অবিভক্ত বাংলার সংসদে by এম এ মোমেন

অখ- বাংলার সংসদেও দ্বন্দ্ব ছিল, ওয়াক আউট ছিল। রক্তারক্তির ঘটনা ঘটেনি, লাগাতার বর্জনও না। হতে পারে, বাংলা সরকার সীমাহীন ক্ষমতার অধিকারী ছিল না বলেই সদস্যরা যথেষ্ট সংযমের পরিচয় দিতেন। এই নিবন্ধটিতে বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল (১৯২১-১৯৩৬) এবং বেঙ্গল লেজিসলেটিভ এ্যাসেম্বলিতে (১৯৩৭-১৯৪৭) উত্থাপিত কিছু প্রশ্নোত্তর ও আলোচনা সংক্ষিপ্ত ও অনূদিত আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে।


১৯২১-১৯৩৬-এ গভর্নর বা ছোট লাটের কাউন্সিলে চারজন সদস্যই ছিলেন এমন চালিকাশক্তি। সংসদের প্রশ্নোত্তরের মূল ভার ছিল তাদেরই ওপর। দুজন বা তিনজন মন্ত্রী থাকতেন। গৌণ বিভাগগুলোই তাঁদের দেওয়া হতো। কাউন্সিল আমলের সনের বছর যারা মন্ত্রী ছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন; সুরেন্দনাথ ব্যানার্জি, নওয়াব আলী চৌধুরী, প্রবাস চন্দ্র মিত্র, একে ফজলুল হক, এ কে গজনবী, এসএন মল্লিক, রাজা প্রমথ রায় চৌধুরী, নবাব মোশারফ হোসেন, কুমার শিব শেখরেশ্বর রায়, কেজিএম ফারুকী, খাজা নাজিমউদ্দিন প্রমুখ।
প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন নিয়ে নতুন পর্ব শুরু হয় ১৯৩৭-এ; ১৯৪৭ এর ১৩ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত তাকে। এসময় মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন একে ফজলুল হক, খাজা নাজিমউদ্দীন এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
ভারত শাসন আইন ১৯১৯, ১৯৩৫ সংসদীয় কার্যক্রম ইংরেজিতে পরিচালনা করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। তা পালিতও হয়। শেষদিকে এসে বাধ্যবাধকতা একটু একটু করে ভাবতে থাকে। মওলানা ভাসানী স্পিকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সদর সাহেব, বাংলার কথা বলতে চাই। দৈবচয়নের মাধ্যমে ১৯২১-১৯৪৭ সময়কালের কিছু প্রশ্নোত্তর শনাক্ত করা হয়েছে। এসব প্রশ্নোত্তর ও আলোচনায় সেকালের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ইতিহাসের উপাদান খুঁজে পাওয়া যাবে।

ধোলাইখালের অস্বাস্থ্যকর অবস্থা
৭ ফেব্রুয়ারি ১৯২১।
রায় পিয়ারি লাল ডস বাহাদুর সেচ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যকে জিজ্ঞেস করলেন;
ক) ঢাকা শহরের ভেতর ধোলাইখালের একটি অংশ যে প্রবাহিত হচ্ছে সে সম্পর্কে সরকার কি অবহিত?
খ) দায়ত্বিপ্রাপ্ত সদস্য কি জানেন শুকনো মৌসুমে ঢাকা শহরের ভেতরে ধোলাই খালের সেই অংশ দীর্ঘ একটি নর্দমায় পরিণত হয় এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়?
গ) এই খালটিকে কেটে চালু রাখার জন্য কোন ব্যবস্থা সরকার গ্রহণ করছে?
চার সদস্যের অন্যতম বর্ধমানের মহারাজা বিজয় চন্দ্র মাহতাব জবাব দিলেন;
ক) ঢাকা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়া ধোলাইখালের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সরকার অবহিত।
খ) সরকার অবহিত যে গ্রীষ্ম মৌসুমে ঢাকা পৌরসভার অন্তর্গত অংশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠে।
গ) ধোলাইখাল প্রকল্পের জন্য নিয়োজিত নির্বাহী প্রকৌশলী রায় শৈলেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি বাহাদুর খাল খনন করার স্কিম দাখিল করেছেন। সরকার তা বিবেচনাও করেছে; কিন্তু তহবিল এবং সেচ বিভাগের কর্মকর্তার অভাবে কাজটিতে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। খুব শিগগির তা শুরু করা যাবে বলে মনে হচ্ছে না।
দশ বছর পর ১৯৩১ সালেও একই প্রসঙ্গ কাউন্সিলে উপস্থাপন করা হয়। ততদিনে ধোলাইখালের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। তখনকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য স্যার আবদেল করিম গজনবী জানান, ধোলাইখাল প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ১৩,৪৪,২৫৯ টাকা। ঢাকা পৌরসভার চেয়ারম্যান খাজা নাজিমউদ্দিন এবং ভাইস চেয়ারম্যান রায় কেশব চন্দ্র ব্যানার্জি এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ঢাকাবাসীদের নিয়ে গভর্নরের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন। কিন্তু প্রকল্পের অনুকূলে কোন অর্থ ছাড় হয়নি।
এক সময় খালটি শুকিয়ে যায়। এখন তো নিশ্চিহ্ন।

বাংলার জেলখানায়
২৬ আগস্ট ১৯৩৫। স্বরাষ্ট্রের (রাজনৈতিক বিভাগ) দায়িত্বপ্রাপ্তকে মন্ত্রীকে মৌলভি আবদুস সামাদের প্রশ্ন :
ক) ১. ১৯৩৩, ১৯৩৪ এবং ১৯৩৫ এর জুলাই পর্যন্ত বাংলার সেন্ট্রাল জেল, ডিস্ট্রিক্ট জেল এবং সাব-জেলগুলোতে নারীও দেওয়ানি মামলার কয়েদি বাদে অন্তরীণ কয়েদির গড় সংখ্যা কত?
এই দুই শ্রেণী বাদে বাংলার জেলখানাসমূহের মোট ধারণক্ষমতা কত?
খ) এটা কি সত্য যে বাংলার জেলখানাগুলোতে কয়েদির স্থান সঙ্কুলান হয় না?
গ) যদি তাই হয় তাহলে এই সমস্যা লাঘবের জন্য সরকার কি করার কথা ভাবছে?
দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য আর এন রিডের জবাব :
ক) ১. গড়পড়তা কয়েদির সংখ্যা :
১৯৩৩ ১৯৩৪ জুন ১৯৩৫ পর্যন্ত
সেন্ট্রাল জেল ৮৫৩৫.৯৫ ৯০১৩.০০ ৯০২২.৮১
ডিস্ট্রিক্ট জেল ৭৬৭৮.৬৮ ৭৯৬৯.৭৬ ৭৯০৯.৫৫
স্পেশাল জেল ২৩৩৬.৪১ ১৮১৮.০০ ২২৭৫.৫৫
সাব জেল ২৩৮০.৩২ ২৫৫৬.০১ ২৪১৯.৯৩
২০৯৩১.৩৬ ২১৩৫৬.৭৭ ২১৬২৭.৮৪

২. হাসপাতাল ও পর্যবেক্ষণের সেলের ধারণক্ষমতাসহ মোট ধারণক্ষমতা ১৯৪১৮।
খ) হ্যাঁ।
গ) সরকার আর একটি কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণের কথা বিবেচনা করছে।

আন্দামানে দ্বীপান্তর
২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৩।
সতীশ চন্দ্র রায় চৌধুরী রাজনৈতিক (জেল) বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যকে জিজ্ঞেস করলেন :
ক) জানুয়ারি ১৯৩২ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৩ পর্যন্ত মোট কতজনকে বাংলা থেকে আন্দামানে চালান দেওয়া হয়েছে?
খ) আন্দামানে চালানের জন্য সর্বনিম্ন সাজার মেয়াদ কত?
গ) এ পর্যন্ত চালান দেওয়া সবচেয়ে কমবয়সী কয়েদির বয়স কত?
দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য স্যার প্রভাস চন্দ্র মিত্রের জাবাব;
ক) ৮২ জন
খ) সর্বনিম্ন মেয়াদ ৫ বছর। তবে ৪ বছর সাজাপ্রাপ্ত একজন কয়েদি রয়েছে।
গ) সবচেয়ে কম বয়সী কয়েদির বয়স ১৬ বছর ২ মাস।
সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, কয়েদিদের বয়সের প্রশ্নে কোন বিধিনিষেধ নেই। চার বছর সাজা পাওয়া একজন কয়েদি আন্দামানে থাকার কারণ ন্যূনতম পাঁচ বছর সাজার আইন বলবৎ হবার আগে থেকেই সে এখানে আছে। সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সাথে জড়িত এবং রাজনৈতিক ধরনে গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্তদের আন্দামানে পাঠানো হয়ে থাকে। আন্দামানের কয়েদিদের শ্রেণীগত মর্যাদা রয়েছে। যখন প্রশ্নোত্তর করা হচ্ছে তখন আন্দামানে প্রথম শ্রেণীর কোন কয়েদি নেই। দ্বিতীয় শ্রেণীর কয়েদির সংখ্যা ৪৮ এবং তৃতীয় শ্রেণীর কয়েদি ৩৪ জন।

ষাট বছর আগে পত্রিকার সার্কুলেশন
২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৪২।
বেঙ্গল লেজিসলেটিভ এ্যাসেম্বলির সদস্য কে. নুরুদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে প্রচারণা দফতরের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী ও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী একে ফজলুল হক বাংলা সরকার যে সব পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় তার নাম ও প্রচারসংখ্যা হাউসকে জানালেন :

পত্রিকার নাম প্রচার সংখ্যা
১. স্টেটসম্যান ৫০,০০০
২. স্টার অব ইন্ডিয়া ১১,০০০
৩. অমৃতবাজার পত্রিকা ৩০,৫৪৫
৪. হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড ২৫,০০০
৫. এ্যাডভান্স ২৬,০০০
৬. ক্যালকাটা এক্সচেঞ্জ গেজেট ১,৬০০
৭. আনন্দবাজার পত্রিকা ৬৫,৬৭৯
৮. আজাদ ১৯,০০০
৯. নয়াযুগ ৭,০০০
১০. যুগান্তর ৩২,৩৮৮
১১. ভারত ১০,০০০
১২. আমর-ই-জাদিদ ২,০০০
১৩. বিশ্বচিত্র ২০,০০০
১৪. লোকমান্য ১,০০০
১৫. রোজানা হিন্দ ২,৩০০

বিতর্ক জমে উঠে নয়াযুগ নিয়ে। প্রচারসংখ্যা ৭০০০ হলেও সরকারি বিজ্ঞাপন বেশি নয়াযুগ। আবদুল লতিফ বিশ্বাস জিজ্ঞেস করলেন;
এ কে ফজলুল হকই এ পত্রিকার মালিক।
স্পিকার আর এগোতে দিলেন না। চললেন, এ প্রশ্ন অবান্তর।

অবিভক্ত বাংলার বাজেট
২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের বাজেট ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকার; এটি একটি ঘাটতি বাজেট। ঘাটতি পড়বে ৫২ হাজার ৬৮ কোটি টাকার।
১৯২৬-২৭ অর্থবছরে বাংলা সরকারের আয় ধরা হয় ১০ কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। ব্যয় ধরা হয় ১০ কোটি ৯৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা। এই ব্যয় আগের বছরের চেয়ে ৩০ লাখ টাকা বেশি। কিন্তু ১৯২৫-২৬ অর্থবছরে ২ কোটি ২৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা উদ্বৃত্ত থাকার বাড়তি ব্যয় মিটিয়েও সরকারের হাতে পর্যাপ্ত উদ্বৃত্ত থেকে যায়।
১৯২৬-২৭ অর্থবছরে ভূমি জরিপ কাজ ব্যয় বাড়ানো হয়, পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টরের বেতন বাড়ে দুই টাকা। দামোদর খালে বড় বিনিয়োগ করা হয়। ভৈরব নদী ও মাদারীপুর বিলে ড্রেজিং কর্মসূচি নেওয়া হয়। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়। সে সময় লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, একে ফজলুল হক, শরৎচন্দ্র বসু, বিমল রায়ের মতো নেতা।
বাজেট পেশ করেন অর্থ-বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য জে ডোনাল্ড। বাজেট উপস্থাপনের শুরুতে প্রেসিডেন্ট (স্পিকার) কুমার শিব শেখরেশ্বর রায় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। তিনি এক পর্যায়ে চলে গেলে ডেপুটি প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ আল মামুন সোহরাওয়ার্দী সভাপতির আসনে বসেন।

ফিলিপ হার্টগের বিশ্ববিদ্যালয়
একজন বাঙালি যদি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর হতে পারেন তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিলেতি ভাইস চ্যান্সেলর লাগবে কেন? ১৯২১-এ যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় আশুতোষ মুখার্জি তখন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর। তারও আগে গুরুদাস ব্যানার্জি কিংবা নীলরতন সরকার ভাইস চ্যান্সেলর হিসাবে বিলেতিদের চেয়ে খারাপ চালিয়েছেন?
এমনিতেই ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় অনেককেই অসন্তুষ্ট করেছে, অসন্তোষ আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন বিলেতি ভাইস চ্যান্সেলর ডক্টর ফিলিপ জোসেফ হার্টগ এবং আরও ক’জন বিলেতি অধ্যাপক। দেড়শত টাকায় যদি কলিকাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো অধ্যাপক পাওয়া যায় ঢাকার অধ্যাপককে দু’হাজার টাকা কেন দিতে হবে? বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের ১৯২১ ও ১৯২২-এর বিভিন্ন অধিবেশনে এ প্রশ্নগুলো ফিরে ফিরে এসেছে।

১৯২০ সালে ইন্ডিয়ান লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে পাস হয়
দ্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি এ্যাক্ট সে আইনেই সেসব বিদেশি ও ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমমানের বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে মর্যাদা দেওয়া হয় তার তালিকা :
বিদেশী
এবারডিন বিশ্ববিদ্যালয় লিডস বিশ্ববিদ্যালয়
বেলফাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়
বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব আয়ারল্যান্ড
ডাবলিন বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়
এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় সেইট এ্যান্ডুজক বিশ্ববিদ্যালয়
ওয়েলশ বিশ্ববিদ্যালয় গ্লামগো বিশ্ববিদ্যালয়

ভারতীয়
কলিকাতার বিশ্ববিদ্যালয় মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়
বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয় চেনারম হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়
পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়
এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় উসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়
লক্ষেèৗ বিশ্ববিদ্যালয় আগ্রা বিশ্ববিদ্যালয়
মহিপুর বিশ্ববিদ্যালয় অন্নামালয় বিশ্ববিদ্যালয়
রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয় নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয়

১২ মার্চ ১৯২২ কাউন্সিল অধিবেশনে বরিশালের ফজলুল করিমের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য প্রফুল চন্দ্র মিত্র ১৯২১-২২ শিক্ষাবর্ষে অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বছরের শিক্ষার্থীর পরিসংখ্যান উপস্থাপন করেন।

ক্লাস মুসলমান অন্য সম্প্রদায়
১ম বর্ষ বিএ ৬৫ ১৩০
২ বর্ষ বিএ ৪৬ ১৮৫
১ম বর্ষ বিএসসি ২ ৬৫
২য় বর্ষ বিএসসি ১ ৩৫
১ম বর্ষ এমএ ২১ ৭৫
২য় বর্ষ এমএ ১ ১৭
১ম বর্ষ এমএসসি ১ ২১
২য় বর্ষ এমএসসি ০ ৯
১ম বর্ষ আইন ১৯ ৫৩
২য় বর্ষ আইন ১৭ ৫৮
৩য় বর্ষ আইন ৫ ৫১
বিটি ২১ ২৯
এলটি ৫ ১২
২০৪ ৭৪০

আবদুল হাকিম বিক্রমপুরীর প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী এ কে সহিদুল হক জানালেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৩৪৮ জন ছাত্র আবাসিক, ২৭৪ জন সংযুক্ত আর হলের বিছানার সংখ্যা ২৮৫।

ঢাকা রায়ট
১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৪৩। কাশিমবাজারের মহারাজ শ্রীশচন্দ্র নন্দী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, (ক) জুন ১৯৪৩-এ ঢাকায় ছুরিকাঘাতে যারা মৃত্যুবরণ করেছে তাদের ক’জন মুসলমান? এই সাম্প্রদায়িক সংঘাতের কারণ কি? এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে?
খ) এটা কি সত্য যে ঢাকা রায়ট তদন্ত কমিটি রিপোর্ট প্রণয়নের কাজ শেষে করেছে?
গ) এ রিপোর্ট জনগণকে অবহিত করা দরকার বলে কি সরকার মনে করে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে জবাব দিলেন খান বাহাদুর মোহাম্মদ আলী।
ক) ঢাকা রায়টে ১৪ জন হিন্দু ও ১৭ জন মুসলমান নিহত হয়েছে। সংঘাতের কারণ নিশ্চিত করা যায়নি। এ ধরনের ঘটনায় পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে ফৌজদারি কার্যাবলির ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে, রেস্তোরাঁ ও মাদকদ্রব্যের দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, গোষ্ঠীগত জরিমানার বিধান করা হয়েছে, সশস্ত্র এবং সাদা পোশাকের গার্ড নিয়োগ করা হয়েছে।
খ-গ) রিপোর্ট প্রণীত হয়েছে এবং বোমাবাজি করে নির্ধারিত মূল্যে এ রিপোর্ট কিনতেও পাওয়া যাচ্ছে।
অতুল চন্দ্র সেন বললেন, আপনি বলেছেন কারণ বের করা যায়নি। কখনো কি বের করা যাবে?
খান বাহাদুর বললেন, হয়তো যাবে।
কখন?
তা বলা সম্ভব হবে না, খান বাহাদুরের জবাব।

বাংলার এসডিওÑআইসিএস না বিসিএস
এসডিও সাহেব আইসিএস মানে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের সদস্য হলে মহকুমার মান বেড়ে যায়। কিন্তু আইসিএসের যোগান কম। যে স্থানটি দখল করে প্রাদেশিক সার্ভিসÑবেঙ্গল সিভিল সার্ভিসের সদস্যরা।
রায় রাধাচরণ পাল বাহাদুর ১৭ জানুয়ারি ১৯১২ নিয়োগ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য স্যার হেনরি লুই লারকে অনুরোধ করলেন : বাংলার বিভিন্ন জেলায় সাব ডিভিশনাল অফিসারের পদ এবং এসব পদ কারা অধিকার করে আছেনÑআইসিএস না বিসিএস তার একটি বিবরণী যেন অনুগ্রহ করে পেশ করেন।

ভারতীয় পুলিশ অফিসার বড় জেলায় দায়িত্ব পান না
৪ জুলাই ১৯২১।
কুমিল্লার (মুসলমান) প্রতিনিধি কে জি এম ফারুকী নিয়োগ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যকে জিজ্ঞেস করলেন :
ক) ভারতীয় কোন পুলিশ অফিসার কখনও নিচের জেলাগুলোর দায়িত্বভার পেয়েছেন কি?
২৪ পরগনা ঢাকা
হাওড়া ময়মনসিংহ
টিপারা (কুমিল্লা) দার্জিলিং
চট্টগ্রাম বাকেরগঞ্জ
মেদিনীপুর রাজশাহী
খ) যদি না পেয়ে থাকেন, তাহলে কেন?
গ) এটা কি সত্য যে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশের দুটো সহকারী পদ রয়েছে এবং এ পদ দুটোতে কখনও কোন ভারতীয়কে নিয়োগ করা হয়নি?
ঘ) যদি তা হয়ে থাকে, কেন?
ঙ) সিআইডির প্রধান ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশের সহকারী হিসেবে মরহুম খান বাহাদুর খোরশেদের সঙ্গে কোন ভারতীয় পুলিশ কমিশনার নিয়োগের কথা সরকার ভাবছে কি?
চ) সাতটি ডিআইজি পদের তিনটি এবং কোলকাতা পুলিশের, সাতটি ডেপুটি কমিশনার পদের তিনটিতে ভারতীয় পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগের কথা সরকার ভাবছে কি?
ছ) যদি না ভেবে থাকে, কেন?
জ) এটা কি সত্য এখন পর্যন্ত রেলওয়ে ও বিভার পুলিশের সুপারিনটেনডেন্ট পদে কোন ভারতীয় অফিসার নিয়োগ লাভ করেননি?
ঝ) যদি জ-এর উত্তর হাঁবোধক হয়ে থাকে তাহলে ভারতীয় অফিসার নিয়োগের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করছে কি?
ঞ) যদি না হয়ে থাকে, কেন?
জবাবে স্যার হেনরি হুইলার বললেন :
ক) ১৯০২-১৯০৪ সময়কালে একজন ভারতীয় পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট দেড় বছর ময়মনসিংহ জেলার দায়িত্বে ছিলেন। অন্য কোন ভারতীয় বর্ণিত জেলাগুলোর কোনটিতেই দায়িত্বপ্রাপ্ত হননি।
খ) অধিকাংশ ক্ষেত্রে কনিষ্ঠ হবার কারণে এবং পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে পদায়ন করা হয়নি।
গ) হ্যাঁ।
ঘ) বর্তমানে তা ভাবছে না।
ঙ) জ্যেষ্ঠতা, কেন, অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে সর্বাধিক যোগ্য প্রার্থীর পদায়ন হয়।
চ) একটি পদ সাময়িকভাবে একজন ভারতীয় অফিসারকে দিয়ে পূরণ করা হয়েছে।
ছ-জ) উত্তর ঙ-র অনুরূপ
ঝ-ঞ) রেলওয়েতে এমন কোন পদ নেই, বিভার পুলিশের একটি অস্থায়ী পদ রয়েছে। যোগ্যতা, ক্ষমতা, অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে পুলিশের ক্যাডার অফিসারদের মধ্য থেকে যেখানে পদায়ন করা হয়ে থাকে।

রাজনৈতিক কয়েদি কুমারী সুনীতি চৌধুরী
২১ মার্চ ১৯৩৮। মিসেস হেমপ্রভা মজুমদার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেনÑ
ক. এটা কি সত্যি যে, রাজনৈতিক কয়েদি মিস সুনীতি চৌধুরীকে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে দ্বিতীয় শ্রেণীর ডিভিশন দেয়া হয়েছে এবং প্রকৃত পক্ষে এই সুনীতি চৌধুরীকে সাধারণ মহিলা কয়েদিদের সাথে রাখা হয়েছে?
খ. এটা কি ঠিক শাস্তিস্বরূপ তাকে সাধারণ কয়েদিদের সাথে রাখা হয়েছে? তাহলে কি তার অপরাধ?
গ. সরকার কি তাকে দ্বিতীয় শ্রেণীর ডিভিশনে অনুরূপ মর্যাদাপ্রাপ্ত মহিলা কয়েদিদের সাথে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে কিংবা অন্য কোথাও রাখার কথা ভাবছে?
ঘ. এটা কি ঠিক যে তাকে পত্রিকা ও ম্যাগাজিন দেয়া হয় না এবং তার কাছে পাঠানো কিছু বইও জেলখানা হতে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে?
ঙ. যদি তা করা হয়ে থাকে, কেন করা হয়েছে?
মন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন সব প্রশ্নের উত্তর একবারে দিলেন। বললেন, এই কয়েদিকে দ্বিতীয় শ্রেণী প্রদান করা হয়েছে, তিনি ঢাকা জেলে নেই, বর্তমানে কোন শাস্তির আওতায়ও নেই। তিনি বর্তমানে অন্যান্য মহিলা সন্ত্রাসীদের সাথে অবস্থা করছেন এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর সব সুবিধা ভোগ করছেন। সাধারণ কয়েদিদের সাথে তাকে রাখা হয়নি।
সুরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জিজ্ঞেস করলেন তাহলে তিনি এখন কোথায় আছেন? ডাক্তার নলিনাক্ষ স্যানাল জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কি মেদিনীপুর জেলে আছেন?
মন্ত্রী বললেন, হ্যাঁ মেদিনীপুর জেলে।
সুরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বললেন, তাহলে দ্বিতীয় শ্রেণীর কয়েদি হিসেবে প্রাপ্য ম্যাগাজিন ও সংবাদপত্র তিনি পাচ্ছেন না কেন?
মন্ত্রী বললেন, যখন তিনি তৃতীয় শ্রেণীর কয়েদি ছিলেন তখন পেতেন না।
দ্বিতীয় শ্রেণী পাবার পর এ অভিযোগ থাকার কথা নয়।
নগেন্দ্রনাথ সেন বললেন, দ্বিতীয় শ্রেণীর কয়েদি হয়ে তৃতীয় শ্রেণীর কয়েদিদের সাথে মেলামেশা কি জেল কোডের পরিপন্থী নয়?
মন্ত্রী বললেন, এখন তিনি কেবল দ্বিতীয় শ্রেণীপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী মহিলা কয়েদিদের সাথে মেলামেশা করতে পারছেন।

প্রভিন্সিয়াল অটোনমির মরীচিকা
২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪০।
বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে মিসেস হেমপ্রভা মজুমদার বাংলায় বললেন : দেখিতে দেখিতে আমাদের প্রভিন্সিয়াল অটোনমির আশা লইয়া এই মরীচিকার পশ্চাতে ছুটিয়াছিল, বুক ভরা ভরসা লইয়া ভোট দিয়া আমাদের দ্বারা আইনশালা ভর্তি করিতে (পোলাও, মাংস, কালিয়া, কোর্মা প্রভৃতি কত ফর্দই না পাইয়াছিল)। তৎপর পুলিশ অন্তত ডাল-ভাতে পেট ভরিবে। কিন্তু তৃতীয় বছরের শেষভাগে এক সন্ধ্যায় শুনিল, ডাল-ভাত যোগান বাবুর্চির কার্য, মন্ত্রীদের নহে। তারপর চতুর্থ বছরের আগমনী ফর্দের (বাজেটের) পৃষ্ঠাগুলিতে দেখা গেল ডাল-চালের তহবিলও ফুরাইয়া গিয়াছে এখন ভা- বজায় রাখিতে তাহাদের নতুন করিয়া ট্যাক্স দিতে হইবে। ডাল, ভাত প্রস্তুত করা যে বাবুর্চির কার্য তাহা সমাজের যে স্তর হইতে মন্ত্রী সংগৃহীত হইয়াছে, তাহাদের কয়েক গৃহে মাত্র হইয়া থাকে। কোটি কোটি দেশবাসীর গৃহে অন্নদাতৃ মাতৃশক্তি। এখন দেখা যাক যাহারা রন্ধনশালায় হাঁড়ি চড়াইয়া মন্ত্রীদের মুখের দিকে চাহিয়া অপেক্ষা করিতেছে সমাজের সেই কুলকু-লিনী শক্তি নারীদের জন্য বাজেটে কি বরাদ্দ আছে।
আজ বাংলার কোটি কোটি মা হাঁড়ি চড়াইয়া বুভুক্ষু সন্তানের মুখ চাহিয়া অপেক্ষা করিতেছে। এই জাগরণে মন্ত্রীম-ল যদি ধীরতা ও স্থিরতার সহিত গৃহশিল্পাদির সাহায্যে মাতৃশক্তির সহায়তায় অন্নসমস্যার মীমাংসা করিতে পারেন, তবে দেশে শান্তি সম্ভব। নতুবা পীড়নে মাতৃশক্তির জাগরণে যে প্রবল তরঙ্গ উঠিবে সে তরঙ্গ রুধিবে কে?

No comments

Powered by Blogger.