সংস্কার হয়নি ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ঝুঁকিতে ১২ লাখ মানুষ by এম জসীম উদ্দীন

অর্থের অভাবে বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সংস্কার হয়নি। চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতে জোয়ারে বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ ছাড়াও নতুন করে ২৫টি স্থান ভেঙে গেছে। এতে জেলার অনেক এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ছে। সেই সঙ্গে ঝুঁকির মুখে পড়েছে ১২ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা।


জরুরি ভিত্তিতে বাঁধের সংস্কার করা না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে সিডরে জেলার ২২টি পোল্ডারের ৫৪ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ ও ৩৯৬ কিলোমিটার আংশিক ক্ষতি হয়। ২০০৮ সালের ২৫ মে আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৭৭ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার বাঁধ। এ ছাড়া ওই দুটি ঝড়ে জেলার ৩২৮টি স্লুইসগেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পাউবোর কর্মকর্তারা জানান, আন্তর্জাতিক একটি দাতা সংস্থার অর্থায়নে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ২২টি পোল্ডারের মধ্যে ১২টির আওতায় বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু হয়। প্রথম ধাপে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয়টি পোল্ডারের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়। পরে পাউবো চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাকি ছয়টি পোল্ডারের জন্য দরপত্র আহ্বান করলেও অর্থের অভাবে বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু করা যায়নি।
কমকর্তারা আরও জানান, বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই গত কয়েক দিনে নতুন করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২৫টি স্থান ভেঙে গেছে। জেলার ৮৫ শতাংশ বাঁধই বর্তমানে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় জলোচ্ছ্বাস হলেই এসব বাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী আবুল হোসেন বলেন, এবার গ্রীষ্ম মৌসুমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বেশির ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত অংশ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জরুরি ভিত্তিতে সরকারের কাছে বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করার পরও কোনো কাজ হয়নি। মাঝারি ও বড় ধরনের কোনো জলোচ্ছ্বাস হলে পুরো বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত বুধবার দুপুরে সদর উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়নের ছোট বালিয়াতলী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পায়রা নদীর পাড়ের ছোট বালিয়াতলী স্লুইসগেটসংলগ্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ২০০ ফুট বাঁধ নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় ছয়টি গ্রামের বাসিন্দারা পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা না হলে অল্প কয়েক দিনের মধ্যে এলাকার তিন কিলোমিটার বাঁধের পুরোটাই নদীগর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা এলাকাবাসীর। স্থানীয় বাসিন্দা সেন্টু হাওলাদার জানান, মঙ্গলবার জোয়ারের তোড়ে ছোট বালিয়াতলী স্লুইসগেটের দক্ষিণ পাশে ২০০ মিটার বাঁধ ও ওই বাঁধসংলগ্ন ১০টি বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
একইভাবে উপজেলার ডালভাঙা ও মাছখালী এলাকায় প্রায় আধা কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে মাছখালী, লতাবাড়িয়া, বরইতলা, ডালভাঙাসহ আশপাশের সাতটি গ্রামের বাসিন্দারা পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তালতলী উপজেলার নলবুনিয়া এলাকার প্রায় দেড় কিলোমিটার বাঁধ কয়েক দিন আগে বিলীন হয়ে পাঁচটি গ্রামের চার হাজার বাসিন্দা ও আমতলী উপজেলার ঘটখালী এলাকায় এক কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে প্রায় ৪০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
বরগুনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দীন আহমেঞ্চদ বলেন, দাতা সংস্থার অর্থায়নে ছয়টি প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত আরও ১৬টি পোল্ডারের আওতায় থাকা বাঁধগুলো অর্থের অভাবে সংস্কার করা যাচ্ছে না।

No comments

Powered by Blogger.