পবিত্র কোরআনের আলো-ফেরাউন প্রথমে মুসা (আ.)-কে জাদুকরদের দিয়ে মোকাবিলা করতে চেয়েছিল
১১০. ইউরীদু আন ইউখ্রিজাকুম্ মিন আরদ্বিকুম; ফামা-যা তা'মুরূন।১১১. ক্বা-লূ আর্জিহ্ ওয়া আখা-হু ওয়া আরছিল ফিল মাদা-য়িনি হা-শিরীন।১১২. ইয়া'তূকা বিকুলি্ল ছা-হিরিন আ'লীম।১১৩. ওয়াজা-আচ্ছাহারাতু ফিরআউনা ক্বা-লূ ইন্না লানা লাআজরান ইন্ কুন্না নাহ্নুল গা-লিবীন।১১৪. ক্বা-লা নাআ'ম ওয়া ইন্নাকুম লামিনাল মুক্বার্রাবীন।[সুরা : আল-আ'রাফ, আয়াত : ১১০-১১৪]
অনুবাদ
১১০. (ফেরাউন বলল) এই ব্যক্তি, অর্থাৎ মুসা তোমাদের দেশ থেকে তোমাদের বের করে দিতে চায়। এখন বলো, তোমাদের পরামর্শ কী?
১১১. তারা (সভাসদরা) বলল, তাঁকে ও তাঁর ভাইকে (হারুন) কিঞ্চিৎ অবকাশ দিন এবং সবগুলো নগরে বার্তাবাহকদের পাঠান।
১১২. যাতে তারা সেসব নগর থেকে দক্ষ জাদুকরদের নিয়ে আসে।
১১৩. সুতরাং তাই করা হলো এবং জাদুকররা ফেরাউনের কাছে চলে এল। তারা বলল, আমরা যদি মুসার বিরুদ্ধে বিজয়ী হই, তবে আমরা ঠিক ঠিকই আমাদের উপযুক্ত ইনাম পাব তো?
১১৪. ফেরাউন বলল, হ্যাঁ অবশ্যই। এবং সেই সঙ্গে তোমরা আমার ঘনিষ্ঠ লোকদের মধ্যে গণ্য হবে।
ব্যাখ্যা : কথিত আছে, মুসা (আ.) আল্লাহর কুদরতি সহায়তায় মিসর সম্রাটের ঘরেই তার স্ত্রী আছিয়ার পালিত পুত্র হিসেবে মানুষ হয়েছিলেন। তাও ছিল এক অলৌকিক ঘটনা। অত্যাচারী সম্রাটের নির্দেশে ইসরাইল বংশীয় ছেলেসন্তানদের যখন জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই মেরে ফেলা শুরু হলো, তখন শিশু মুসার জন্মের পর পরই তাঁর মা তাঁকে নদীতে ভেলার ওপর ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। ভাসতে ভাসতে সেই ভেলা সম্রাজ্ঞী আছিয়ার হাম্মামখানায় এসে ভিড়েছিল। সম্রাজ্ঞী তখন এই ফুটফুটে শিশুটিকে নিজের সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। মুসার মা এসে সেবিকা হিসেবে শিশুটির লালন-পালনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এভাবে নবী হজরত মুসা (আ.) মানুষ হয়েছিলেন। তরুণ বয়সে তিনি এক কিবতিকে এক ইসরায়েলির ওপর নির্মম অত্যাচার করতে দেখে আঘাত করেছিলেন। এতে সেই কিবতির মৃত্যু হয়। মুসা (আ.) তখন মিসর থেকে পালিয়ে মাদায়েনে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি হজরত শোয়ায়েব (আ.)-এর কন্যা সফুরাকে বিয়ে করে অন্তত ১০ বছর অবস্থান করেন। এরপর আবার মিসরের দিকে প্রত্যাবর্তনকালে সিনাই উপত্যকায় তুর পাহাড়ে নবুয়তপ্রাপ্ত হন। নবুয়তপ্রাপ্ত হয়ে মিসরে ফিরে আসার পর তিনি অত্যাচারী সম্রাটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন এবং তার সামনে আল্লাহর আয়াত ও নির্দেশ উপস্থাপন করেন। নবী মুসা (আ.) মিসরে ফিরে আসার পর তাঁর স্বগোত্র ইসরায়েলিরা তাঁকে কেন্দ্র করে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং তাঁকে তাদের ত্রাণকর্তা হিসেবে গ্রহণ করে নেয়।
ওই আয়াতগুলোর মাধ্যমে এ কথাই বর্ণনা করা হয়েছে যে নবী মুসা (আ.) ও তাঁর ভাই হারুন (আ.)-এর (যিনি নিজেও একজন নবী ছিলেন) নেতৃত্বাধীন ইসরায়েলিদের মিসর সম্রাট আসন্ন বিপদ হিসেবে দেখছিল। প্রথম অবস্থায়ই সম্রাট মুসা (আ.)-এর নবুয়তকে চ্যালেঞ্জ করেছিল এবং এর জবাবে হজরত মুসা (আ.) তাঁর মুজিজা প্রকাশ করার অনুমতি পান। মুসা (আ.) যখন তাঁর মুজিজা প্রকাশ করেছিলেন, তখন সম্রাট আসলেই যথেষ্ট ভড়কে গিয়েছিল। ফলে সে তার কওমের সর্দারদের এ ব্যাপারে সতর্ক করে যে এই ব্যক্তি তাদের দেশ থেকে তাদের বিতাড়িত করার জন্য উদ্ধত হয়েছে। তাকে কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় এ ব্যাপারে তিনি তাদের কাছে পরামর্শ চান। কওম সর্দাররা তথা সভাসদদের পরামর্শক্রমে তিনি দেশের সব নামজাদা জাদুকর বা ওঝাদের ডেকে আনেন। তারা মুসা (আ.)-কে পরাস্ত করার সংকল্প গ্রহণ করে এবং বিনিময়ে সম্রাটের কাছ থেকে কী ইনাম পাবে এরও প্রতিশ্রুতি নেয়। কিন্তু পরিণামে তারা মুসা (আ.)-এর কাছে হেরে যায়। সে কাহিনী সামনের আয়াতগুলোতে বর্ণিত হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
১১০. (ফেরাউন বলল) এই ব্যক্তি, অর্থাৎ মুসা তোমাদের দেশ থেকে তোমাদের বের করে দিতে চায়। এখন বলো, তোমাদের পরামর্শ কী?
১১১. তারা (সভাসদরা) বলল, তাঁকে ও তাঁর ভাইকে (হারুন) কিঞ্চিৎ অবকাশ দিন এবং সবগুলো নগরে বার্তাবাহকদের পাঠান।
১১২. যাতে তারা সেসব নগর থেকে দক্ষ জাদুকরদের নিয়ে আসে।
১১৩. সুতরাং তাই করা হলো এবং জাদুকররা ফেরাউনের কাছে চলে এল। তারা বলল, আমরা যদি মুসার বিরুদ্ধে বিজয়ী হই, তবে আমরা ঠিক ঠিকই আমাদের উপযুক্ত ইনাম পাব তো?
১১৪. ফেরাউন বলল, হ্যাঁ অবশ্যই। এবং সেই সঙ্গে তোমরা আমার ঘনিষ্ঠ লোকদের মধ্যে গণ্য হবে।
ব্যাখ্যা : কথিত আছে, মুসা (আ.) আল্লাহর কুদরতি সহায়তায় মিসর সম্রাটের ঘরেই তার স্ত্রী আছিয়ার পালিত পুত্র হিসেবে মানুষ হয়েছিলেন। তাও ছিল এক অলৌকিক ঘটনা। অত্যাচারী সম্রাটের নির্দেশে ইসরাইল বংশীয় ছেলেসন্তানদের যখন জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই মেরে ফেলা শুরু হলো, তখন শিশু মুসার জন্মের পর পরই তাঁর মা তাঁকে নদীতে ভেলার ওপর ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। ভাসতে ভাসতে সেই ভেলা সম্রাজ্ঞী আছিয়ার হাম্মামখানায় এসে ভিড়েছিল। সম্রাজ্ঞী তখন এই ফুটফুটে শিশুটিকে নিজের সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। মুসার মা এসে সেবিকা হিসেবে শিশুটির লালন-পালনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এভাবে নবী হজরত মুসা (আ.) মানুষ হয়েছিলেন। তরুণ বয়সে তিনি এক কিবতিকে এক ইসরায়েলির ওপর নির্মম অত্যাচার করতে দেখে আঘাত করেছিলেন। এতে সেই কিবতির মৃত্যু হয়। মুসা (আ.) তখন মিসর থেকে পালিয়ে মাদায়েনে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি হজরত শোয়ায়েব (আ.)-এর কন্যা সফুরাকে বিয়ে করে অন্তত ১০ বছর অবস্থান করেন। এরপর আবার মিসরের দিকে প্রত্যাবর্তনকালে সিনাই উপত্যকায় তুর পাহাড়ে নবুয়তপ্রাপ্ত হন। নবুয়তপ্রাপ্ত হয়ে মিসরে ফিরে আসার পর তিনি অত্যাচারী সম্রাটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন এবং তার সামনে আল্লাহর আয়াত ও নির্দেশ উপস্থাপন করেন। নবী মুসা (আ.) মিসরে ফিরে আসার পর তাঁর স্বগোত্র ইসরায়েলিরা তাঁকে কেন্দ্র করে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং তাঁকে তাদের ত্রাণকর্তা হিসেবে গ্রহণ করে নেয়।
ওই আয়াতগুলোর মাধ্যমে এ কথাই বর্ণনা করা হয়েছে যে নবী মুসা (আ.) ও তাঁর ভাই হারুন (আ.)-এর (যিনি নিজেও একজন নবী ছিলেন) নেতৃত্বাধীন ইসরায়েলিদের মিসর সম্রাট আসন্ন বিপদ হিসেবে দেখছিল। প্রথম অবস্থায়ই সম্রাট মুসা (আ.)-এর নবুয়তকে চ্যালেঞ্জ করেছিল এবং এর জবাবে হজরত মুসা (আ.) তাঁর মুজিজা প্রকাশ করার অনুমতি পান। মুসা (আ.) যখন তাঁর মুজিজা প্রকাশ করেছিলেন, তখন সম্রাট আসলেই যথেষ্ট ভড়কে গিয়েছিল। ফলে সে তার কওমের সর্দারদের এ ব্যাপারে সতর্ক করে যে এই ব্যক্তি তাদের দেশ থেকে তাদের বিতাড়িত করার জন্য উদ্ধত হয়েছে। তাকে কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় এ ব্যাপারে তিনি তাদের কাছে পরামর্শ চান। কওম সর্দাররা তথা সভাসদদের পরামর্শক্রমে তিনি দেশের সব নামজাদা জাদুকর বা ওঝাদের ডেকে আনেন। তারা মুসা (আ.)-কে পরাস্ত করার সংকল্প গ্রহণ করে এবং বিনিময়ে সম্রাটের কাছ থেকে কী ইনাম পাবে এরও প্রতিশ্রুতি নেয়। কিন্তু পরিণামে তারা মুসা (আ.)-এর কাছে হেরে যায়। সে কাহিনী সামনের আয়াতগুলোতে বর্ণিত হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments