ঘুষ নিয়েও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় ক্ষোভ-সাভারে তিতাস গ্যাসের কর্মীরা পিটুনির শিকার

রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারের জয়নাবাড়ী এলাকায় অবৈধ গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে বুধবার রাতে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন তিতাস গ্যাস সাভার অঞ্চলের বিপণন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে।


এদিকে বারবার ঘুষ নিয়েও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় জনতা খেপে গিয়ে হামলাটি চালায় বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মী দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকারও করেছেন তিতাসের আঞ্চলিক উপমহাব্যবস্থাপক।
সাভারে তিতাস গ্যাসের বিপণন বিভাগের অঞ্চলিক উপমহাব্যবস্থাপকের (ডিজিএম) কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানের একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় জয়নাবাড়ীর বেশ কিছু গ্রাহক অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করে আসছিলেন। বুধবার বিকেলে এসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় জনতা অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা চালায়। পরে রাত আটটার দিকে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে। হামলায় উপব্যবস্থাপক আফতাব উদ্দিন, উপব্যবস্থাপক আবু সাদাৎ মো. সায়েম ও মো. খাদেম উদ্দিন, সহকারী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ হাসান আল-মামুন ও মমতাজুল ইসলাম, উপসহকারী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, টেকনিশিয়ান হাবিবুর রহমান ও উন্নয়নকর্মী জাহাঙ্গীর আলম আহত হন। এর মধ্যে প্রকৌশলী মামুন ও টেকনিশিয়ান হাবিবুরকে সাভারের দ্বীপ ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
উপব্যবস্থাপক সায়েম জানান, অভিযানে স্থানীয় জমসের আলী, কোহিনূর বেগম, আবুল কাশেম, আবুল হোসেন, সুলতানা বেগম ও আবদুর রহমানসহ বেশ কয়েকজনের অবৈধ গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। সন্ধ্যার দিকে শামছুল হক নামের এক ব্যক্তির বাড়ির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে হামলার শিকার হন তাঁরা।
এদিকে অবৈধ গ্যাস-সংযোগ ব্যবহারকারী কোহিনূর, তাঁর ভাই মাসুদ, আমির হোসেনসহ অনেকে অভিযোগ করেন, তিতাসের আঞ্চলিক বিপণন বিভাগের সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সৈয়দ নাসির উদ্দিন, টেকনিশিয়ান গিয়াস উদ্দিন ও পরিদর্শক মিসবাহ উদ্দিন চুলাপ্রতি দেড় থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে তাঁদের এভাবে সংযোগ নেওয়ার সুযোগ করে দেন। ওই তিনজন মঙ্গলবারও স্থানীয় তাজুল ইসলামের বাড়ির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে আবার দুই লাখ টাকা দিলে তাঁকে সংযোগ দেওয়া হয়।
তেতুলঝোঁড়া ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য নাসির উদ্দিন জানান, বুধবার অভিযানে আসা নতুন লোকজন দেখে মুঠোফোনে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নাসিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে আসা দলকে ভুয়া বলে উল্লেখ করে তাঁদের গণপিটুনি দেওয়ার পরামর্শ দেন। এরপরই জনতা তাঁদের ওপর হামলা চালায়।
তবে তিতাসের অভিযুক্ত কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বুধবার অভিযান পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে পাল্টা দুর্নীতির অভিযোগ করেন। তাঁরা বলেন, বুধবার অভিযান পরিচালনাকারীরা ঘুষ খাওয়ার পাঁয়তারা করায় গণপিটুনির শিকার হয়। তবে অবৈধ সংযোগগুলো কারা দিয়েছে তা জানেন না বলে দাবি করেন তাঁরা।
ডিজিএম মো. আবদুল ওয়াহাব তালুকদার জানান, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে তিনিই বুধবার জয়নাবাড়ী এলাকায় দলটি পাঠান। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির কিছু দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে গ্রাহকদের ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও অমূলক নয় বলে জানান তিনি। ওই সব দুর্নীতিপরায়ণ কর্মীর ইন্ধনেই অভিযান পরিচালনাকারীদের ওপর হামলা হয়। তিনি আরও বলেন, ‘ওই তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযানে অংশগ্রহণকারীরা আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সাভার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান জানান, তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গণপিটুনির ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

No comments

Powered by Blogger.