খাদ্য নিরাপত্তা-আউশ-আমন মৌসুমে জোর পড়ূক

খাদ্যশস্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতাকে স্বাধীন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা হিসেবেই পরিচিত ছিল আমাদের এ ভূখণ্ড। কিন্তু ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ও পাকিস্তান আমলে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। নেমে আসে দুর্ভাগ্য_ আমরা হয়ে উঠি খাদ্যে পরনির্ভর।


ডাল-মসলাসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য এবং চিনি ও ভোজ্যতেলের মতো কৃষিজাত পণ্যের ক্ষেত্রেও একই দুর্দশার চিত্র_ আমদানির মাধ্যমেই মেটাতে হয় চাহিদার উল্লেখযোগ্য অংশ। ষাটের দশকের সবুজ বিপ্লব ধানের উৎপাদন যথেষ্ট বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে আওয়ামী লীগের শাসনামলে খাদ্যশস্যের ঘাটতি বহুলাংশে কমে আসে। এ দলের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ধানের উৎপাদন বাড়াতে বর্ধিত মনোযোগ প্রদান এবং কৃষকবান্ধব নীতি ও কর্মপন্থা গ্রহণ করায় অবস্থার আরও উন্নতি ঘটে। আমন ও বোরো মৌসুমে একের পর এক বাম্পার ফলন তারই নজির। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কিছু কাঠামোগত সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এক সময়ে আমন মৌসুমেই বেশিরভাগ এবং আউশ মৌসুমেই উল্লেখযোগ্য ধান মিলত। কিন্তু ক্রমে বোরো মৌসুমই হয়ে ওঠে চালের প্রধান জোগানদাতা। গত মৌসুমে বোরো ধান উৎপাদন হয় প্রায় দুই কোটি টন। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পেছনে এ মৌসুমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু এ মৌসুমে চাষাবাদের জন্য সার-বীজ-সেচের পানি-কীটনাশক প্রভৃতি ব্যয়বহুল উপকরণ জোগান দিতে হয়। ভূগর্ভস্থ পানির নির্বিচার ব্যবহারে পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কাও বেড়ে চলেছে। অন্যদিকে, আমন ও আউশ মৌসুমে সেচের পানির জোগান আসে প্রকৃতির উদার দানে এবং রাসায়নিক সারেরও তেমন প্রয়োজন পড়ে না। এ অবস্থায় আউশ ও আমন ধানের উৎপাদন বাড়াতে সরকারের বিশেষ পরিকল্পনা উৎসাহব্যঞ্জক। বৃহস্পতিবার সমকালে 'আউশ-আমনের উৎপাদন বাড়াতে বিশেষ নজর' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, আউশ মৌসুমে প্রায় সাড়ে তিন লাখ কৃষককে বিনামূল্যে ধানবীজ দেওয়া হবে। আমন ও আউশ মৌসুমে উচ্চফলনশীল ধান চাষের আওতা বাড়ানো এবং বিশেষভাবে বন্যাপ্রবণ এলাকায় বন্যাসহিষ্ণু জাতের ধানের বীজ সরবরাহের বিষয়টিও নীতিনির্ধারক মহলে বিবেচিত হচ্ছে। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী কৃষি খাতে প্রশংসনীয় গতিশীলতা এনেছেন। এর ধারাবাহিকতায় নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও সাফল্য বিষয়ে আশাবাদী হওয়া যায়। এ জন্য কৃষকদের প্রতি যেমন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে, তেমনি গবেষণা কাজেও মনোযোগ প্রদান করা চাই। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের কৃষকদের অর্থনীতি-জ্ঞান প্রখর বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা। অপেক্ষাকৃত কম ব্যয়ে আউশ ও আমন মৌসুমেই দেশের চাহিদার সিংহভাগ খাদ্যশস্য উৎপাদন সম্ভব হলে তারা সেটা গ্রহণ করতে দ্বিধা করবে না। এর ফলে শুষ্ক মৌসুমে বোরো ধানের চাষের জমি খানিকটা কমানো এবং এই 'উদ্বৃত্ত' জমিতে শীতকালীন সবজি ও ডালসহ অন্যান্য শস্যের আবাদ সম্ভব হবে। খাদ্য নিরাপত্তা এবং সুষম খাদ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্য অর্জনে এমন পরিস্থিতি সহায়ক। রাতারাতি এ লক্ষ্যে পেঁৗছানো যাবে না। কিন্তু আউশ-আমন মৌসুম থেকেই বেশিরভাগ চালের জোগান মিললে শুধু কৃষি নয়, সার্বিক অর্থর্নীতির জন্যই তা হবে সুখবর। কৃষকরাও এ উদ্যোগে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শামিল হতে দ্বিধা করবে বলে মনে হয় না।
 

No comments

Powered by Blogger.