সরেজমিন : মিরপুর মডেল ও পল্লবী থানা-যা ইচ্ছা তা-ই চলে থানাহাজতে by তোফাজ্জল হোসেন রুবেল ও শরীফুল আলম সুমন
গত বুধবার সকাল ৭টা। মিরপুর মডেল থানার সামনে মলিন পোশাকে বসে কালশীর বাসিন্দা রিকশাচালক ইসমাইল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী। ছেলের বউয়ের দায়ের করা নারী নির্যাতন মামলায় তাঁদের সন্তান মিন্টুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আটক ছেলের জন্য কিছু খাবার নিয়ে এসেছেন তাঁরা। পুলিশ দিতে দেয়নি।
বলেছে, হাজতখানায় খাবার দিতে গেলে ১০০ টাকা লাগবে। কিন্তু তাঁদের কাছে আছে মাত্র চার টাকা। একই সময়ে পীরেরবাগের বাসিন্দা হোসনে আরা জানান, তিনি তাঁর এক আত্মীয়কে খাবার দিয়ে গেছেন। পুলিশ ৫০ টাকা নিয়েছে।
দুই প্রতিবেদক থানার ভেতরে ঢুকতেই হাজতখানার পাশ থেকে এক ব্যক্তি এসে জানালেন তাঁর নাম ইব্রাহীম তালুকদার। তিনি একজন আইনজীবীর সহকারী। কারো জামিন করাতে চাইলে খুবই অল্প টাকায় করে দেবেন। হাজতখানার ডিউটিতে ছিলেন কনস্টেবল রামদাস (বিপি নম্বর ১০১৬২)। প্রতিবেদক দুজন পরিচয় গোপন করে তাঁকে বলেন, 'মঙ্গলবার বিকেলে আমাদের ছোট ভাই মামুনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এ নামের কোনো ছেলে থানায় আছে কি না। রামদাসের জবাব, এটা জানতে হলে ১০০ টাকা লাগবে। ৪০ টাকায় রফা হলো। সকাল ৯টা ২০ মিনিটে তিনি হাজতের সামনে নিয়ে গেলেন। দেখা গেল, দুর্গন্ধময় পরিবেশে ৯ জন বন্দিকে রাখা হয়েছে। বন্দিদের সঙ্গে নিজের ফোনে কথা বলিয়ে দেওয়া হচ্ছে টাকার বিনিময়ে।
আবার আরেক বন্দিকে পাশের রুমে এনে ফ্যানের নিচে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
মহিলা ও শিশু হাজতখানাটি ব্যবহৃত হচ্ছে ডাম্পিং স্টেশন হিসেবে। বিভিন্ন ধরনের ভাঙাচোরা জিনিসপত্র রাখা হয়েছে; যদিও এটি একটি মডেল থানা। আশপাশের সব থানা থেকে মহিলা ও শিশুদের এখানেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সকাল ঠিক ১০টার সময় থানার সামনের মূল সড়কে এসে পৌঁছাল ঢাকা মেট্রো-ত-১১-১৩৬৮ নম্বরের প্রিজন ভ্যানটি। এই ভ্যানে ৯ জন বন্দি আছে। তাদের শাহ আলী ও পল্লবী থানা থেকে আনা হয়েছে। রাশাদ নামের এক বন্দি জানান, আগের দিন দুপুর ১২টায় রূপনগর থেকে শাহ আলী থানার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। এখন পর্যন্ত কোনো খাবার দেওয়া হয়নি। একই থানার আরেক বন্দি রাসেল জানান, তাঁর পকেটে ৬০০ টাকা ছিল। এক কনস্টেবল জোর করে টাকাটা নিয়ে গেছেন। শাহ আলী মার্কেটের ব্যবসায়ী ছাত্তার জানান, তাঁর বাসা থেকে খাবার দেওয়ার জন্য পুলিশকে টাকা দিতে হয়েছে। অবশেষে মিরপুর মডেল থানা থেকে ছয়জন বন্দিকে একসঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে আসা হলো। কিন্তু হাজতে সকালে ৯ জন থাকলেও বাকি তিনজন কোথায় গেল সে হদিস পাওয়া গেল না।
এরপর ডিউটি অফিসারের কক্ষে গেলে তাঁকে পাওয়া গেল না। এএসআই শিউলি খানম বলেন, 'স্যার আশপাশেই আছেন।' ডিউটি অফিসার এসআই আব্দুল লতিফকে ফোন করলে তিনি বলেন, 'বাইরে আছি, অপেক্ষা করেন।' প্রায় আধা ঘণ্টা পর তিনি এলেন। হাজতের অনিয়মের বিষয়ে তিনি ওসির সঙ্গে কথা বলতে বলেন। দুপুর সোয়া ১২টায় ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী থানায় আসেন। তিনি বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে বলেন, 'পিআরবি (পুলিশ রেগুলেশন বুক) মেনে থানা চালানো যাবে না। মালখানায় জায়গা না থাকায় মহিলা ও শিশু হাজতখানাটি মালখানা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কনস্টেবল রামদাসের ব্যাপারে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা। পল্লবী থানার হাজতে তখন আটক ১৩ জন। মিরপুর ৭ নম্বর এলাকার বাসিন্দা আহম্মদ আলী এসেছেন তাঁর ভাইকে খুঁজতে। তখন হাজতের দায়িত্বে ছিলেন কনস্টেবল সঞ্জয়। তিনি ৫০ টাকা দাবি করেন। দাবি অনুযায়ী টাকাও দেওয়া হয়। কিন্তু হাজতের সামনে তাঁকে যেতে দেওয়া নিয়ে শুরু হয় হট্টগোল। আরেক কনস্টেবল এসে সবাইকে শান্ত করেন। এই প্রতিবেদকরা পরিচয় গোপন করে ডিউটি অফিসারের সঙ্গে আলাপ করে একজনকে খোঁজার কথা বলে হাজতের সামনে যান। পুলিশের অনুপস্থিতিতে কথা হয় বন্দিদের সঙ্গে। আটক চঞ্চল জানান, তাঁকে সাড়ে ১১ নম্বর সেতারা কনভেনশন এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। আটকের পর থেকেই তিনি মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু এ নিয়ে পুলিশের কোনো মাথাব্যথা নেই। জসিম ও রকি নামের দুজন বন্দি জানান, স্যাঁতসেঁতে মেঝেতে দুর্গন্ধে বসা যায় না। বিকেল থেকে অর্ধেক রাত পর্যন্ত দাঁড়িয়েই থাকতে হলো।
রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিহারি ক্যাম্প এলাকা থেকে বোমাবাজির অপরাধে আটক করে আনা হলো দুজনকে। তাঁদের হাজতে না রেখে ডিউটি অফিসারের পাশের রুমে বসিয়ে রাখা হলো। আবার কিছুক্ষণ পর তাঁদের ছেড়েও দেওয়া হলো।
রাত ২টা। থানার হাজতে দেখা গেল বন্দির সংখ্যা ৮। বাকি পাঁচজনকে এর মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পল্লবী থানার ওসি আব্দুল লতিফ শেখ বলেন, 'এ থানায় একটি হাজতখানা রয়েছে। আর আটকদের ব্যাপারে থানায় রেজিস্টার মেনে হাজতে রাখা হয়।' হাজতের দায়িত্বে থাকা কনস্টেবল টাকার বিনিময়ে নানা ধরনের অনিয়ম করছেন এমন অভিযোগের জবাবে ওসি বলেন, 'এ ব্যাপারে তাদের নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। এর পরও যদি কেউ কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
মিরপুর জোনের পুলিশ উপকমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সব থানায় বন্দিদের তুলনায় হাজতের জায়গা কম রয়েছে। এসব বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। অভিযুক্ত কনস্টেবল রামদাসকে প্রত্যাহার করা হবে।' সর্বশেষ মিরপুর মডেল থানার ওসি জানান, অভিযুক্ত কনস্টেবল রামদাসকে তাৎক্ষণিকভাবে ক্লোজ করে ডিসি মিরপুর জোনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
পিআরবি মেনে থানা চালানো সম্ভব না- কয়েকটি থানার ওসিদের এমন মন্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পিআরবি পুলিশের একটি প্রবিধান। বাংলাদেশ পুলিশের কোনো সংস্থা বা সদস্যের এর বাইরে চলার সুযোগ নেই।'
১৮৬১ সালের পুলিশ প্রবিধানের ৫ নম্বর আইনের ৩২৭ নম্বর ধারার ক, খ এবং গ উপধারায় বলা আছে, 'প্রত্যেকটি হাজতখানায় প্রত্যেক বন্দির জন্য ৩৬ বর্গফুট স্থান থাকিতে হইবে। প্রত্যেকটি থানার হাজতখানার বাহিরে ইংরেজি এবং মাতৃভাষায় নোটিস টানাইয়া রাখিতে হইবে এবং ওই হাজতখানায় সর্বাধিক কতজন পুরুষ বা মহিলা বন্দিকে স্থান দেওয়ার জন্য সরকার অনুমতি প্রদান করিয়াছে তাহার সংখ্যা উল্লেখ করিয়া প্রকাশ্য স্থানে নোটিস টানাইয়া রাখিতে হইবে।'
কিন্তু মিরপুর মডেল থানা এবং পল্লবী থানার হাজতখানার সামনে এমন কোনো নোটিশ টাঙানো নেই। কতজন বন্দিকে রাখা যাবে সে বিষয়ে কোনো ধারণাই নেই সেখানকার কর্তব্যরত পুলিশের। পল্লবী থানায় ২২০ বর্গফুট জায়গায় ১৩ বন্দিকে রাখা হয়েছে। অথচ তাদের জায়গার দরকার ছিল ৪৬৮ বর্গফুট। মিরপুর মডেল থানার পুরুষ হাজতখানায় ২০০ বর্গফুট জায়গায় ৯ বন্দিকে রাখতে দেখা গেছে। তাদের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩২৪ বর্গফুট জায়গা।
প্রবিধানের ৫ নম্বর আইনের ৩২৯ ধারার ক এবং ঙ উপধারায় বলা হয়েছে, 'কোন বন্দির আগমনের পর ভারপ্রাপ্ত অফিসার উক্ত ঘটনার বিষয় জেনারেল ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করিবেন, একজন প্রহরীকে নির্দিষ্ট করিয়া দিবেন এবং একজন সহকারি ইন্সপেক্টর, একজন হেড কনস্টেবল বা একজন সিনিয়র কনস্টেবলকে কাজের দায়িত্ব দিবেন। হাজতখানার দরজা খুলিবার বা সেখান হইতে কোন বন্দিকে বাহিরে আনিবার প্রয়োজন হইলে থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসারকে ডাকিতে হইবে এবং প্রয়োজন হইলে অন্যান্য কনস্টেবলের সাহায্য লইতে হইবে।'
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উল্লিখিত দুটি থানার কোনোটিতেই এই বিধানের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। এমনকি এ সম্পর্কে ধারণাও নেই দায়িত্বরতদের।
দুই প্রতিবেদক থানার ভেতরে ঢুকতেই হাজতখানার পাশ থেকে এক ব্যক্তি এসে জানালেন তাঁর নাম ইব্রাহীম তালুকদার। তিনি একজন আইনজীবীর সহকারী। কারো জামিন করাতে চাইলে খুবই অল্প টাকায় করে দেবেন। হাজতখানার ডিউটিতে ছিলেন কনস্টেবল রামদাস (বিপি নম্বর ১০১৬২)। প্রতিবেদক দুজন পরিচয় গোপন করে তাঁকে বলেন, 'মঙ্গলবার বিকেলে আমাদের ছোট ভাই মামুনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এ নামের কোনো ছেলে থানায় আছে কি না। রামদাসের জবাব, এটা জানতে হলে ১০০ টাকা লাগবে। ৪০ টাকায় রফা হলো। সকাল ৯টা ২০ মিনিটে তিনি হাজতের সামনে নিয়ে গেলেন। দেখা গেল, দুর্গন্ধময় পরিবেশে ৯ জন বন্দিকে রাখা হয়েছে। বন্দিদের সঙ্গে নিজের ফোনে কথা বলিয়ে দেওয়া হচ্ছে টাকার বিনিময়ে।
আবার আরেক বন্দিকে পাশের রুমে এনে ফ্যানের নিচে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
মহিলা ও শিশু হাজতখানাটি ব্যবহৃত হচ্ছে ডাম্পিং স্টেশন হিসেবে। বিভিন্ন ধরনের ভাঙাচোরা জিনিসপত্র রাখা হয়েছে; যদিও এটি একটি মডেল থানা। আশপাশের সব থানা থেকে মহিলা ও শিশুদের এখানেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সকাল ঠিক ১০টার সময় থানার সামনের মূল সড়কে এসে পৌঁছাল ঢাকা মেট্রো-ত-১১-১৩৬৮ নম্বরের প্রিজন ভ্যানটি। এই ভ্যানে ৯ জন বন্দি আছে। তাদের শাহ আলী ও পল্লবী থানা থেকে আনা হয়েছে। রাশাদ নামের এক বন্দি জানান, আগের দিন দুপুর ১২টায় রূপনগর থেকে শাহ আলী থানার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। এখন পর্যন্ত কোনো খাবার দেওয়া হয়নি। একই থানার আরেক বন্দি রাসেল জানান, তাঁর পকেটে ৬০০ টাকা ছিল। এক কনস্টেবল জোর করে টাকাটা নিয়ে গেছেন। শাহ আলী মার্কেটের ব্যবসায়ী ছাত্তার জানান, তাঁর বাসা থেকে খাবার দেওয়ার জন্য পুলিশকে টাকা দিতে হয়েছে। অবশেষে মিরপুর মডেল থানা থেকে ছয়জন বন্দিকে একসঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে আসা হলো। কিন্তু হাজতে সকালে ৯ জন থাকলেও বাকি তিনজন কোথায় গেল সে হদিস পাওয়া গেল না।
এরপর ডিউটি অফিসারের কক্ষে গেলে তাঁকে পাওয়া গেল না। এএসআই শিউলি খানম বলেন, 'স্যার আশপাশেই আছেন।' ডিউটি অফিসার এসআই আব্দুল লতিফকে ফোন করলে তিনি বলেন, 'বাইরে আছি, অপেক্ষা করেন।' প্রায় আধা ঘণ্টা পর তিনি এলেন। হাজতের অনিয়মের বিষয়ে তিনি ওসির সঙ্গে কথা বলতে বলেন। দুপুর সোয়া ১২টায় ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী থানায় আসেন। তিনি বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে বলেন, 'পিআরবি (পুলিশ রেগুলেশন বুক) মেনে থানা চালানো যাবে না। মালখানায় জায়গা না থাকায় মহিলা ও শিশু হাজতখানাটি মালখানা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কনস্টেবল রামদাসের ব্যাপারে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা। পল্লবী থানার হাজতে তখন আটক ১৩ জন। মিরপুর ৭ নম্বর এলাকার বাসিন্দা আহম্মদ আলী এসেছেন তাঁর ভাইকে খুঁজতে। তখন হাজতের দায়িত্বে ছিলেন কনস্টেবল সঞ্জয়। তিনি ৫০ টাকা দাবি করেন। দাবি অনুযায়ী টাকাও দেওয়া হয়। কিন্তু হাজতের সামনে তাঁকে যেতে দেওয়া নিয়ে শুরু হয় হট্টগোল। আরেক কনস্টেবল এসে সবাইকে শান্ত করেন। এই প্রতিবেদকরা পরিচয় গোপন করে ডিউটি অফিসারের সঙ্গে আলাপ করে একজনকে খোঁজার কথা বলে হাজতের সামনে যান। পুলিশের অনুপস্থিতিতে কথা হয় বন্দিদের সঙ্গে। আটক চঞ্চল জানান, তাঁকে সাড়ে ১১ নম্বর সেতারা কনভেনশন এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। আটকের পর থেকেই তিনি মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু এ নিয়ে পুলিশের কোনো মাথাব্যথা নেই। জসিম ও রকি নামের দুজন বন্দি জানান, স্যাঁতসেঁতে মেঝেতে দুর্গন্ধে বসা যায় না। বিকেল থেকে অর্ধেক রাত পর্যন্ত দাঁড়িয়েই থাকতে হলো।
রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিহারি ক্যাম্প এলাকা থেকে বোমাবাজির অপরাধে আটক করে আনা হলো দুজনকে। তাঁদের হাজতে না রেখে ডিউটি অফিসারের পাশের রুমে বসিয়ে রাখা হলো। আবার কিছুক্ষণ পর তাঁদের ছেড়েও দেওয়া হলো।
রাত ২টা। থানার হাজতে দেখা গেল বন্দির সংখ্যা ৮। বাকি পাঁচজনকে এর মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পল্লবী থানার ওসি আব্দুল লতিফ শেখ বলেন, 'এ থানায় একটি হাজতখানা রয়েছে। আর আটকদের ব্যাপারে থানায় রেজিস্টার মেনে হাজতে রাখা হয়।' হাজতের দায়িত্বে থাকা কনস্টেবল টাকার বিনিময়ে নানা ধরনের অনিয়ম করছেন এমন অভিযোগের জবাবে ওসি বলেন, 'এ ব্যাপারে তাদের নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। এর পরও যদি কেউ কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
মিরপুর জোনের পুলিশ উপকমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সব থানায় বন্দিদের তুলনায় হাজতের জায়গা কম রয়েছে। এসব বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। অভিযুক্ত কনস্টেবল রামদাসকে প্রত্যাহার করা হবে।' সর্বশেষ মিরপুর মডেল থানার ওসি জানান, অভিযুক্ত কনস্টেবল রামদাসকে তাৎক্ষণিকভাবে ক্লোজ করে ডিসি মিরপুর জোনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
পিআরবি মেনে থানা চালানো সম্ভব না- কয়েকটি থানার ওসিদের এমন মন্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পিআরবি পুলিশের একটি প্রবিধান। বাংলাদেশ পুলিশের কোনো সংস্থা বা সদস্যের এর বাইরে চলার সুযোগ নেই।'
১৮৬১ সালের পুলিশ প্রবিধানের ৫ নম্বর আইনের ৩২৭ নম্বর ধারার ক, খ এবং গ উপধারায় বলা আছে, 'প্রত্যেকটি হাজতখানায় প্রত্যেক বন্দির জন্য ৩৬ বর্গফুট স্থান থাকিতে হইবে। প্রত্যেকটি থানার হাজতখানার বাহিরে ইংরেজি এবং মাতৃভাষায় নোটিস টানাইয়া রাখিতে হইবে এবং ওই হাজতখানায় সর্বাধিক কতজন পুরুষ বা মহিলা বন্দিকে স্থান দেওয়ার জন্য সরকার অনুমতি প্রদান করিয়াছে তাহার সংখ্যা উল্লেখ করিয়া প্রকাশ্য স্থানে নোটিস টানাইয়া রাখিতে হইবে।'
কিন্তু মিরপুর মডেল থানা এবং পল্লবী থানার হাজতখানার সামনে এমন কোনো নোটিশ টাঙানো নেই। কতজন বন্দিকে রাখা যাবে সে বিষয়ে কোনো ধারণাই নেই সেখানকার কর্তব্যরত পুলিশের। পল্লবী থানায় ২২০ বর্গফুট জায়গায় ১৩ বন্দিকে রাখা হয়েছে। অথচ তাদের জায়গার দরকার ছিল ৪৬৮ বর্গফুট। মিরপুর মডেল থানার পুরুষ হাজতখানায় ২০০ বর্গফুট জায়গায় ৯ বন্দিকে রাখতে দেখা গেছে। তাদের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩২৪ বর্গফুট জায়গা।
প্রবিধানের ৫ নম্বর আইনের ৩২৯ ধারার ক এবং ঙ উপধারায় বলা হয়েছে, 'কোন বন্দির আগমনের পর ভারপ্রাপ্ত অফিসার উক্ত ঘটনার বিষয় জেনারেল ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করিবেন, একজন প্রহরীকে নির্দিষ্ট করিয়া দিবেন এবং একজন সহকারি ইন্সপেক্টর, একজন হেড কনস্টেবল বা একজন সিনিয়র কনস্টেবলকে কাজের দায়িত্ব দিবেন। হাজতখানার দরজা খুলিবার বা সেখান হইতে কোন বন্দিকে বাহিরে আনিবার প্রয়োজন হইলে থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসারকে ডাকিতে হইবে এবং প্রয়োজন হইলে অন্যান্য কনস্টেবলের সাহায্য লইতে হইবে।'
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উল্লিখিত দুটি থানার কোনোটিতেই এই বিধানের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। এমনকি এ সম্পর্কে ধারণাও নেই দায়িত্বরতদের।
No comments