রমজানের প্রস্তুতির সময় by মুফতি এনায়েতুল্লাহ

পবিত্র রমজান মাস আসছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রমেই বাড়ছে বাজারের উত্তাপ। সেহরি ও ইফতারিতে ব্যবহার হয় এমন সব ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি, ডাল এবং পেঁয়াজসহ সব ধরনের শাক-সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী।


অথচ সরকার এসব পণ্য আমদানি, মজুদ ও সরবরাহ বাড়াতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিলেও ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা লুটে নিতে দাম বাড়াচ্ছে। এমন অস্থির বাজারদর, শঙ্কা আর উদ্বেগের মাঝেই প্রস্তুতি নিচ্ছে মুসলমানরা রমজানের।
বাজারের ঊর্ধ্বমুখিতা নিয়ে কথা বললে ব্যবসায়ীরা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ে বা কমে। তবে অর্থনীতিবিদসহ অভিজ্ঞ মহল মনে করেন, সার্বিকভাবে বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে কার্যকর সরকারি তদারকি বাড়ানোসহ আমদানি শুল্কহার কমানো প্রয়োজন। নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে আরও বেশি করে সরকারি মজুদ বাড়ানো উচিত। এ ছাড়া ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে রমজানে ভোগ্যপণ্য ও কাঁচাবাজারে তদারকির জন্য নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান জোরদার করা দরকার। এসব হলো রমজানের রোজা পালনের প্রস্তুতি। এ ছাড়াও রমজান মাসের জন্য আরও কিছু প্রস্তুতি রয়েছে। এখন থেকেই সেসবের প্রস্তুতি শুরু করা দরকার। মুসলমান হিসেবে এটা আমাদের দায়িত্ব।
রমজান শুরু হওয়ার দুই মাস আগে থেকেই হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করতেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) রজব মাসের শুরুতে নিজে বেশি বেশি করে 'আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বালিল্গগনা রামাজান' (হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় কর এবং আমাদের রমজানের পুণ্যময় মাস অর্জনের সৌভাগ্য দান কর) এই দোয়া পড়তেন ও সাহাবায়ে কেরামকেও পড়তে বলতেন। এটা ছিল হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) রমজানের প্রস্তুতির প্রাথমিক পর্যায়।
হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে মুসলমানরা রমজান আসার আগে থেকেই এর জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দেন। সাহাবায়ে কেরামের পর তাবেইন, তাবে তাবেইন, মুহাদ্দিসিন, আইম্মায়ে মুজাতাহিদিনসহ মুসলমানরা নিজ নিজ পরিসরে রমজানের প্রস্তুতি নিয়ে সেই ধারা অব্যাহত রেখেছেন। উপমহাদেশসহ এই বাংলাদেশেও রমজান আসার আগেই রমজানের প্রস্তুতি লক্ষ্য করা যায়। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকেও রমজানের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি পরিলক্ষিত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিও দেওয়া হয় রমজানের বিষয়টি মাথায় রেখে।
রমজানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি না হয় সে জন্য সরকার বিভিন্ন ঘোষণার পাশাপাশি বিদেশ থেকে পণ্যসামগ্রী আমদানির কথা আগেভাগেই জানিয়ে দেয়। ইফতার, তারাবি এবং সেহরির সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, গ্যাস-পানির সমস্যা নিরসন এবং যানজটমুক্ত শহর রাখার কথাও বলা হয়। বৈষয়িক এসব প্রস্তুতি ছাড়াও মুসলমানদের মধ্যে ইবাদতকেন্দ্রিক প্রস্তুতিও শুরু হয় বেশ জোরেশোরে। মসজিদগুলোর সংস্কার, চুনকাম, বিকল্প বিদ্যুৎ সংযোগ ও শামিয়ানা টানানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজ করা হয়। যেসব মসজিদে খতম তারাবির হাফেজ নির্ধারিত না থাকে সেসব মসজিদে নিয়োগ দেওয়া হয় হাফেজে কোরআনদের।
এ সময়টায় হাফেজে কোরআন যাদের তারাবির নামাজ পড়ানোর মসজিদ নির্দিষ্ট নেই তারা তারাবির নামাজের জন্য মসজিদ ঠিক করে নেন। মসজিদকেন্দ্রিক তারাবি নামাজ ছাড়াও অফিস, মার্কেট ও বাসাকেন্দ্রিক তারাবির নামাজের ব্যবস্থাপনার কাজটা সম্পন্ন করা হয়। হাফেজে কোরআনের অধিকাংশই মাদ্রাসার ছাত্র কিংবা শিক্ষক হওয়ার কারণে শাবানের ১৫ তারিখ পর্যন্ত তারা ব্যস্ত থাকেন পড়ালেখাসহ পরীক্ষা দেওয়া কিংবা নেওয়ার কাজে। ১৫ শাবানের মধ্যে এসব কাজ শেষ করে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েন কোরআনে কারিম তিলাওয়াতে। রমজানের আগ পর্যন্ত তারা কোরআন তিলাওয়াতে ব্যস্ত থাকেন, যেন নির্ভুলভাবে, নির্বিঘ্নে তারাবির নামাজ পড়াতে পারেন। রমজানের আগেই ঢাকাসহ প্রায় সারাদেশেই খতমে তারাবির জন্য সাধারণ মুসলিল্গরা প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। রমজান মাসে কোথায় কীভাবে তারাবি পড়বেন এবং নিজের অন্য কাজগুলো কীভাবে সম্পন্ন করবেন_ এসব তারা রমজানের আগেই ঠিক করে রাখেন। রমজানের প্রস্তুতিকে একশ্রেণীর মুসলমান বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে থাকেন, আবার অন্য একটি শ্রেণী রয়েছে যারা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন। মুসলমান হিসেবে সবার জন্য প্রয়োজন রমজানের প্রস্তুতির বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে যথাযথভাবে রমজানের ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত হওয়া। কারণ এ মাসের ইবাদত-বন্দেগির সওয়াব অন্য সব মাসের ইবাদত-বন্দেগি থেকে ৭০ গুণ বেশি। সুতরাং আসুন এখনই আমরা রমজানের পুণ্যময় ইবাদত-বন্দেগির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বিগত দিনের গুনাহ মাফের এই সুবর্ণ সুযোগ গ্রহণ করি।
 

No comments

Powered by Blogger.