গলা চেপে ধরাই তাঁর স্বভাব!

নাম তাঁর আবদুল জলিল ভূঁইয়া। তিনি যশোরের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। আলোচিত এই ওসি এবার এক সাংবাদিকের গলা চেপে ধরলেন। এর আগে চারদলীয় জোটের ডাকা হরতাল চলাকালে তিনি একইভাবে যশোর জেলা ছাত্রদলের এক নেতার গলা চেপে ধরেছিলেন।


গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের দুর্নীতি ও জনদুর্ভোগের বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে একুশে টেলিভিশনের যশোর জেলা প্রতিনিধি শিকদার খালিদ ওসি আবদুল জলিলের হাতে লাঞ্ছিত হন। এ ছাড়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাসুম হাসান সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিবাদে সাংবাদিকেরা জরুরি বৈঠক করে ওসি জলিলকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া এবং সহকারী পরিচালককে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।
সাংবাদিক খালিদ প্রথম আলোকে জানান, গতকাল দুপুরে তিনি পাসপোর্ট কার্যালয় চত্বরে গিয়ে দেখতে পান, দালাল এবং কার্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীদের একটি দল পাসপোর্ট করতে আসা মানুষের ওপর নির্বিচারে লাঠি চালাচ্ছে। এ দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করার সময় সহকারী পরিচালক মাসুম হাসান কার্যালয়ের দোতলা থেকে জানালা দিয়ে চিৎকার করে ক্যামেরা বন্ধ করতে বলেন। এ নির্দেশ না শোনায় ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি তাঁর পশ্চাদ্দেশ ঘুরিয়ে বলেন, ‘আপনারা এর ছবি তোলেন, পারলে কিছু করে নিয়েন।’ এ সময় তিনি কার্যালয়ের কর্মচারীদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘ওদের ধরে নিয়ে আয়।’ একপর্যায়ে দোতলা থেকে সাংবাদিকদের উদ্দেশে জুতা ছুড়ে মারা হয়। এরপর কার্যালয়ের ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বিষয়টি জানাজানি হলে যশোর প্রেসক্লাবের সভাপতি মিজানুর রহমান ও সম্পাদক আহসান কবীরের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জন সাংবাদিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে ছুটে যান। উপস্থিত সাংবাদিকেরা সহকারী পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে কার্যালয়ের ভেতরে যেতে চান। তবে ফটক খোলা হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এরই মধ্যে যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুল জলিল ভূঁইয়া কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষের ওপর চড়াও হন। পুলিশের সঙ্গে কয়েকজন দালালও এ হামলায় অংশ নেয়। একপর্যায়ে ওসি আবদুল জলিল ভূঁইয়া একুশে টেলিভিশনের যশোর প্রতিনিধি শিকদার খালিদের গলা চেপে ধরেন। আলোচিত এই ওসি এর আগে গত ১৭ মে হরতাল চলাকালে যশোর জেলা ছাত্রদলের এক নেতার গলা চেপে ধরেছিলেন। সেই ছবি পরের দিন প্রথম আলোর প্রথম পাতায় ছাপা হয়।
তবে ওসি আবদুল জলিল ভূঁইয়া অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাউকে গলা ধরা হয়নি। তার পরও ভুল করে থাকলে অবশ্যই আমি সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চাইব।’
জানতে চাইলে যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাসুম হাসান অভিযোগ অস্বীকার প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল বলে ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে কাউকে লাঞ্ছিত বা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়নি।
এদিকে ওসির হাতে সাংবাদিক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে গতকাল তাৎক্ষণিকভাবে এক জরুরি বৈঠকে বসেন সাংবাদিকেরা। বৈঠক থেকে আগামী রোববারের মধ্যে সহকারী পরিচালক মাসুম হাসানকে অপসারণ ও ওসি আবদুল জলিল ভূঁইয়াকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানানো হয়। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচির হুমকি দেওয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.