বিস্ময়কর আলাস্কা by আবিদ হাসান খান
ভ্রমণ বিষয়ক রচনা আমাকে সব সময়ই আকর্ষণ করে। হঠাৎ করেই হাতে পেয়ে গেলাম আবিদ হাসান খান রচিত ’বিস্ময়কর আলাস্কা বইটি। আলাস্কা সম্পর্কে জানার আগ্রহ বহুদিনের। যাই হোক বইটি যখন পড়তে শুরু করলাম তখন আমি যেন বইয়ের মাঝেই হারিয়ে গেলাম। মনে হলো নিজেই যেন আলাস্কা ভ্রমণ করছি।
আলাস্কা আমার মানস পটে ভেসে উঠছিল বার বার। লেখকের লেখনীর ধরনেই এমন ছিল যে বই পড়েই আলাস্কার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগের আনন্দ উপলব্ধি করতে লাগলাম। পাঠক হিসেবে আমি বলতে পারি লেখক যেভাবে নিখুঁত ও আর্কষণীয়ভাবে নানা তথ্যের সন্নিবেশের মাধ্যমে ভ্রমণ বিষয়ক এই বইটি রচনা করেছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। লেখক আবিদ হাসান খান একজন ব্যবসায়ী মানুষ। কিন্তু ব্যবসায়ের শত ব্যস্ততার ফাঁকে যখনই সময় পান তখনই চলে যান তার ভ্রমণপিয়াসু মনের খোরাক যোগাতে পৃথিবীর বিভিন্ন রোমাঞ্চকর স্থানে। কানাডার ভ্যানকুবারে বেড়াতে গিয়ে আলাস্কা ক্রুজ জাহাজ দেখার পর থেকেই তাঁর মাথায় আলাস্কা ভ্রমণের আকাক্সক্ষা সৃষ্টি হয়। ২০১০ সালে তিনি সস্ত্রীক বেরিয়ে পড়েন আলাস্কা ভ্রমণে। আলাস্কা ভ্রমণের খুঁটিনাটি বিষয় তিনি ফুটিয়ে তোলেন তাঁর এই বইটিতে। প্রথমেই তিনি আলাস্কার ভৌগোলিক অবস্থান, ইতিহাস,আদিবাসীদের জীবন-জীবিকা-বাসস্থান ইত্যাদির বিশদ বিবরণ দিয়ে পাঠকের কাছে আলাস্কার প্রাথমিক পরিচয় ঘটান। তারপরেই তিনি শুরু করেন তাঁর আলাস্কা ভ্রমণের পূর্ণ বৃত্তান্ত। প্রথমেই তিনি আলাস্কার সিওয়ার্ড শহরটিতে তার ভ্রমণের চিত্র তুলে ধরেন পাঠকদের কাছে। সিওয়ার্ড শহরের নিখুঁত বর্ণনাসহ পর্যটকদের আর্কষণের কেন্দ্রবিন্দু একজিট গ্লেসিয়ার, রিসারকেশন বে, আলাস্কা সি লাইফ সেন্টার ইত্যাদির প্রাঞ্জল বর্ণনা যেমনভাবে তুলে ধরেছেন তেমনি শ্যামন মাছ বিষয়ক বিস্তৃত আলোচনাও করেছেন। গালফ অব আলাস্কা ও প্রশান্ত মহাসাগরের মিলনস্থলে তিনি কিভাবে তিমি মাছ দেখতে সক্ষম হয়েছেন তিনি তাঁর লেখনীতে তা তুলে ধরেছেন। গ্লেসিয়ার কিভাবে গঠিত হয়, কিভাবে ভেঙ্গে পড়ে এবং এর সৌন্দর্য কীরূপ তা নিখুঁতভাবে তিনি এই বইটিতে বিশদ ব্যাখ্যা করেন। তালকিতনা, ট্রার্পাস কেবিন, ডোনালি শহরের বিবরণ, ডোনালি ন্যাশনাল পার্কের বিভিন্ন বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবজন্তুর বিবরণ তিনি আর্কষণীয়ভাবে বইটিতে তুলে ধরেন। এরপর তিনি গোল্ড প্যানিং এর বর্ণনা দেন এবং তারা স্বামী -স্ত্রী দু’জনেই কিভাবে সোনা খুঁজে পেতে সমর্থ হলেন তার রোমাঞ্চকর বর্ণনা পাঠকদের সামনে তুলে ধরেন। এরপর তিনি স্লেজ ডগ এ্যাডভেঞ্চারের রোমাঞ্চকর কাহিনী পাঠকের সামনে তুলে ধরেন। হোয়াইট ওয়াটার র্যাফটিং এর মতো ঝুঁকিপূর্ণ এ্যাডভেঞ্চার দুরুদুরু বুকে কিভাবে সম্পন্ন করেছিলেন তা তিনি এই বইটিতে অত্যন্ত চমৎকার ভাষায় তুলে ধরেন। ফেয়ার ব্যাংকস শহর, আর্কটিক সার্কেল, ট্রান্স আলাস্কা অয়েল পাইপ লাইন, কোল্ডফুট, রিভারবোট ডিস্কভারী, অরোরা ফোরিয়ালিস, আইস মিউজিয়াম ইত্যাদির বিশদ বিবরণ তুলে ধরেছেন। এই বইটিতে আলাস্কার ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, ঐতিহাসিক দিকগুলো যেমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে তা আলাস্কা সম্পর্কিত জ্ঞান পিপাসুদের জ্ঞানের পিপাসা মেটানোর জন্য অনেকটাই সহায়ক। আশিটি ছবি সন্নিবেশ করে বইটিকে আরো প্রাণবন্ত করা হয়েছে। লেখক আলাস্কার যে সকল জায়গাগুলোতে ভ্রমণ করেছেন সে সব জায়গার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জীব বৈচিত্র্য, গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান, স্মারক প্রভৃতির ছবি তুলেছেন আর সেগুলো এই বইটিতে সন্নিবেশ করে পাঠকের কাছে আলাস্কাকে সচিত্রভাবে তুলে ধরেছেন। ভ্রমণ কাহিনী হিসেবে একের পর এক ঘটনার ধারাবাহিকতার নিখুঁত বর্ণনা, ভাষার প্রাঞ্জলতা ও ছবির সন্নিবেশের মধ্য দিয়ে পাঠককে আলাস্কায় ভ্রমণের রোমাঞ্চ উপলব্ধি এবং জ্ঞানের পরিধি বাড়িয়ে দিতে বইটি সক্ষম। বইটি বাংলা ভ্রমণ সাহিত্যের একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন এবং লেখকের রচিত প্রথম বই হলেও ভ্রমণ সাহিত্যের এক অনবদ্য সৃষ্টি বলে আমি মনে করি।
মো. আরিফুর রহমান
মো. আরিফুর রহমান
No comments