শিক্ষা-যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি ছাত্রদের স্বাগত জানায় by জেমস এফ মরিয়ার্টি

বাংলাদেশ তার ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর আমি অবাক হচ্ছি যে, এ দেশের ৮০ শতাংশ নাগরিকের বয়স এখনো ৪০-এর কোঠায় পৌঁছায়নি। এটি একটি তরুণ দেশ, যাদের সামনে রয়েছে সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের আশা।


এই আশাবাদের যথেষ্ট কারণও রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে লাখ লাখ বাংলাদেশির কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থনৈতিক উপাত্তগুলো ছাড়াও আমি আশার কারণ দেখেছি মেধাবী ও উচ্চাভিলাষী তরুণ প্রজন্মের ভেতর, যাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমার সাক্ষাৎ হয়েছে।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সত্যিই বিশ্বমানের। বিশ্বে সম্মানজনক ফুলব্রাইট আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অ্যাওয়ার্ড ২০১১ পাওয়া ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারিয়াহ মাহজাবিন ও বুয়েটের সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ফুলব্রাইট অ্যাওয়ার্ড এ দুই তরুণ বিজ্ঞানীর জন্য কেবল একটি সম্মাননাই নয়, এটা বাংলাদেশিদের শৈলী ও মেধার একটি নিদর্শনও। ২০০৭ সালে এই বৃত্তি প্রকল্পটি বাংলাদেশে শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক বেশি ফুলব্রাইট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বৃত্তি পেয়েছে।
বাংলাদেশের আশাব্যঞ্জক ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা অপরিহার্য। গ্রামের বিদ্যালয় ও সরকারি দপ্তরগুলোতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির জন্য বড় বড় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে দেশজুড়ে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনুষদ খোলা হচ্ছে। এতৎসত্ত্বেও উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে অভ্যন্তরীণ সুযোগ-সুবিধাগুলো যথেষ্ট নয়।
তাই যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের ‘এডুকেশন ইউএসএ’ বিভাগ মার্চ ১৭ থেকে ১৮ পর্যন্ত এডুকেশন ইউএসএ ফেয়ার ২০১১ আয়োজন করেছে। এই মেলায় যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার ডিগ্রির বিস্তৃতির জন্য প্রতিনিধিত্ব করছে দেশটির নয়টি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়। এই নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে কয়েকটি বৃহৎ সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি মহিলা লিবারেল আর্টস কলেজ। যুক্তরাষ্ট্রের সব অঞ্চল গ্রেট লেকস থেকে গালফ কোস্ট এবং গ্রেট প্লেইনের ইস্টার্ন সি-বোর্ড থেকে রকি মাউন্টেন পর্যন্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা এখানে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাঁদের মধ্যে যেমন রয়েছে গ্রামীণ শান্ত ক্যাম্পাসবিশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়, তেমনি রয়েছে কর্মচঞ্চল শহরের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়।
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বড় মাপের সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি তরুণীদের জন্য ছোট আকারের বেসরকারি লিবারেল আর্টস কলেজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সফররত প্রতিনিধিরা সারা দেশের গ্রামীণ ক্যাম্পাস এবং শহর থেকে এসেছেন। ১৭ মার্চ বেলা ১১টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ব্র্র্যাক সেন্টারে এবং পরের দিন ১৮ মার্চ বেলা তিনটা থেকে সাতটা পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের প্রদর্শনীগুলোতে ভর্তিবিষয়ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগের পাশাপাশি ভর্তি-প্রক্রিয়া, আর্থিক সহায়তা এবং স্টুডেন্ট ভিসার বিষয়ে কর্মশালায় যোগদানের সুযোগ থাকবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষাকে তুলে ধরে একটি কারণে যে, আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বে সর্বশ্রেষ্ঠ। ২০১০-এর মানবণ্টনে বিশ্বব্যাপী ২০টি শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৭টি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তি নিহিত আছে মুক্তচিন্তার ব্যাপারে এদের শ্রদ্ধাবোধ, সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করা এবং তাদের বিশ্বমানের ‘ফ্যাকাল্টি’ ও সুবিধাদি। এর সঙ্গে যোগ হয় প্রতিবছর সারা বিশ্ব থেকে আসা সাত লাখ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর বৈচিত্র্যময় শিক্ষার অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণ, যার মধ্যে দুই হাজার ৬০০-এর মতো বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশ যেমন ভারত ও নেপালের তুলনায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের এই সংখ্যা খুবই নগণ্য। আমি আশা করছি, এই সংখ্যার আমূল পরিবর্তন ঘটবে।
মার্কিন দূতাবাসে আমার সহকর্মীরা জানেন যে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করার জন্য উৎসাহিত করা আমাদের মিশনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর মাধ্যমে দুই দেশের মেধাসম্পদ আরও সমৃদ্ধ হবে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নকালীন নিজ নিজ ক্ষেত্রে যে অবদান রাখে এবং তাদের দক্ষতাকে নিজ মাতৃভূমিতে কাজে লাগানোর মাধ্যমে দুই দেশের মেধাসম্পদকে সমৃদ্ধ করছে। শ্রেণীকক্ষে উত্থাপিত বিতর্ক, ছাত্র হলরুমের আড্ডা ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার ফলে সাংস্কৃতিক ও জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গির ধারণা গড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দুই জাতির সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে যে ধরনের অবদান রাখে তা আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ, শুধু ২০১০ সালেই তারা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নয় লাখ ডলারেরও অধিক বৃত্তি প্রদান করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি ও বেসরকারি খাত আন্তর্জাতিক ছাত্রদের জন্য বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে অনেক বেশি বৃত্তি দিয়ে থাকে।
স্টুডেন্ট ভিসার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষ তরুণদের স্বাগত জানায়। বিগত পাঁচ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে পড়া বাংলাদেশিদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। আপনারা যদি একটি আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো মানসম্মত ও অনুমোদিত বিষয়ে পড়াশোনার জন্য নির্বাচিত হন এবং যদি আমাদের ওয়েবসাইট dhaka.usembassy.gov এ দেওয়া ভিসা আবেদনের নিয়মগুলো মেনে চলেন, তাহলে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করা উচিত। তবে এটি দ্রুত কোনো প্রক্রিয়া নয়, উচ্চশিক্ষার শুরুর দিকে একটি আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে সফলভাবে আবেদন করাটা প্রথম কাজ এবং এর পাশাপাশি কঠিন পরিশ্রম, পরিবারের সহায়তা ও নিজেদের প্রয়াসের ফলে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়াটাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মূলমন্ত্র।
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা বিষয়ে আরও তথ্য জানার জন্য আমি আপনাদের এডুকেশন ইউএসএ মেলা ২০১১-তে আসার জন্য উৎসাহিত করছি। যদি আপনারা যেতে না পারেন তাহলে আমেরিকান সেন্টার ও আমাদের ওয়েবসাইট http://dhaka.usembassy.gov/advising.html. এ ‘এডুকেশন ইউএসএ’ লিঙ্কটি দেখুন।
জেমস এফ মরিয়ার্টি: বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত।

No comments

Powered by Blogger.