নারী ও ক্ষুদ্রঋণ by রানা সুলতানা

মাত্র কয়েক দশক আগে ক্ষুদ্রঋরে ধারণাটা বাংলাদেশে এসেছে। বর্তমানে এর কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক বির্তকও সৃষ্টি হয়েছে। তবে তর্ক বা বিতর্ক যাই হোক না কেন ক্ষুদ্রঋণের রয়েছে বিশেষ একটা ভূমিকা। বলা হয়, দরিদ্র দেশের কোন একজন দরিদ্র নারীকে খুব সামান্য ঋণ দিলে কিছু দিন পরে দেখতে পাওয়া যাবে যে, ওই নারী ক্ষুদ্র ঋণের টাকা


কাজে লাগিয়ে আরম্ভ করেছে কোন ছোটখাট ব্যবসা। হয়তো সেই নারী ঋণের অর্থে হাঁস মুরগি পালন করবে, না হলে বাড়ির আঙ্গিনায় কোন সবজি বাগান করবে নইলে কিনবে সেলাই মেশিন। আর এভাবেই সে এগিয়ে যাবে এবং তার পরিবারও জীবনের উন্নতির সোপানের প্রথম ধাপে পা রাখবে। কয়েক বছর পরে দেখা যাবে এই পরিবারটি ক্রমেই অনেক দূর এগিয়ে গেছে এবং তাদের জীবন থেকে অর্থসংকট পুরোপুরি লাঘব হয়ে গেছে। পরিবারটি অভাব থেকে বেরিয়ে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে পরিণত হয়েছে। সারাবিশ্বে ক্ষুদ্রঋণের প্রভাবের কথা এইভাবেই প্রচার করা হয়। দরিদ্র দেশগুলোতে এই ঋণের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে নারী। নারীরাই সবচেয়ে অভাবের যন্ত্রণা ভোগ করে বলে তাদেরকেই মনে করা হয়েছে ক্ষুদ্রঋণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। তাছাড়া বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে নারীরা পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য; অন্তত ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে । অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষুদ্র ঋণ একটি দীর্ঘস্থায়ী ও প্রসিদ্ধ প্রক্রিয়া। ক্ষুদ্রঋণের পক্ষে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে যে যুক্তিটা বলা হয়ে থাকে তা হচ্ছে এই যে, কেবল ক্ষুদ্রঋণেই কোন একজন দরিদ্র নারীকে সামান্য টাকা ঋণ দিয়ে ব্যবসা শুরু করার সুযোগ করে দেয়া সম্ভব। আরও বলা হয় যে, একদিকে এটা পুরুষতান্ত্রিক চিরায়ত সমাজে নারীর ক্ষমতায়নের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়, অপরদিকে ব্যক্তিগত দায়িত্বশীলতা ও উদ্যোগের ব্যাপারে জোড়ালো ভূমিকা রেখে সমাজে নারীদের স্বাবলম্বী হতে অনুপ্রেরণা জোগায়। সাধারণত বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দরিদ্র বা স্বল্প উন্নত দেশগুলোতে ক্ষুদ্রঋণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদান করে থাকে। এর বাইরেও রয়েছে আরো অনেক দেশী ও বিদেশী দাতা সংস্থাসমূহ, যারা ঋণ প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্রঋণের জন্য বিশ্বে বেশ নাম করেছে। এদেশে অসংখ্য বেসরকারী সংস্থা ক্ষুদ্রঋণ দান কর্মসূচিতে নিয়োজিত রয়েছে। ২০০৬ সালে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষুদ্রঋণের ভূমিকার জন্য নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন বাংলাদেশের ড. মোহাম্মদ ইউনুস ও তাঁর গড়া দরিদ্র মানুষদের আর্থিক সংগঠন গ্রামীণ ব্যাংক। এই প্রাপ্তিটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন হলেও এই ক্ষুদ্রঋণ প্রকৃতপক্ষে দেশের নারীদের উন্নয়নে কতটা সহায়তা করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আসলেই নারীরা কি ক্ষুদ্রঋণ পেয়ে আর্থিকভাবে উন্নত, স্বাবলম্বী হয়েছে? নাকি তারা ক্রমেই ক্ষুদ্রঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছে? সত্যিকারেই কি সম্ভব ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে নারীর ক্ষমতায়ন? ক্ষুদ্রঋণের প্রকৃত প্রভাব কতটা, তা মূল্যায়ন করার সময় এসেছে। ক্ষুদ্রঋণ একেবারেই যে কোন অবদান রাখেনি তা নয়, ক্ষুদ্র ঋণের কার্যকারিতার অনেক প্রমাণও রয়েছে আমাদের চোখের সামনে। তবে যতটা প্রচার করা হয় এই ক্ষুদ্রঋণ সম্পর্কে অনেকের বিচারেই এাঁ ততটা প্রসংশার দাবীদার নয়। ক্ষুদ্রঋণ খুব কম ক্ষেত্রেই নারীদের জীবনে প্রকৃত পরিবর্তন আনতে পেরেছে। অল্প সংখ্যক নারী ক্ষুদ্রঋণ পেয়ে জীবনে স্বচ্ছলতা আনতে পারলেও বেশিরভাগ নারীই ঋণ নিয়ে তা ঠিকমত পরিশোধ করতে পারেনি অথবা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, হয়েছে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ক্ষুদ্রঋণ পাওয়ার ফলে দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে মধ্যবিত্তে পরিণত হতে পেরেছে খুব কম সংখ্যক নারীই। ক্ষুদ্রঋণ পদ্ধতিগতভাবে গঠনমূলক একটি প্রচেষ্টা হলেও একে সবসময়ই অতি মূল্যায়ন করা হয়েছে। ক্ষুদ্রঋণ আসলে যতটুকু কাজে আসতে পারতো বা সত্যিকারে উপকার করতে পারতো, অতি প্রশংসা বা অতিরঞ্জিত মূল্যায়নের ফলে সেটুকুও অর্জন করা সম্ভব হয়নি বলে মনে করেন কেউ কেউ। ক্ষুদ্রঋণের ব্যাপারে বিশ্বব্যাপী যে উচ্চ ধারণার তৈরি হয়েছে তার একটি কারণ হচ্ছে এই ক্ষুদ্রঋণের প্রতিষ্ঠাতারা এর ক্ষমতা ও কার্যকারীরা সম্পর্কে নানা ধরনের গল্প বা কাহিনী সব সময় প্রচার করতে থাকেন। তারা চায় প্রচারের মাধ্যমেই প্রসার ঘটাতে। ড.মোহাম্মদ ইউনুসসহ ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তারা যখন ক্ষুদ্রঋণের সাফল্যের কাহিনী বলেন তখন তারা উদাহরণ হিসাবে কয়েকজন নারীর ক্ষুদ্রঋণ প্রাপ্তির ফলে জীবন সংগ্রামে জয়ী হবার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে থাকেন। যে সব নারীদের উদাহরণ দেয়া হয় তাদের মধ্যে বেশিরভাগ নারীরাই বাংলাদেশের নিভৃত পল্লীর বাসিন্দা। প্রতিদিন তারা নানাভাবে সমাজের দ্বারা নির্যাতিত। কেউ হয়তো স্বামী নির্যাতিত হয় কিংবা কারো স্বামী হয়তো শেষ সম্বল কুড়ে ঘরের ছাদটি পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছে জুয়াখেলার টাকার জোগান দিতে। স্বামীর অত্যাচারে কোন কোন নারী হয়তো বাধ্য হয়েছে ঘর সংসার ছাড়তে। স্বামী রাগের মাথায় হয়তো তালাকই দিয়ে দিয়েছে, বাড়ি থেকে সন্তানসহ বের করে দিয়েছে । সেই নারী ও তাদের সন্তানদের উপর দিয়ে যেন ঝড় বয়ে গেছে। কোন নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা থাকেনি। তখনই তারা বাঁচার জন্য ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণ করেছে। জীবনে প্রথমবারের মতো ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণের মধ্য দিয়েই শুরু হয়েছে তাদের নতুন জীবন, জীবনে প্রথম শুরু হয়েছে অর্থনৈতিক কর্মকা-। প্রথমবার তারা ঋণ পায় খুব কম টাকা। হয়তো ঋণ পায় ৫০ ডলারের কম টাকা। ঋণের অর্থে তারা নতুন ব্যবসা আরম্ভ করে। এরপরে তারা হয়তো আরও বড় অংকের ঋণ নেয় এবং আরম্ভ করে ক্ষুদ্র অন্য কোন ব্যবসা। এভাবে তাদের ব্যবসা ক্রমে বড় হয়। এইভাবে কোন কোন নারী ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে জীবনে আর্থিক উন্নতি ঘটায়। এই ধরনের ঘটনাগুলোই প্রচারের জন্য জোড়ালো উদাহরণ। কিন্তু এই ধরনের ঘটনা বা কাহিনীগুলো কখনই সকল ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। এই রকম সফলতার ঘটনা খুব বেশি নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দরিদ্র নারীরা এক কারণে ঋণ নিয়ে অভাবের কারণে তা অন্য কাজে খরচ করে ফেলতে বাধ্য হয়। ফলে যে কারণে ঋণ গ্রহণ করা হয় সেই পরিকল্পনা অনুসারে কাজটি আর বাস্তবায়িত হতে পারে না। অথচ ঋণ হিসাবে প্রাপ্ত অর্থ ঠিকই ব্যয় হয়ে যায়। এর বাইরেও একটি কথা উল্লেখ না করলেই না। আর তা হলো কিছু উদ্যমী মানুষ থাকে যারা হাজারো বাধা বা সীমাবদ্ধকে উপেক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়, তাদেরকে কোনভাবেই আটকিয়ে রাখা যায় না। তারা জন্মায়ই জীবন যুদ্ধে জয়ী হবার জন্যে। ঋণ গ্রহীতা নারীদের মধ্যেও এমন কয়েকজন নারীকে পাওয়া যায় যারা যেভাবেই হোক জীবনে উন্নতি করে থাকে। এই ঘটনাগুলো ক্ষুদ্রঋণ প্রচারের জন্য উপযোগী হলেও বাস্তবে সবার ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে না। দেখা যায় ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তারা এই ধরণের উদাহরণগুলো খুঁজে বের করে ক্ষুদ্রঋণের প্রচারের জন্য সেগুলো ব্যবহার করে থাকে। এদেশে আশির দশক থেকে জোরালোভাবে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম আরম্ভ হয়। এরপরে এই ক্ষুদ্রঋণের কার্যকারিতা নিয়ে শুরু নানা ধরণের গবেষণাও। ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে বহু একাডেমিক গবেষণা প্রকাশিতও হয়েছে।
কোন কোন গবেষণায় বাস্তবসম্মত নয়। দেখা গেছে, যে সব এলাকায় ক্ষুদ্রঋণ ভালভাবে কাজ করেছে সেই সব এলাকায় ক্ষুদ্রঋণ প্রবক্তারা গবেষকদেরকে দিয়ে গবেষণা করিয়েছেন। ফলে ওই সব এলাকায় সব সময়ই ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে সফলতার কাহিনী খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু এভাবে গবেষণার এলাকা নির্বাচন না করে যদি সাধারণ একটি এলাকা নির্বাচন করে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের সফলতা বা ব্যর্থতা দেখার চেষ্টা করা হতো তবে দেখা যেত ক্ষুদ্রঋণ অনেক নারীর জীবনে তথা পরিবারে বয়ে এনেছে সীমাহীন দুর্ভোগ। এছাড়াও দেখা যায় যে, যে সব পরিবার ক্ষুদ্রঋণ ব্যবহার করছে সেই সব পরিবারের আয় অন্যদের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে সেই সব পরিবারের পক্ষেই ভাল করা সম্ভব হয়েছে যাদের আগে থেকেই কোন চালু ব্যবসা বা কাজ ছিল। ক্ষুদ্রঋণ তাদের এই কাজকে গতিশীল করেছে। কিন্তু একেবারে শূণ্য অবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে কোন নারীর পক্ষে ব্যবসায় উন্নতি করা খুব সহজ কাজ না। কারণ ঋণ নিয়ে তা কোন কাজে খাটিয়ে প্রথমেই লাভ করে ঋণ প্রাপ্তির প্রথম সপ্তাহ থেকে সুদসহ ঋণ ফেরত দেয়া প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। ক্ষুদ্র ঋণের উপর প্রথমদিকে একটি গবেষণা করে বিশ্বব্যাংক। গবেষণাটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৮ সালে জার্নাল অফ পলিটিক্যাল ইকোনোমি-তে। জটিল পরিসংখ্যান পদ্ধতি ব্যবহার করে এই গবেষণাটি করা হয়। গবেষণায় পাওয়া যায় যে, ক্ষুদ্র ঋণ বাংলাদেশের দারিদ্রকে কমিয়েছে। বিশেষত যখন নারীরা ঋণ গ্রহণ করেছে। একজন গবেষক পরে হিসাব করে দেখিয়ে দিয়েছে যে, গ্রামীণ ব্যাংকের ৫ ভাগ ঋণ গ্রহীতা প্রতিবছর দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়। কিন্তু এইসব গবেষণাগুলোতে একটি দিক সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। এটাই ছিলো গবেষণাগুলোর সীমাবদ্ধতা। বড় অংকের ঋণ গ্রহীতার উপার্জনও অনেক বেশি হবে। এটাই স্বাভাবিক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বড় ঋণ পাবার যোগ্যতা কি একজন নিঃস্ব নারীর আছে? ক্ষুদ্রঋণ কি মানুষকে কম দরিদ্র হতে সহায়তা করছে নাকি কম দরিদ্র হওয়ায় তাদেরকে বেশি ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে উপযুক্ত বলে ধরে নিতে সাহায্য করছে। অনেক নারী ঋণ নিয়ে তা কোন কাজে খাটিয়ে লোকসানের সম্মুখীন হলে, বাধ্য হয় ওই ঋণ শোধ দেবার জন্য অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে। ফলে সে ক্রমেই ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ে। কখনই আর সব ঋণ পরিশোধ সম্ভব হয় না, ফলে আর্থিক স্বচ্ছলতা আসুক আর নাই আসুক ঋণের ঘেরাটোপ থেকে সে আর বেরোতে পারে না। এভাবে এখন দেখা যায় বর্তমানে অনেক নারী একাধিক সমিতির সদস্য হয়ে একাধিক জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে ঋণে চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে। এই দিকটি ক্ষুদ্রণের প্রবক্তারা খুব যতেœ এড়িয়ে যান। প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ নানা কারণে একটি দরিদ্র নারী যদি ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয় তখন সে কিভাবে সুদসহ আসল পরিশোধ করবে? এই সব প্রশ্নে কোন সদুত্তর নেই। বরং ঋণ দেবার জন্য রয়েছে নানান প্রলোভনের ব্যবস্থা। একটি অভাবী নারীর সামনে যদি ঋণের কথা বলা হয় তবে সে কোন চিন্তা না করেই ঋণ নিতে সম্মত হবে। কারণ তার সামনে রয়েছে সীমাহীন অভাব। ঋণ কিভাবে কাজে লাগাতে হবে তার কোন সঠিক দিক নির্দেশনা ছাড়াই যদি নারীকে ঋণ দেয়া হয় তবে কি করে আশা করা সম্ভব যে ঋণ থেকে সফল ব্যবসা সম্ভবপর হবে? ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে যে সব অগণিত সংস্থা কাজ করে চলেছে তারা খুব কমই এই বিষয়টি মনে রাখে। কখনও কখনও ঋণদানকারী সংস্থার কর্মীদের ভয়ে নারীরা ভিটে ছাড়তেও বাধ্য হয়।
এছাড়াও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, নতুন প্রজন্মের উন্নয়ন অর্থনীতিবিদরা ক্ষুদ্র ঋণের বিভিন্ন প্রকল্পগুলো নিয়ে নিরীক্ষা চালিয়ে একটি বিশেষ সমস্যাকে চিহ্নিত করেছে। আর তা হল ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণের ফলে দাম্পত্য জীবনে কলহ অনেক বেড়ে গেছে । আর এতে নারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ডেভিড রুডম্যানের এক লেখা থেকে এই ধরনের ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক নেতিবাচক ঘটনা জানতে পারা যায়। ক্ষুদ্র ঋণের প্রভাব প্রথমে নিকারাগুয়া, বসনিয়া, মরক্কো ও পাকিস্থানে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এর ফলাফল খুব ভাল ছিল না । বসনিয়ায় ক্ষুদ্র ঋণের পরিমাণ ২০০৫ সালে লাফিয়ে উঠেছিল এক বিলিয়ান ডলারে। ২০০৯ সালে ঋণ মওকুফ করে দেয়া অথবা ঋণ ফেরত না আসা ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮৩০ মিলিয়ন ডলার। ২০১০ সালে ভারতের আন্দ্র প্রদেশে অতিরিক্ত ঋণের চাপে ঋণ গ্রহীতার আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেলে প্রদেশটির সরকার ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থাগুলোকে অভিযুক্ত করে কঠোর আইন প্রণয়ন করে। নিয়ম করা হয় যে, ঋণ দাতাদের বাধ্যতামূলকভাবে জেলা প্রশাসকের কাছে নিবন্ধন করতে হবে। পরিচালিত প্রতিটি ঋণ কার্যক্রমের জন্য অবশ্যই অনুমোদন নিতে হবে। এভাবে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম তদারকির ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের হাতে অনেক বেশি ক্ষমতা দেয়া হয় । বিশ্ব ইতিহাসে ক্ষুদ্রঋণই বোধ হয় প্রথম অর্থনৈতিক বুদবুদ যা কিনা মানুষকে তার প্রয়োজনের চেয়ে খাওয়ানো হয়েছে ত্রাণ হিসাবে। ক্ষুদ্রঋণের জন্য বড় মাপের আর্থিক যোগান দেয় ব্যক্তিগত দাতারা, সামাজিক বিনিয়োগকারীরা এবং বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থাগুলো। ক্ষুদ্রঋণে আর অর্থ জোগান না দিয়ে উচিত ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক প্রশিক্ষণের দিকে মনোযোগ দেয়া। যাতে করে গড়ে তোলা যায় একটি দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, যা ক্ষুদ্র্ঋণ দানের পাশাপাশি অন্যান্য অনেক ধরনের সেবা প্রদান করবে নারীদেরকে। এই পদক্ষেপ বা পন্থায় দাতাদের ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক ব্যয় কমবে অথচ বাড়বে সুযোগ সুবিধা। এর ফলে নারীরা সত্যিকারে ক্ষুদ্রঋণের সুফল ভোগ করতে পারবে ভবিষ্যতে ।

No comments

Powered by Blogger.