ছাপার ভুল এনবিআরের গচ্চা আমজনতার by রাজীব আহমেদ

আমদানিতে শুল্কহার হবে ৫ শতাংশ। সেখানে ভুলে ছাপা হয়েছে ২৫ শতাংশ। সামান্য এই 'ভুল'-এর কারণে ক্ষতি হয়েছে বড় ধরনের। বন্দরে কয়েক দিন আটকে থেকে আদা, রসুন ও শুকনা মরিচের সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে। এতে দাম বেড়েছে। পরে পাইকারি বাজারে কমলেও খুচরা বিক্রেতারা কমাচ্ছেন না এ তিনটি পণ্যের দাম।


এক সপ্তাহ আগে যে দামে আদা ও রসুন কেনা যেত, এর চেয়ে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে এখন।
জানা গেছে, এবারের বাজেটে সরকার ভোগ্যপণ্যের শুল্কহার না বাড়িয়ে ৫ শতাংশই রাখে। কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টমসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) যে প্রজ্ঞাপন গেছে, সেখানে ভুলক্রমে ৫-এর আগে একটি ২ বসে যায়। এতে শুল্কহার হয়ে যায় ২৫ শতাংশ। আর এতেই শুরু হয় বিপত্তি। চট্টগ্রাম কাস্টমস ৫ শতাংশের জায়গায় ২৫ শতাংশ শুল্ক দাবি করে আমদানিকারকদের কাছে; যদিও ব্যবসায়ীদের তৎপরতায় বিষয়টি দ্রুতই সমাধান হয়। তবু কেটে যায় কয়েক দিন। সব পণ্য একসঙ্গে খালাস হয়ে যখন বাজারে আসে, তখন দাম আবার পড়ে যায়। কিন্তু এর আগে পাইকারি বাজারে কয়েক দিনের জন্য দাম বেড়েছিল। এখন পাইকারি বাজারে দাম কমলেও খুচরা বাজারে দাম কমার লক্ষণ নেই। ভাবখানা, বেড়েছে তো বেড়েছে, কমবে কেন?
বর্তমানে ঢাকার পাইকারি বাজারে আদা বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৩৬ টাকা কেজি দরে। কিন্তু ঢাকার খুচরা বাজারে আদার কেজিপ্রতি দর ৭০-৮০ টাকা। কোথাও কোথাও ৯০ টাকারও বেশি। গত এক সপ্তাহে আদার দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। একইভাবে রসুনের দাম ১০ টাকা বেড়ে চীনের রসুন ১০০ থেকে ১১০ টাকা, মরিচের দাম একই হারে বেড়ে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সরকারের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করেছিলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক হেলাল উদ্দিন। তিনি জানান, আদা, রসুন ও মরিচ আমদানিতে একটি কনটেইনারে সাধারণত তিন থেকে সোয়া তিন লাখ টাকা শুল্ক আসে। কিন্তু মাল আসার পর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা আমদানিকারকদের জানান, তাঁদের আরো বেশি টাকা দিতে হবে। ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক দাঁড়ায় ১৫ লাখ টাকার কাছাকাছি। তিনি বলেন, শুল্কহারের বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশন ও এনবিআরে গেলে তারা সবাই জানায় শুল্কহার বাড়েনি। পরে কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, শুল্কহারের সংখ্যা ছাপায় ভুল হয়েছে। ভুল সংশোধনের কাগজ গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে পৌঁছে। দুই দিন বন্ধের পর রবিবার ব্যবসায়ীরা পণ্য খালাস করার সুযোগ পান।
ঢাকা মহানগর কৃষিপণ্য আমদানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার বাবুল বলেন, জটিলতার কারণে আমদানি করা পণ্য দু-তিন দিন আটকে ছিল। গত বৃহস্পতিবার সংশোধনীটি চট্টগ্রামে পৌঁছানোর পর রবিবার পণ্য খালাস করা হয়। অনেক পণ্য একসঙ্গে খালাস হওয়ার পর দাম অনেক পড়ে যায়।
আমদানিকারকরা দাম না বাড়ালেও খুচরা ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি মুনাফা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সম্পর্কে খন্দকার বাবুল বলেন, 'আমরা আদা আমদানি করি কেজিপ্রতি ৩৯ টাকা খরচ দিয়ে। এরপর ৪০ টাকা বিক্রি করতে পারলে পাঁচবার নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করি। কিন্তু সেই আদা ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে কিভাবে বিক্রি হয়, তা বোধগম্য নয়।'

No comments

Powered by Blogger.