ব্যাঘ্র শুমারিতে সু-বার্তা by শেখ রোকন
বাংলাদেশের ক্রিকেটে কৃত্রিম বাঘ নিয়ে যতটা মাতামাতি হয়, খোদ প্রাণীটির ভাগ্যে যেন ততটাই অবহেলা জোটে। ফলশ্রুতিতে একসময়ের দেশব্যাপী সদর্পে ঘুরে বেড়ানো 'রাজকীয় বঙ্গ ব্যাঘ্র' কোণঠাসা হতে হতে শুধু সুন্দরবনে আটকা পড়ে দিন দিন সংখ্যায় কমে যাচ্ছে।
অন্যদিকে ভারতে পরিচালিত সর্বশেষ শুমারিতে দেখা যাচ্ছে, বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। পদ্ধতিগত কিছু সমালোচনা সত্ত্বেও এ সংখ্যা আগের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০০৭ সালে পরিচালিত গণনায় ভারতে বাঘ ছিল ১ হাজার ৪১১টি। এবার তা বেড়ে ১ হাজার ৭০৬টিতে দাঁড়িয়েছে।
আমরা জানি, বাংলাদেশ ও বাকি বিশ্বের মতো ভারতেও গত কয়েক দশক ধরে বাঘের সংখ্যা কমে যাচ্ছিল। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে, চীন, তাইওয়ান, কোরিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি ও গৃহসজ্জায় বাঘের চামড়া ও অস্থির চাহিদা। অন্যদের কথা আপাতত বাদ, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যে গত কয়েক বছর ধরে অনেকটা আন্তরিকতা নিয়েই বাঘ রক্ষায় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল, তার প্রমাণ নানাভাবে পাওয়া গেছে। কিন্তু বাঘ পাচার তাতে খুব একটা বন্ধ হয়েছে বলে জানা যায় না। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাঘ-কসাইরা প্রায় প্রতিটি অপারেশনেই নতুন নতুন কৌশল প্রয়োগ করে থাকে। তারপরও বাঘ বাড়ল কীভাবে? ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে বছরভর কয়েক দফায় পরিচালিত বাঘশুমারির আশাব্যঞ্জক ওই ফল এ বছর মার্চের শেষ সপ্তাহে প্রকাশের পর থেকেই এ ভাবনা অনেকের মনে নিশ্চয়ই ঘুরপাক খাচ্ছিল। দেখা যাচ্ছে, কেবল শিকারিদের ঘাড়ে সব দায় চাপিয়ে সেখানকার কর্তৃপক্ষ বসে থাকেনি। পাচারকারীদের ধাওয়া করার পাশাপাশি বাঘ রক্ষার অন্যান্য দাওয়াই নিয়েও তৎপর থেকেছে। এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আবাস ও বিচরণস্থল সংকোচন, খাদ্য সংকট কিংবা বাঘের প্রতি বনজীবী মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিও প্রাণীটির সংখ্যা হ্রাসের জন্য কোনো অংশে কম দায়ী নয়। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সেদিকেও নজর দিয়েছে। ভারতে যে ৩৯টি ব্যাঘ্র অভয়ারণ্য রয়েছে, তা যাতে কোনোভাবে আর ক্ষুণ্ন না হয় সেদিকে ছিল কঠোর নজরদারি। অভয়ারণ্যের চারপাশে 'ছায়া বনাঞ্চল' তৈরি ছিল নতুন ও কার্যকর কৌশল। ওই বন এমনভাবে তৈরি করা যাতে বাঘ বাস করবে না, আবার জনবসতির সঙ্গে বাঘের মূল আবাসস্থলের উল্লেখযোগ্য দূরত্ব তৈরি করেছে। আরও জোর দেওয়া হয়েছে অভয়ারণ্য অঞ্চলে জনবসতি ও সংখ্যা কঠোরভবে নিয়ন্ত্রণের দিকে। চাইলেই যেন সেখানে বসতি স্থাপন বা পরিবারের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা না যায়। পাশাপাশি ছিল বনজীবী জনগোষ্ঠী ও অভয়ারণ্য সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বাসিন্দাদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। ভারতীয় বিচার বিভাগ, সংবাদমাধ্যম ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে বলে নতুন শুমারিতে স্বীকার করা হয়েছে। অবশ্য নতুন শুমারি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করার পাশাপাশি ভারতীয় পরিবেশমন্ত্রী জয়রাম রমেশ স্বীকার করেন, টাইগার করিডোরের সংখ্যা হ্রাস এখনও 'আশঙ্কাজনক'। এসব করিডোর হচ্ছে, অভয়ারণ্যগুলোর মধ্যে বাঘের চলাচল পথ যা নানা 'উন্নয়ন' কর্মকাণ্ড ও মানবীয় তৎপরতায় হারিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক দিক হচ্ছে, বাঘের আবাসস্থল মোটাদাগে একটিই_ সুন্দরবন। সেটিকে সুরক্ষিত রাখলেই যথেষ্ট, করিডোর নিয়ে চিন্তা-ভাবনার দরকার নেই। গরান বনাঞ্চলটি দেশের এক প্রান্তে হওয়ায় সুরক্ষিত রাখাও কঠিন নয়। এখানেও শিকারির থাবা আছে; কিন্তু তা ভারতের মতো প্রকট নয়। উপকূলীয় সুন্দরবন থেকে বাঘ মেরে পাচার করা কঠিনও বটে। আর ভারতে অন্য যেসব প্রক্রিয়া অবলম্বন করে বাঘের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশেও তা অবশ্য সম্ভব।
কেউ কেউ সমালোচনা করে বলছেন, পাগমার্কের বদলে কৌশলগত স্থানে ক্যামেরা বসিয়ে ও ডিএনএ টেস্টের মতো আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের ফলেই বাঘের সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে, বাস্তবে বাড়েনি। কথা হচ্ছে, আমাদের দেশে সেটা করার গরজই-বা কতখানি আছে?
skrokon@gmail.com
আমরা জানি, বাংলাদেশ ও বাকি বিশ্বের মতো ভারতেও গত কয়েক দশক ধরে বাঘের সংখ্যা কমে যাচ্ছিল। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে, চীন, তাইওয়ান, কোরিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি ও গৃহসজ্জায় বাঘের চামড়া ও অস্থির চাহিদা। অন্যদের কথা আপাতত বাদ, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যে গত কয়েক বছর ধরে অনেকটা আন্তরিকতা নিয়েই বাঘ রক্ষায় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল, তার প্রমাণ নানাভাবে পাওয়া গেছে। কিন্তু বাঘ পাচার তাতে খুব একটা বন্ধ হয়েছে বলে জানা যায় না। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাঘ-কসাইরা প্রায় প্রতিটি অপারেশনেই নতুন নতুন কৌশল প্রয়োগ করে থাকে। তারপরও বাঘ বাড়ল কীভাবে? ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে বছরভর কয়েক দফায় পরিচালিত বাঘশুমারির আশাব্যঞ্জক ওই ফল এ বছর মার্চের শেষ সপ্তাহে প্রকাশের পর থেকেই এ ভাবনা অনেকের মনে নিশ্চয়ই ঘুরপাক খাচ্ছিল। দেখা যাচ্ছে, কেবল শিকারিদের ঘাড়ে সব দায় চাপিয়ে সেখানকার কর্তৃপক্ষ বসে থাকেনি। পাচারকারীদের ধাওয়া করার পাশাপাশি বাঘ রক্ষার অন্যান্য দাওয়াই নিয়েও তৎপর থেকেছে। এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আবাস ও বিচরণস্থল সংকোচন, খাদ্য সংকট কিংবা বাঘের প্রতি বনজীবী মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিও প্রাণীটির সংখ্যা হ্রাসের জন্য কোনো অংশে কম দায়ী নয়। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সেদিকেও নজর দিয়েছে। ভারতে যে ৩৯টি ব্যাঘ্র অভয়ারণ্য রয়েছে, তা যাতে কোনোভাবে আর ক্ষুণ্ন না হয় সেদিকে ছিল কঠোর নজরদারি। অভয়ারণ্যের চারপাশে 'ছায়া বনাঞ্চল' তৈরি ছিল নতুন ও কার্যকর কৌশল। ওই বন এমনভাবে তৈরি করা যাতে বাঘ বাস করবে না, আবার জনবসতির সঙ্গে বাঘের মূল আবাসস্থলের উল্লেখযোগ্য দূরত্ব তৈরি করেছে। আরও জোর দেওয়া হয়েছে অভয়ারণ্য অঞ্চলে জনবসতি ও সংখ্যা কঠোরভবে নিয়ন্ত্রণের দিকে। চাইলেই যেন সেখানে বসতি স্থাপন বা পরিবারের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা না যায়। পাশাপাশি ছিল বনজীবী জনগোষ্ঠী ও অভয়ারণ্য সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বাসিন্দাদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। ভারতীয় বিচার বিভাগ, সংবাদমাধ্যম ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে বলে নতুন শুমারিতে স্বীকার করা হয়েছে। অবশ্য নতুন শুমারি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করার পাশাপাশি ভারতীয় পরিবেশমন্ত্রী জয়রাম রমেশ স্বীকার করেন, টাইগার করিডোরের সংখ্যা হ্রাস এখনও 'আশঙ্কাজনক'। এসব করিডোর হচ্ছে, অভয়ারণ্যগুলোর মধ্যে বাঘের চলাচল পথ যা নানা 'উন্নয়ন' কর্মকাণ্ড ও মানবীয় তৎপরতায় হারিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক দিক হচ্ছে, বাঘের আবাসস্থল মোটাদাগে একটিই_ সুন্দরবন। সেটিকে সুরক্ষিত রাখলেই যথেষ্ট, করিডোর নিয়ে চিন্তা-ভাবনার দরকার নেই। গরান বনাঞ্চলটি দেশের এক প্রান্তে হওয়ায় সুরক্ষিত রাখাও কঠিন নয়। এখানেও শিকারির থাবা আছে; কিন্তু তা ভারতের মতো প্রকট নয়। উপকূলীয় সুন্দরবন থেকে বাঘ মেরে পাচার করা কঠিনও বটে। আর ভারতে অন্য যেসব প্রক্রিয়া অবলম্বন করে বাঘের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশেও তা অবশ্য সম্ভব।
কেউ কেউ সমালোচনা করে বলছেন, পাগমার্কের বদলে কৌশলগত স্থানে ক্যামেরা বসিয়ে ও ডিএনএ টেস্টের মতো আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের ফলেই বাঘের সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে, বাস্তবে বাড়েনি। কথা হচ্ছে, আমাদের দেশে সেটা করার গরজই-বা কতখানি আছে?
skrokon@gmail.com
No comments