সুখ by মোস্তাক চৌধুরী
কদিন ধরেই লিজার মন খারাপ। আজ একটু বেশিই। বিপাশা আপু যেন কী! সেই সকালবেলা বেরিয়েছে, এখনো কোনো খবর নাই। সন্ধ্যা নামল বলে। অথচ গত রাতে কত মিষ্টি মিষ্টি কথা—তোকে, ঐশীকে নিয়ে কাল বেড়াতে যাব। সাতসকালে ঘুম থেকে উঠে কাউকে কিছু না জানিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে নন্দন পার্ক গেছে।
মিথ্যুক! কাজের কাজ কিচ্ছু না, সারা দিন ঘুমানো, গান শোনা আর সুযোগ বুঝে ফাস্টফুড খাওয়া। এসবের মাঝে কিছুক্ষণ পরপর সেই একই ঢং—ঘুম পাচ্ছে রে...। তারপর এভারেস্টের সমান একটা হাই তোলা। আব্বু অবশ্য এই কারণে ওকে ঘুমপরি বলে ডাকে। আমার খুব ভালো লাগে নামটা। কিন্তু যে কথা দিয়ে কথা রাখে না, তার সুন্দর নাম হবে কেন? নাম হওয়া উচিত মিথ্যুক। আর তাকে বানিয়ে দেওয়া উচিত মিথ্যার সর্দারণী। দূর ছাই! একা একা কতক্ষণ ভালো লাগে? একটা টিয়া পাখি যদি থাকত, তা-ও ওর সঙ্গে কথা বলতে পারতাম। কিন্তু কে এনে দেবে? আপুর সময় হয় না, আর আব্বু? প্রশ্নই আসে না।
মন খারাপ থাকলে খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে লিজার। চোখ উপচে পানি পড়ে, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। তারপর বালিশে মুখ গুঁজে চুপচাপ শুয়ে থাকে। কিন্তু আজ কাঁদবে না বলেই ঠিক করেছে। কারণ, বড়দের কাঁদতে নেই। ছোট বোন ঐশীকে রোজ ভাত খাইয়ে দেয়, কত দায়িত্ব তার। মায়ের কথা মনে পড়ে তখন। মন খারাপ হয়ে যায়।
বিছানায় শুয়েই জানালার বাইরে তাকায় লিজা। এখন বিকেলবেলা। আর একটু পরে সূর্য ডুবলে অন্ধকার নেমে আসবে। অথচ আকাশের রং এখন নীল। নীল রং আম্মুর খুব প্রিয় ছিল।
লিজা, নামটা শুনতেই দরজার দিকে তাকায়। বিপাশা আপু দাঁড়িয়ে আছে। কখন ফিরল?
: এই সন্ধ্যার সময় শুয়ে আছিস?
: তোমার সঙ্গে কোনো কথা নেই।
: রাগ করেছিস?
: একটুও না।
: দেখে যা, তোর জন্য কী এনেছি।
ইচ্ছে করে, তবু চুপ করে শুয়ে থাকে। কী আর আনবে, চিকেন ফ্রাই, তা না হলে বার্গার। কিচ্ছু খাব না।
: আয় না জাদু, লক্ষ্মী আপু আমার। আমার সঙ্গে গেলে তোর ভালো লাগত না। সব বড়রা ছিল, কাউকে চিনিস না। কী করতি গিয়ে, বল? আচ্ছা ঠিক আছে, এর পরে তোকে নিয়ে যাব। আর কখনো এমন করব না। তোর জন্য টিয়া পাখি এনেছি।
: সত্যিই আপু! বলেই এক দৌড়ে সোজা ড্রইংরুম। সোফায় বসে খাঁচার দিকে তাকিয়ে আছে আব্বু। ঐশী খাবার দিতে ব্যস্ত। লাল ঠোঁট, শরীরের রং সবুজ। কী সুন্দর দেখতে! কিন্তু আব্বু এত গম্ভীর হয়ে বসে আছে কেন?
: আব্বু, তোমার মন খারাপ?
: হুঁ।
: কেন?
: কষ্ট হচ্ছে পাখিটার জন্য।
: কেন? কত্তো সুন্দর দেখতে!
: খাঁচার মধ্যে থাকতে ওর যে কষ্ট হচ্ছে, এটা বুঝতে পারছিস? তোকে যদি খাঁচার মধ্যে বন্দী করে রাখি, কেমন লাগবে তোর? তুই যে সারাক্ষণ অস্থির হয়ে থাকিস, ছুটে বেড়াস বাসাজুড়ে। সেই তুই যদি কোথাও বন্দী হয়ে যাস, তাহলে আমার কেমন লাগবে? তোর হই চই আর দৌড়াদৌড়ির স্বাধীনতার মাঝে যে আনন্দ—তাতেই তো আমার সুখ। পাখিটা ছেড়ে দে তোরা!
: না। না। না। কখনো না। ওকে আমার কাছে রাখব। অনেক আদর করব। ছাড়ব না। ছাড়ব না।
অনেক রাত হলো, তবু ঘুম আসছে না। আব্বুর কথাগুলো মনে পড়ছে। আব্বু আমার দৌড়াদৌড়ি আর আনন্দের স্বাধীনতাকে সুখ বলল কেন? খাঁচায় বন্দী হওয়ায় পাখিটা কি তাহলে অসুখী? আচ্ছা আমাকে যদি চারদেয়ালে বন্দী করে রাখা হয়, তাহলে আব্বু, বিপাশা আপু, ঐশীর কি খুব কষ্ট হবে? পাখিটার জন্যও কি তাহলে গাছ-আকাশ-নদী কান্না করছে? তাহলে পাখিটাকে খাঁচায় বন্দী করে আমি কি কোনো অন্যায় করলাম? কিন্তু আমি তো কখনো কোনো অন্যায় করি না। মিথ্যা কথা বলি না। কোনো খারাপ কাজ করি না।
অন্ধকার ঘরে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় লিজা। খাঁচাটা নিয়ে বারান্দায় যায়। খাঁচার দরজাটা খুলে দিতেই লাল-সবুজ টিয়া পাখি উড়ে গেল অন্ধকার আকাশে। রাস্তার নিয়ন আলোয় যতক্ষণ পাখিটাকে দেখা যায়, তাকিয়ে রইল। নিজের সুখ ছেড়ে দিল সবার জন্য।
মন খারাপ থাকলে খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে লিজার। চোখ উপচে পানি পড়ে, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। তারপর বালিশে মুখ গুঁজে চুপচাপ শুয়ে থাকে। কিন্তু আজ কাঁদবে না বলেই ঠিক করেছে। কারণ, বড়দের কাঁদতে নেই। ছোট বোন ঐশীকে রোজ ভাত খাইয়ে দেয়, কত দায়িত্ব তার। মায়ের কথা মনে পড়ে তখন। মন খারাপ হয়ে যায়।
বিছানায় শুয়েই জানালার বাইরে তাকায় লিজা। এখন বিকেলবেলা। আর একটু পরে সূর্য ডুবলে অন্ধকার নেমে আসবে। অথচ আকাশের রং এখন নীল। নীল রং আম্মুর খুব প্রিয় ছিল।
লিজা, নামটা শুনতেই দরজার দিকে তাকায়। বিপাশা আপু দাঁড়িয়ে আছে। কখন ফিরল?
: এই সন্ধ্যার সময় শুয়ে আছিস?
: তোমার সঙ্গে কোনো কথা নেই।
: রাগ করেছিস?
: একটুও না।
: দেখে যা, তোর জন্য কী এনেছি।
ইচ্ছে করে, তবু চুপ করে শুয়ে থাকে। কী আর আনবে, চিকেন ফ্রাই, তা না হলে বার্গার। কিচ্ছু খাব না।
: আয় না জাদু, লক্ষ্মী আপু আমার। আমার সঙ্গে গেলে তোর ভালো লাগত না। সব বড়রা ছিল, কাউকে চিনিস না। কী করতি গিয়ে, বল? আচ্ছা ঠিক আছে, এর পরে তোকে নিয়ে যাব। আর কখনো এমন করব না। তোর জন্য টিয়া পাখি এনেছি।
: সত্যিই আপু! বলেই এক দৌড়ে সোজা ড্রইংরুম। সোফায় বসে খাঁচার দিকে তাকিয়ে আছে আব্বু। ঐশী খাবার দিতে ব্যস্ত। লাল ঠোঁট, শরীরের রং সবুজ। কী সুন্দর দেখতে! কিন্তু আব্বু এত গম্ভীর হয়ে বসে আছে কেন?
: আব্বু, তোমার মন খারাপ?
: হুঁ।
: কেন?
: কষ্ট হচ্ছে পাখিটার জন্য।
: কেন? কত্তো সুন্দর দেখতে!
: খাঁচার মধ্যে থাকতে ওর যে কষ্ট হচ্ছে, এটা বুঝতে পারছিস? তোকে যদি খাঁচার মধ্যে বন্দী করে রাখি, কেমন লাগবে তোর? তুই যে সারাক্ষণ অস্থির হয়ে থাকিস, ছুটে বেড়াস বাসাজুড়ে। সেই তুই যদি কোথাও বন্দী হয়ে যাস, তাহলে আমার কেমন লাগবে? তোর হই চই আর দৌড়াদৌড়ির স্বাধীনতার মাঝে যে আনন্দ—তাতেই তো আমার সুখ। পাখিটা ছেড়ে দে তোরা!
: না। না। না। কখনো না। ওকে আমার কাছে রাখব। অনেক আদর করব। ছাড়ব না। ছাড়ব না।
অনেক রাত হলো, তবু ঘুম আসছে না। আব্বুর কথাগুলো মনে পড়ছে। আব্বু আমার দৌড়াদৌড়ি আর আনন্দের স্বাধীনতাকে সুখ বলল কেন? খাঁচায় বন্দী হওয়ায় পাখিটা কি তাহলে অসুখী? আচ্ছা আমাকে যদি চারদেয়ালে বন্দী করে রাখা হয়, তাহলে আব্বু, বিপাশা আপু, ঐশীর কি খুব কষ্ট হবে? পাখিটার জন্যও কি তাহলে গাছ-আকাশ-নদী কান্না করছে? তাহলে পাখিটাকে খাঁচায় বন্দী করে আমি কি কোনো অন্যায় করলাম? কিন্তু আমি তো কখনো কোনো অন্যায় করি না। মিথ্যা কথা বলি না। কোনো খারাপ কাজ করি না।
অন্ধকার ঘরে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় লিজা। খাঁচাটা নিয়ে বারান্দায় যায়। খাঁচার দরজাটা খুলে দিতেই লাল-সবুজ টিয়া পাখি উড়ে গেল অন্ধকার আকাশে। রাস্তার নিয়ন আলোয় যতক্ষণ পাখিটাকে দেখা যায়, তাকিয়ে রইল। নিজের সুখ ছেড়ে দিল সবার জন্য।
No comments