রিপোর্টারের ডায়েরি- স্মরণীয় দিল্লী সফর

৮ এপ্রিল, রবিবার। কলকাতা ও দিল্লী সফর শেষ। দুপুরের ফ্লাইটে ঢাকা ফিরব। সকালে অন্য কোন প্রোগ্রামও নেই। তাই রিলাক্স মুডে ঘুম ভাঙল। সকল প্রস্তুতি নিয়ে নাশতা করতে গেলাম। কোন প্রকার তাড়া না থাকায় নাশতা করছি আর গল্প করছি।


এদিকে ভোরে নাট্য টিমের তোফা হোসেন, নজরুল ইসলাম, নাজমুন্নাহার নাজুসহ ৮ জন দিল্লী থেকে কাশ্মীরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। কাশ্মীর দেখে কয়েকদিন পর তাঁরা ঢাকা ফিরবেন। আমরা নাশতা সেরে রেডি হয়ে নেমে এলাম। হোটেল পার্কল্যান্ড থেকে চেক আউট করে নিলাম। ৮ জন ছাড়া আমাদের টিমের সকলে প্রস্তত হয়ে হোটেলের নিচে অপেক্ষা করছেন। বেলা ১১টার দিকে আমাদের পরিবহনের জন্য বাস এসে দাঁড়িয়েছে। আমরা হোটেল থেকে বিদায় নিয়ে বাসে উঠলাম। মাত্র দুই দিনেই দিল্লীর প্রেমে পড়ে গেলাম। বিদায় বেলায় দিল্লীর রাস্তাঘাট দেখছি বাসে বসে। সেই সাজানো গোছানো গাছপালা, ছিমছাম রাস্তা দেখতে দেখতে বিমানবন্দরে এসে পৌঁছিলাম। সোয়া দুইটায় ফ্লাইট। আমরা ১২টার দিকে বিমানবন্দরে এসে পৌঁছলাম। আগেভাগে আসায় দিল্লী বিমানবন্দর ঘুরে দেখছি। বেশ কয়েকটি ছবিও তুললাম। এরপর আমরা সকলে মিলে বোর্ডিং পাস সংগ্রহ করলাম। দিল্লী হাইকমিশনের নিয়োজিত বাংলাদেশের কর্মকর্তারা এসেছেন আমাদের বিদায় জানাতে। তাঁরা আমাদের বোর্ডিং করিয়ে দিয়ে ফিরে যাবেন। বোর্ডিং হয়ে গেল। সকলে মিলে বোর্ডিং শেষে আবারও ভেতরে ঘুরতে লাগলাম। এরপর এলাম ইমিগ্রেশনে। সেখানে আমাকে বেশ ঝামেলায় পড়তে হলো। সার্ক স্টিকার থাকায় আমার নামের বানানে কোথাও ভুল হয়েছে। কম্পিউটারের তথ্যে এই ভুলের কারণে কলকাতা বিমানবন্দরেও আমাকে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে। দিল্লীতেও একই অবস্থা। তবে এবার দেশে ফিরছি। কিন্তু তাতেও কোন ছাড় নেই। ইমিগ্রেশনে অবস্থিত কর্মকর্তা আমাকে অনেক প্রশ্ন করলেন। এমনকি আমি কি কারণে এসেছি তাও জানতে চাইলেন। আমিও তাঁকে সব কিছু জানানোর পর তিনি আমাকে বললেন, কিছু মনে করবেন না। একটু সমস্যা মনে হচ্ছিল। একথা বলে তিনি আমাকে পাসপোর্ট দিয়ে যেতে বললেন। আমার বিলম্ব হওয়ায় সফরসঙ্গীরা অনেকে অপেক্ষা করতে লাগলেন। বিশেষ করে আমিনভাই চেকিংয়ের পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এ সফরে আমরা দু’জন সব সময় এক সঙ্গে থেকেছি, ঘুরেছি, বসেছি। তাই তিনি আমার জন্য দাঁড়িয়ে রয়েছেন। একটু পরেই আমাদের বহনকারী বিমানটিতে উঠে পড়লাম। উঠে দেখি আমাদের আগে তামান্না বিমানে উঠে তাঁর সিটে বসে রয়েছেন। বিমানে তামান্নাকে দেখে আমিনভাইকে বললাম, ওর (তামান্না) পাশে মুন্নার সিট। আমিনভাই তামান্নাকে বললেন, তোমার পাশে কার সিট। মুন্না জানিনা বলাতে আমিনভাই তাঁকে বললেন মুন্নার সিট তোমার সিটের পাশেই। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তামান্না বলে উঠল, রাবিশ। আমি ওর পাশে বসব না। শুরু থেকেই তামান্না কোন অবস্থাতেই মুন্নাকে সহ্য করছিল না। তিনি আমিনভাইকে তাঁর পাশের সিটে বসতে বললেন। কিন্তু আমিনভাই রাজি না হওয়ায় এবং তামান্নার অনুরোধে আমাদের টিমের অন্য এক মহিলার পাশে এনে তামান্নাকে বসিয়েদিলেন। নির্ধারিত সময়ে আমাদের বহনকারী বিমানটি ফ্লাই করল। ফ্লাই করার একটু পরে আমাদের টিমের পরেশ দা (পরেশ আচার্য) পড়লেন আর এক মুশকিলে। তাঁর সিটের দুই পাশে বসেছেন দুই মাড়োয়ারি। তাঁরা ঢাকা আসছেন আমাদের এই ফ্লাইটে। বিশালদেহী এই দুই ব্যক্তি মুহূর্তে ঘুমিয়ে পড়েছেন। বিমানের মধ্যে নাক ডাকছে সমানে। তাঁদের চাপে তিনি জড়সড়ো হয়ে বসে রয়েছেন। তাঁদের জাগানোর জন্য তিনি কয়েকবার অনুরোধ করেও ব্যর্থ হলেন। এর পর কোন রকমে তিনি সেখান থেকে বের হয়ে দেখছেন কোথাও কোন সিট খালি রয়েছে কি না। আমার পাশের সিটটি খালি থাকায় তিনি সেখানে এসে বসলেন। আমার পাশে জানালার ধারে এক ভারতীয় ভদ্রলোক বসেছেন। তিনি দিল্লী থেকে একটি নদী দেখতে দেখতে আসছেন। তাঁর কথায় আমিও নদীটি দেখলাম। মেঘের ওপর থেকে নদীটি দেখে মনে হচ্ছে শহরের ছোট কোন একটি ড্রেন। তিনি বলেন, দিল্লী থেকে দেখে আসছি। এই নাদীটির নাম জানতে চাইলে আমি তাঁকে বললাম, দিল্লী শহরটি যমুনার তীরে। প্রথমে তিনি যমুনা দেখেছেন। এখন দেখছেন পদ্মা। অনেকক্ষণ ধরে আমিও নদীটি দেখলাম। নদী দেখতে দেখতে আমরা প্রায় ঢাকার কাছে চলে এলাম। তখন টয়লেটে যাওয়ার জন্য উঠলাম। উঠে পেছনের দিকে যাচ্ছি। এমন সময় তাকিয়ে দেখি আমাদের টিম লিডার রামেন্দুদার কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে তাঁদের কন্যা ত্রপা মজুমদার। রামেন্দুদা আমার চোখের দিকে তাকালেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আমাদের বহনকারী বিমানটি ল্যান্ড করতে যাচ্ছে। এমন সময় ঢাকার আকাশে দমকা বাতাস। বিমানটি ল্যান্ড করতে গিয়ে আবারও উপরে উঠে এলো। আমরাও কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে উঠলাম। অনেকেই দোয়া পড়তে লাগল। একটু পরেই বিমানটি ল্যান্ড করল। বিমানে বসেই ফোন করে আমার স্ত্রীকে জানালাম আমাদের আগমনী বার্তা। বিমান থেকে নেমে ভিআইপি গেট দিয়ে বেরিয়ে এলাম। আমিনভাইয়ের গাড়িতে আমাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিল। এভাবে শেষ হলে কলকাতা ও দিল্লী সফর।
তপন বিশ্বাস

No comments

Powered by Blogger.