শ্রদ্ধাঞ্জলি-আমার মামা কে জি মুস্তাফা by ফিউরি খোন্দকার
কে জি মুস্তাফা। দরাজদিল এই মানুষটির চারিত্রিক দৃঢ়তা ফুটে উঠত তাঁর ঋজু ভঙ্গিতে কথা বলার মধ্য দিয়ে। তাঁর জীবন উৎ সর্গীকৃত ছিল সাংবাদিকতা, রাজনীতি আর সহকর্মীদের জন্য। তাঁকে নিয়ে গর্ব করার মতো বিষয়গুলোর মধ্যে কর্মের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা প্রধান।
আজ কে জি মুস্তাফার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। গত বছর এই দিনে ৮৬ বছর বয়সে ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান।
রাজনৈতিক কারণে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিলেও পাকিস্তান ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা হিসেবে দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ষাটের দশকে এ দেশে সাংবাদিকদের জন্য প্রথম বেতন বোর্ড রোয়েদাদ বাস্তবায়ন এবং আইয়ুব খানের প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সমাজ যে আন্দোলন গড়ে তোলে, তাতে তাঁর অন্যতম প্রধান ভূমিকা ছিল।
তিনি ছিলেন প্রথম সারির ভাষাসংগ্রামী।
আমার জন্ম ১৯৫১ সালের ২৬ অক্টোবর, ঢাকায়। হীরা মামা (কে জি মুস্তাফা) তাঁর ভাগনেকে দেখতে এসে বললেন—ওর নাম রাখব আমি। তখন কোরিয়ায় যুদ্ধ চলছিল। শুনেছি, সেই যুদ্ধের শক্তিমত্তা বা প্রচণ্ডতাকে উপলক্ষ করে তিনি আমার নাম রেখেছিলেন—ফিউরি। এরই কিছুদিন পর বায়ান্নর ফেব্রুয়ারি। একপর্যায়ে আমাকে (চার মাসের শিশু) নিয়ে আমার আম্মা হাসিনা আমজাদ এক অসামান্য আবেগের বশবর্তী হয়ে মিছিলে যেতে চাইলেন। হীরা মামা তখন আমাকে আমার মায়ের কোল থেকে রেখে দিয়েছিলেন। হীরা মামা সে সময় সংবাদ-এ বার্তা বিভাগের শিফট-ইন-চার্জ ছিলেন এবং পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
এর আগে তিনি ১৯৪৯-এ কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থক পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ফেডারেশনের সংগঠকরূপে দায়িত্ব লাভ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ধর্মঘটের একপর্যায়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। ওই সময় তিনি প্রথম কারাবরণ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদ, আবদুল মতিনসহ ২৫ জন ছাত্রনেতা সে সময় গ্রেপ্তার হন। হীরা মামা ’৫৩ সালে ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত এবং কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। এসবই মামাকে নিয়ে আমার অহংকারের বিশাল হীরকখণ্ডের কয়েকটি টুকরো।
এর কয়েক বছর পর আমি আর আমার ছোট ভাই পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. খোন্দকার শওকত হোসেন হীরা মামার সাদামাটা ও অতি ঘরোয়া বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য অর্জন করি। বিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল লক্ষ্মীবাজারে সাদেক খান সাহেবের এক আত্মীয়ের বাসায়। আমার মামি সাবেরা খাতুন সে সময় সরকারি কলেজের অধ্যাপিকা। আজিমপুর কলোনিতে তাঁদের বাসা। তিনি বেতার-টিভিতে অভিনয় করতেন এবং কর্মক্ষেত্রে ছিলেন আপসহীন আর নিবেদিত। সব বিষয়েই তিনি মামাকে সহায়তা করেছেন।
আমার আব্বা মরহুম খোন্দকার আমজাদ হোসেন কলকাতা থেকেই সাংবাদিকতা এবং লেখালিখির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই পারিবারিক প্রেক্ষাপটে সম্ভবত সে সময় আমার অবচেতন মনে সাংবাদিকতা, লেখালেখি—এসব বিষয়ে দুর্বলতা তৈরি হয়। আমি দৈনিক পত্রিকার কিশোরদের পাতায় লেখালেখি শুরু করি। এ সময় বর্তমানে চ্যানেল আইয়ের ফরিদুর রেজা সাগর, টাঙ্গাইলের খান মোহাম্মদ খালেদসহ আমরা কজনা পূর্বদেশ পত্রিকার চাঁদের হাট-এর একটি সংখ্যা সম্পাদনা করার সুযোগ পাই।
পাকিস্তান আমলের শেষ দিকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নিপীড়নের মুখে ব্যাপক অসন্তোষ আর গণজাগরণের সৃষ্টি হয়। তখন আমার মনে এই বোধ দৃঢ় হতে থাকে যে সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত থেকেই শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে। দূর থেকে হীরা মামার কার্যকলাপ ও আদর্শ আমার মধ্যে এই আস্থার জন্ম দেয় যে সফল আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন এবং শ্রেণীহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। তিনি হয়ে ওঠেন আমার জীবনের অবধারিত রোল মডেল।
জগন্নাথ কলেজ থেকে ১৯৭০ সালে আইএসসি ভালোভাবেই পাস করলাম। আব্বা আমাকে না জানিয়েই ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি থেকে ভর্তির আবেদনপত্র নিয়ে এলেন। আমি তাঁকে নিরাশ করলাম। সন্তানের ভবিষ্যৎ ঘিরে একজন পিতার কল্যাণকর স্বপ্নের মধ্যে যে মঙ্গলাকাঙ্ক্ষা আর পবিত্রতা থাকে, আমি তার অমর্যাদা করেছি। এটা ভাবলে এখনো আমি শিহরিত হয়ে উঠি। আব্বাকে তখন বলেছিলাম, আমি তো ভবিষ্যতে সাংবাদিকতা করব, তাই যেকোনো বিষয়ে লেখাপড়া করলেই হবে। আব্বা খুব আহত আর অবাক হয়ে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন। পরে আব্বা আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়েছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় হীরা মামা আত্মগোপন করে সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধের শুরুতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাঁকে খুঁজতে আজিমপুরের বাসায় গিয়েছিল। পেলে হয়তো শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকায় তাঁর নাম দেখতে হতো।
নব্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশে আমি সলিমুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু করে দিলাম। অবসরে শরীফ মিয়ার ক্যানটিনে অথবা নিউমার্কেটের মনিকো রেস্তোরাঁয় কবি-সাহিত্যিকদের আড্ডায় তরুণ এবং প্রতিষ্ঠিত লেখকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হলো। আমি লেখালেখির বিষয়ে অধিকতর মনোযোগী হয়ে পড়লাম।
আমি ১৯৭৩ সালে সাবসিডিয়ারি পরীক্ষার পর বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকায় শিক্ষানবিশ সহ-সম্পাদক হিসেবে যোগ দিই। হীরা মামা লেবাননে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত হয়ে চলে গেলেন।
আমার পড়াশোনা, লেখালেখি আর সাংবাদিকতা সমানতালে চলতে লাগল।
তখন দৈনিক বাংলা পত্রিকার রোববারের সাহিত্য সাময়িকী পাতা খুব জনপ্রিয় এবং মানসম্পন্ন ছিল। এই সাহিত্য পাতা দেখতেন কবি আহসান হাবীব। তিনি একদিন তাঁর তৃতীয় তলার দপ্তরে চা খেতে খেতে আমাকে বললেন—ফিউরি, তোমার নামটা বদলে দিই?
আমি একটু অপ্রস্তুত হলাম। তিনি আমাকে বোঝালেন—দেখো, এখন হয়তো তোমার ভালো লাগছে; কিন্তু ধরো, যখন তোমার বয়স বেশি হবে, ছেলেপুলে হবে, তখন হয়তো এখনকার মতো পছন্দ হবে না। আমি মনে মনে ভাবলাম, নামটা আমার অপছন্দের নয়। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হলো, হীরা মামা এই নামটা রেখেছেন। আমি একটু অনুনয়ের স্বরে হাবীব ভাইকে বললাম, থাক না ওটা, নামে কী আসে যায়। হাবীব ভাই একটু হাসলেন।
আজ সে কথা বারবার মনে পড়ছে।
রাজনৈতিক কারণে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিলেও পাকিস্তান ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা হিসেবে দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ষাটের দশকে এ দেশে সাংবাদিকদের জন্য প্রথম বেতন বোর্ড রোয়েদাদ বাস্তবায়ন এবং আইয়ুব খানের প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সমাজ যে আন্দোলন গড়ে তোলে, তাতে তাঁর অন্যতম প্রধান ভূমিকা ছিল।
তিনি ছিলেন প্রথম সারির ভাষাসংগ্রামী।
আমার জন্ম ১৯৫১ সালের ২৬ অক্টোবর, ঢাকায়। হীরা মামা (কে জি মুস্তাফা) তাঁর ভাগনেকে দেখতে এসে বললেন—ওর নাম রাখব আমি। তখন কোরিয়ায় যুদ্ধ চলছিল। শুনেছি, সেই যুদ্ধের শক্তিমত্তা বা প্রচণ্ডতাকে উপলক্ষ করে তিনি আমার নাম রেখেছিলেন—ফিউরি। এরই কিছুদিন পর বায়ান্নর ফেব্রুয়ারি। একপর্যায়ে আমাকে (চার মাসের শিশু) নিয়ে আমার আম্মা হাসিনা আমজাদ এক অসামান্য আবেগের বশবর্তী হয়ে মিছিলে যেতে চাইলেন। হীরা মামা তখন আমাকে আমার মায়ের কোল থেকে রেখে দিয়েছিলেন। হীরা মামা সে সময় সংবাদ-এ বার্তা বিভাগের শিফট-ইন-চার্জ ছিলেন এবং পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
এর আগে তিনি ১৯৪৯-এ কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থক পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ফেডারেশনের সংগঠকরূপে দায়িত্ব লাভ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ধর্মঘটের একপর্যায়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। ওই সময় তিনি প্রথম কারাবরণ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদ, আবদুল মতিনসহ ২৫ জন ছাত্রনেতা সে সময় গ্রেপ্তার হন। হীরা মামা ’৫৩ সালে ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত এবং কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। এসবই মামাকে নিয়ে আমার অহংকারের বিশাল হীরকখণ্ডের কয়েকটি টুকরো।
এর কয়েক বছর পর আমি আর আমার ছোট ভাই পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. খোন্দকার শওকত হোসেন হীরা মামার সাদামাটা ও অতি ঘরোয়া বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য অর্জন করি। বিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল লক্ষ্মীবাজারে সাদেক খান সাহেবের এক আত্মীয়ের বাসায়। আমার মামি সাবেরা খাতুন সে সময় সরকারি কলেজের অধ্যাপিকা। আজিমপুর কলোনিতে তাঁদের বাসা। তিনি বেতার-টিভিতে অভিনয় করতেন এবং কর্মক্ষেত্রে ছিলেন আপসহীন আর নিবেদিত। সব বিষয়েই তিনি মামাকে সহায়তা করেছেন।
আমার আব্বা মরহুম খোন্দকার আমজাদ হোসেন কলকাতা থেকেই সাংবাদিকতা এবং লেখালিখির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই পারিবারিক প্রেক্ষাপটে সম্ভবত সে সময় আমার অবচেতন মনে সাংবাদিকতা, লেখালেখি—এসব বিষয়ে দুর্বলতা তৈরি হয়। আমি দৈনিক পত্রিকার কিশোরদের পাতায় লেখালেখি শুরু করি। এ সময় বর্তমানে চ্যানেল আইয়ের ফরিদুর রেজা সাগর, টাঙ্গাইলের খান মোহাম্মদ খালেদসহ আমরা কজনা পূর্বদেশ পত্রিকার চাঁদের হাট-এর একটি সংখ্যা সম্পাদনা করার সুযোগ পাই।
পাকিস্তান আমলের শেষ দিকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নিপীড়নের মুখে ব্যাপক অসন্তোষ আর গণজাগরণের সৃষ্টি হয়। তখন আমার মনে এই বোধ দৃঢ় হতে থাকে যে সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত থেকেই শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে। দূর থেকে হীরা মামার কার্যকলাপ ও আদর্শ আমার মধ্যে এই আস্থার জন্ম দেয় যে সফল আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন এবং শ্রেণীহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। তিনি হয়ে ওঠেন আমার জীবনের অবধারিত রোল মডেল।
জগন্নাথ কলেজ থেকে ১৯৭০ সালে আইএসসি ভালোভাবেই পাস করলাম। আব্বা আমাকে না জানিয়েই ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি থেকে ভর্তির আবেদনপত্র নিয়ে এলেন। আমি তাঁকে নিরাশ করলাম। সন্তানের ভবিষ্যৎ ঘিরে একজন পিতার কল্যাণকর স্বপ্নের মধ্যে যে মঙ্গলাকাঙ্ক্ষা আর পবিত্রতা থাকে, আমি তার অমর্যাদা করেছি। এটা ভাবলে এখনো আমি শিহরিত হয়ে উঠি। আব্বাকে তখন বলেছিলাম, আমি তো ভবিষ্যতে সাংবাদিকতা করব, তাই যেকোনো বিষয়ে লেখাপড়া করলেই হবে। আব্বা খুব আহত আর অবাক হয়ে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন। পরে আব্বা আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়েছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় হীরা মামা আত্মগোপন করে সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধের শুরুতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাঁকে খুঁজতে আজিমপুরের বাসায় গিয়েছিল। পেলে হয়তো শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকায় তাঁর নাম দেখতে হতো।
নব্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশে আমি সলিমুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু করে দিলাম। অবসরে শরীফ মিয়ার ক্যানটিনে অথবা নিউমার্কেটের মনিকো রেস্তোরাঁয় কবি-সাহিত্যিকদের আড্ডায় তরুণ এবং প্রতিষ্ঠিত লেখকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হলো। আমি লেখালেখির বিষয়ে অধিকতর মনোযোগী হয়ে পড়লাম।
আমি ১৯৭৩ সালে সাবসিডিয়ারি পরীক্ষার পর বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকায় শিক্ষানবিশ সহ-সম্পাদক হিসেবে যোগ দিই। হীরা মামা লেবাননে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত হয়ে চলে গেলেন।
আমার পড়াশোনা, লেখালেখি আর সাংবাদিকতা সমানতালে চলতে লাগল।
তখন দৈনিক বাংলা পত্রিকার রোববারের সাহিত্য সাময়িকী পাতা খুব জনপ্রিয় এবং মানসম্পন্ন ছিল। এই সাহিত্য পাতা দেখতেন কবি আহসান হাবীব। তিনি একদিন তাঁর তৃতীয় তলার দপ্তরে চা খেতে খেতে আমাকে বললেন—ফিউরি, তোমার নামটা বদলে দিই?
আমি একটু অপ্রস্তুত হলাম। তিনি আমাকে বোঝালেন—দেখো, এখন হয়তো তোমার ভালো লাগছে; কিন্তু ধরো, যখন তোমার বয়স বেশি হবে, ছেলেপুলে হবে, তখন হয়তো এখনকার মতো পছন্দ হবে না। আমি মনে মনে ভাবলাম, নামটা আমার অপছন্দের নয়। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হলো, হীরা মামা এই নামটা রেখেছেন। আমি একটু অনুনয়ের স্বরে হাবীব ভাইকে বললাম, থাক না ওটা, নামে কী আসে যায়। হাবীব ভাই একটু হাসলেন।
আজ সে কথা বারবার মনে পড়ছে।
No comments