মঙ্গা মোকাবেলা-আরও টেকসই পদক্ষেপ চাই

মঙ্গাপ্রবণ এলাকায় ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণে সরকারি পদক্ষেপ অপ্রতুল এমন অভিযোগ এখন আগের চেয়ে কম। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে মঙ্গা অতীতের মতো প্রাণসংহারী মূর্তি নিতে পারেনি।


তারপরও উত্তরাঞ্চলের রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার প্রায় এক কোটি লোকের অনেকেই এখনও মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত অভাবে থাকে। সরকার মঙ্গার সময়ে খাদ্য সাহায্য ও নগদ অর্থ সাহায্যের ব্যবস্থা করে বলে অতীতের মতো হাহাকারটা চোখে পড়ে না। কিন্তু অপ্রতুল সরকারি সাহায্য ফুরালেই আবার জনজীবনে সেই অনিশ্চয়তা ফিরে আসে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক নেতৃস্থানীয় সাহায্য ও উন্নয়ন সংস্থা অক্সফাম পরিচালিত গবেষণায় মঙ্গা মোকাবেলায় সরকারি কর্মসূচির দুর্বলতার পাশাপাশি মঙ্গা দূরীকরণে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত সে সম্পর্কেও আলোকপাত করা হয়েছে। গত ৩০ মার্চ ঢাকায় প্রকাশিত এই রিপোর্টে সরকারি ও বেসরকারি সাহায্য সংস্থার উদ্যোগের সমন্বয়হীনতার বিষয়টিও উঠে এসেছে। এটা ঠিক, মানুষের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণে তাৎক্ষণিক কিছু সাহায্যমূলক ব্যবস্থা নিয়ে হয়তো সাময়িক চাহিদা মেটানো যায়। কিন্তু এটা স্থায়ী সমাধান নয় এবং হতেও পারে না। মঙ্গাপ্রবণ এলাকার মানুষ যাতে স্বাবলম্বী হতে পারে সে ব্যবস্থা করাই হবে স্থায়ীভাবে মঙ্গা দূরীকরণের উপায়। এ জন্য মানুষের টেকসই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা দরকার। কিন্তু কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে হলে দরকার পড়বে নতুন নতুন শিল্পোদ্যোগ ও কৃষির উন্নয়ন। ওই এলাকার জমিগুলোতে যাতে তিন ফসল ফলানো যায় সে ব্যবস্থা নিয়ে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষিতে কর্মসংস্থানও বাড়ানো যায়। আবার এর সমর্থনে কৃষিভিত্তিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ অবারিত করা যায়। ফলে মঙ্গাপ্রবণ উত্তরাঞ্চলের শুধু দারিদ্র্য ও ক্ষুধাই দূর করা সম্ভব হবে তা নয়, একইসঙ্গে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি দেশের জিডিপিতেও বাড়তি অবদান রাখতে সক্ষম হবে। আমরা সরকারকে মঙ্গাপ্রবণ জেলাগুলোয় স্বল্পমেয়াদি খাদ্য ও নগদ অর্থ সাহায্যের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টিমূলক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানাই।
 

No comments

Powered by Blogger.