গ্যালারি বাসিলিও-ইন্দো-বাংলা চিত্রপ্রদর্শনী by জাফরিন গুলশান
প্রসঙ্গ যখন এই উপমহাদেশের বিখ্যাত শিল্পীদের শিল্পকর্ম উপভোগের বিষয়, তখন আনন্দে পুলকিত হয়ে অনেক অসুবিধাই ত্যাগ স্বীকার করেন শিল্পমোদীরা। যদি দেয়ালে যামিনী রায়, এফ এন সুজা, এম এফ হুসেন, পরিতোষ সেন, কামরুল হাসান, আমিনুল ইসলাম, কাজী আবদুল বাসেত প্রমুখ শিল্পীদের বিভিন্ন সময়ের শিল্পকর্ম একত্রে স্থান পায়।
‘ইন্দো-বাংলা মাস্টার পেইন্টারস’ শিরোনামে এ রকম একটি প্রদর্শনীর খবর পেয়ে হাজির হই গ্যালারি বাসিলিওতে। গ্যালারিটি মহাখালীর ডিওএইচএসে। এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে যামিনী রায়, ফ্রান্সিস নিউটন সৌজা, মকবুল ফিদা হুসেন, পরিতোষ সেন, কৃশেন খান্না, অঞ্জলী ইলা মেনন, কামরুল হাসান, আমিনুল ইসলাম, কাজী আবদুল বাসেত, দেবদাস চক্রবর্তী, আবু তাহের, মনিরুল ইসলামের চিত্রকর্ম।
যামিনী রায়,(১৮৮৭-১৯৭২) উপমহাদেশের শিল্পকলার একজন প্রথিতযশা শিল্পী। কলকাতার শিল্পী, কিন্তু শিল্পকর্মের মাধ্যমে দেশের সীমানা অতিক্রম করেছেন। যামিনী রায়ের ছবির মূল বৈশিষ্ট্য ভারতের, বিশেষত পশ্চিম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোক আঙ্গিক। গোয়াশ মাধ্যমে করা প্রদর্শনীর শিরোনামহীন শিল্পকর্মটি এই বৈশিষ্ট্যের বাইরে নয়। প্রায় ১৮ শতকে পশ্চিমবঙ্গের কালীঘাট অঞ্চলে যে পটচিত্রের বিকাশ ঘটেছিল, যামিনী রায় সেই কালীঘাটের পটের বৈশিষ্ট্য দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবিত ছিলেন। তাঁর শিল্পরীতি ছিল: ‘বেঙ্গল স্কুল’ ও পাশ্চাত্য চিত্ররীতির বিপরীতে শুধুই ভারতীয় স্বকীয়তার নির্মাণে উৎসর্গিত।
ফ্রান্সিস নিউটন সুজা (১৯২৪-২০০২) আধুনিক ভারতীয় শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম, যিনি ১৯৪৭-এ প্রতিষ্ঠিত মুম্বাই প্রোগ্রেসিভ গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের প্রথম শিল্পী, যিনি তাঁর এক্সপ্রেশনিস্ট শিল্পকর্মের জন্য পশ্চিমে ব্যাপক খ্যাতি পেয়েছিলেন। তাঁর শিল্পকর্ম সমাজের নিচু শ্রেণীর সাধারণ মানুষের গভীরের ভাষা। প্রচণ্ড রকম আবেগতাড়িত রং-ব্রাশের খেলা তাঁর ক্যানভাসে ফুটে আছে। এর নমুনা মেলে তাঁর কাপল, ন্যুড, পোট্রের্ট শিরোনামের চিত্রকর্মগুলোতে। এটা এই প্রদর্শনীর উল্লেখযোগ্যতা প্রমাণ করে।
কামরুল হাসান (১৯২১-১৯৮৮) বাংলাদেশের শিল্পী। বলা হয়ে থাকে, যামিনী রায়ের যেখানে শেষ, কামরুলের যেখান থেকে শুরু। কামরুলের চিত্রকর্মের বৈশিষ্ট্যও লোকঐতিহ্যের আঙ্গিকের সঙ্গে তাঁর নিজ স্বকীয়ধারার মিশ্রণ।
কামরুল হাসানের বিভিন্ন চিত্রকর্মের মতো প্রসাধন এবং ড্রয়িং চিত্রকর্ম দুটিও একান্তই বাংলাদেশের স্বকীয়তার দৃপ্ত স্বাক্ষর।
গত বছর প্রয়াত বর্ষীয়ান শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনের বিতর্কিত এবং বিখ্যাত ‘মাধুরী’ সিরিজের একটি চিত্রকর্ম এ প্রদর্শনীতে আছে। এ ছাড়া ‘হর্স’ (সেরিগ্রাফ) ও ‘দাদা’ শিরোনামের আরও দুটি ছবি আছে মকবুল ফিদা হুসেনের। অনেক বেশি নিরীক্ষা এবং বিষয় ও বস্তুর গতিময়তা ফিদা হুসেনের শিল্পকর্মকে অনন্য করেছে।
কাজী আবদুল বাসেতের (১৯৩৫-২০০২) শিল্পকর্ম নিয়ে খুব বেশি প্রদর্শনী হয় না দীর্ঘদিন। শিল্পী বাসেত স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের আরেকজন অন্যতম নিষ্ঠাবান চিত্রকর। ‘ফিশ ওম্যান’ শিরোনামের চিত্রকর্মটি বাসেতের নিরীক্ষামূলক ড্রয়িং ভিত্তিক। শিল্পী কাজী আবদুল বসেত দীর্ঘসময় বিমূর্ত ধারায় প্রচুর কাজ করেছেন এবং প্রদর্শনীর এই ছবিটির অনুভূতিতে বিমূর্তায়নের নির্যাস বিদ্যমান।
ষাটের দশকের শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম হলেন আমিনুল ইসলাম (১৯৩১-২০১২)। রেখা ড্রয়িংয়ের শিল্পকর্মটি অনুশীলনমূলক এবং রেখাচিত্রে শিল্পীর দক্ষতার দলিল। এর পাশেই একটি লিথোগ্রাফে আমিনুলের বিমূর্ত প্রকাশবাদী রীতির কাজ দেখা মেলে।
অন্যদিকে শিল্পী পরিতোষ সেন, অঞ্জলী ইলা মেনন, দেবদাস চক্রবর্তী, কৃশেন খান্না, আবু তাহের, মনিরুল ইসলাম প্রমুখ ইন্দো-বাংলার পথিকৃৎ শিল্পীর শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে প্রদর্শনীতে।
গ্যালারি বাসিলিওর দুই বছর যাত্রাকালে একেবারেই ছোট দুটি কক্ষ এবং অন্যান্য আসবাবের সঙ্গে দেয়ালে শিল্পকর্ম প্রদর্শন, প্রকৃত অর্থে শিল্পকর্মের নান্দনিক রসকে নিগৃহীত করেছে। বড় বড় শিল্পীর শিল্পকর্মের যথাযথ মর্যাদা রক্ষার বিষয়টিও এর সঙ্গে সম্পর্কিত। এ রকম একটি অপরিসর গ্যালারিতে এসব বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর কাজের প্রদর্শনী যথাযথ হয়নি। আশা করা যায় ভবিষ্যতে এ দৈন্যদশা থেকে গ্যালারি বাসিলিওর উত্তরণ ঘটবে। প্রদর্শনী ৭ থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত চলবে।
যামিনী রায়,(১৮৮৭-১৯৭২) উপমহাদেশের শিল্পকলার একজন প্রথিতযশা শিল্পী। কলকাতার শিল্পী, কিন্তু শিল্পকর্মের মাধ্যমে দেশের সীমানা অতিক্রম করেছেন। যামিনী রায়ের ছবির মূল বৈশিষ্ট্য ভারতের, বিশেষত পশ্চিম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোক আঙ্গিক। গোয়াশ মাধ্যমে করা প্রদর্শনীর শিরোনামহীন শিল্পকর্মটি এই বৈশিষ্ট্যের বাইরে নয়। প্রায় ১৮ শতকে পশ্চিমবঙ্গের কালীঘাট অঞ্চলে যে পটচিত্রের বিকাশ ঘটেছিল, যামিনী রায় সেই কালীঘাটের পটের বৈশিষ্ট্য দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবিত ছিলেন। তাঁর শিল্পরীতি ছিল: ‘বেঙ্গল স্কুল’ ও পাশ্চাত্য চিত্ররীতির বিপরীতে শুধুই ভারতীয় স্বকীয়তার নির্মাণে উৎসর্গিত।
ফ্রান্সিস নিউটন সুজা (১৯২৪-২০০২) আধুনিক ভারতীয় শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম, যিনি ১৯৪৭-এ প্রতিষ্ঠিত মুম্বাই প্রোগ্রেসিভ গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের প্রথম শিল্পী, যিনি তাঁর এক্সপ্রেশনিস্ট শিল্পকর্মের জন্য পশ্চিমে ব্যাপক খ্যাতি পেয়েছিলেন। তাঁর শিল্পকর্ম সমাজের নিচু শ্রেণীর সাধারণ মানুষের গভীরের ভাষা। প্রচণ্ড রকম আবেগতাড়িত রং-ব্রাশের খেলা তাঁর ক্যানভাসে ফুটে আছে। এর নমুনা মেলে তাঁর কাপল, ন্যুড, পোট্রের্ট শিরোনামের চিত্রকর্মগুলোতে। এটা এই প্রদর্শনীর উল্লেখযোগ্যতা প্রমাণ করে।
কামরুল হাসান (১৯২১-১৯৮৮) বাংলাদেশের শিল্পী। বলা হয়ে থাকে, যামিনী রায়ের যেখানে শেষ, কামরুলের যেখান থেকে শুরু। কামরুলের চিত্রকর্মের বৈশিষ্ট্যও লোকঐতিহ্যের আঙ্গিকের সঙ্গে তাঁর নিজ স্বকীয়ধারার মিশ্রণ।
কামরুল হাসানের বিভিন্ন চিত্রকর্মের মতো প্রসাধন এবং ড্রয়িং চিত্রকর্ম দুটিও একান্তই বাংলাদেশের স্বকীয়তার দৃপ্ত স্বাক্ষর।
গত বছর প্রয়াত বর্ষীয়ান শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনের বিতর্কিত এবং বিখ্যাত ‘মাধুরী’ সিরিজের একটি চিত্রকর্ম এ প্রদর্শনীতে আছে। এ ছাড়া ‘হর্স’ (সেরিগ্রাফ) ও ‘দাদা’ শিরোনামের আরও দুটি ছবি আছে মকবুল ফিদা হুসেনের। অনেক বেশি নিরীক্ষা এবং বিষয় ও বস্তুর গতিময়তা ফিদা হুসেনের শিল্পকর্মকে অনন্য করেছে।
কাজী আবদুল বাসেতের (১৯৩৫-২০০২) শিল্পকর্ম নিয়ে খুব বেশি প্রদর্শনী হয় না দীর্ঘদিন। শিল্পী বাসেত স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের আরেকজন অন্যতম নিষ্ঠাবান চিত্রকর। ‘ফিশ ওম্যান’ শিরোনামের চিত্রকর্মটি বাসেতের নিরীক্ষামূলক ড্রয়িং ভিত্তিক। শিল্পী কাজী আবদুল বসেত দীর্ঘসময় বিমূর্ত ধারায় প্রচুর কাজ করেছেন এবং প্রদর্শনীর এই ছবিটির অনুভূতিতে বিমূর্তায়নের নির্যাস বিদ্যমান।
ষাটের দশকের শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম হলেন আমিনুল ইসলাম (১৯৩১-২০১২)। রেখা ড্রয়িংয়ের শিল্পকর্মটি অনুশীলনমূলক এবং রেখাচিত্রে শিল্পীর দক্ষতার দলিল। এর পাশেই একটি লিথোগ্রাফে আমিনুলের বিমূর্ত প্রকাশবাদী রীতির কাজ দেখা মেলে।
অন্যদিকে শিল্পী পরিতোষ সেন, অঞ্জলী ইলা মেনন, দেবদাস চক্রবর্তী, কৃশেন খান্না, আবু তাহের, মনিরুল ইসলাম প্রমুখ ইন্দো-বাংলার পথিকৃৎ শিল্পীর শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে প্রদর্শনীতে।
গ্যালারি বাসিলিওর দুই বছর যাত্রাকালে একেবারেই ছোট দুটি কক্ষ এবং অন্যান্য আসবাবের সঙ্গে দেয়ালে শিল্পকর্ম প্রদর্শন, প্রকৃত অর্থে শিল্পকর্মের নান্দনিক রসকে নিগৃহীত করেছে। বড় বড় শিল্পীর শিল্পকর্মের যথাযথ মর্যাদা রক্ষার বিষয়টিও এর সঙ্গে সম্পর্কিত। এ রকম একটি অপরিসর গ্যালারিতে এসব বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর কাজের প্রদর্শনী যথাযথ হয়নি। আশা করা যায় ভবিষ্যতে এ দৈন্যদশা থেকে গ্যালারি বাসিলিওর উত্তরণ ঘটবে। প্রদর্শনী ৭ থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত চলবে।
No comments