জামদানি- কোটি টাকার বেচাকেনা, মধ্যরাত থেকে সূর্যোদয়- ঢাকার ডেমরায় প্রতি শুক্রবার বসে হাট by মীর আব্দুল আলীম
এক সময় এখানে বিক্রি হতো মসলিন শাড়ি । এখন বিক্রি হয় জামদানি শাড়ি। এটি এক অন্য রকম হাট। দিনে নয়, রাতে বসে এ হাট। তাও আবার মধ্য রাতে শুরম্ন হয়ে শেষ হয় সূযের্াদয়ের আগেই।
অনেকের কাছেই এটি অবিশ্বাস মনে হবে। কিন্তু এ হাটের কথা কমবেশি সবারই জানা। রাজধানী ঢাকার ডেমরায় বসে এই জামদানির হাট। ডেমরায় জামদানি শাড়ি তৈরি না হলেও পার্শ্ববতর্ী রূপগঞ্জের শিল্পীদের তৈরি রমনীমোহন জামদানি শাড়িই এ হাটে বিক্রি হয়।এটি আহামরি কোন হাট নয়। তারপরও প্রতিহাটে কোটি টাকার জামদানি শাড়ি লেনদেন হয়। হাটে শেড নেই। ঠায় দাঁড়িয়ে কিংবা মাটিতে চট বিছিয়ে শাড়ি বেচাকেনা চলে। হাটের নিজস্ব কোন জায়গা নেই। ডেমরা বাজারের এক কোণে এ হাট বসে। সরেজমিনে ডেমরার জামদানি হাটে গিয়ে জানা গেছে, বহু আগে রূপগঞ্জের নোয়াপাড়ায় প্রতি মঙ্গলবার জামদানির হাট বসত। নানা প্রতিকূলতার কারণে তা এক সময় চলে আসে ডেমরা বাজারে। বর্তমানে ডেমরায় হাট বসে প্রতি শুক্রবার। মধ্যরাত থেকে ক্রেতা-বিক্রেতা আসতে শুরম্নু করে। বেচাকেনা শুরম্নু হয় ৩ টার পর থেকে। পাশর্্ববতর্ী এলাকার জামদানি তাঁতিরা এর বিক্রেতা। নির্জন রাত। গাড়ি-ঘোড়া কিছুই চলে না। হেঁটে কিংবা নৌকায় তাঁতিরা চলে আসেন হাটে। পাইকারদের কেউ কেউ আগে থেকেই ডেমরায় অবস্থান নেয়। সারা দেশ থেকে গাড়ি করে, দলবেঁধে আসেন পাইকার। তাঁতিদের প্রত্যেকের হাতে থাকে ২/১ টি জামদানি শাড়ি। ওরা নিজেরাই এ শাড়ির শিল্পী। পাশর্্ববতর্ী নোয়াপাড়া, রূপসী, মৈকুলী, খাদুন,পবনকুল, কাজীপাড়া, মোগরাকুল, সোনারগাঁও এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে আসেন তাঁতিরা। ক্রেতারা আসেন সারা দেশ থেকে । তবে অধিকাংশ ক্রেতাই রাজধানী ঢাকার কাপড় ব্যবসায়ী। স্থানীয় কাপড় ব্যবসায়ীরাও এখানে হাট করতে আসেন। এক-একটি শাড়ি দেড় হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যনত্ম বিকোয় এখানে। জামদানি শাড়ি ছাড়া অন্য কোন কাপড় কিংবা পণ্য এ হাটে মিলে না। তবে খুব ভোরে ২/১ জন ঘোল (মাঠা) বিক্রেতা এ হাটে আসেন। এরাই তখন থাকেন এ হাটের প্রধান আকর্ষণ। ুধার্ত-কানত্ম হাটুরেরা একগস্নাস ঘোল খেয়ে তাদের কানত্মি কিছুটা দূর করে নেন। এ সময় ঘোল খেতে সবার লাইন পড়ে যায়।
ভোর ৪ টায় পুরো জমজমাট হয়ে ওঠে হাট। তখন ফড়িয়া, দালাল, জামদানি তাঁতি, ব্যবসায়ীতে পূর্ণ থাকে। দাঁড়িয়ে পায়চারি করে তাঁতিীদর শাড়ি প্রদর্শন করতে হয়। কেউ কেউ ৩ সপ্তাহ বোনা শাড়ি আবার কেউ ৪ সপ্তাহ বোনা শাড়ি বলে হাঁকডাক দিয়ে থাকেন। পছন্দ হলেই ক্রেতারা তা দরদাম করে কিনে নেন। প্রতিহাটে এখানে বিক্রি হয় ৫ থেকে ৭ হাজার পিস শাড়ি। লেনদেন হয় প্রায় এক কোটি টাকার ওপর। শাড়ি পিছু ইজারা দিতে হয় ৫০ থেকে ১ শ' টাকা। কোন কোন েেত্র এর বেশিও আদায় করা হয়। জামদানির হাট মূলত স্থানীয় মসত্মান ও চাঁদাবাজরা নিয়ন্ত্রণ করছে। জামদানি শাড়ি বিক্রেতা গোলাম মাওলা, হাসেম, জহিরম্নল, আজগর আলী, লোকমান, শাহ আলম, মনির হোসেন জানান, প্রতি মাসে এ হাটে ইজারা বাবদ জামদানি তাঁতিদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে কয়েক লাখ টাকা। কিন্তু ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুযোগ-সুবিধার তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। আজও বেচাকেনার জন্য নির্দিষ্ট স্থান কিংবা শেড নির্মাণ করা হয়নি। ফলে খোলা আকাশের নিচে হাঁকডাক দিয়ে তাঁতিদের শাড়ি বিক্রি করতে হয়। সামান্য বৃষ্টি হলেই ক্রেতা- বিক্রেতারা ভিজে একাকার হন। কখনও দামী সব শাড়ি ভিজে নষ্ট হয়।
এছাড়া হাটে আছে ফড়িয়া ও দালালদের দৌরাত্ম্য। শতাধিক দালালের কাছে তাঁতিরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। অবস্থা এমন হয়েছে যে, তাঁতিরা দালাল না ধরলে শাড়ি ঠিকমতো বিক্রি করতে পারেন না; পারলেও দাম পায় কম।
No comments