৮০টির মধ্যে জমা ১২ সিডিউল-সিলেটে সাড়ে ১৭ কোটি টাকার টেন্ডার ভাগ-বাটোয়ারা

প্রায় দু'মাস আগে নগরীর ১০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নে প্রথম দফায় টেন্ডার আহ্বান করেছিল সিলেট সিটি করপোরেশন। কিন্তু ওই সময় সিডিউল নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় তা বাতিল করা হয়। পরে দ্বিতীয় দফায় টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এ দফায়ও পুরো প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার এ নিয়ে নগর ভবনে দিনভর তোলপাড় চলে। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। জানা গেছে, আগেই সাড়ে ১৭ কোটি টাকার টেন্ডার


ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে গেছে। এ নিয়ে সাধারণ ঠিকাদারদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সূত্র জানায়, সিলেট নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বেহাল সড়ক উন্নয়নের জন্য মাসদুয়েক আগে ১৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকার প্রথম দফা টেন্ডার আহ্বান করে সিটি করপোরেশন। ওই সময় জটিলতার সৃষ্টি হলে মেয়রের নির্দেশে একই কাজ চার গ্রুপে ভাগ করে কয়েকদিন আগে আবার টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে এক নম্বর গ্রুপে আম্বরখানা-বড়বাজার ও জেলরোড-কাজীটুলা সড়ক, দুই নম্বর গ্রুপে ওসমানী মেডিকেল কলেজ সড়ক, তিন নম্বর গ্রুপে মির্জাজাঙ্গাল, রিকাবীবাজার, সুবিদবাজার-মিরের ময়দান, ভিআইপি রোড, জিন্দাবাজার-লামাবাজার সড়ক এবং চার নম্বর গ্রুপে নাইওরপুল-জিন্দাবাজার ও উপশহর প্রধান সড়ক মেরামতের কথা রয়েছে।
কিন্তু আবার টেন্ডার আহ্বান করার পর থেকেই প্রভাবশালী একটি মহল ফের কাজ পাওয়ার জন্য তৎপর হয়ে উঠে বলে একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করেছেন। এ অবস্থায় গত রোববার কয়েক কাউন্সিলর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের নিয়ে নগরীর জিন্দাবাজার এলাকায় আলোচনায় বসেন। ওই বৈঠকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে অধিকাংশ ঠিকাদারের সিডিউল জমাদানে বিরত রাখা হয় বলে জানান ঠিকাদাররা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রভাবশালী কয়েক নেতা সিডিউল জমা দেওয়ার আগেই ওই কাজগুলো ভাগাভাগি করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা। এর মধ্যে করপোরেশনের এক আওয়ামী লীগ কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির এক শীর্ষ নেতাও রয়েছেন।
দ্বিতীয় দফায় আহ্বান করা টেন্ডারে চার গ্রুপে ৮০টি সিডিউল বিক্রি হলেও গতকাল নির্ধারিত দিনে সব মিলিয়ে মাত্র ১২টি সিডিউল জমা পড়েছে। এর মধ্যে দুই নম্বর গ্রুপে শিডিউল জমা পড়ে মাত্র একটি! একমাত্র সিডিউলটি জমা দেয় নির্মিত অ্যান্ড ওয়াহিদুজ্জামান (জেবি) নামের প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া এক নম্বর গ্রুপে তিনটি এবং তিন ও চার নম্বর গ্রুপে চারটি করে সিডিউল জমা পড়ে। একে অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন সিটি করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা। তবে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান টেন্ডার প্রক্রিয়ার কোনো সমস্যা হওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে সিডিউল জমার সময় নগর ভবনে ব্যাপকসংখ্যক র‌্যাব-পুলিশ মোতায়েন ছিল। এর মধ্যেই ঠিকাদাররা সিডিউল জমা দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান সমকালকে জানান, আগেরবার ৩৮ শতাংশ ছাড় দিয়ে সিডিউল জমা দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় টেন্ডার বাতিল না করতে আমাকে বিভিন্নভাবে চাপ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজের মান ভালো হবে না বলে আমি তা বাতিল করে দিই। এতে সময় নষ্ট হওয়ার কারণে দ্রুত কাজ শেষ করতে চার গ্রুপে ভাগ করে ফের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। গতকালের ঘটনা সম্পর্কে মেয়র বলেন, কেউ যদি গোপনে আঁতাত করে কিছু করে, তাহলে তো আমাদের করার কিছু নেই। সিডিউল জমা দেওয়ার সময় কোনো অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.