ব্রাজিলে ৪শ’ বছরের পর্তুগীজ শাসন by কাওসার রহমান
১৯ জুন মঙ্গলবার। সকাল সাড়ে ৭টায় আমাদের উড়োজাহাজ উড়ল আকাশে। প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটারের দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হবে। সময় লাগবে প্রায় ১৪ ঘণ্টা। তাই উড়োজাহাজের আকারও বেশ বড়। যাত্রীও বোঝাই। সিট তেমন একটা ফাঁকা নেই।
দুবাই থেকে উড়েই রাস-আল খাইমার ওপর দিয়ে বিমানটি আরব সাগরের ওপর দিয়ে আফ্রিকা মহাদেশের দিকে।
অতীতে বিমানে করে এত দীর্ঘপথ কখনও পাড়ি দেইনি। ফলে কিভাবে এত সময় কাটবে এটা নিয়ে চিন্তিত। কারণ বিমানে আমি ঘুমাতে পারি না। আর বসে তো ঘুম আসেই না। যাঁরা ঘুমাতে পারেন তাঁদের জন্য দূরত্ব কোন ব্যাপার নয়। কিন্তু যাঁরা ঘুমাতে পারেন না, তাঁদের জন্য সময় কাটানো সমস্যাই বটে। আমারও অনেকটা তাই। তবে উড়োজাহাজে উঠলে আমার দৃষ্টি থাকে কোন পথ দিয়ে বা কোন কোন দেশের ওপর দিয়ে বিমান উড়ে যাচ্ছে সেদিকে। ফলে উড়োজাহাজে উঠলে টিভি স্ক্রীনে সিনেমা বা গান দেখার চেয়ে রুট ম্যাপ দেখতেই আমার বেশি ভাল লাগে। কারণ এতে জানা যায়, বিমানটি কোন কোন দেশ, সাগর-মহাসাগরের ওপর দিয়ে যাচ্ছে। আশপাশের দেশ সম্পর্কে পরিচিত হওয়া যায়।
উড়োজাহাজ চলতে শুরু করার পর আমি বোতাম টিপে টিভি মনিটরে রুট ম্যাপ নিয়ে এলাম। সেটি সামনে রেখে আমি চোখ বন্ধ করে চেয়ারে একটু হেলান দিলাম। কারণ সারারাত ঘুম হয়নি। দুবাই বিমানবন্দরে ঘুরে কাটিয়েছি।
আমি চোখ বন্ধ করেই ব্রাজিলের ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালাম। কারণ সুযোগ পেলেই বর্তমান থেকে অতীতে ছুটে যাওয়া হলো মনের ধর্ম। মনের আর একটা ধর্ম হলো অন্যের পরিস্থিতিতে নিজেকে কল্পনা করে হয় কষ্ট পাওয়া, না হয় আনন্দ পাওয়া। আমি এই দীর্ঘ বিমান ভ্রমণে ব্রাজিলের স্মৃতির সমুদ্রেই সাঁতার দিলাম।
লাতিন আমেরিকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ ব্রাজিল। বর্তমান জনসংখ্যা ১৯ কোটি। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে জনসংখ্যার বিচারে পঞ্চম বৃহত্তম রাষ্ট্র। তবে অধিকাংশ মানুষই দেশটির শিল্প শহর সাও পাওলো, রিও ডি জেনিরো এবং বেলো হরিজন্টে বসবাস করে। দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতির কারণে নগরায়নের প্রবৃদ্ধিও দ্রুত বেড়েছে। বর্তমানে দেশটির ৮১ শতাংশ মানুষই নগরে বাস করে।
ব্রাজিলে প্রধানত ছয়টি জাতির মানুষ বসবাস করে। এরা হলো পর্তুগীজ, আফ্রিকান, ইউরোপিয়ান, মধ্যপ্রাচ্য, জাপান ও এশিয়ান। মূলত দীর্ঘদিন ব্রাজিল পর্তুগীজদের দখলে ছিল। এ কারণেই দেশটিতে পর্তুগীজদের আধিক্য বেশি। অন্যান্য দেশ বা মহাদেশের মানুষেরা ১৯ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে ব্রাজিলে অভিবাসন শুরু করে। তাদের সঙ্গে স্থানীয় আদিবাসীদের বিয়ের মাধ্যমেই বর্তমান ব্রাজিল জাতির সৃষ্টি।
ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৮৭৫ সাল থেকে ১৯৬০ সাল নাগাদ ব্রাজিলে প্রায় ৫০ লাখ ইউরোপীয় অভিবাসীর আগমন ঘটে। তারা মূলত দেশটির চার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর সাও পাওলো, পারানা, সান্টা, ক্যাটারিনা ও রিও গ্রান্ড ডু সোল প্রদেশে বসবাস শুরু করে। তবে দেশটির আদিবাসীদের বেশিরভাগের বসবাস হলো উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত অঞ্চল এবং আমাজন এলাকায়। উদ্বেগজনক বিষয় হলো এই আদিবাসীদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ফলে ব্রাজিল সরকার তাদের সংরক্ষণের নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
ব্রাজিলই হচ্ছে আমেরিকা মহাদেশে একমাত্র পর্তুগীজ ভাষী দেশ। কারণ এই দেশটি প্রায় চার শ’ বছর ধরে পর্তুগীজরা শাসন করেছে। পেড্রো আলভারস ক্যাবরাল ১৫০০ সালে প্রথম পর্তুগালের পক্ষে ব্রাজিল দখল করেন। সেই থেকে ১৮০৮ সাল পর্যন্ত ব্রাজিল শাসন করেছে লিসবন। এ সময়ে রাজা ষষ্ঠ ডোম জোয়াও এবং অন্যান্য রাজকীয় পরিবারের লোকজন নেপোলিয়নের সৈন্যদের তাড়া খেয়ে ব্রাজিলে চলে আসেন এবং রিও ডি জেনিরোতে সরকার গঠন করে। যদিও ডোম জোয়াও ১৮২১ সালে পুনরায় পর্তুগালে ফিরে যান। তবে তাঁর পুত্র প্রথম ডোম পেড্রো খেতাব নিয়ে ১৮২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ব্রাজিলের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। আর তার পুত্র দ্বিতীয় ডোম পেড্রো ১৮৩১ সাল থেকে ১৮৮৯ সাল পর্যন্ত ব্রাজিল শাসন করেন। পরবর্তীতে সেনাপ্রধান ডিওডোরো ডা ফনসিকা সামকির ক্যুর মাধ্যমে শাসনভার গ্রহণ করেন এবং ব্রাজিলে ফেডারেল রিপাবলিক ব্যবস্থা চালু করেন। এ সময় দ্বিতীয় ডোম পেড্রো ইউরোপে চলে যান।
পর্তুগীজদের ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান হলেও ব্রাজিলে বার বার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়েছে সামরিক হস্তক্ষেপে। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর ১৮৮৯ সাল থেকে ব্রাজিলে সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু হয় এবং সেটা চলে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত। কিন্তু তারপর আবার সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে নেয় সেনাবাহিনী। এ যাত্রায় সেনাশাসন চলে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত। ১৯৪৫ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত পুনরায় ব্রাজিল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যায়। এ সয়য় ছয় জন রাষ্ট্রপতি ব্রাজিলের সরকার পরিচালনা করেন। কিন্তু রাজনৈতিক সরকার উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক স্থবিরতা মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হলে পুনরায় সামরিক জান্তা দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করে। এ পর্যায়ে সামরিক বাহিনী ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত দেশশাসন করে। তবে জেনারেল জোয়াও বাপিস্টা ডি অলিভিরা ফিগোরিডো ১৯৮২ সালে রাজনীতির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে দেন দিয়ে দেশটি আবার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন। ১৯৮৫ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে আবার রাজনীতিকদের হাতে দেশটির শাসনভার চলে আসে। সেই থেকে ব্রাজিলে ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু আছে এবং দেশটি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠে এসেছে। বিশেষ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট মি. লুলা ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট মিস. রওসেফের আমলে ব্রাজিল বেশ উন্নতি করছে।
উড়োজাহাজ আফ্রিকার ওপর দিয়ে উড়ে চলেছে। আর আমি চোখ বুজে ভাবছি, আকাশের কোন স্তরে আছি। এই স্তরেই কি আত্মা ঘোরে! আমাদের উড়োজাহাজ কি সপ্তাকাশে আছে। এই আকাশ পথেই আমাদের উড়োজাহাজ সাগর মহাসাগর দেশ মহাদেশের ওপর দিয়ে উড়ে যাবে সেই আমেরিকা মহাদেশের দক্ষিণ আমেরিকায়।
আকার পথে কতদূর এলাম কে জানে। ট্রেন হলে বোঝা যায়। আড়িখোলা না ঘোড়াশাল। আকাশে তো স্টেশন নেই। তবে বিজ্ঞানের যে শনৈ শনৈ উন্নতি হচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে আকাশেও বিমানের স্টেশন হয়ে গেলে অবকা হওয়ার কিছু থাকবে না। আর জানালা দিয়ে বাইরে মেঘের পাহাড়-পর্বত ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। তবে মনিটরে রুট ম্যাপ দেখে বোঝা যাচ্ছে, আমাদের জাহাজটি এখন আফ্রিকা মহাদেশের ওপর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
আমার মন যখন ব্রাজিল ঘুরছিল তখন সহযাত্রীদের অনেকেই ঘুমের রাজ্যে। আমি মিছে মিছেই ঘুমের চেষ্টা করেছি। কোন ভ্রমণে যে আমার ঘুম আসে না, সেটা তাহলে মিথ্যা হবে কিভাবে। তাই এই বিরক্তিকর ব্যাপারটা দূর করার জন্য কোন বিমানকর্মীর খোঁজে এদিকে সেদিক তাকালাম। এই বিমানকর্মীদের কত নাম। ইংরেজীতে বলে এয়ারহোস্টেস। আর বাংলায় তাদের আদর করে নানা নামে ডাকা হয়। কেউ বলে বিমান সেবিকা, কেউ বিমানবালা, আবার কেউবা মেঘবালিকা। তবে মেঘবালিকা নামটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। নামটাও খুব সুন্দর। ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে এ নামে একটি উপন্যাস লেখার।
সারা বিমানই ঘুমাচ্ছে। যেন মনে হচ্ছে বিশাল এক ঘুমন্ত পাখি উড়ে চলেছে অন্ধকার আকাশে। আমাদের সিটটি পড়েছে বিমানের মাঝামাঝি অবস্থানে। বেশ পেছনে বিমানের ভাঁড়ার ঘর। সেখানটা আবার পর্দা দিয়ে ঘেরা। ওখানেই ওরা শান্ত হয়ে বসে আছে। দুয়েকজন বিমান সেবিকা জেগে থাকা যাত্রীদের আপায়নে এদিক সেদিক দৌড়াচ্ছে।
কাওসার রহমান
অতীতে বিমানে করে এত দীর্ঘপথ কখনও পাড়ি দেইনি। ফলে কিভাবে এত সময় কাটবে এটা নিয়ে চিন্তিত। কারণ বিমানে আমি ঘুমাতে পারি না। আর বসে তো ঘুম আসেই না। যাঁরা ঘুমাতে পারেন তাঁদের জন্য দূরত্ব কোন ব্যাপার নয়। কিন্তু যাঁরা ঘুমাতে পারেন না, তাঁদের জন্য সময় কাটানো সমস্যাই বটে। আমারও অনেকটা তাই। তবে উড়োজাহাজে উঠলে আমার দৃষ্টি থাকে কোন পথ দিয়ে বা কোন কোন দেশের ওপর দিয়ে বিমান উড়ে যাচ্ছে সেদিকে। ফলে উড়োজাহাজে উঠলে টিভি স্ক্রীনে সিনেমা বা গান দেখার চেয়ে রুট ম্যাপ দেখতেই আমার বেশি ভাল লাগে। কারণ এতে জানা যায়, বিমানটি কোন কোন দেশ, সাগর-মহাসাগরের ওপর দিয়ে যাচ্ছে। আশপাশের দেশ সম্পর্কে পরিচিত হওয়া যায়।
উড়োজাহাজ চলতে শুরু করার পর আমি বোতাম টিপে টিভি মনিটরে রুট ম্যাপ নিয়ে এলাম। সেটি সামনে রেখে আমি চোখ বন্ধ করে চেয়ারে একটু হেলান দিলাম। কারণ সারারাত ঘুম হয়নি। দুবাই বিমানবন্দরে ঘুরে কাটিয়েছি।
আমি চোখ বন্ধ করেই ব্রাজিলের ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালাম। কারণ সুযোগ পেলেই বর্তমান থেকে অতীতে ছুটে যাওয়া হলো মনের ধর্ম। মনের আর একটা ধর্ম হলো অন্যের পরিস্থিতিতে নিজেকে কল্পনা করে হয় কষ্ট পাওয়া, না হয় আনন্দ পাওয়া। আমি এই দীর্ঘ বিমান ভ্রমণে ব্রাজিলের স্মৃতির সমুদ্রেই সাঁতার দিলাম।
লাতিন আমেরিকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ ব্রাজিল। বর্তমান জনসংখ্যা ১৯ কোটি। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে জনসংখ্যার বিচারে পঞ্চম বৃহত্তম রাষ্ট্র। তবে অধিকাংশ মানুষই দেশটির শিল্প শহর সাও পাওলো, রিও ডি জেনিরো এবং বেলো হরিজন্টে বসবাস করে। দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতির কারণে নগরায়নের প্রবৃদ্ধিও দ্রুত বেড়েছে। বর্তমানে দেশটির ৮১ শতাংশ মানুষই নগরে বাস করে।
ব্রাজিলে প্রধানত ছয়টি জাতির মানুষ বসবাস করে। এরা হলো পর্তুগীজ, আফ্রিকান, ইউরোপিয়ান, মধ্যপ্রাচ্য, জাপান ও এশিয়ান। মূলত দীর্ঘদিন ব্রাজিল পর্তুগীজদের দখলে ছিল। এ কারণেই দেশটিতে পর্তুগীজদের আধিক্য বেশি। অন্যান্য দেশ বা মহাদেশের মানুষেরা ১৯ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে ব্রাজিলে অভিবাসন শুরু করে। তাদের সঙ্গে স্থানীয় আদিবাসীদের বিয়ের মাধ্যমেই বর্তমান ব্রাজিল জাতির সৃষ্টি।
ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৮৭৫ সাল থেকে ১৯৬০ সাল নাগাদ ব্রাজিলে প্রায় ৫০ লাখ ইউরোপীয় অভিবাসীর আগমন ঘটে। তারা মূলত দেশটির চার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর সাও পাওলো, পারানা, সান্টা, ক্যাটারিনা ও রিও গ্রান্ড ডু সোল প্রদেশে বসবাস শুরু করে। তবে দেশটির আদিবাসীদের বেশিরভাগের বসবাস হলো উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত অঞ্চল এবং আমাজন এলাকায়। উদ্বেগজনক বিষয় হলো এই আদিবাসীদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ফলে ব্রাজিল সরকার তাদের সংরক্ষণের নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
ব্রাজিলই হচ্ছে আমেরিকা মহাদেশে একমাত্র পর্তুগীজ ভাষী দেশ। কারণ এই দেশটি প্রায় চার শ’ বছর ধরে পর্তুগীজরা শাসন করেছে। পেড্রো আলভারস ক্যাবরাল ১৫০০ সালে প্রথম পর্তুগালের পক্ষে ব্রাজিল দখল করেন। সেই থেকে ১৮০৮ সাল পর্যন্ত ব্রাজিল শাসন করেছে লিসবন। এ সময়ে রাজা ষষ্ঠ ডোম জোয়াও এবং অন্যান্য রাজকীয় পরিবারের লোকজন নেপোলিয়নের সৈন্যদের তাড়া খেয়ে ব্রাজিলে চলে আসেন এবং রিও ডি জেনিরোতে সরকার গঠন করে। যদিও ডোম জোয়াও ১৮২১ সালে পুনরায় পর্তুগালে ফিরে যান। তবে তাঁর পুত্র প্রথম ডোম পেড্রো খেতাব নিয়ে ১৮২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ব্রাজিলের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। আর তার পুত্র দ্বিতীয় ডোম পেড্রো ১৮৩১ সাল থেকে ১৮৮৯ সাল পর্যন্ত ব্রাজিল শাসন করেন। পরবর্তীতে সেনাপ্রধান ডিওডোরো ডা ফনসিকা সামকির ক্যুর মাধ্যমে শাসনভার গ্রহণ করেন এবং ব্রাজিলে ফেডারেল রিপাবলিক ব্যবস্থা চালু করেন। এ সময় দ্বিতীয় ডোম পেড্রো ইউরোপে চলে যান।
পর্তুগীজদের ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান হলেও ব্রাজিলে বার বার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়েছে সামরিক হস্তক্ষেপে। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর ১৮৮৯ সাল থেকে ব্রাজিলে সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু হয় এবং সেটা চলে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত। কিন্তু তারপর আবার সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে নেয় সেনাবাহিনী। এ যাত্রায় সেনাশাসন চলে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত। ১৯৪৫ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত পুনরায় ব্রাজিল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যায়। এ সয়য় ছয় জন রাষ্ট্রপতি ব্রাজিলের সরকার পরিচালনা করেন। কিন্তু রাজনৈতিক সরকার উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক স্থবিরতা মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হলে পুনরায় সামরিক জান্তা দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করে। এ পর্যায়ে সামরিক বাহিনী ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত দেশশাসন করে। তবে জেনারেল জোয়াও বাপিস্টা ডি অলিভিরা ফিগোরিডো ১৯৮২ সালে রাজনীতির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে দেন দিয়ে দেশটি আবার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন। ১৯৮৫ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে আবার রাজনীতিকদের হাতে দেশটির শাসনভার চলে আসে। সেই থেকে ব্রাজিলে ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু আছে এবং দেশটি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠে এসেছে। বিশেষ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট মি. লুলা ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট মিস. রওসেফের আমলে ব্রাজিল বেশ উন্নতি করছে।
উড়োজাহাজ আফ্রিকার ওপর দিয়ে উড়ে চলেছে। আর আমি চোখ বুজে ভাবছি, আকাশের কোন স্তরে আছি। এই স্তরেই কি আত্মা ঘোরে! আমাদের উড়োজাহাজ কি সপ্তাকাশে আছে। এই আকাশ পথেই আমাদের উড়োজাহাজ সাগর মহাসাগর দেশ মহাদেশের ওপর দিয়ে উড়ে যাবে সেই আমেরিকা মহাদেশের দক্ষিণ আমেরিকায়।
আকার পথে কতদূর এলাম কে জানে। ট্রেন হলে বোঝা যায়। আড়িখোলা না ঘোড়াশাল। আকাশে তো স্টেশন নেই। তবে বিজ্ঞানের যে শনৈ শনৈ উন্নতি হচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে আকাশেও বিমানের স্টেশন হয়ে গেলে অবকা হওয়ার কিছু থাকবে না। আর জানালা দিয়ে বাইরে মেঘের পাহাড়-পর্বত ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। তবে মনিটরে রুট ম্যাপ দেখে বোঝা যাচ্ছে, আমাদের জাহাজটি এখন আফ্রিকা মহাদেশের ওপর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
আমার মন যখন ব্রাজিল ঘুরছিল তখন সহযাত্রীদের অনেকেই ঘুমের রাজ্যে। আমি মিছে মিছেই ঘুমের চেষ্টা করেছি। কোন ভ্রমণে যে আমার ঘুম আসে না, সেটা তাহলে মিথ্যা হবে কিভাবে। তাই এই বিরক্তিকর ব্যাপারটা দূর করার জন্য কোন বিমানকর্মীর খোঁজে এদিকে সেদিক তাকালাম। এই বিমানকর্মীদের কত নাম। ইংরেজীতে বলে এয়ারহোস্টেস। আর বাংলায় তাদের আদর করে নানা নামে ডাকা হয়। কেউ বলে বিমান সেবিকা, কেউ বিমানবালা, আবার কেউবা মেঘবালিকা। তবে মেঘবালিকা নামটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। নামটাও খুব সুন্দর। ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে এ নামে একটি উপন্যাস লেখার।
সারা বিমানই ঘুমাচ্ছে। যেন মনে হচ্ছে বিশাল এক ঘুমন্ত পাখি উড়ে চলেছে অন্ধকার আকাশে। আমাদের সিটটি পড়েছে বিমানের মাঝামাঝি অবস্থানে। বেশ পেছনে বিমানের ভাঁড়ার ঘর। সেখানটা আবার পর্দা দিয়ে ঘেরা। ওখানেই ওরা শান্ত হয়ে বসে আছে। দুয়েকজন বিমান সেবিকা জেগে থাকা যাত্রীদের আপায়নে এদিক সেদিক দৌড়াচ্ছে।
কাওসার রহমান
No comments