‘ভারত কোনো তথ্য দেয়নি’ টিপাইমুখের চুক্তি চূড়ান্ত হয় গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে
টিপাইমুখে বহুমুখী জলবিদ্যুৎ নির্মাণ চুক্তি সইয়ের জন্য চূড়ান্ত হয়েছিল ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। আর চুক্তি সই হয়েছে গত ২২ অক্টোবর। অথচ ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং গত ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা সফরের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু টিপাইমুখে করা হবে না। যা করা হবে, আলোচনার মাধ্যমে করা হবে। ২০১০ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময়ও একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারত।
এদিকে গতকাল সোমবার রাত পর্যন্ত টিপাইমুখের প্রকল্প সম্পর্কে বাংলাদেশকে কোনো তথ্য জানায়নি ভারত। পররাষ্ট্রসচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আজ আমরা ভারতের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার আশা করেছিলাম, কিন্তু তা পাইনি।’ দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের একটি সূত্র গত রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোর কাছে একই ধরনের তথ্য দিয়েছে।
টিপাইমুখ প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর কয়েক দিন পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশকে কোনো তথ্য দেয়নি ভারত। গত রাতে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাবেক কূটনীতিক আশফাকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এমন আচরণ অপ্রত্যাশিত। এটা শুধু টিপাইমুখ কেন, তিস্তা, ট্রানজিট ও সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়ন—সব ক্ষেত্রেই ভারত আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করা হবে না। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এর উল্টো। ট্রানজিটের আওতায় পরীক্ষামূলকভাবে পণ্য পরিবহন পরে নিয়মিত হয়ে গেল। তিস্তা চুক্তি সই হবে, আশ্বাস দিয়েও চুক্তি হয়নি। আর সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়নের কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘খুব সংগত কারণেই আমাদের মাঝে হতাশা তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘ মেয়াদে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ ধরনের আচরণ অত্যন্ত দুঃখজনক। কাজেই আমরা যা বিশ্বাস করি না, তা আমাদের বলা উচিত নয়।’
বেশ কয়েক দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিক্রিয়া না জানানোরও সমালোচনা করেছেন বর্তমানে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স স্টাডিজের চেয়ারম্যান আশফাকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা কেন আমাদের জাতীয় স্বার্থের বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দিচ্ছি না? আমাদের তো প্রথমে দেখতে হবে নিজেদের স্বার্থটা। তারপর তো আসবে অন্যের ভালো-মন্দের বিষয়টি। যেভাবে বিষয়টি এগোচ্ছে, তা সঠিক নয়। দুঃখজনকও বটে।’
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুর থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, বরাক নদে টিপাইমুখ বহুমুখী জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যৌথ বিনিয়োগের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) চূড়ান্ত হয় ২০১০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। মণিপুরের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক সাংহাই এক্সপ্রেস-এর প্রতিবেদনে তখন বলা হয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রী ইবোবি সিংয়ের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে সমঝোতা চুক্তি চূড়ান্ত হয়। আর বৈঠক শেষে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে রাজ্যের মুখ্য সচিব (বিদ্যুৎ) এল পি গোলমেই বলেছিলেন, সমঝোতা স্মারক ও সম্পূরক চুক্তি সই শেষে খুব শিগগির প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।
গতকাল সোমবার মণিপুরের বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের ওয়েবসাইটে গিয়েও এ তথ্যের সত্যতা মিলেছে। আর প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে সেখানকার পরিবেশবাদীরাও বাংলাদেশকে না জানিয়ে সম্প্রতি যে চুক্তিটি সই হয়েছে, তাকে রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেন। সেখানকার পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার এ চুক্তিটি গোপন করছে।
মণিপুরের রাজধানী ইমফলের পরিবেশবাদী সংগঠন ফোরাম ফর ইনডিজিনাস পারসপেক্টিভ অ্যান্ড অ্যাকশন নর্থ ইস্ট পিপলস অ্যালায়েন্সের রামানন্দা ওয়াংখেইরাকপাম ই-মেইলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছরের ফেব্রুয়ারিতেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল, টিপাইমুখ বহুমুখী জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের জন্য যৌথ বিনিয়োগ চুক্তি সই হবে। অথচ ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরের সময় কেন বিষয়টি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করলেন না, সেটি বেশ রহস্যময়। আর বরাক নদে কোনো অবকাঠামো তৈরি হলে ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যেকোনো উদ্বেগ থাকতেই পারে। কাজেই বরাক নদে অবকাঠামো তৈরির আগে বাংলাদেশের উদ্বেগ দূর করাটা অপরিহার্য ছিল। তিনি বলেন, ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়া ভারত যেমন এ প্রকল্প এগিয়ে নিচ্ছে, তেমনি চীন যদি কোনো নদীতে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করে, তখন চীনের ভাটিতে থাকা ভারত কোনো দাবি তোলার নৈতিক অধিকার হারাবে।
বাঁধবিরোধী পরিবেশবাদীদের জোট সিটিজেন্স কনসার্ন ফর ড্যামস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (সিসিডিডি) নেতা রঞ্জন রাজকুমার মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘পরিবেশবাদীদের উদ্বেগকে অগ্রাহ্য করে এ চুক্তি সই হয়েছে। আর চুক্তিটি সই হয়েছে অত্যন্ত গোপনে। চুক্তির কপিও আমরা এখনো দেখিনি।’ তিনি বলেন, টিপাইমুখের প্রস্তাবিত প্রকল্পটিতে ১৬২ দশমিক ৮ মিটার উঁচু বাঁধ তৈরির কথা রয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য এ বাঁধ দেওয়া হবে, যা থেকে পরে উৎপাদিত হবে জলবিদ্যুৎ। এর ফলে প্রতিবেশী রাজ্য আসামসহ বাংলাদেশের যে ক্ষতি হবে, তাতে কোনো সংশয় নেই।
সিনলুং ইনডিজিনাস পিপলস হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশনের (সিফরো) কর্মকর্তা লালরেমলিয়েন নেইথাম এ প্রতিবেদককে ই-মেইলে জানান, রাজ্য সরকার যেমন স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে আলাপ করেনি, তেমনি এখনো জনসমক্ষে এটি প্রকাশ করেনি।
এ জন্য বাংলাদেশের মতো মণিপুরের পরিবেশবাদীরাও টিপাইমুখ চুক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কিন্তু তাঁরা কোনো তথ্য পাচ্ছেন না।
টিপাইমুখ প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর কয়েক দিন পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশকে কোনো তথ্য দেয়নি ভারত। গত রাতে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাবেক কূটনীতিক আশফাকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এমন আচরণ অপ্রত্যাশিত। এটা শুধু টিপাইমুখ কেন, তিস্তা, ট্রানজিট ও সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়ন—সব ক্ষেত্রেই ভারত আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করা হবে না। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এর উল্টো। ট্রানজিটের আওতায় পরীক্ষামূলকভাবে পণ্য পরিবহন পরে নিয়মিত হয়ে গেল। তিস্তা চুক্তি সই হবে, আশ্বাস দিয়েও চুক্তি হয়নি। আর সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়নের কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘খুব সংগত কারণেই আমাদের মাঝে হতাশা তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘ মেয়াদে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ ধরনের আচরণ অত্যন্ত দুঃখজনক। কাজেই আমরা যা বিশ্বাস করি না, তা আমাদের বলা উচিত নয়।’
বেশ কয়েক দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিক্রিয়া না জানানোরও সমালোচনা করেছেন বর্তমানে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স স্টাডিজের চেয়ারম্যান আশফাকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা কেন আমাদের জাতীয় স্বার্থের বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দিচ্ছি না? আমাদের তো প্রথমে দেখতে হবে নিজেদের স্বার্থটা। তারপর তো আসবে অন্যের ভালো-মন্দের বিষয়টি। যেভাবে বিষয়টি এগোচ্ছে, তা সঠিক নয়। দুঃখজনকও বটে।’
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুর থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, বরাক নদে টিপাইমুখ বহুমুখী জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যৌথ বিনিয়োগের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) চূড়ান্ত হয় ২০১০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। মণিপুরের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক সাংহাই এক্সপ্রেস-এর প্রতিবেদনে তখন বলা হয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রী ইবোবি সিংয়ের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে সমঝোতা চুক্তি চূড়ান্ত হয়। আর বৈঠক শেষে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে রাজ্যের মুখ্য সচিব (বিদ্যুৎ) এল পি গোলমেই বলেছিলেন, সমঝোতা স্মারক ও সম্পূরক চুক্তি সই শেষে খুব শিগগির প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।
গতকাল সোমবার মণিপুরের বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের ওয়েবসাইটে গিয়েও এ তথ্যের সত্যতা মিলেছে। আর প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে সেখানকার পরিবেশবাদীরাও বাংলাদেশকে না জানিয়ে সম্প্রতি যে চুক্তিটি সই হয়েছে, তাকে রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেন। সেখানকার পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার এ চুক্তিটি গোপন করছে।
মণিপুরের রাজধানী ইমফলের পরিবেশবাদী সংগঠন ফোরাম ফর ইনডিজিনাস পারসপেক্টিভ অ্যান্ড অ্যাকশন নর্থ ইস্ট পিপলস অ্যালায়েন্সের রামানন্দা ওয়াংখেইরাকপাম ই-মেইলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছরের ফেব্রুয়ারিতেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল, টিপাইমুখ বহুমুখী জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের জন্য যৌথ বিনিয়োগ চুক্তি সই হবে। অথচ ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরের সময় কেন বিষয়টি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করলেন না, সেটি বেশ রহস্যময়। আর বরাক নদে কোনো অবকাঠামো তৈরি হলে ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যেকোনো উদ্বেগ থাকতেই পারে। কাজেই বরাক নদে অবকাঠামো তৈরির আগে বাংলাদেশের উদ্বেগ দূর করাটা অপরিহার্য ছিল। তিনি বলেন, ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়া ভারত যেমন এ প্রকল্প এগিয়ে নিচ্ছে, তেমনি চীন যদি কোনো নদীতে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করে, তখন চীনের ভাটিতে থাকা ভারত কোনো দাবি তোলার নৈতিক অধিকার হারাবে।
বাঁধবিরোধী পরিবেশবাদীদের জোট সিটিজেন্স কনসার্ন ফর ড্যামস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (সিসিডিডি) নেতা রঞ্জন রাজকুমার মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘পরিবেশবাদীদের উদ্বেগকে অগ্রাহ্য করে এ চুক্তি সই হয়েছে। আর চুক্তিটি সই হয়েছে অত্যন্ত গোপনে। চুক্তির কপিও আমরা এখনো দেখিনি।’ তিনি বলেন, টিপাইমুখের প্রস্তাবিত প্রকল্পটিতে ১৬২ দশমিক ৮ মিটার উঁচু বাঁধ তৈরির কথা রয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য এ বাঁধ দেওয়া হবে, যা থেকে পরে উৎপাদিত হবে জলবিদ্যুৎ। এর ফলে প্রতিবেশী রাজ্য আসামসহ বাংলাদেশের যে ক্ষতি হবে, তাতে কোনো সংশয় নেই।
সিনলুং ইনডিজিনাস পিপলস হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশনের (সিফরো) কর্মকর্তা লালরেমলিয়েন নেইথাম এ প্রতিবেদককে ই-মেইলে জানান, রাজ্য সরকার যেমন স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে আলাপ করেনি, তেমনি এখনো জনসমক্ষে এটি প্রকাশ করেনি।
এ জন্য বাংলাদেশের মতো মণিপুরের পরিবেশবাদীরাও টিপাইমুখ চুক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কিন্তু তাঁরা কোনো তথ্য পাচ্ছেন না।
No comments