ফ্যাশনেবল জিন্স

দিন যত যাচ্ছে তত পরিবর্তন ঘটছে সমাজের নানা আঙ্গিনায়। নতুনত্বের আলিঙ্গন ঘটছে পুরোদমে। উচ্ছ্বসিত মন থেকে পুরনো কালি রেখা দূর করায় সচেষ্ট সবাই। নিজের বাহ্যিক আবরণ উজ্জ্বল করা, নিজের ব্যক্তিত্বকে আরও বেশি করে ফুটিয়ে তোলার আয়োজন চলছে চারদিকে। তবে তরুণ প্রজন্মের মধ্যেই এ ধারাটা বেশি লক্ষ্য করা যায়।


পুরনোকে ভেঙ্গে নতুনের আবাহনে গা ভাসানোতেই আনন্দ তাদের। তরুণ প্রজন্মের দিকে তাকালে সব সময় একটা চমক লক্ষ্য করা যায়। সেটা পোশাক আশাকে কিংবা চালচলনে যেটাই হোক না কেন। ফ্যাশন ট্রেন্ডের ধারাবাহিক পরিবর্তন তরুণ প্রজন্মকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। নিত্যনতুন ঘারানার পোশাক আন্দোলিত করে তাদের। মাঝে মধ্যেই তারা ফ্যাশন ট্রেন্ডের গতি-প্রকৃতি পরিবর্তন করে থাকে। আবার পুরনো পোশাককে নতুন রূপ দেয়ার মাধ্যমেও ভিন্নতা আনা হয়ে থাকে। সেটাতেও ভিন্ন ধরনের ফ্লেবার পাওয়া যায়। তেমনি একটি পোশাক হচ্ছে জিন্স। বহুদিন ধরে ফ্যাশন ট্রেন্ডের সঙ্গী জিন্স। কবে থেকে জিন্স এ দেশের ফ্যাশন ট্রেন্ডে যোগ হয়েছে তার সঠিক দিন তারিখ জানা না থাকলেও আজ অবধি জিন্স ফ্যাশন ট্রেন্ডের অন্যতম অনুষঙ্গ। মূলত প্রয়োজনের তাগিদ থেকেই জিন্সের উৎপত্তি। পরবর্তীতে তা ফ্যাশনে রূপ নিয়েছে। জিন্সের ইতিহাস খুবই পুরনো। ধারণা করা হয় শ্রমিকদের কাজের সুবিধার জন্য জিন্সের উদ্ভব। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার স্বর্ণের খনিতে কর্মরত শ্রমিকদের কাজের সুবিধার জন্য জিন্স পরতে দেয়া হয়। পরবর্তীতে দেখা যায় জিন্স প্যান্ট বেশ স্থায়ী হয় এবং খনিতে কাজ করার ক্ষেত্রেও সহায়ক। বলা যায় শ্রমিকদের প্রয়োজন মেটাতেই জিন্সের উৎপত্তি। পরবর্তী সময়ে কালের আবহে জিন্স ফ্যাশন ট্রেন্ডে যোগ করে ভিন্ন মাত্রা।
জিন্স প্রথম বাজারে আসে ১৮৫৩ সালে। লিওব স্ট্রউস নামের ভদ্রলোক যিনি সর্ব প্রথম শ্রমিকদের জন্য জিন্স তৈরি করেছিলেন, তিনিই এর মার্কেটিং শুরু করেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত জিন্স সবার কাছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ১৯৩০ সালের দিকে ওয়েস্টার্ন ফিল্মে কাউবয় চরিত্রটি বেশ জনপ্রিয় ছিল। সে সময় কাউবয় নিয়ে বেশ প্রচুর ফিল্ম তৈরি হতো। এই কাউবয় চরিত্রটির পোশাকও বেশ জনপ্রিয়তা পায়। সেখানে কাউবয়ের পরিহিত জিন্স ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এর পর থেকেই জিন্সের ব্যাপকতা বাড়তে থাকে। যা আজ পর্যন্ত ফ্যাশন ট্রেন্ডকে প্রভাবিত করছে। সব বয়সীদের জন্য রয়েছে জিন্স। যে কারণে সবার কাছেই সমানভাবে জনপ্রিয় জিন্স। জিন্সের শুরুটা একটা রঙ দিয়ে হলেও বর্তমানে বিভিন্ন কালারে প্রস্তুত হচ্ছে জিন্স। অর্থাৎ আকাশি নীল রঙ দিয়ে জিন্সের সূত্রপাত। আর এখন ক্রেতার পছন্দের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন কালারের জিন্স দ্যুতি ছড়াচ্ছে আপন মহিমায়। ডিজাইনেও এসেছে ভেরিয়েশন। শুধুমাত্র জিন্স নিয়ে ব্যবসা করে অনেক কোম্পানি আজ বিশ্বসেরা। একচেটিয়া ব্যবসা করে যাচ্ছে আজও। এর মধ্যে লিভাইস, আরমানি, লী, গুচি, ডি এন্ড জি ইত্যাদি। আমাদের দেশেও জিন্স ব্যাপক জনপ্রিয়। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে।স্থান কাল ভেদে রয়েছে জিন্সের ডিজাইন ভেরিয়েশন। ফ্যাশন শো’র অন্যতম অনুষঙ্গ জিন্স। ছেলে মেয়ে উভয়ের কাছেই জিন্স এখন নিত্য ব্যবহার্য পোশাক। ক্যাম্পাস কিংবা কোন পার্টিতে তরুন প্রজন্মের কাছে প্রথম পছন্দ হচ্ছে জিন্স। দামও হাতের নাগালে হওয়াতে দিন দিন এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অরজিনাল ব্রান্ডের জিন্স ছাড়াও ভালো মানের জিন্স এখন পাওয়া যাচ্ছে সর্বত্র। ৬৫০ টাকা থেকে ১২৫০ টাকার মধ্যে প্রচুর জিন্স মিলবে শপিংমল গুলোতে। আর একটু গর্জিয়াস কিনতে চাইলে ১৪৫০ টাকা থেকে ২২৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে। অরিজিনাল ব্র্যান্ডের জিন্সও পাওয়া যায় আমাদের দেশে। তবে দাম একটু বেশি। নূন্যতম ২৫০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হবে। তবে এ কথা সত্যি ফ্যাশনের গন্ডি পেরিয়ে নিত্য দিনের ব্যবহার্য পোশাকে পরিনত হয়েছে জিন্স। ছোট বড় সব বয়সীদের কাছেই জিন্স এখন প্রয়োজনীয় একটি পোশাক। আর এ কারনেই দিন দিন বাড়ছে এর পরিধি।
ছবি: আরিফ আহমেদ মডেল: সুজানা

No comments

Powered by Blogger.