মন কাড়ছে ‘জিলেপি কাড়া’ by এম. আমিনুল হক

আমের নাম ‘জিলেপি কাড়া’। পাতে ভালো রুচলেও জাত অজানা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে এখন এই আমের আবাস। আগে গুটি আম হিসেবে কম দামে বিক্রি হলেও এখন এটি অন্যতম দামি আম, নিজ গুণে। ৯৫ বছর বয়সী মোহা. মোহর আলী ১৯৬৫ সালে ভারত থেকে এ দেশে আসেন।


চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দাইপুখুরিয়া ইউনিয়নের বিনোদনগর গ্রামে এসে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। জীবিকার জন্য শুরু করেন নার্সারির ব্যবসা। সম্প্রতি তাঁর বাড়িতে গেলে জিলেপি কাড়া আম দিয়ে আপ্যায়ন করেন। খেতে খেতে চলে আলাপচারিতা। জানালেন, ভারতের মালদহ জেলার ধনাঢ্য গোসাইবাবু ছিলেন আম সমঝদার লোক। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ভালো জাতের আমগাছ আনিয়ে গড়ে তোলেন শখের বাগান। ১৯৬৭ সালে মোহর আলী সেখান থেকে এই আমের দুটি চারা এনে নিজ বাড়িতে লাগান। মোহর আলীর দাবিমতে, শিবগঞ্জে জিলেপি কাড়ার যাত্রা সেখান থেকে।
জিলেপি কাড়া জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত পাওয়া যায়। আকারে মাঝারি। লম্বায় চার ইঞ্চি, বেড় তিন ইঞ্চি। ওজন ২৫০ থেকে ৩৫০ গ্রাম। স্বাদ কিছুটা গোপালভোগ ও খিরসাপাতির (হিমসাগর) মাঝামাঝি। নম্র ঘ্রাণের মধ্যে লুকিয়ে থাকে অপূর্ব মোহনীয়তা। পাকা আমের রং লালচে হলুদ, খোসা মোটা ও মসৃণ, আঁটি গোপালভোগের চেয়ে সামান্য ছোট। অনেক দিন ঘরে রেখে খাওয়া যায়।
মোহর আলী বললেন, অন্য পূর্ণবয়স্ক আম গাছ থেকে পেড়ে সর্বোচ্চ সাত থেকে ১০ দিন রেখে খাওয়া যায়। কিন্তু জিলেপি কাড়া রাখা যায় ১৫ থেকে ২০ দিন। আমের বেশি অংশে পচন ধরে না, যেটুকুতে ধরে, খোসা ছাড়ানোর সময় তা খোসার সঙ্গে উঠে আসে। আর জিলেপি কাড়া নামটার পেছনে গল্প হলো: ছানার জিলেপি যেমন সুস্বাদু এবং শিশু-কিশোরেরা কাড়াকাড়ি করে খায়, তেমনি স্বাদের কারণে এই আমের ক্ষেত্রেও তাই হয়। সে জন্য নাম জিলেপি কাড়া।
আক্ষরিক অর্থে কাড়াকাড়ি না হলেও এই আমের কদর বোঝা যায় এর দামে। রঘুনাথপুরের আম ব্যবসায়ী মো. নুরুল ইসলাম জানান, দু-তিন বছর আগেও এটি গুটি আম হিসেবে প্রতিমণ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হতো। কিন্তু দেশের সবচেয়ে বড় আমবাজার কানসাটে এখন এর মণ বিক্রি হয় তিন হাজার টাকায়। অথচ ক্ষিরসাপাতির মতো আম বিক্রি হয় দুই হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে।
আরও ভালোভাবে জানার জন্য সম্প্রতি এই আম আর আমগাছের পাতাযুক্ত ডাল নিয়ে গেলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রে। দেখেশুনে সেখানকার ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, এই আম এর আগে তাঁদের নজরে আসেনি। তিনি গবেষণাগারে তিনটি আম রেখে দেন এবং বাহ্যিক তথ্যগুলো লিপিবদ্ধ করেন।
মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, এই আম ও আমগাছ পর্যবেক্ষণ করা হবে। শিবগঞ্জ থেকে এই আমগাছের চারা সংগ্রহ করে তাঁদের বাগানে লাগাবেন। এই পর্যবেক্ষণ কয়েক বছর চলবে। পর্যবেক্ষণে প্রাপ্ত তথ্যে যদি এটি আলাদা জাত হিসেবে বিবেচিত হয়, তবে তাকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বারি) আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে অবমুক্ত করার জন্য সুপারিশ করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.