ইয়েমেনী নারীদের আহ্বান by এনামুল হক

ইয়েমেনের নারীবাদী ও মানবাধিকার কর্মীরা তাদের সমর্থনে আরও বলিষ্ঠভাবে এগিয়ে আসার জন্য সে দেশের স্বনামধন্য নারী সাংবাদিক ও রাজনীতিক তাওয়াকুল কামরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা মনে করেন ইয়েমেনের বিপ্লব অসমাপ্ত রয়েছে। এই অসমাপ্ত বিপ্লব সমাপ্ত করার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এই নারীর


আরও জোরালো ভূমিকা নেয়া দরকার। না হলে চলমান আন্দোলনে নারী সমাজের অর্জিত সুফল ব্যর্থ হয়ে যাবে।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে, তাওয়াকুল আবদুন সালাম কামরান গত বছর ইয়েমেনের গণঅভ্যুত্থানে অন্যতম নেতার ভূমিকায় আবির্ভূত হন। ঐ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লাহ আল সালেহর ৩৩ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। তাওয়াকুল কামরান (৩৩) ইয়েমেনের ‘শৃঙ্খলমুক্ত নারী সাংবাদিক’ নামে একটি ইয়েমেনী সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। রাজধানী সানার চেঞ্জ স্কোয়ারে বিক্ষোভের সেই উত্তাল দিনগুলোতে তিনি একটি তাঁবু খাটিয়েছিলেন। ওই তাঁবুই বিক্ষোভের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। ইয়েমেনীদের কাছে কামরান ‘লৌহমানবী’ ও ‘বিপ্লবের জননী’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। ২০১১ সালে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনিই প্রথম আরব মহিলা ও দ্বিতীয় মুসলিম মহিলা যিনি এই পুরস্কার পেলেন। নোবেল বিজয়ীদের মধ্যে আজ অবধি তিনিই সর্বকনিষ্ঠ।
কিন্তু ইদানীং স্বদেশে কামরানের অনুপস্থিতির কারণে ইয়েমেনবাসী বিশেষত তরুণ সমাজ হতাশা বোধ করছে। দেশে খুব কমই দেখা যাচ্ছে তাকে। শোনা যায়, তিনি বিদেশে নিজ পরিবার-পরিজনদের সরিয়ে নেয়ার কাজে ব্যস্ত এবং সেজন্য বাইরেই বেশি ছোটাছুটি করছেন। কিন্তু কামরানের দাবি, এখনও তিনি চেঞ্জ স্কোয়ারেই আছেন এবং সেনাবাহিনীর ওপর মহল থেকে সালেহর পরিবার পরিজনদের অপসারণ করার দাবিসহ বিক্ষোভকারীদের সকল দাবি পূরণ না করা পর্যন্ত তিনি এক মুহূর্ত সরকারকে স্বস্তিতে থাকতে দেবেন না। তিনি বলেন, তিনি বিদেশ সফরে গিয়েছিলেন একটা সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে। তা হলো সালেহ ও তার পরিবারের বিচার করা এবং তাদের সম্পদ আটক করার জন্য নতুন প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদীর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বিদেশী সরকারগুলো যাতে রাজি হয়। একই সঙ্গে তিনি ফ্রান্স, কাতার ও তুরস্কের সরকার ও জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছেন তারা যাতে ইয়েমেনের নারী-শিশু ও আহত বিক্ষোভকারীদের জন্য হাসপাতাল নির্মাণের অর্থ যোগায়।
কিন্তু এত কিছুর পরও আশঙ্কা বাড়ছে যে, ইয়েমেনের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিশেষ করে মহিলাদের জন্য যেসব সামাজিক সুফল অর্জিত হয়েছিল তা নয়া সংবিধান তৈরির জাতীয় সংলাপের গতিপথে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। আশঙ্কার একটা কারণ কামরান নিজেই ইসলামী দল আল-ইসলার মডারেট শাখার অন্তর্গত। এই দলে রয়েছে মুসলিম ব্রাদারহুড সদস্য, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, উপজাতীয় নেতারা ও বিশুদ্ধবাদী সালাফিরাÑযারা মহানবী হযরত মুহাম্মদের (দ.) দিনগুলোতে ফিরে যেতে চায়। চেঞ্জ স্কোয়ারে আজ আল-ইসলার আধিপত্য। সেখানে নারী ও পুরুষকে আলাদা করে রাখার জন্য কাঠের বেড়া দেয়া হয়েছে। কয়েক মাস আগে সালাফি নেতারা ধর্মীয় নেতাদের সমালোচনা করার জন্য নারীবাদী লেখিকা বুশরা আল-মাকতারি ও অপর তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেন। এ অবস্থায় নারী অধিকারবাদীরা তাদের স্বার্থ রক্ষায় তাকিয়ে আছে কামরানের দিকে। তারা চাইছে কামরান এসব ব্যাপারে আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা নিক। জামিলা রাজা নামে এক শীর্ষস্থানীয় বিশ্লেষক বলেন, ‘আশা করি তিনি জাতীয় সংলাপে নারীদের স্বার্থের পক্ষে জোরালো ভূমিকা নেবেন ও তরুণ সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করবেন।’ কামরান সবাইকে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি নারীদের সঙ্গে থাকবেন এবং সংবিধানে যাতে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা হয় তা সুনিশ্চিত করতে সকল বৈঠকে অংশ নেবেন।

No comments

Powered by Blogger.