তরুণদের রোবট by ইমাম হাসান
‘সাইবার ট্রেক’ ৫১.৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে ৫০ ফুট দূরত্বের গন্তব্যে পৌঁছাল। আর এরই একটু আগেই ৫১.৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে পৌঁছে গেছে ‘বিগ ব্যাং’ দল। এই দুজনকে হারিয়ে সেরা টাইমিং করে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল ‘ব্যাট মোবিল’ দলটি। ওই দূরত্ব অতিক্রম করতে তার সময় লেগেছে মাত্র ২৮.৪ সেকেন্ড।
রেসের ট্র্যাকে বাকি আরও ১০ প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে সেরা হয় এই তিন লড়াকু। তবে লড়াকুদের কেউই মানুষ নয়, রোবট। আর রোবট রেসের হাড্ডাহাড্ডি এই লড়াই চলেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেন্দ্রীয় অডিটরিয়ামে। গত ২৫ জুন ‘আইট্রিপলই ফরমুলা আর রোবটিক লাইন ট্র্যাকিং চ্যালেঞ্জ ২০১২’ শিরোনামে দিনব্যাপী প্রতিযোগিতাটির আয়োজন করে বুয়েটের তড়িৎ ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের সংগঠন বুয়েট আইট্রিপল-ই স্টুডেন্ট ব্রাঞ্চ ও আইট্রিপল-ই গোল্ড বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বুয়েটের তড়িৎ ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল এই আয়োজন। নির্দিষ্ট ট্র্যাকে রোবট রেসের ভিন্ন ধরনের এই প্রতিযোগিতায় সেরা হওয়া দল ব্যাট মোবিলের চার আবিষ্কারক আশরাফুল হক, ফরহাদ মহসিন, আবু সালেহ তাজিন এবং সৈয়দা লামমীম আহাদ। সবাই পড়ছেন তড়িৎ ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের চতুর্থ সেমিস্টারে। দলের নাম ব্যাট মোবিল কেন? উত্তর এল অনেকটা সমস্বরে, ‘ব্যাটম্যান মুভির ব্যাটম্যানের গাড়ি থেকেই এই নাম।’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের শুরুতেই ব্যাট মোবিলের লড়াকুদের মনোবল ছিল সুদৃঢ়। ফরহাদ মহসিন বলতে শুরু করেন, ‘আমরা সেরা হব—প্রথম থেকেই এই বিশ্বাস ছিল। কাজও করেছি তাই মন দিয়ে। তবে ধাক্কা খাই যন্ত্রপাতি জোগাড় করতে গিয়ে। নিজেদের পছন্দের যন্ত্র না পেয়ে মন খারাপ হলেও হাল ছাড়িনি। আমরা রোবট তৈরির জন্য কাজ করি ১০-১২ জনের একটা গ্রুপ মিলে। তার মধ্যে অন্যতম দুজন মোহাম্মদ বিন মঞ্জিল ও রিফাত কায়সার আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন। মোট কথা, আমাদের এই বাড়তি শ্রমের কারণে কাজটা সেরা হয়েছে বলে মনে করি।’
‘একদিকে ক্লাস-পরীক্ষা, অন্যদিকে রোবটের কাজ। ধকলটা বেশ গেছে। তবে বড়দের সাহায্য পেয়েছি সব সময়।’ ফরহাদকে থামিয়ে বলতে থাকেন লামমীম, ‘তবে ওঁদের মতো অত বেশি সময় আমি দিতে পারিনি। কারণ, ওরা তো অনেক রাত জেগে কাজ করেছেন। আর আমি রুমে বসে ট্রাভেল শুটিংয়ের কাজটা করে দিয়েছি।’ আশরাফুল জানান, ‘তিন চার সপ্তাহ পুরোদমে কাজ চালাতে হয়েছে। অনেক কিছু শেখা হয়েছে কাজটি করতে গিয়ে। আর যেহেতু এটি রেস প্রতিযোগিতা, তাই রোবটটিকে যতটা সম্ভব হালকা রাখতে চেয়েছি।’ ফলাফলে যখন চ্যাম্পিয়ন চারজনের উচ্ছ্বাসটা তখন ছিল দেখার মতো।
অন্যদিকে রোবটের প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা চার শিক্ষার্থী মুহাম্মদ মনির হোসেন, শফিকুল ইসলাম, তাহমিদ সামী রহমান ও আয়াজ মাসুদ পড়ছেন দ্বিতীয় বর্ষে। অন্য দুই দলের মতো তাঁরাও এবার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেন। আর এসেই বাজিমাত। মনির বলেন, ‘আমাদের তো অংশ নেওয়াই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। কারণ, প্রতিযোগিতার দুদিন আগে হঠাৎ রোবটের একটা রেজিস্টার অকেজো হয়ে পড়ে। তবে ঘাবড়ে না গিয়ে ঠান্ডা মাথায় কাজ শেষ করি আমরা।’ শফিকুল ইসলামের কাছে এসে জানা গেল কেমন ছিল প্রতিযোগিতাটি। ‘প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য একটা নির্দিষ্ট আঁকাবাঁকা ট্র্যাক (যেখানে রোবট চলবে বানানো হয়। আর রোবটের কাজ ছিল এই বাঁক পেরিয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো। রোবটটি তৈরি করেই আমরা অনেক খুশি ছিলাম। আর তার ওপর আবার দ্বিতীয় হলাম। ভালো লাগাটা তাই আমাদের একটু বেশি।’ তাহমিদ বলেন, ‘এই রোবটকে আমরা আরও সংস্কার করে পিসিতে কন্ট্রোল করতে চাই। রোবটটি যাতে পণ্য উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা যায়, তেমন করে গড়ে তোলার ইচ্ছা আছে আমাদের।’
প্রতিযোগিতাটির আয়োজকদের মধ্য থেকে এম এ আউয়াল বলেন, ‘নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য এই আয়োজন তাদের একটা আলাদা ভাবনার প্ল্যাটফর্ম করে দেবে বলে আমরা মনে করি। প্রথমবার এই আয়োজন করলাম আমরা। ভাবিনি, এত কম সময়ে এত সাড়া পাব শিক্ষার্থীদের কাছে। এরপর কয়েক মাসের মধ্যে আমরা বড় আকারে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে টেক ফেস্টিভাল করার কথা ভাবছি।’ প্রতিযোগিতায় বিচারকার্যে সময়ের পাশাপাশি বিবেচনা করা হয়েছে রোবটের নিজস্বতা, হার্ডওয়্যার, অ্যালগরিদম ইত্যাদি বিষয়। আর তাই পুরস্কৃত হওয়ার কথা মাথায়ই আসেনি তৃতীয় হওয়া দল ‘সাইবারট্রেকে’র তানভীর আহমেদ, সৈয়দ ইমাম হাসান, ফয়সাল হাকিম ও মুনিফ ইসহাদ মুজিবের। মাস খানেক আগেই তাঁরা জেনেছিলেন প্রতিযোগিতাটি সম্বন্ধে। তারপর দল গঠন করে কাজ শুরু করতে সময় শেষ। ‘নিছক অংশ নেওয়ার জন্যই আমাদের প্রতিযোগিতায় নাম লেখানো। তবে কাজ করতে বেশ মজা লেগেছে। পুরস্কার জিতে এখন তো আত্মবিশ্বাস বেশ ওপরে। এই রোবটটি নিয়ে আরও কাজ করব আমরা’ বলছিলেন তানভীর আহমেদ। ইমাম হাসান বলেন, ‘এ ধরনের রোবট মূলত আমাদের দৈনন্দিন কাজ আরও সহজ করে তোলে।’
রোবটের এই ভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে ছিল দুটি সেমিনার এবং কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজনও। আয়োজনের উপদেষ্টা শিক্ষক হিসেবে ছিলেন উপল মাহবুব ও সাজীদ মুহাইমিন। প্রতিযোগিতায় মোট ১৩টি রোবটের মধ্যে সেরা তিনটি রোবট পুরস্কার হিসেবে পেয়েছে নগদ অর্থ ও সম্মাননা। চ্যাম্পিয়ন দল মোট ১০ হাজার, প্রথম রানারআপ পাঁচ হাজার এবং দ্বিতীয় রানারআপ তিন হাজার টাকা পেয়েছে। অনুষ্ঠানটির পৃষ্ঠপোষক ছিল টেকসপ বিডি।
বুয়েটের তড়িৎ ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল এই আয়োজন। নির্দিষ্ট ট্র্যাকে রোবট রেসের ভিন্ন ধরনের এই প্রতিযোগিতায় সেরা হওয়া দল ব্যাট মোবিলের চার আবিষ্কারক আশরাফুল হক, ফরহাদ মহসিন, আবু সালেহ তাজিন এবং সৈয়দা লামমীম আহাদ। সবাই পড়ছেন তড়িৎ ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের চতুর্থ সেমিস্টারে। দলের নাম ব্যাট মোবিল কেন? উত্তর এল অনেকটা সমস্বরে, ‘ব্যাটম্যান মুভির ব্যাটম্যানের গাড়ি থেকেই এই নাম।’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের শুরুতেই ব্যাট মোবিলের লড়াকুদের মনোবল ছিল সুদৃঢ়। ফরহাদ মহসিন বলতে শুরু করেন, ‘আমরা সেরা হব—প্রথম থেকেই এই বিশ্বাস ছিল। কাজও করেছি তাই মন দিয়ে। তবে ধাক্কা খাই যন্ত্রপাতি জোগাড় করতে গিয়ে। নিজেদের পছন্দের যন্ত্র না পেয়ে মন খারাপ হলেও হাল ছাড়িনি। আমরা রোবট তৈরির জন্য কাজ করি ১০-১২ জনের একটা গ্রুপ মিলে। তার মধ্যে অন্যতম দুজন মোহাম্মদ বিন মঞ্জিল ও রিফাত কায়সার আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন। মোট কথা, আমাদের এই বাড়তি শ্রমের কারণে কাজটা সেরা হয়েছে বলে মনে করি।’
‘একদিকে ক্লাস-পরীক্ষা, অন্যদিকে রোবটের কাজ। ধকলটা বেশ গেছে। তবে বড়দের সাহায্য পেয়েছি সব সময়।’ ফরহাদকে থামিয়ে বলতে থাকেন লামমীম, ‘তবে ওঁদের মতো অত বেশি সময় আমি দিতে পারিনি। কারণ, ওরা তো অনেক রাত জেগে কাজ করেছেন। আর আমি রুমে বসে ট্রাভেল শুটিংয়ের কাজটা করে দিয়েছি।’ আশরাফুল জানান, ‘তিন চার সপ্তাহ পুরোদমে কাজ চালাতে হয়েছে। অনেক কিছু শেখা হয়েছে কাজটি করতে গিয়ে। আর যেহেতু এটি রেস প্রতিযোগিতা, তাই রোবটটিকে যতটা সম্ভব হালকা রাখতে চেয়েছি।’ ফলাফলে যখন চ্যাম্পিয়ন চারজনের উচ্ছ্বাসটা তখন ছিল দেখার মতো।
অন্যদিকে রোবটের প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা চার শিক্ষার্থী মুহাম্মদ মনির হোসেন, শফিকুল ইসলাম, তাহমিদ সামী রহমান ও আয়াজ মাসুদ পড়ছেন দ্বিতীয় বর্ষে। অন্য দুই দলের মতো তাঁরাও এবার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেন। আর এসেই বাজিমাত। মনির বলেন, ‘আমাদের তো অংশ নেওয়াই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। কারণ, প্রতিযোগিতার দুদিন আগে হঠাৎ রোবটের একটা রেজিস্টার অকেজো হয়ে পড়ে। তবে ঘাবড়ে না গিয়ে ঠান্ডা মাথায় কাজ শেষ করি আমরা।’ শফিকুল ইসলামের কাছে এসে জানা গেল কেমন ছিল প্রতিযোগিতাটি। ‘প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য একটা নির্দিষ্ট আঁকাবাঁকা ট্র্যাক (যেখানে রোবট চলবে বানানো হয়। আর রোবটের কাজ ছিল এই বাঁক পেরিয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো। রোবটটি তৈরি করেই আমরা অনেক খুশি ছিলাম। আর তার ওপর আবার দ্বিতীয় হলাম। ভালো লাগাটা তাই আমাদের একটু বেশি।’ তাহমিদ বলেন, ‘এই রোবটকে আমরা আরও সংস্কার করে পিসিতে কন্ট্রোল করতে চাই। রোবটটি যাতে পণ্য উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা যায়, তেমন করে গড়ে তোলার ইচ্ছা আছে আমাদের।’
প্রতিযোগিতাটির আয়োজকদের মধ্য থেকে এম এ আউয়াল বলেন, ‘নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য এই আয়োজন তাদের একটা আলাদা ভাবনার প্ল্যাটফর্ম করে দেবে বলে আমরা মনে করি। প্রথমবার এই আয়োজন করলাম আমরা। ভাবিনি, এত কম সময়ে এত সাড়া পাব শিক্ষার্থীদের কাছে। এরপর কয়েক মাসের মধ্যে আমরা বড় আকারে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে টেক ফেস্টিভাল করার কথা ভাবছি।’ প্রতিযোগিতায় বিচারকার্যে সময়ের পাশাপাশি বিবেচনা করা হয়েছে রোবটের নিজস্বতা, হার্ডওয়্যার, অ্যালগরিদম ইত্যাদি বিষয়। আর তাই পুরস্কৃত হওয়ার কথা মাথায়ই আসেনি তৃতীয় হওয়া দল ‘সাইবারট্রেকে’র তানভীর আহমেদ, সৈয়দ ইমাম হাসান, ফয়সাল হাকিম ও মুনিফ ইসহাদ মুজিবের। মাস খানেক আগেই তাঁরা জেনেছিলেন প্রতিযোগিতাটি সম্বন্ধে। তারপর দল গঠন করে কাজ শুরু করতে সময় শেষ। ‘নিছক অংশ নেওয়ার জন্যই আমাদের প্রতিযোগিতায় নাম লেখানো। তবে কাজ করতে বেশ মজা লেগেছে। পুরস্কার জিতে এখন তো আত্মবিশ্বাস বেশ ওপরে। এই রোবটটি নিয়ে আরও কাজ করব আমরা’ বলছিলেন তানভীর আহমেদ। ইমাম হাসান বলেন, ‘এ ধরনের রোবট মূলত আমাদের দৈনন্দিন কাজ আরও সহজ করে তোলে।’
রোবটের এই ভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে ছিল দুটি সেমিনার এবং কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজনও। আয়োজনের উপদেষ্টা শিক্ষক হিসেবে ছিলেন উপল মাহবুব ও সাজীদ মুহাইমিন। প্রতিযোগিতায় মোট ১৩টি রোবটের মধ্যে সেরা তিনটি রোবট পুরস্কার হিসেবে পেয়েছে নগদ অর্থ ও সম্মাননা। চ্যাম্পিয়ন দল মোট ১০ হাজার, প্রথম রানারআপ পাঁচ হাজার এবং দ্বিতীয় রানারআপ তিন হাজার টাকা পেয়েছে। অনুষ্ঠানটির পৃষ্ঠপোষক ছিল টেকসপ বিডি।
No comments