আইনপ্রণেতা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না-সাংসদ বদির কাণ্ড
একজন জনপ্রতিনিধি বা সাংসদের কাজ কি যেকোনো ছলছুতায় সরকারি কর্মকর্তাকে মারধর করা? ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর ওপর চড়াও হওয়া? ম্যাজিস্ট্রেটকে লাঞ্ছিত করা? অন্যদের কথা জানি না, তবে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ আবদুর রহমান বদি সেই কাজই করে আসছেন নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে।
কীর্তিমান এই সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। এবার খোদ নির্বাচন কমিশন নালিশ করেছে স্পিকারের কাছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৭ জানুয়ারি টেকনাফ পৌরসভায় প্রাক-নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকালে একজন ম্যাজিস্ট্রেট লাঞ্ছিত হয়েছেন সাংসদ বদি ও তাঁর সহযোগীদের হাতে। সাংসদের চাচা হাজি মো. ইসলামের পক্ষে পাঁচ শতাধিক লোকের জনসভা করা হলে ম্যাজিস্ট্রেট সেখানে আগত লোকদের তালিকা করছিলেন। কেননা এ ধরনের জনসভার ওপর নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা আছে। খবর পেয়ে সাংসদ বদি সমর্থকদের নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর চড়াও হন। পরিচয় দেওয়ার পরও তিনি তাঁদের রোষানল থেকে রেহাই পাননি। এ সময় ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তায় নির্বাহী কর্মকর্তা এগিয়ে এলে তাঁকেও মারধর করা হয়। সাংসদ বদির দাবি, ওই ম্যাজিস্ট্রেট গোপনে জনসভার ছবি তুলতে গেলে লোকজন তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত হয় এবং তিনি তাঁকে বিক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যান। সাংসদের বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য নয়। প্রকাশ্য জনসভার ছবি গোপনে তুলতে হবে কেন? আর সেই ছবি তোলার জন্য লোকজন ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর চড়াওই বা কেন হবে?
এ ধরনের অপকর্ম সাংসদ বদি আগেও করেছেন। আবার বেকায়দায় পড়লে ক্ষমাও চেয়েছেন। এবারের বিষয়টি গুরুতর বলে নির্বাচন কমিশন স্পিকারের কাছে প্রতিকার চেয়ে চিঠি লিখেছেন। স্পিকার বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’ প্রশ্ন হলো, তদন্তকাজটি কীভাবে হবে? যে সাংসদ ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর চড়াও হতে পারেন, সেই সাংসদ কি তদন্তকারী কর্মকর্তাদের নির্বিঘ্নে কাজ করতে দেবেন? আইনপ্রণেতা হয়ে তিনি কীভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নিলেন?
আমরা ম্যাজিস্ট্রেট লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষী ব্যক্তিদের বিচার দাবি করছি। এটি যেমন আইনের শাসনের পরিপন্থী, তেমনি সরকারের ভাবমূর্তির জন্যও ক্ষতিকর। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন আশা করি।
No comments