জাপানের নড়িয়া রাজশাহীর নড়িয়ালে by আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ

তাঁর নামের সঙ্গে গ্রামের নামটি প্রায় মিলে যায়। শুধু এ কারণেই জাপান থেকে বিমানে ১৫ হাজার কিলোমিটার পথ উড়ে এলেন বাংলাদেশে। নামের সঙ্গে মিলে যাওয়া গ্রামটি রাজশাহীর তানোর উপজেলায়। রাজশাহী শহর থেকে ৫২ কিলোমিটার উত্তরের একটি নিভৃত গ্রাম এটা। নাম নড়িয়াল। গ্রামে অভাবী ও শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যাই বেশি।


গ্রামের মানুষ মনে করে, নড়ি অর্থ শ্রমিক। তাই শ্রমজীবী মানুষের গ্রাম হিসেবে গ্রামের নাম রাখা হয়েছে নড়িয়াল। আর জাপানি প্রকৌশলীর নাম নড়িয়া। জাপানি ভাষায় এর অর্থ বুদ্ধিমান। অর্থগত দিক থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হলেও উচ্চারণে নড়িয়াল এবং নড়িয়ার মিল অনেকটাই। আর জাপানি প্রকৌশলী এটা নিয়ে আবেগে উচ্ছসিত।
এই গল্পের শুরু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। জাপানি প্রকৌশলীর মেয়ে তাকামি ইসিজাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করতে এসেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মতিউর রহমানের লেখা একটি বই জাপানে বেশ জনপ্রিয়। তাকামি গবেষণার কাজে এসে অনলাইনে মতিউর রহমানের বইয়ের খোঁজ পেয়ে যান। একপর্যায়ে যোগাযোগও হয় তাঁর সঙ্গে। তাঁর বাড়ি রাজশাহীতে, এবং তাঁর গ্রামের নাম নড়িয়াল। এই নাম শুনেই তাকামি চমকে ওঠেন। ‘...এ তো আমার বাবার নাম। এ কী করে হয়?’ গ্রামের নাম নড়িয়াল আর বাবার নাম নড়িয়া। বাবার নামের শেষের ‘ল’ বর্ণটিই শুধু নেই। তাতে কী। তাকামি তাঁর বাবাকে জানান তাঁর নামেই একটা গ্রাম রয়েছে বাংলাদেশে। এ খবরে আনন্দে আপ্লুত বাবা সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের নিজের নামে নাম গ্রামটিতে বেড়াতে যাবেন।
গত ৮ জুন তাকামি তাঁর বাবাকে নিয়ে রাজশাহী থেকে নড়িয়াল গ্রামে হাজির হন। সঙ্গে অধ্যাপক মতিউর রহমান। তাকামি তাঁর সঙ্গে নিয়েছেন ‘মুগি চা’, গম পুড়িয়ে এই চা তৈরি করা হয়। পানির বদলে তাঁরা এই মুগি চা পান করছেন।
নড়িয়াল খুব পাতলা বসতির গ্রাম। বেশির ভাগ আদিবাসী শ্রমিক। তারপরও খবর রটে গেল সারা গ্রামে। দলে দলে মানুষ এসে জড়ো হতে থাকল নড়িয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। তারা নড়িয়া ও তাঁর মেয়ে তাকামিকে নিজের গ্রামের মানুষ হিসেবেই বরণ করে নিল। অধ্যাপক মতিউর রহমান নড়িয়া ও তাঁর মেয়ের সামনে গ্রামের ইতিহাস তুলে ধরলেন।
তাকামি বাংলা শিখেছেন। তিনি বাবার দোভাষি হিসেবে কাজ করছিলেন। নড়িয়া তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমার ভাগ্যে ছিল তাই এই গ্রামে আসতে পারলাম।’ তিনি গ্রামের শিশুদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘প্রতিটি শিশুর চোখ তারার মতো উজ্জ্বল। এরা সবাই শিক্ষিত হলে গ্রামটার উন্নতি হবে। আমি জাপানে বসে টেলিভিশনে এই গ্রামের সুখবর দেখার জন্য অপেক্ষা করব। আশা করি, এই গ্রাম সেই রকম উন্নতি হবে।’

No comments

Powered by Blogger.