ব্যবসাতে ফিলিস্তিনি নারীরা

শেরিন জিয়াদেহর (২৪) একসময়ের স্বপ্ন ছিল একটি নাচের স্টুডিও দেবেন। আগে হলে হয়তো এটি স্বপ্নই থেকে যেত। কিন্তু বিরজেইত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শেরিন এ সময়কার ফিলিস্তিনি নারী। তিনি এখন পশ্চিম তীরে রামাল্লাহ ব্যালে সেন্টার নামের একটি স্টুডিওর গর্বিত মালিক। পশ্চিম তীরে এটিই প্রথম এ রকম একটি নাচের স্টুডিও।


এখানে সারাক্ষণই ভেসে বেড়ায় শাস্ত্রীয় সংগীতের সুর, মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত বসানো আয়নায় বিম্বিত হয় গোলাপি পোশাক পরা পরির ডানা লাগানো ছোট মেয়েদের ব্যালে নাচের মুদ্রা।
শুধু এ ব্যালে স্টুডিওটিই নয়, রামাল্লায় এখন ফলের দোকান থেকে শুরু করে ক্যাফেটেরিয়া পর্যন্ত চালাচ্ছেন নারীরা। জিয়াদেহ জানান, পশ্চিম তীরের নারীরা এখন কিছু না কিছু করতে চান। তাঁরা ছোট ছোট পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে কিছু করার চেষ্টাও করছেন। তবে ফিলিস্তিনি সংস্কৃতি মূলত পুরুষনিয়ন্ত্রিত। তাছাড়া পশ্চিম তীরের প্রবেশপথগুলোতে ইসরায়েলি বাধাও নারীদের দিনবদলের এ চেষ্টাকে কঠিনতর করে তুলছে। রামাল্লাহ ব্যালে সেন্টারের কর্ণধার আরও বলেন, ‘আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে চাই মেয়েরা এগিয়ে আসুক। ব্যালে জীবন সম্পর্কে তাদের উন্নত দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। ফিলিস্তিনি নারীদের জন্য এ রকম কর্মকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ত করা দরকার।’
২০১০ সালে রামাল্লায় গড়ে তোলা হয় এনআইএসএএ এফএম রেডিও। নারীকর্মী পরিচালিত এ রেডিওটি মূলত স্থানীয় নারী উদ্যোক্তাদের সাফল্য-সম্পর্কিত সংবাদ ও অনুষ্ঠান পরিচালনা করে। এরই মধ্যে রামাল্লাহর শীর্ষ পাঁচ বেতারের মধ্যে উঠে এসেছে এটির নাম। এনআইএসএএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওদেহ গাঙ্গাত বলেন, ‘নারী ব্যবসায়ী হওয়ার জন্য ফিলিস্তিনি নারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতেই আমরা কাজ করছি। এটি দরকার।’
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) হিসাব অনুযায়ী, ২০০৮-০৯ সালে পশ্চিম তীরের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র পাঁচ ভাগের প্রধান ছিলেন নারী। কিন্তু আর্থিক অগ্রগতি ও ব্যাংকঋণ সুবিধার কারণে পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে। দিন দিন এখানে নারী ব্যবসায়ীদের হার বাড়ছে। নারী শিক্ষা ও নারীকর্মীর হারও বেড়েছে। পশ্চিম তীরের পুলিশ বাহিনীতে যুক্ত করা হচ্ছে নারী ইউনিট। তা ছাড়া ফিলিস্তিনি মন্ত্রিসভার এক-চতুর্থাংশই এখন নারী। গত দুই দশকে কর্মক্ষেত্রে ফিলিস্তিনি নারীদের অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে। ফিলিস্তিনি সেন্ট্রাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকসের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৯৫ সালে কর্মক্ষেত্রে এখানকার নারীদের অংশগ্রহণের হার ছিল ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। সেটি এখন বেড়ে হয়েছে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
জিয়াদেহ বলেন, ‘আমরা বিশ্বকে জানাতে চাই, ফিলিস্তিনি নারীরাও পারে।’ রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.