খুলনা থেকে বুয়েট-সর্বত্রই ব্যর্থ তিনি by অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য

অধ্যাপক ড. এস এম নজরুল ইসলাম এযাবৎ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছেন। প্রথমবার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বর্তমানে বুয়েট। কোনোবারই সফল হননি। খুলনায় আন্দোলনের কারণে নির্দিষ্ট মেয়াদের সাত দিন আগেই ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল। আর বুয়েটে ক্ষমতা ছাড়ার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে চলছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট।


শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রশাসন চালাতে আগেরবার পুরোপুরি ব্যর্থ হওয়ার পর এখনো একই পথে হাঁটছেন এস এম নজরুল। যত আন্দোলনই হোক কিছুতেই ক্ষমতা ছাড়তে নারাজ তিনি। নিয়োগে অনিয়ম, ঠিকাদারিসহ অন্যান্য কাজে আত্মীয়স্বজনকে প্রাধান্য দেওয়া, শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদোন্নতি না দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগেই উপাচার্য ড. নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এবারের আন্দোলন। খুলনায় যেমন উপাচার্যের কার্যকাল সুখের ছিল না, বুয়েটেও ঘটছে তার পুনরাবৃত্তি।
উপাচার্য এস এম নজরুল ইসলাম এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, খুলনা ও বুয়েটে তিনি ব্যর্থ নন। তিনি কোনো দুর্নীতি করেননি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের পথ এখনো তিনি বাতলে দেন বলে জানান। তিনি আরো বলেন, 'যাঁরা বলছেন আমি ব্যর্থ, তাঁরা ঠিক বলছেন না। আমাকে হেয় করার জন্যই এসব মন্তব্য করা হচ্ছে।'
অন্যদিকে এস এম নজরুল ইসলামকে উদ্দেশ করে বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞানের অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর বলেন, 'খুলনা থেকে পালিয়ে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন। সময় থাকতে বুয়েটের উপাচার্য পদ ছাড়ুন। নতুবা দেয়াল টপকেও পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেন না।'
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন শিক্ষক সমিতি, কর্মকর্তা ও কর্মচারী সমিতির নেতা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলেছেন, বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম ১৯৯৭ সালের ২৩ আগস্ট খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। কিন্তু ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে মেয়াদপূর্তির মাত্র সাত দিন আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে বাধ্য হন। তাঁরা বলেন, ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদে ৭০ জনের নিয়োগকে কেন্দ্র করে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ, রং করা- ইত্যাদি কাজে উপাচার্য ফায়েক নামের তাঁর এক নিকটাত্মীয়কে প্রধান্য দিতেন। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকদের পদোন্নতি ও বিদেশে শিক্ষাবৃত্তির বিষয়েও তিনি পক্ষপাতিত্বের আশ্রয় নেন। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে একপর্যায়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশ ক্ষুব্ধ হন। ২০০১ সালের আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসব ঘটনায় আন্দোলন শুরু হয়। এ আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হয়। অব্যাহত আন্দোলনের মুখে মেয়াদপূর্তির সাত দিন আগে খুলনা ছাড়তে বাধ্য হন এস এম নজরুল।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, নিয়োগ ও অনিয়মের বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. নজরুল ইসলামের সঙ্গে তৎকালীন কোষাধ্যক্ষ প্রয়াত সরদার আবদুর রাজ্জাকের দ্বন্দ্ব ছিল অনেকটাই প্রকাশ্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৎকালীন উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনের এক শিক্ষক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, উপাচার্য ছিলেন অনেকটাই একরোখা ও জেদি। তিনি তাঁর বিরোধী কাউকেই মানতে পারেননি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা খারাপ হয়।
ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ভবনের রং করার কাজ উপাচার্য তাঁর পরিবারের লোককে দিয়ে করিয়েছেন। শিক্ষকদের পদোন্নতি ও বিদেশ সফরের ক্ষেত্রেও তিনি নিয়ম মানেননি। ফলে দুভার্গ্যজনকভাবে তাঁকে ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়েছে। আর একই অবস্থার সৃষ্টি করেছেন বুয়েটেও।
বুয়েটে সংকটের পেছনে একাধিক বিষয় থাকলেও সব সমস্যার মূলে মনে করা হচ্ছে উপাচার্য ড. এস এম নজরুল ইসলামের ভূমিকাকে। শিক্ষক সমিতির অভিযোগ, বুয়েটের যত সমস্যা, তার মূলে তিনিই। সমিতির নেতারা অভিযোগ করে বলেন, উপাচার্য কেবল দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে বুয়েটে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে চলেছেন। তিনি বুয়েটের বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি কামাল আহম্মদকে রেজিস্ট্রার পদে ভূতাপেক্ষ নিয়োগ দেন। এ ছাড়া উপাচার্য ও তাঁর অনুগত প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তারা বিভিন্ন সভায় উপস্থিত থাকার নামে মোটা অঙ্কের সম্মানী ভাতাও নেন। কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রেও তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ রয়েছে, উপাচার্য বুয়েটের ছাত্রলীগ নেতা মোকাম্মেল হোসাইনের ফল ও গ্রেড পরিবর্তনেও সহায়তা করেছেন। এসব নানা অভিযোগে বিক্ষুব্ধ বুয়েট শিক্ষকরা তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন।
প্রতিবেদন তৈরিতে খুলনা থেকে তথ্য সহায়তা দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক কৌশিক দে।

No comments

Powered by Blogger.