সশস্ত্র বাহিনী দিবস-সেনাকুঞ্জে যাননি খালেদা ও চার দলের নেতারা by কাজী হাফিজ
সশস্ত্র বাহিনী দিবসে সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যাননি। অনুষ্ঠানে চারদলীয় জোটের অন্য কোনো নেতাকেও দেখা যায়নি গতকাল। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান ছাড়া আর কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। তাঁদের অনেকে কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁরা আমন্ত্রণ পাননি বা আমন্ত্রণপত্র দিয়ে পরে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
সশস্ত্র বাহিনী দিবসে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াকে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হলেও তিনি যোগ দেবেন কি না, সে বিষয়ে রবিবার রাত ১০ পর্যন্ত দলের অনেক শীর্ষ নেতা জানতেন না। ওই দিন রাত ১০টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মে. জে. (অব.) রুহুল আলম চৌধুরীর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'ম্যাডাম সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন কি না, সে বিষয়ে আমরা এখনো পর্যন্ত কিছু জানি না।'
এর আগে রুহুল আলম চৌধুরী অভিযোগ করেছিলেন, তাঁকে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হলেও পরে প্রত্যাহার করা হয়েছে। শুধু তাঁর আমন্ত্রণপত্রই নয়, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আরো চার-পাঁচজন সাবেক সেনা কর্মকর্তার আমন্ত্রণপত্রও ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের পদবি মেজর জেনারেল পর্যন্ত।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাবিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক মে. জে. (অব.) ফজলে এলাহী আকবর জানিয়েছেন, তাঁকে কোনো আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়নি।
গত বছরও সশস্ত্র বাহিনী দিবসে সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াসহ চারদলীয় জোটের নেতারা যাননি। তবে ২০০৯ সালের ২১ নভেম্বর সেনাকুঞ্জের ওই শামিয়ানার নিচের দৃশ্যটি ছিল ভিন্ন। সেদিন ওই শামিয়ানার নিচে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া পরস্পরের কাছাকাছি ছিলেন। শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছিলেন এবং তাঁকে সংসদে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
২০০৬ ও ২০০৮ সালের সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন দুই নেত্রী। ২০০৬ সালে দীর্ঘ প্রায় এক ঘণ্টা কাছাকাছি অবস্থান করেও কেউ কারো সঙ্গে কথা বলেননি। ২০০৭ সালের ২১ নভেম্বর দুই নেত্রীই ছিলেন কারাগারে। ২০০৮ সালে কারামুক্তির পর সেনাকুঞ্জের শামিয়ানার নিচে হাজির হন তাঁরা। সেদিন তাঁরা পরষ্পরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন, কারাজীবন নিয়ে কথা বলেন। কারামুক্তির পর দুই নেত্রীর দ্বিতীয় দফা দেখা ও কথা হয় ২০০৯ সালের ৯ মে। সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুতে সান্ত্বনা জানাতে সুধা সদনে যান খালেদা জিয়া। তৃতীয় দফা দেখা হয় ২০০৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী আয়োজিত ইফতার পার্টিতে। সেদিন শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে সংসদে যাওয়ার আহ্বান জানান।
গতকাল রাজনৈতিক নেতাসহ গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁদের সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে দেখা গেছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন; আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার (অব.) এনামুল হক, চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, তোফায়েল আহমেদ, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, হাসানুল হক ইনু, মইনুদ্দিন খান বাদল, ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার।
অনুষ্ঠানে বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা ছাড়াও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এ টি এম শামসুল হুদা, বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ, নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
No comments