কংগ্রেসের শুনানিতে বাংলাদেশ

সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসের এক শুনানীতে বাংলাদেশের নানা প্রসঙ্গ স্থান পেয়েছে। এতে দু’একটি ক্ষেত্রে সমালোচনা ছাড়া মূলত বাংলাদেশের প্রশংসাই করা হয়েছে। শুনানীতে মার্কিন কংগ্রেসের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ব্লেক মানুষের জীবনযাত্রার মানন্নোয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি মডেল হিসেবে অভিহিত করেন।


তিনি বলেন, একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জঙ্গীবাদ ও চরমপন্থা অত্যন্ত জোরালোভাবে মোকাবেলা করছে। তবে মার্কিন কংগ্রেসের শুনানীতে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের বিষয়ে বাংলাদেশের সমালোচনা করা হয়েছে। ডেমোক্র্যাটিক কংগ্রেসম্যান জো ক্রাউলি মিয়ানমার থেকে আসা উদ্বাস্তুদের বাংলাদেশে আশ্রয় না দেয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
গত প্রায় তিন দশক ধরে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা বাংলাদেশের জন্য নানা সমস্যার সৃষ্টি করেছে। মিয়ানমারের সামরিক সরকার দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়ে বিগত দিনে নানা সময়ে রোহিঙ্গারা দলে দলে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সুনির্দিষ্ট উদ্বাস্তু শিবিরের বাইরেও বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা রয়েছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামে এরা স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে মিশে আছে। জানা গেছে, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শিবিরের তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের বাইরে প্রায় ৪/৫ লাখ রোহিঙ্গা এদেশে রয়েছে। বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে এদের অনেকেই মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে অবস্থান করছে। এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর গভীর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে; এদের অনেকেই নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশের মতো একটি ঘন বসতিপূর্ণ দেশের পক্ষে রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে আশ্রয় দেয়া সম্ভব নয়। অথচ গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে যে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেÑতাদের সিংহভাগ এখনও ফিরে যায়নি। যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলো আজ পর্যন্ত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসনে কোন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। কিছুদিন আগে মিয়ামনমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের বিতাড়নই রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান’ জাতিসংঘ বা যুক্তরাষ্ট্র তার সম্পর্কে সমালোচনা করেনি। এমতাবস্থায় মার্কিন কংগ্রেসের শুনানীতে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না দেয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে; বিষয়টি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য বিব্রতকর ও অনাকাক্সিক্ষত। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি রক্ষায় মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। বাংলাদেশ সরকারকেও এ বিষয়ে কূটনীতি সম্পর্ক আরও জোরদার করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.