পুরাকীর্তি ধ্বংসের উৎসব চলছে
মধ্যদিনে আধো ঘুমে আধো জাগরণে/বোধ করি স্বপ্নে দেখেছিনু_/আমার সত্তার আবরণ/খসে পড়ে গেল/অজানা নদীর স্রোতে' রবীন্দ্রনাথের সে সংশয়কে বাস্তবে পরিণত করে দিল নওগাঁর পতিসরের কালিগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশনের অদূরদর্শী স্কুল কমিটি। ১৯৩৭ সালের ২৭ জুলাই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সন্তান রথীন্দ্রনাথের নামে কালিগ্রাম
পরগনার হতদরিদ্র মানুষকে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন 'কালিগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন।' সে সময় থেকেই বিদ্যালয়ের মাটির ঘরটিতে পাঠদান চলে আসছিল। স্বাভাবিকভাবেই সে মাটির কাঠামো খানিকটা দুর্বল হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তা ধ্বংসস্তূপ হয়ে যায়নি। বিশ্বকবির স্মৃতি স্পষ্ট বহন করে চলছিল। হঠাৎ মঙ্গলবার স্কুল কমিটি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই এবং বিষয়টি নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা না করেই নতুন ঘর নির্মাণের প্রয়োজনে সেটি সম্পূর্ণরূপে ভেঙে ফেলেছে। প্রশ্ন অনেক থাকে। এ মূল্যবান স্থাপনাটি এত দিন জেলা প্রশাসন কেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেনি। কেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্থাপিত এ মূল্যবান স্থাপনাকে নিজেদের উদ্যোগে সংরক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণের তাগিদ অনুভব করেনি? জানা গেছে, যে কমিটি এ মূল্যবান স্থাপনা ভেঙে ফেলল, সেটিকে এ সম্পাদকীয় লেখার সময় পর্যন্ত জেলা প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট কোনো মহল থেকে কোনো প্রশ্ন করা হয়নি। প্রত্নসম্পদ নিয়ে জগদ্বিখ্যাত মানুষদের স্মৃতিবিজড়িত ভিটেমাটি নিয়ে এমন অবহেলা আর কত হতে থাকবে? মাত্র কিছুদিন আগে বগুড়ার মহাস্থানগড়ে ১৬০০ বছরের পুরনো নিদর্শন 'নেতাই ধোপানীর পাট'-এর মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ করেন স্থানীয় থানা ও ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগ নেতারা। খননকালে মূল্যবান পুরাকীর্তিগুলো এলাকার লোকজন অবহেলার সঙ্গে কুড়িয়ে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশের পর আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে সংশ্লিষ্ট ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের তলব করেন। এমন ঘটনা দেখেও কোন মানসিকতা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের স্থাপিত একটি কাঠামো বিনা আলোচনায়, বিনা সিদ্ধান্তে ভেঙে ফেলা হলো_তা কারো বোধগম্য নয়। জানা গেছে, এ কমিটিরও কর্তাব্যক্তিরা আওয়ামী লীগ নেতা।
আমরা হতাশার সঙ্গে লক্ষ করছি, দুই বাংলার অসংখ্য খ্যাতনামা, প্রতিভাবান কবি, শিল্পী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী ও সমাজ সংস্কারকের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি, সমাধিস্থলসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেহাত হয়ে গেছে এবং অবশিষ্ট যা রয়েছে তা-ও বেহাত হতে চলেছে। এসব দেখভাল করার দায়িত্ব কার? মনে হয়, কোথাও কেউ নেই। এমন পুরনো স্থাপনা ও পুরাকীর্তি টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। পৃথিবীতে এমন কোনো আত্মঘাতী জাতি এখন আর খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে জাতি তার মূল্যবান নিদর্শন বাংলাদেশের মতো ধ্বংস করে চলেছে। এর একটি বিহিত হওয়া একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
আমরা হতাশার সঙ্গে লক্ষ করছি, দুই বাংলার অসংখ্য খ্যাতনামা, প্রতিভাবান কবি, শিল্পী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী ও সমাজ সংস্কারকের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি, সমাধিস্থলসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেহাত হয়ে গেছে এবং অবশিষ্ট যা রয়েছে তা-ও বেহাত হতে চলেছে। এসব দেখভাল করার দায়িত্ব কার? মনে হয়, কোথাও কেউ নেই। এমন পুরনো স্থাপনা ও পুরাকীর্তি টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। পৃথিবীতে এমন কোনো আত্মঘাতী জাতি এখন আর খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে জাতি তার মূল্যবান নিদর্শন বাংলাদেশের মতো ধ্বংস করে চলেছে। এর একটি বিহিত হওয়া একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
No comments