বাবার কফিনের সামনে শিলাঃ আমারে শুধু একবার আম্মা বলে ডাকো
বাবার লাশের পাশে তার আদরের মেয়ে শিলা। দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে তার বাবাকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। নন্দিত হুমায়ূনের কফিনের পাশে শিলা ছাড়াও তার বোন নোভা, ভাই নুহাশ, পরিবারের আর সব সদস্য। শেকা বিহবল শিলা বিরামহীন কাঁদছেন। এ কান্না যেন শেষই হবার নয়।
কতো লেখায় কতোভাবে যে আদরের মেয়ে শিলার নাম এনেছেন হুমায়ূন। সেই বাবা এখন শিলার সামনে প্রাণহীন। কফিনে শুয়ে সবার চোখ ভেজাচ্ছেন কথাকার, নাট্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ।
কফিনের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে একপর্যায়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন শিলা আহমেদ। কফিন থেকে মিনিটখানেকের জন্য একটু দূরে সরে যান। চোখ মুছতে মুছতে বাবার উদ্দেশ্যে বলেন-``আমারে একবার আম্মা বলে ডাকো। কতদিন শুনি না তোমার মুখে আম্মা ডাক...``
শিলার এ অসহায় আকুতি আর বুকচেরা আর্তি কানে নিয়ে হাহাকার ওঠে তার বাবাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসা ভক্তদের মনে। আর এক দফা বান ডাকে এ প্রতিবেদকের চোখেও।
পারিবারিক সূত্রমতে, জীবন সায়াহ্নে একটি কষ্ট হুমায়ূন আহমেদের মনে সত্যিই ছিল। আর তা হলো- প্রিয় তিন কন্যাকে কাছে না পাওয়ার বেদনা। সবসময়ই ভাবতেন তিনি তিন মেয়ের কথা। কোন উৎসব আর উচ্ছ্বল পরিবেশে আরও বাড়তো তাদের কাছে না পাওয়ার বেদনা।
তার অনেক লেখাতেও নোভা, শিলা ও বিপাশাকে কাছে না পাওয়ার ব্যথায় ব্যাথাতুর হয়েছেন হুমায়ূন।
সদ্য প্রয়াত হুমায়ূনের বন্ধু ও স্বজনরা জানান, অত্যন্ত স্নেহের তিন কন্যাকে ‘আম্মা’ বলে ডাকতেন হুমায়ূন আহমেদ। মেয়েরাও বাবা ছাড়া একটি মুহূর্ত কাটানোর কথা চিন্তা করতে পারতো না। এভাবেই বেড়ে ওঠে তারা। কিন্তু হুমায়ূনের দ্বিতীয় সংসার অনেক কিছুই এলোমেলো করে দেয়। ২০০৫ সালে গুলতেকিনের সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদ হয় হুমায়ূন আহমেদের। একই সময় বাবার সঙ্গে সব রকমের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তিন কন্যার। লম্বা সময় পর পুত্র নুহাশকে কাছে পেলেও মেয়েদের সঙ্গে দেখাটুকুও হতো না তার।
হুমায়ূনের শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ার পর মেয়েরা প্রতি মুহূর্তে বাবার কথা ভাবতেন। বাবাও প্রতি মুহূর্তে মেয়েদের কথা ভেবে আবেগাপ্লুত হতেন। মেয়েদের কাছে না পওয়ায় সূক্ষ্ম এক বেদনার বোধ ছিল পিতার মনে। মেয়েদের তা তিনি কখনও বুঝতে দেননি।
নিউইয়র্কে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় লেখা একাধিক বইতে সে বর্ণনা পাওয়া যায়। একটি বইয়ে তিনি আলাদা আলাদাভাবে স্মৃতি রোমন্থন করেছেন তিন কন্যার। স্বভাবসুলভ সহজ বর্ণনা দিয়েছেন।
শিলা সম্পর্কে হুমায়ূন লেখেন, তখন শীলার বয়স বারো কিংবা তেরো। সবাইকে নিয়ে লসএনজেলস গিয়েছি। হোটেলে ওঠার সামর্থ্য নেই। বন্ধু ফজলুল আলমের বাসায় উঠি। আমি ক্যাম্পিং পছন্দ করি ফজলু জানে। সে বনে ক্যাম্পিংয়ের ব্যবস্থা করল। আমরা জঙ্গলে এক রাত কাটাতে গেলাম। প্রচণ্ড শীত পড়েছে। তাঁবুর ভেতর জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছি। এক সময় ঘুমিয়ে পড়লাম। গভীর রাতে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দে ঘুম ভাঙল। দেখি, শীলা বসে আছে। ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আমি বললাম, মা, কি হয়েছে? শিলা জানায়, তার দম বন্ধ হয়ে আসছে, সে নিশ্বাস নিতে পারছে না। আমি বুঝলাম, এই মেয়ের কঠিন ক্লস্টোফোবিয়া। আসলেই সে নিশ্বাস ফেলতে পারছে না। আমি বললাম, গরম কাপড় পরো। তাঁবুর বাইরে বসে থাকব। সে বলল, একা একা থাকতে পারব না। ভয় লাগে। কিছুক্ষণ একা থাকতে গিয়েছিলাম। আমি বললাম, আমি সারা রাত তোমার পাশে থাকব। এক পর্যায়ে আমার কাঁধে মাথা রেখে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাল শিলা । সকাল হলো। মেয়ের ঘুম ভাঙল। সে বলল, বাবা, তুমি একজন ভাল মানুষ। হুমায়ূন লিখছেন- আমি বললাম, আম্মা! পৃথিবীতে অসংখ্য খারাপ মানুষ আছে, একজনও খারাপ বাবা নেই।``
এর পরের লাইনগুলোতে সবটুকু রহস্য নিজের মধ্যে ধরে রেখে তার পাঠকদের জানাচ্ছেন- ``এখন মনে হয় শীলা বুঝে গেছে, পৃথিবীতে খারাপ বাবাও আছে। যেমন, তার বাবা।``
কফিনের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে একপর্যায়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন শিলা আহমেদ। কফিন থেকে মিনিটখানেকের জন্য একটু দূরে সরে যান। চোখ মুছতে মুছতে বাবার উদ্দেশ্যে বলেন-``আমারে একবার আম্মা বলে ডাকো। কতদিন শুনি না তোমার মুখে আম্মা ডাক...``
শিলার এ অসহায় আকুতি আর বুকচেরা আর্তি কানে নিয়ে হাহাকার ওঠে তার বাবাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসা ভক্তদের মনে। আর এক দফা বান ডাকে এ প্রতিবেদকের চোখেও।
পারিবারিক সূত্রমতে, জীবন সায়াহ্নে একটি কষ্ট হুমায়ূন আহমেদের মনে সত্যিই ছিল। আর তা হলো- প্রিয় তিন কন্যাকে কাছে না পাওয়ার বেদনা। সবসময়ই ভাবতেন তিনি তিন মেয়ের কথা। কোন উৎসব আর উচ্ছ্বল পরিবেশে আরও বাড়তো তাদের কাছে না পাওয়ার বেদনা।
তার অনেক লেখাতেও নোভা, শিলা ও বিপাশাকে কাছে না পাওয়ার ব্যথায় ব্যাথাতুর হয়েছেন হুমায়ূন।
সদ্য প্রয়াত হুমায়ূনের বন্ধু ও স্বজনরা জানান, অত্যন্ত স্নেহের তিন কন্যাকে ‘আম্মা’ বলে ডাকতেন হুমায়ূন আহমেদ। মেয়েরাও বাবা ছাড়া একটি মুহূর্ত কাটানোর কথা চিন্তা করতে পারতো না। এভাবেই বেড়ে ওঠে তারা। কিন্তু হুমায়ূনের দ্বিতীয় সংসার অনেক কিছুই এলোমেলো করে দেয়। ২০০৫ সালে গুলতেকিনের সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদ হয় হুমায়ূন আহমেদের। একই সময় বাবার সঙ্গে সব রকমের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তিন কন্যার। লম্বা সময় পর পুত্র নুহাশকে কাছে পেলেও মেয়েদের সঙ্গে দেখাটুকুও হতো না তার।
হুমায়ূনের শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ার পর মেয়েরা প্রতি মুহূর্তে বাবার কথা ভাবতেন। বাবাও প্রতি মুহূর্তে মেয়েদের কথা ভেবে আবেগাপ্লুত হতেন। মেয়েদের কাছে না পওয়ায় সূক্ষ্ম এক বেদনার বোধ ছিল পিতার মনে। মেয়েদের তা তিনি কখনও বুঝতে দেননি।
নিউইয়র্কে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় লেখা একাধিক বইতে সে বর্ণনা পাওয়া যায়। একটি বইয়ে তিনি আলাদা আলাদাভাবে স্মৃতি রোমন্থন করেছেন তিন কন্যার। স্বভাবসুলভ সহজ বর্ণনা দিয়েছেন।
শিলা সম্পর্কে হুমায়ূন লেখেন, তখন শীলার বয়স বারো কিংবা তেরো। সবাইকে নিয়ে লসএনজেলস গিয়েছি। হোটেলে ওঠার সামর্থ্য নেই। বন্ধু ফজলুল আলমের বাসায় উঠি। আমি ক্যাম্পিং পছন্দ করি ফজলু জানে। সে বনে ক্যাম্পিংয়ের ব্যবস্থা করল। আমরা জঙ্গলে এক রাত কাটাতে গেলাম। প্রচণ্ড শীত পড়েছে। তাঁবুর ভেতর জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছি। এক সময় ঘুমিয়ে পড়লাম। গভীর রাতে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দে ঘুম ভাঙল। দেখি, শীলা বসে আছে। ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আমি বললাম, মা, কি হয়েছে? শিলা জানায়, তার দম বন্ধ হয়ে আসছে, সে নিশ্বাস নিতে পারছে না। আমি বুঝলাম, এই মেয়ের কঠিন ক্লস্টোফোবিয়া। আসলেই সে নিশ্বাস ফেলতে পারছে না। আমি বললাম, গরম কাপড় পরো। তাঁবুর বাইরে বসে থাকব। সে বলল, একা একা থাকতে পারব না। ভয় লাগে। কিছুক্ষণ একা থাকতে গিয়েছিলাম। আমি বললাম, আমি সারা রাত তোমার পাশে থাকব। এক পর্যায়ে আমার কাঁধে মাথা রেখে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাল শিলা । সকাল হলো। মেয়ের ঘুম ভাঙল। সে বলল, বাবা, তুমি একজন ভাল মানুষ। হুমায়ূন লিখছেন- আমি বললাম, আম্মা! পৃথিবীতে অসংখ্য খারাপ মানুষ আছে, একজনও খারাপ বাবা নেই।``
এর পরের লাইনগুলোতে সবটুকু রহস্য নিজের মধ্যে ধরে রেখে তার পাঠকদের জানাচ্ছেন- ``এখন মনে হয় শীলা বুঝে গেছে, পৃথিবীতে খারাপ বাবাও আছে। যেমন, তার বাবা।``
No comments