সু চির দলের অভিনন্দন-মিয়ানমারের ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা শিথিলের ঘোষণা

যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিলের ঘোষণা দিয়েছে। তবে দুই দেশের মধ্যকার সামরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে বাধানিষেধ রয়েছে তা বহাল থাকছে। বুধবার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এ কথা ঘোষণা করেন।


মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
মিয়ানমারে দীর্ঘ দুই দশক পর প্রথমবারের মতো মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিয়োগের পর বুধবার এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, কিছু দিন আগ পর্যন্তও সামরিক জান্তা শাসন করেছে মিয়ানমার। সেই দেশটি এখন গণতন্ত্রের দিকে এগোচ্ছে। তিনি বলেন, ‘মার্কিন কোম্পানিগুলোকে মিয়ানমারে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি দিতে যুক্তরাষ্ট্র আজ থেকে দেশটির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা (অর্থনৈতিক) শিথিল করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন, অং সান সু চি ও মিয়ানমারের জনগণ গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিসাধন অব্যাহত রেখেছেন। পাশাপাশি সরকারও গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, মিয়ানমারের অর্থনীতিতে সে দেশের সেনাবাহিনীর ভূমিকায় তিনি এখনো উদ্বিগ্ন। আর এ জন্য তিনি সতর্ক করে বলেন, সেনাবাহিনীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ও যারা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ব্যবসায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার ও সে দেশের সেনাবাহিনীর কাছে এটি স্পষ্ট বার্তা, যারাই নিপীড়নমূলক, দুর্নীতিপরায়ণ ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী আচরণে লিপ্ত রয়েছেন, তাঁরা সংস্কারের সুফল ভোগ করতে পারবেন না।’
ওবামার নিষেধাজ্ঞা শিথিলের এই ঘোষণার আগে মিয়ানমারে নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়াবিষয়ক প্রবীণ নীতিনির্ধারণকারী ডেরেক মিচেল তাঁর দায়িত্ব নেন এবং রাজধানী নেপিডোতে প্রেসিডেন্ট থেইনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। নোবেল শান্তি বিজয়ী নেত্রী অং সান সু চি প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে আসন গ্রহণের কয়েক দিন পর মিচেল রাষ্ট্রদূত হিসেবে মিয়ানমার যান।
১৯৮৮ সালে গণতন্ত্রের দাবিতে মিয়ানমারে ব্যাপক আন্দোলন শুরুর পর বিক্ষোভকারীদের ওপর দমনাভিযান এবং ১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সু চির দল জয়ী হওয়ার পরও তাঁকে স্বীকৃতি না দেওয়ার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র সেখান থেকে তার রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয়। তবে গত বছর ক্ষমতায় আসা থেইন সেইনের দৃশ্যত বেসামরিক সরকারের সাম্প্রতিককালের সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ড পশ্চিমাদের বিস্মিত এবং সেই সঙ্গে দেশটির গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আশার সঞ্চার করে।
মিয়ানমারের পার্লামেন্ট সম্প্রতি দেশের অর্থনীতির উদারীকরণে একটি নতুন বিনিয়োগ আইন প্রণয়নসহ আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বিবেচনা করছে। কয়েক দশকের চরম অব্যবস্থাপনা, ব্যাপক স্বজনপ্রীতি ও সামরিক সরকারের অধীন আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা ইত্যাদির কারণে দেশটির অর্থনীতি ইতিমধ্যে চূড়ান্ত ভগ্নদশায় উপনীত হয়।
এদিকে সু চির দল এনএলডি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিলের ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে মিয়ানমারের জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের জন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর উম্মুখ হয়ে থাকার পরিপ্রেক্ষিতে এ খাতে আরও ‘স্বচ্ছতা’র দাবি জানিয়েছেন সু চি। তিনি মিয়ানমারের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত তেল-গ্যাস কোম্পানি এমওজিইর ওপর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান। প্রতিষ্ঠানটি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.