সংসদে বিরোধী দল-বর্জনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি আর নয়

প্রচণ্ড খরায় এক পশলা বৃষ্টির মতো বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়ে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে প্রাণ সঞ্চার করল। সোমবার এ বিষয়ে জোটের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে যে মিষ্টি পাঠিয়েছেন, বাহ্যত তা বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের


বিজয় উপলক্ষে হলেও বাস্তবে বিরোধী দলের তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানোর অভিব্যক্তি বলে ধরে নেওয়া যায়। দুটি বিষয় পরিষ্কার। প্রথমত, বিএনপি সংসদকে জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার যে কথা বলে, সেটা যেন কথার কথা নয়। দ্বিতীয়ত, বিরোধী দল হিসেবে সরকারের সমালোচনা এবং দেশ ও দেশের মানুষের কথা সংসদে তুলে ধরবে। সংসদীয় গণতন্ত্রের এটা মূল কথা। শুধু সরকারি দলই সরকার পরিচালনা করে না, সেখানে বিরোধী দলেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সংসদ অধিবেশনে না থাকলে এই ভূমিকা পালন সম্ভব নয়।
গত বছরের ২ জুনের পর থেকে বিরোধী দল সংসদ বর্জন করে আসছিল। সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্পিকারের অনুমতি ছাড়া টানা ৯০ কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকলে একজন সাংসদের সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায়। এ অবস্থায় বিরোধী দল শুধু সদস্যপদ ধরে রাখার জন্য সংসদে যাচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে; কারণ আর মাত্র ১০ থেকে ২০ দিন অনুপস্থিত থাকলে হয়তো বিরোধীদলীয় সাংসদদের সদস্যপদ চলে যেত। বিরোধীদলীয় নেত্রী সংসদে যোগ দিয়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে এক ঘণ্টা সাত মিনিট বক্তব্য রেখেছেন। সংসদ নেত্রীর অনুপস্থিতিতে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী তার জবাবও দিয়েছেন। এভাবে যুক্তিতর্কের মাধ্যমে সংসদ প্রাণবন্ত হয়। তবে সমালোচনার ক্ষেত্রে শালীনতা বজায় রাখা জরুরি। প্রতিপক্ষের প্রতি অশোভন মন্তব্য ও কটূক্তি পরিহার করতে হবে। অনেক সময় এ ধরনের ব্যক্তিগত আক্রমণ অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। যেহেতু সংসদে সরকারি দলের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, তাই বিরোধী দলকে কথা বলার বেশি সুযোগ দিতে হবে। সংসদে যেন কারও প্রতি আক্রোশমূলক বা অসম্মানজনক উক্তি করা না হয়, সে ব্যাপারেও সাংসদদের সতর্ক থাকতে হবে। অনেক দিন পর বিরোধী দল সংসদে এসেছে, দেশবাসী আশা করে, তারা সংসদে থেকে কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা পালন করবে।
বিরোধী দলের সাংসদেরা এত দিন অধিবেশনে যোগ না দিলেও সংসদীয় কমিটির সভায় যোগ দিয়েছেন। সংসদের প্রতিনিধি হিসেবে তাঁরা বিদেশ সফরেও গিয়েছেন। এবার তাঁদের অধিবেশনে যোগদান নিরবচ্ছিন্ন হলে সংসদ যেমন কার্যকর হবে, তেমনি সেখানে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনাও করা যাবে। শুধু সরকারি দলের ওপর দোষ চাপিয়ে অধিবেশন বর্জনের উপলক্ষ খোঁজা হলে তার দায় বিরোধী দলকেও বহন করতে হবে। সংসদেই সব জাতীয় সমস্যার মীমাংসা করার সংস্কৃতি চালু হোক। গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ অনেকাংশে এর ওপর নির্ভর করে।

No comments

Powered by Blogger.