জামাইবাবু ভারতের রাষ্ট্রপতি নড়াইলে আনন্দ

প্রণব মুখার্জি ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় তাঁর শ্বশুরবাড়ি নড়াইলের লোকজন আনন্দে ভাসছে। খবর প্রচারের সঙ্গে সঙ্গেই নড়াইলবাসী আনন্দ মিছিল বের করে। তারা মসজিদ-মন্দিরে প্রার্থনা ও মিষ্টি বিতরণ করেছে। প্রীতি ফুটবল ম্যাচেরও আয়োজন করা হয়।


বিশেষ করে সদর উপজেলার ভদ্রবিলা গ্রামে আনন্দের উত্তাপটা একটু বেশিই। কেননা, এ গ্রামেরই জামাই প্রণব মুখার্জি।
প্রণব মুখার্জি ১৯৫৭ সালে ওই গ্রামের ঘোষ পরিবারের মেয়ে গীতা ঘোষকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর গীতার নাম পরিবর্তন করে শুভ্রা মুখার্জি রাখেন ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। সেই থেকে গীতা ঘোষ হয়ে যান শুভ্রা মুখার্জি।
পারিবারিক ও প্রতিবেশী সূত্র জানায়, ভদ্রবিলা গ্রামের প্রয়াত অমলেন্দু নাথ ঘোষের দুই স্ত্রী ছিলেন। প্রথম স্ত্রী মীরা রানী ঘোষ এবং দ্বিতীয় স্ত্রী চপলা রানী ঘোষ। শুভ্রা মুখার্জি ছিলেন মীরা রানীর মেয়ে। দেশভাগের পর অমলেন্দু ঘোষ সপরিবারে ভারতে চলে যান। তবে চপলা রানীর মেজো ছেলে কানাইলাল ঘোষ থেকে যান পৈতৃক ভিটায়।
গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, চিত্রাপারেই ঘোষ পরিবারের বসতভিটা। এখানে পুরোনো আমলের রাধা-গোবিন্দের মন্দির আর জরাজীর্ণ কাছারিঘরের অস্তিত্ব ছাড়া আর কিছুই নেই। এই কাছারিঘরেই শুভ্রা মুখার্জির ভাই কানাইলাল স্ত্রীসহ বসবাস করেন।
কানাইলাল ঘোষ বলেন, ‘১৯৪৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জন্ম নেন দিদি (গীতা)। এখানকার ছায়াসুনিবিড় পরিবেশ আর চিত্রার বুকে সাঁতার কেটে বাল্য ও শৈশব কেটেছে দিদির। নয় বছর বয়সে সদর উপজেলার তুলারামপুর চাচড়া গ্রামে দাদু মতিলাল সিংহ ও দিদিমা কুসুম সিংহের পরম স্নেহে বেড়ে ওঠেন তিনি। দিদি ভর্তি হন স্থানীয় চাচড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তবে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরই দিদি বাবা-মায়ের সঙ্গে পাড়ি জমান ভারতে।’
কানাইলাল বলেন, দিদি থাকতেন কলকাতার ঢাকুরিয়া ব্রিজের কাছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সময় প্রণব মুখার্জির সঙ্গে দিদির পরিচয় হয়। পরে ১৯৫৭ সালের ১৩ জুলাই তাঁদের বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে অভিজিৎ ও সরজিৎ মুখার্জি নামের দুই ছেলে এবং শর্মিষ্ঠা মুখার্জি নামের এক মেয়ে রয়েছে তাঁদের।
কানাইলাল ঘোষ আরও জানান, দিদি ১৯৯৫ সালে মেয়ে শর্মিষ্ঠাকে নিয়ে একবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। জামাইবাবুরও আসার কথা ছিল। তখন জেলা প্রশাসন স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে হেলিকপ্টার নামার ব্যবস্থাও করেছিল। কিন্তু ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে জামাইবাবু আসতে পারেননি। এলাকাবাসী জানান, গতকাল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ভদ্রবিলা গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ ঢাকঢোল পিটিয়ে আনন্দ মিছিল বের করে।
গ্রামের যুবক কাজী রকিব সেন্টু উচ্ছ্বাসের সঙ্গে জানান, নড়াইলের জামাই ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তাই এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে। এ আনন্দে বিবাহিত ও অবিবাহিতদের মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.