নাও খুঁজে নাম প্রিয় নাও পরিচয় by রণজিৎ বিশ্বাস
আমাকে আপনারা চিনতে পারেন কিনা দেখুন। আমার বিকৃত মুখভঙ্গি, উদ্ভট যুক্তিতর্ক, অসংস্কৃত আচরণ, ফেলানো দাঁতের হাসি, পিতৃপরিচয়, সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা ইত্যাদির জন্যই দেশের মানুষ আমাকে চেনে। প্রশংসা করে কি ঘৃণা করে অথবা আমাকে দেখামাত্র তাদের বিবমিষার উদ্রেক হয় কিনা- এসব তাদের ব্যাপার।
আমি এসব কোনদিন গায়ে মাখিনি, মাখবার চিন্তাও আমাকে করতে হয়নি। দেশের অনেক বড় পদে আমি আসীন ছিলাম। আমি আমার মতোই। ইউনিক। যারা যুদ্ধাপরাধীর চেয়েও ভয়ঙ্কর, যাঁরা বাইচান্স মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু হালে পরিচিত হয়ে ওঠা এক শব্দগুচ্ছ (চযৎধংব) অনুযায়ী তাদের পায়ের নখের যোগ্যও নয়, তারা আমাকে বার বার রক্ষা করেছে, আমাকে ওপরের দিকে ঠেলে তুলে দিয়েছে। আমাকে মন্ত্রিত্ব দিয়েছে, আমাকে উপদেষ্টাগিরি দিয়েছে; যে জাতীয় পতাকা চাইনি আমার বাড়িতে ও গাড়িতে তা তুলে দিয়ে তার চূড়ান্ত অপমান করেছে। আমি তখন আমার এই অভাবনীয় ও চমৎকার উত্তরণ এবং তাদের স্বেচ্ছাবনমন ও স্বার্থের কারণে অবস্থানসরণ চরম আনন্দে ও পরম পুলকে উপভোগ করেছি। আমার প্রোফাইল নিয়ে টেলিভিশনে অনুষ্ঠান হয়েছে, আমি এনজয় করেছি।
আমার ব্যাপারে সর্বশেষ খবর হচ্ছে- হাসপাতালের পর আমি এখন কাসিমপুর কারাগারে ঘুরেটুরে ন্যায়ালয়ে উপস্থিত হচ্ছি, সেখানে ধর্মাবতারের সামনে যেমন খুশি আচরণ করছি, প্রতিপক্ষের ব্যবহারজীবীদের সঙ্গে ইচ্ছেমতো আচরণ করছি, প্রতিপক্ষের সাক্ষীর সঙ্গে তুই তোকারি করছি, কেউ আমাকে ও আমার বাবাকে সংক্ষিপ্ত নামে ডাকলে তার ওপর আমি গরম হচ্ছি ও চরমভাবে চড়াও হয়ে তাদের নরম করতে চাচ্ছি। আচার আচরণ ও ভদ্রতার ধরম কোথাও আমি মানতে চাচ্ছি না।
আমার নাম পরিচয় ও বংশলতিকা খুঁজে বার করার জন্য আরও কিছু সূত্রসন্ধান আমি দিতে চাই। আমার বুকের গহীনের এক প্রবল আকাক্সক্ষা, দেশের সব মানুষ যেন আমাকে নির্ভুল চিনে নিতে পারে এবং চিনে নেয়ার পর আমাকে বুকের বড় গভীরে ঠাঁই দিতে পারে।
আমি আমার মতো। ইউনিক। যেমন, ভোটের সময় কখনও আমি নিজের জায়গায় দাঁড়াতাম, কখনও নিজের ভাইকে চান্স দেয়ার জন্য জবরদস্তি করে অন্যের বাড়িতে, অন্যের জায়গায় ও অন্যের আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে পড়তাম। যে বার মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারত, সেবার জিতেও আসতাম।
গু-া বদমাশ চ্যালা চামুন্ডাদের পেট ভরানো এবং তাদের মনের কোণে কোণে সাম্প্রদায়িক স্বপ্ন জাগানো ছাড়া ফিন্যান্সিয়াল ও সাইকোলজিক্যাল ইনভেস্টমেন্টও খুব একটা করতে হতো না আমাদের। আমার মোটা মাথার গন্ধনালী থেকে সূক্ষè একটা বুদ্ধি বা’র করতাম, খরচ থেকেও বেঁচে যেতাম, ইলেকশনেও জিতে যেতাম। সে বৃদ্ধি হচ্ছে, সংখ্যালঘুদের ভয় পাওয়ানো ও ভোট সেন্টারে যাওয়ার পথে তাদের বার বার আটকানো এবং সেখানে যেমন সুবিধা, মারধর করা, হাত পা ভেঙ্গে দেয়া ও মানবজীবন, বিশেষত সংখ্যালঘু জীবনের ওপর ঘেন্না জমিয়ে দেয়া। এখনও আমাকে যারা চিনতে পারেননি, তাদের জন্য আমার একটি জগদ্বিখ্যাত উক্তি আছে। “আগে জানতাম কুকুর লেজ নাড়ে। এখন দেখুন লেজ ‘কুত্তা’ নাড়ে।” দেখুন প্রিয়ভাজনেরা, দেখুন ঘনিষ্ঠ দুশমনেরা, এবার আমাকে চিনতে পারেন কিনা। পারলে ভাল, না পারলে আরও ভাল।
লেখক : কথাসাহিত্যিক
আমার ব্যাপারে সর্বশেষ খবর হচ্ছে- হাসপাতালের পর আমি এখন কাসিমপুর কারাগারে ঘুরেটুরে ন্যায়ালয়ে উপস্থিত হচ্ছি, সেখানে ধর্মাবতারের সামনে যেমন খুশি আচরণ করছি, প্রতিপক্ষের ব্যবহারজীবীদের সঙ্গে ইচ্ছেমতো আচরণ করছি, প্রতিপক্ষের সাক্ষীর সঙ্গে তুই তোকারি করছি, কেউ আমাকে ও আমার বাবাকে সংক্ষিপ্ত নামে ডাকলে তার ওপর আমি গরম হচ্ছি ও চরমভাবে চড়াও হয়ে তাদের নরম করতে চাচ্ছি। আচার আচরণ ও ভদ্রতার ধরম কোথাও আমি মানতে চাচ্ছি না।
আমার নাম পরিচয় ও বংশলতিকা খুঁজে বার করার জন্য আরও কিছু সূত্রসন্ধান আমি দিতে চাই। আমার বুকের গহীনের এক প্রবল আকাক্সক্ষা, দেশের সব মানুষ যেন আমাকে নির্ভুল চিনে নিতে পারে এবং চিনে নেয়ার পর আমাকে বুকের বড় গভীরে ঠাঁই দিতে পারে।
আমি আমার মতো। ইউনিক। যেমন, ভোটের সময় কখনও আমি নিজের জায়গায় দাঁড়াতাম, কখনও নিজের ভাইকে চান্স দেয়ার জন্য জবরদস্তি করে অন্যের বাড়িতে, অন্যের জায়গায় ও অন্যের আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে পড়তাম। যে বার মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারত, সেবার জিতেও আসতাম।
গু-া বদমাশ চ্যালা চামুন্ডাদের পেট ভরানো এবং তাদের মনের কোণে কোণে সাম্প্রদায়িক স্বপ্ন জাগানো ছাড়া ফিন্যান্সিয়াল ও সাইকোলজিক্যাল ইনভেস্টমেন্টও খুব একটা করতে হতো না আমাদের। আমার মোটা মাথার গন্ধনালী থেকে সূক্ষè একটা বুদ্ধি বা’র করতাম, খরচ থেকেও বেঁচে যেতাম, ইলেকশনেও জিতে যেতাম। সে বৃদ্ধি হচ্ছে, সংখ্যালঘুদের ভয় পাওয়ানো ও ভোট সেন্টারে যাওয়ার পথে তাদের বার বার আটকানো এবং সেখানে যেমন সুবিধা, মারধর করা, হাত পা ভেঙ্গে দেয়া ও মানবজীবন, বিশেষত সংখ্যালঘু জীবনের ওপর ঘেন্না জমিয়ে দেয়া। এখনও আমাকে যারা চিনতে পারেননি, তাদের জন্য আমার একটি জগদ্বিখ্যাত উক্তি আছে। “আগে জানতাম কুকুর লেজ নাড়ে। এখন দেখুন লেজ ‘কুত্তা’ নাড়ে।” দেখুন প্রিয়ভাজনেরা, দেখুন ঘনিষ্ঠ দুশমনেরা, এবার আমাকে চিনতে পারেন কিনা। পারলে ভাল, না পারলে আরও ভাল।
লেখক : কথাসাহিত্যিক
No comments