শেষ হলো ডিসি সম্মেলন-আদালত অবমাননা এড়াতে আইন সংশোধন হচ্ছে

জেলা প্রশাসকেরা দাবি জানালেও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা অপরাধ আমলে নিয়ে সংক্ষিপ্ত বিচার করার ক্ষমতা পাচ্ছেন না। তবে সরকারি কর্মকর্তাদের যাতে যখন-তখন আদালত অবমাননার মুখে পড়তে না হয়, সে জন্য আদালত অবমাননা আইন সংশোধন করতে সরকার রাজি হয়েছে।


তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের শেষ দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।
আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সভা শেষে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ আলাদা হয়েছে। এতে বিচার বিভাগকেই বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার বিধান নেই। এটা করা হলে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ব্যত্যয় হবে।
সম্মেলন শেষে সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ডিসিরা আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে সংক্ষিপ্ত বিচারের কথা বলেছেন। তবে সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন ছাড়া এটা সম্ভব নয়।
বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর থেকেই ডিসিরা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সংক্ষিপ্ত বিচারের ক্ষমতা চেয়ে আসছেন। এবারের ডিসি সম্মেলনেও তাঁরা এ প্রস্তাব করেন। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, বিদ্যমান আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় কেউ দোষ স্বীকার না করলে শাস্তি দেওয়া যায় না।
ডিসিরা বলেছেন, তাঁদের প্রায়ই আদালত অবমাননার মুখে পড়তে হয়। এতে কাজে সমস্যার সৃষ্টি হয়, টাকাও খরচ হয়। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, সরকার আদালত অবমাননা আইন যুগোপযোগী করতে সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে সেটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আছে। এতে কী কী কারণ আদালত অবমাননা হিসেবে বিবেচিত হবে, তা সুনির্দিষ্ট থাকবে। এতে তাঁদের কাজ করতে সুবিধা হবে।
ডিসিরা অভিযোগ করেন, দেওয়ানি আদালতে বিচারাধীন সরকারি মামলাগুলো পরিচালনায় সরকারি কৌঁসলিদের দায়িত্বহীনতা ও কৌঁসুলি পরিবর্তনের ফলে সরকার মামলায় হেরে যায়। এ জন্য তাঁরা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো কৌঁসুলিদেরও দায়বদ্ধতার আওতায় আনার প্রস্তাব করেন।
আইনমন্ত্রীও বলেন, জেলার সরকারি আইন কর্মকর্তা ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অবহেলা ও গাফিলতি, আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর শাখার বিলম্বিত কার্যক্রমের কারণে সরকারের অনেক খাসজমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে। তাই সরকারি সম্পত্তি যাতে বেহাত না হয়, সে জন্য এ-সংক্রান্ত মামলাগুলো আপিলের জন্য যথাসময়ে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মুঠোফোন কলে ১০ পয়সা সারচার্জের প্রস্তাব ডিসিদের: নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে মুঠোফোনে কলপ্রতি ১০ পয়সা করে কেটে রাখার প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত আলোচনায় ডিসিরা এমন প্রস্তাব করেন বলে সভা শেষে সাংবাদিকদের জানান মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ।
এর আগে জাতীয় সংসদে স্পিকার আবদুল হামিদ পদ্মা সেতু নির্মাণে নিজস্ব অর্থায়নের উৎস হিসেবে মুঠোফোনে প্রতি কলে ২৫ পয়সা করে সারচার্জ আরোপের প্রস্তাব করেন।
সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে গতকাল তথ্য, সংস্কৃতি, যুব ও ক্রীড়া, বস্ত্র ও পাট, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন, পানি, নৌপরিবহন, আইন, সমাজকল্যাণ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ, ধর্ম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

No comments

Powered by Blogger.