ এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে দেশটিতে। ইরানের কথিত পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি উদ্যোগে অচলাবস্থার মতো দীর্ঘমেয়াদি সংকট সিরিয়াসংক্রান্ত উদ্বেগকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
'সুতার ওপর ঝুলছে'
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের ভাষাটি ধার করে বলতে হয়, 'বাশারের শাসনামল সুতার ওপর ঝুলছে।' তবু সার্কাসের কুশলী পারফর্মারের মতো সেই সুতার ওপর এক হাতে ক্ষমতা, অন্য হাতে অস্ত্র ধরে ভারসাম্য বজায় রাখছেন বাশার! কিন্তু এভাবে কতক্ষণ টিকে থাকবেন তিনি_এ প্রশ্নটাই এখন ঘুরেফিরে বিশ্বব্যাপী উচ্চারিত হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বাশার বোধ করি একবারের জন্যও অনুধাবন করতে পারছেন না, মাত্র একটিবার ভারসাম্যের এদিক-সেদিক হলেই ধপাস। সোজা নিচে পড়তে হবে তাঁকে। এতে মুঠো আলগা হয়ে শুধু 'জাদুদণ্ড'ই খোয়াবেন না তিনি, কোমর ভাঙার আশঙ্কাও রয়েছে ষোলো আনা!
বুদ্ধিমান কাক!
তথ্যাভিজ্ঞরা জানেন, সুদূর ইতিহাসকে সাক্ষী না মেনেও সাম্প্রতিক 'আরব বসন্তের' জোরে ও জেরে ঘটে যাওয়া ঘটনা-দুর্ঘটনা প্রবাহের দিকে তাকালে এ সত্যই প্রতীয়মান হয় যে নির্দোষ মানুষের লাশের ওপর গড়ে তোলা মসনদ আজ হোক কাল হোক ধসে পড়তে বাধ্য। নির্বিচারে হত্যা এবং হাজারেবিজারে মানুষকে জেলবন্দি করে কোনো শাসনামল টেকসই হতে পারে না।
মিসরের একনায়ক হোসনি মুবারক এবং তিউনিসিয়ার বেন আলি ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর লিবিয়ার স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে দুনিয়া থেকেই চলে যেতে হয়েছে। এই কঠিন বাস্তবতায় টানা আট মাসের গণ-আন্দোলনের রক্তারক্তি পরিস্থিতিতেও বাশারের মধ্যে নমনীয়তার আভাস মাত্র নেই। তাঁর এই একগুঁয়ে অবস্থানের সঙ্গে কাকের চোখ বুজে থাকা বুদ্ধিমত্তার তুলনা চলে বলে অনেকের অভিমত।
বলা দরকার, ঘটনাচক্রে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন বাশার। সড়ক দুর্ঘটনা বড় ভাই বাসিলকে কেড়ে না নিলে এত দিনে চক্ষুচিকিৎসক হিসেবেই পরিচিত হতেন তিনি। লন্ডনে গিয়েছিলেন সে লক্ষ্যেই। কিন্তু ১৯৯৪ সালে বাসিল নিহত হওয়ায় বাবার নির্দেশে পড়ালেখা ফেলে একছুট। সেনা কর্মকর্তা হিসেবে জীবন শুরু। বাবার মৃত্যুর পর ২০০০ সালের জুনে বসেন ক্ষমতায়।
সুযোগ হাতছাড়া...
আরব লিগের মধ্যস্থতায় গত ২ নভেম্বর একটি শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজি হয়েছিল সিরিয়া কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এর পরও আন্দোলনকারীদের হত্যা এবং তাদের ওপর সরকারি দমন-পীড়ন বন্ধ হয়নি বরং তা আরো বেগবান হয়েছে। এ অবস্থায় গত সপ্তাহের শনিবার আরব লিগ থেকে সিরিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে বহিষ্কার করা হয়। রক্তপাত বন্ধে সরকারকে তিন দিনের সময়ও বেঁধে দেয় আরব বিশ্বের ২২টি দেশের এই সংস্থাটি। তারা দাবি জানায়, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অবশ্যই সিরিয়ায় প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে দামেস্ককে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সংস্থাটি। কিন্তু বাশারের মধ্যে কোনো হেলদোল নেই! সরকারের রুদ্ররূপ অপরিবর্তিত, 'রক্তাক্ত দমননীতি' বন্ধ হয়নি। গত শুক্রবার আরব লিগের দেওয়া সময়সীমার মেয়াদ শেষ হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, সুযোগটি হাতছাড়া করলেন বাশার। সামনে আরো কঠিন সময় হয়তো অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য!
সামরিক অভিযান নেই, তাই...!
মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটো এরই মধ্যে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, সিরিয়ায় বাশারবিরোধী আন্দোলনে লিবিয়ার মতো কোনো সামরিক সহায়তা দেবে না তারা। জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহও বলেছেন, কোনো দেশই আপাতত সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপের কথা চিন্তা করছে না। কাজেই নিরস্ত্রবিরোধীরা যে বহিঃশক্তির সহায়তা-সহযোগিতায় বাশারকে কাবু করবে, সেই সম্ভাবনা আপাতত ক্ষীণ। বলা যায়, সব মিলিয়ে পরিবর্তনকামী সিরীয়দের বিক্ষোভ-আন্দোলন এখন অনিশ্চয়তার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, সামরিক অভিযানের সম্ভাবনাহীনতাই আসাদকে তাঁর দমনমূলক কঠোর অবস্থান ধরে রাখতে সাহস জোগাচ্ছে।
পিতা-পুত্রের রাজযোটক!
প্রশ্ন উঠেছে, সিরিয়ায় ক্রমেই বেগবান সরকারবিরোধী আন্দোলন এবং সরকারের অব্যাহত দমন অভিযান কৌশলগতভাবে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই দেশটিকে কোন পথে নিয়ে যাচ্ছে? ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশটির চারদিকে ইরাক, তুরস্ক, লেবানন ও জর্ডানের অবস্থান। সিরিয়ার ভূ-প্রকৃতিও বৈচিত্র্যে ভরা_একদিকে যেমন রয়েছে উর্বর সমভূমি, তেমনি রয়েছে পাহাড় ও মরুভূমি। ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এই দেশটিতে শতকের পর শতক ধরে বাস করছে নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কুর্দি, আর্মেনীয়, আসিরীয়, দ্রুজ, খ্রিস্টান, শিয়া ও আরব সুনি্ন। এসব জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সুনি্নরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।
১৯৪৬ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে সিরিয়া। কিন্তু স্বাধীনতাত্তোর সিরিয়ায় শুরু থেকেই লেগে ছিল অস্থিরতা। প্রাধান্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত লেগেই ছিল। ১৯৬৩ সালে ক্ষমতায় আসে বাথ পার্টি। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত গদিতে দলটি। সত্তরের দশকে সেনাশক্তি পুঁজি করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন হাফিজ আল-আসাদ, বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশারের বাবা। শুরু থেকেই ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে বেজায় তৎপর ছিলেন হাফিজ। প্রতিবেশী লেবাননে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রেক্ষাপটে সিরিয়া ওই অঞ্চলে রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পায়।
ছেলের মতো বাবাও বিরোধীদের দমনে ছিলেন সমান সিদ্ধহস্ত। ১৯৮২ সালে হামা শহরে বিদ্রোহ দমনে হাফিজের রক্তক্ষয়ী পদক্ষেপ এর উদাহরণ। সে সময় কয়েক হাজার বিরোধী নিহত হয়।
তবে ক্ষমতায় আরোহণের পর পরই শত শত রাজবন্দিকে মুক্তি দিয়েছিলেন বাশার। স্বাধীনভাবে সংবাদপত্র প্রকাশেরও সুযোগ দেন তিনি। সুতরাং সাধারণ সিরীয়রা ধরে নেয়, শাসক হিসেবে বাবার চেয়ে উদারতার পরিচয় রেখে মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো একে একে প্রতিষ্ঠা করবেন তিনি। কিন্তু পরবর্তীকালে গণেশ উল্টে গেল!
বাশারপন্থীদের আস্ফালন
সিরিয়ার সদস্যপদ বহিষ্কার করা সংক্রান্ত আরব লিগের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বাশার-সমর্থকরা ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে। ঘোষণার দিনই দামেস্কে সরকারপন্থীরা আরব লিগের সদস্য রাষ্ট্র সৌদি আরব ও কাতার দূতাবাসে হামলা চালায়। এ দুই দেশই আরব লিগের ভোটাভুটিতে সিরিয়ার সদস্যপদ স্থগিত করার পক্ষে রায় দেয়। পরদিন রাস্তায় নামে হাজারো সরকারপন্থী। এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় সিরিয়া সরকারও। যুক্তরাষ্ট্রকে সংস্থাটির 'অঘোষিত সদস্য' হিসেবে অভিযোগ করে দেশটি। তাদের দাবি, ওয়াশিংটনের কুমন্ত্রণায়ই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরব লিগ।
সর্বস্তরের সমর্থন
স্বভাবতই আরব লিগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় সরকারবিরোধী সিরিয়ার জাতীয় পরিষদ (এসএনসি)। অন্তর্বর্তী সময় নিয়ে আরব লিগের সঙ্গে বৈঠক করারও আগ্রহ দেখায় তারা। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও আরব লিগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। তবে এই সিদ্ধান্তকে অগ্রহণযোগ্য বলে নিন্দা জানিয়েছে ইরাক।
এদিকে বাশার সরকারের একসময়কার ঘনিষ্ঠ মিত্র তুরস্কও এখন দামেস্কের ওপর বেজায় নাখোশ। গত মঙ্গলবার সিরিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও ঘোষণা দিয়েছে তুরস্ক সরকার। আংকারা জানায়, সিরিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে তেল অনুসন্ধান বন্ধ করাসহ তুরস্ক থেকে সিরিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্থগিত রাখবে তারা। প্রথমবারের মতো সরাসরি সীমান্তে 'বাফার জোন' ঘোষণার কথাও বলেছে দেশটি। এটা সামরিক পদক্ষেপের শামিল। তবে সিরীয় উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিতে আন্তরিক প্রয়াস অব্যাহত রাখবে তুরস্ক। ইতিমধ্যে অন্তত আট হাজার সিরীয় দেশটিতে আশ্রয় নিয়েছে। অন্যসব প্রতিবেশীর মতো জর্ডানও সিরিয়ার শরণার্থীদের জন্য তাদের সীমান্ত খুলে দিয়েছে। সিরিয়া জর্ডানের জন্য নানাভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। দেশটি জর্ডানের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রুট। এই পথে খাদ্য এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আনে জর্ডান।
অভ্যন্তরীণ সংকট ঘনীভূত
দেশের মধ্যে সরকারি শক্তির রাশ কিছুটা আলগা হতে শুরু করেছে বাশারের। ইতিমধ্যে বেশ কিছু সেনাসদস্য সপক্ষ ত্যাগ করে সরকারবিরোধীদের দলে শামিল হয়েছেন। ফ্রি সিরিয়ান আর্মি (এফসিএ) নামে পরিচিত ওই সেনাদলটি সরকারি বাহিনীর ওপর দু-চার জায়গায় হামলাও চালিয়েছে। রাজধানী দামেস্কে বিমানবাহিনীর গোয়েন্দা ঘাঁটিতেও পক্ষত্যাগকারী সেনারা হামলা চালানোর দাবি করেছেন। তাঁদের হামলায় দামেস্কের অদূরে তল্লাশি চৌকিও হয়েছে লণ্ডভণ্ড। তুরস্কের সীমান্ত এলাকায় আসাদের ক্ষমতাসীন দলের কার্যালয়গুলোয়ও হামলা চালিয়েছেন পক্ষত্যাগী সেনারা।
আট মাসে নিহত চার হাজার
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আট মাস ধরে চলা এই আন্দোলনে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি সিরীয় নিহত হয়েছে। সরকারবিরোধীদের হিসাবে এই সংখ্যা চার সহস্রাধিক। মানবাধিকারকর্মীদের ধারণা, মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। তাদের দাবি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আসাদ ক্রমেই একঘরে হয়ে পড়ছেন। গত জুলাই মাসে সরকারবিরোধীদের বিক্ষোভ কঠোরভাবে দমনের প্রতিবাদে দামেস্ক থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে কাতার। একই কারণে সৌদি আরবও তাদের রাষ্ট্রদূতকে সরিয়ে নেয় গত আগস্টে। তুরস্ক এবং জর্ডানও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এ অবস্থায় বাশার যতই একঘরে হয়ে পড়ছেন, সিরিয়ায় সহিংসতা ততই বেড়ে চলেছে।
বাড়ছে চাপ
সিরিয়ার বিরুদ্ধে আরব লিগের কঠোর অবস্থানের পর প্রেসিডেন্ট বাশারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। ইতিমধ্যে বাশারকে পদত্যাগ করতে আহ্বান জানিয়েছেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহও। তাঁর এই আহ্বানে ক্ষুব্ধ বাশারপন্থীরা দামেস্কে জর্ডান দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করে।
বেশির ভাগ আরব নেতার মতো বাদশাহ আবদুল্লাহ সিরিয়ার সংকট নিরসনে করণীয় নির্ধারণে হিমশিম খাচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত নিজেদের স্পষ্টাপষ্টি অবস্থান ব্যক্ত করে বাশারকে পদত্যাগের আহ্বান জানান তিনি। শুধু তা-ই নয়, বাশারের পর যিনি আসবেন, তিনি যেন বিদ্যমান অস্থির পরিস্থিতির পরিবর্তন আনার ক্ষমতা রাখেন, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে তাঁকে।
আরব লিগের কড়া অবস্থান, প্রতিবেশী জর্ডানের স্পষ্ট বক্তব্য এবং ঘনিষ্ঠ মিত্র আরেক প্রতিবেশী তুরস্কের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া_এই তিনটিকে সিরিয়া পরিস্থিতির ব্যাপারে মধ্যপ্রাচ্যের দৃষ্টিভঙ্গিতে নতুন একটি বাঁকবদল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরাও এ কথা মানছেন, প্রতিবেশী দেশের নেতা হিসেবে আবদুল্লাহর মন্তব্য চমক জাগানিয়া। তিনি বলেছেন, সহসা আলটপকা এ কথা বলেননি। তিনি নিজে এবং আরব লিগের বেশ কয়েকজন নেতা বাশারের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বাশার নিজ অবস্থানে অটল থেকেছেন। ক্রমেই একঘরে হয়ে পড়া বাশার অবশ্য এখনো দাবি করছেন, সংস্কারের ব্যাপারে তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ। তবে ইতিমধ্যে বিরোধীদের কয়েকটি দাবি মেনে নিয়েছেন বাশার। এর মধ্যে টানা ৪৮ বছর ধরে বহাল থাকা জরুরি আইনের অবসান ঘটানো। গত ২১ এপ্রিল আইনটি প্রত্যাহারের পর ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার আওতায় ৩১ মে কয়েক শ রাজবন্দিকেও মুক্তি দেন তিনি।
প্রসঙ্গত, নিজ দেশে রাজনৈতিক সংস্কারের সূচনা করার জন্য আবদুল্লাহও নজিরবিহীন চাপের মুখে রয়েছেন। ক্ষমতাসীন হাশেমি রাজবংশের শাসনের অবসানের জন্য এখনো কোনো জোরালো দাবি ওঠেনি ঠিকই, কিন্তু বিরোধী গোষ্ঠীগুলো আরো শক্তিশালী ও প্রতিনিধিত্বমূলক একটি সংসদ এবং নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর দাবি জানাচ্ছে।
আসাদের বিদায়ের পর...
বেশ কয়েকটি জাতিগত এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী থাকায় অনেকেই মনে করেন, বাশার পদচ্যুত হলে গোলযোগ এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে দেশটিতে। ইরানের কথিত পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি উদ্যোগে অচলাবস্থার মতো দীর্ঘমেয়াদি সংকট সিরিয়াসংক্রান্ত উদ্বেগকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
No comments