বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে-লোডশেডিংয়ের উৎপাত

গরম বাড়ছে, শুরু হয়েছে সেচ মৌসুম। বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে না-বাড়তেই শুরু হয়েছে লোডশেডিংয়ের অত্যাচার। বিদ্যুতের ঘাটতি মোকাবিলায় সরকারের নানা উদ্যোগ ও প্রতিশ্রুতির কথা শোনা গেলেও বাস্তবে এর ফল দেখা যাচ্ছে না। কোনো উদ্যোগ যথাসময়ে বাস্তবায়িত না হলে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে বিদ্যুৎ খাতে।


যতটুকু ঘাটতি থাকার কথা ছিল, তার চেয়ে বেশি ঘাটতি নিয়েই পার করতে হবে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার এই মৌসুম।
ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা ভেবে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ কেনার জন্য সরকার কুইক রেন্টাল বা ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দেয় বেসরকারি উদ্যোক্তাদের। কুইক রেন্টালের মূল বিষয়টি হচ্ছে, দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন। চার মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সরকারের কাছে বিক্রি করার কথা। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরকারকে বিদ্যুৎ কিনতে হবে যথেষ্ট উচ্চমূল্যে। কারণ কুইক রেন্টালের কারণে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নির্মাণ করতে হচ্ছে ডিজেলনির্ভর করে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অধিকাংশই উৎপাদনে যেতে পারছে না। দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্দেশ্যই যদি সফল না হয়, তবে উচ্চ দামে বিদ্যুৎ কেনার জন্য এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টিই অর্থহীন হয়ে পড়ে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদার পরিমাণ পাঁচ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে চার হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। ঘাটতির পরিমাণ প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট। নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন বিভিন্ন কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে—এটা যেমন একটি সমস্যা, তেমনি জ্বালানিসংকটের কারণেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। গ্যাসের অভাবে বর্তমানে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। গ্যাসসংকটের বিষয়টি এক দিনে হয়নি। অতীতের নানা অদূরদর্শী পরিকল্পনা ও উদ্যোগের ফলে বিদ্যুৎ খাতের অবস্থা আজ এমন জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে যে এ অবস্থা থেকে একে উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আরও ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এখানেও রয়েছে পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাব। যথাযথ পরিকল্পনা থাকলে কখন কোন বিদ্যুৎকেন্দ্র মেরামত ও সংস্কারে যাবে, তার একটি কার্যকর শিডিউল তৈরি করে পরিস্থিতি আরও সহনীয় করা যেত।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ বছরের মে মাস পর্যন্ত সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী এক হাজার ৩৯৩ মেগাওয়াট-ক্ষমতার ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে চালু হয়েছে মাত্র দুটি কেন্দ্র। এই দুটির উৎপাদনক্ষমতা মাত্র ১৭০ মেগাওয়াট। আগামী মাস দুয়েকের মধ্যে কয়েকটি চালু হওয়ার কথা বলা হলেও মে মাসের মধ্যে বাকি সব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। অথচ পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হলে এবারের সর্বোচ্চ চাহিদার মৌসুমে বিদ্যুতের ঘাটতি কমানো সম্ভব হতো। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে এ ব্যাপারে সরকার প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেবে, সেটাই প্রত্যাশিত।

No comments

Powered by Blogger.