রক এ্যান্ড ব্লুজ থার্টি থ্রি ক্যাফে by তৌফিক অপু

সন্ধ্যার পর হট করে নামা বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে একটু ছাউনির আশ্রয় নেই। একটু পরেই লক্ষ্য করলাম যে বিল্ডিংটির নিচে দাঁড়ালাম তার কোন এক ফ্লোর থেকে সুরেলা ছন্দ ভেসে আসছে। আবার দল বেঁধে সবাই উপরের দিকে উঠছে। একটু কৌতূহল সৃষ্টি হলো। ঘটনাটি জানতে এক গ্রুপের পিছু নিলাম।


দেখলাম গ্রুপটি তিনতলার একটি ক্যাফেটেরিয়ার ঢুকছে। ঢুকে গেলাম তাদের সঙ্গে। ঢুকতেই অপূর্ব সুরের মূর্ছনা বৃষ্টির গান ভেসে এল কানে। বাপ্পার সেই পরী গানটি। মনে হলো ভালই তো এই ক্যাফের লোকজন আবহাওয়া বুঝে গান প্লে করে থাকে। একটু পরেই আমার ভুল ভাঙ্গল। এটা অডিওতে প্রচার করা কোন গান নয়। সম্পূর্ণরূপে লাইভ কনসার্ট। তাও আবার রেস্টুরেন্টে?
অনেকটা অবাকই হলাম। বাইরের দেশগুলোর বিশেষ করে ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিগুলোর মিউজিক ভিডিওতে এ দৃশ্যের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি বহুবার। কিন্তু নিজ দেশেও এ ধরনের একটা দৃশ্য দেখতে পাবো তা ভাবিনি। হ্যাঁ, চিন্তা-চেতনায় ছিল আমাদের দেশেও এ ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে। কিন্তু হয়ে যে গেছে এটা দেখেই একটু বিস্ময় হয়েছি। তবে কল্পনাতে হাতের মুঠোয় এসে ধরা দিয়েছে এটা ভেবেও আনন্দিত হয়েছি।
প্রয়োজনের তাগিদে কত জায়গায় বসেই না খাবার খেতে হয়। কিন্তু এমন স্নিগ্ধ পরিবেশে খাবার খেতে কার না সাধ জাগাবে। একদিকে লাইভ গান অন্যদিকে মুখরোচক খাবার, সব মিলিয়ে ভিন্ন আমেজ। ক্যাফের মিউজিক স্টেজে যারা গান গাইছে তারাও বেশ প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পী। দেশ-বিদেশের জনপ্রিয় শিল্পীদের গান হুবহু গেয়ে চলছেন। এ যেন তাদের জন্য অন্যরকম এক প্ল্যাটফরম। এ ব্যাপারে এরফান এ্যান্ড ফ্রেন্ডস ব্যান্ডের কর্ণধার এরফান জানান, এটা শুধু ক্যাফেটেরিয়া নয়। এটা একটা মিউজিক ক্যাফে, যেখানে খাবারের পাশাপাশি প্রাধান্য পায় মিউজিক। সফট রক এ্যান্ড ব্লুজ টাইপের গানগুলো প্রাধান্য পায় এখানে। লাইভ কনসার্টে পারফর্ম করে মজা এক রকম এবং এখানে অন্যরকম ফিলিংস। এরফানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ব্যান্ডের অন্য দুই টুইন ব্রাদার লিড গিটারিস্ট নিপু এবং বেজিস্ট দীপু জানান, এখানকার শ্রোতারা মনোযোগ দিয়ে গান শোনেন এবং বিচার করেন, যা আমাদের অনুপ্রাণিত করে। ক্যাফের পরিবেশও ভাল। এ ধরনের ক্যাফে আরও কিছু হওয়া প্রয়োজন। কারণ নাগরিক চাহিদা রয়েছে। পুরো ক্যাফের বিবরণ দিতে দিয়ে ক্যাফেটির ইভেট ম্যানেজার রাজু জানান, একটা সময় বাড়ির আঙ্গিনায় বা ছাদে কোন প্রোগ্রাম হলে গানের আয়োজন বা ব্যান্ড থাকত।
অনেকেই ব্যান্ডের সন্ধান বা দরদাম জানতে হিমশিম খেতেন। সে পরিস্থিতি এখন আর নেই। কারণ এখানে এলে শুধু খাবারের প্যাকেজ অর্ডার দিয়েই পাচ্ছেন রিজার্ভ সিট এবং মিউজিক্যাল প্রোগ্রাম উপভোগ করার সুযোগ। বাড়তি ঝামেলা আর পোহাতে হবে না। এখানে থাই, চাইনিজ খাবারের পাশাপাশি রয়েছে মেক্সিকান, ইতালিয়ান এবং ইন্ডিয়ান ফুড। সব আইটেমই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। খাবারের টেস্টেও কিছুটা ভিন্নতা আনার চেষ্টা করছি।
এখন রমজান মাস। রয়েছে ইফতারির বাহারি আয়োজন। ৫৩৩ টাকা এবং ৩৩৩ টাকার দুটো ইফতার প্যাকেজ রয়েছে, আর এ প্যাকেজগুলোতে আইটেম রয়েছে পর্যাপ্ত।
যে কোন ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য বেইলি রোডের থার্টি থ্রি রেস্টুরেন্ট আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.