গৃহস্থালির প্রাত্যহিক প্রয়োজনে by তাহমিনা মিলি
আধুনিক সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে জটিল হয়ে উঠছে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাপন। ঘর সামলানোর কাজটাও কেমন যেন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। গৃহস্থালি কাজকর্মের মধ্যে আজকের নারীর ব্যস্ততা সীমাবদ্ধ নেই। এখন একজন নারীকে ঘরে ও বাইরে সমানভাবে ব্যস্ত থাকতে হয়।
সন্তানদের দেখাশোনা, যতœ, বড় করে তোলা, পড়াশোনার নরজদারি, স্কুলে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে ঘরের যাবতীয় কাজকর্ম সামলে আবার কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হতে হয় আজকের নারীকে। কর্মক্ষেত্রে নিজের মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়। প্রত্যেক নারীই চান তার সংসারটি সুখের যেন হয়। গৃহিণী হিসেবে নিজেকে সফল প্রমাণ করতে এখনকার নারীকে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। আধুনিক সব তৈজসপত্র দিয়ে সাজাতে চান তাদের রান্নাঘর। রান্নাবান্না এবং তার নান্দনিক পরিবেশনার মধ্যে সুরুচির ও আধুনিকতার প্রকাশ ঘটাতে আজকের নারীকে বিভিন্ন কলাকৌশল অবলম্বন করতে হয়। রান্না এখন শুধু ক্ষুধা নিবারণের উপাদান না থেকে বরং তা একটা শিল্পে পরিণত হয়েছে। গৃহস্থালির কাজে নিত্যপ্রয়োজনীয় কয়েকটি জিনিসপত্রের কথা এখানে তুলে ধরা হলো।
শুরুতেই চামচের কথা বলা যাক। প্রতিদিন খাবার টেবিলে গৃহিণী তার রান্নার স্বাদ তুলে দিতে যে তৈজসটির সাহায্য নেন তার নাম চামচ। দৃষ্টিনন্দন খাবারগুলো প্রত্যেকের কাছে পৌঁছে যায় যে পরিবেশন সামগ্রী দ্বারা তার এক বড় রকমের অস্তিত্ব নিয়ে থাকে চামচ। প্রতিদিনের খাবার টেবিলে অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ এটি। খাবার টেবিলের ফ্যাশনে এক সময় স্টেইনলেস স্টিলের চামচের জনপ্রিয়তা থাকলেও এখন তা দেশীয় ঐতিহ্যে কাঠের চামচের জনপ্রিয়তাতেও জোয়ার এনে দিয়েছে। পাশাপাশি নানা ধরনের নকশাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এমনকি খাবারের টেবিলেরও দামি শোপিস হিসেবে চামচ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে অনেক বেশি। সিরামিক, স্টেইনলেস স্টিল ও কাঠ এ তিন ধরনের উপাদানের চামচের জনপ্রিয়তাই এখন বেশি। বাজারে এখন নানা ধরনের চামচ মিললেও বাহারি চামচের দাম অনেকাংশেই আপনার বাজেটকে শঙ্কিত করে তুলতে পারে। ডজন ভেদে স্টেইনলেস স্টিলের চামচ নানা সাইজে ২০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত পড়ে দাম। আড়ংয়ের বেশিরভাগ পিতলের চামচ ১০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। কাঁটা চামচের দামও কাছাকাছি পর্যায়ের। কাঠের চামচের দাম সাইজ অনুযায়ী ৫০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। এছাড়াও নকশাদার চামচ কিনতে আপনার পকেট থেকে অতিরিক্ত কিছু ব্যয় হতে পারে। প্রতিদিন যে চামচগুলো ব্যবহার করা হয় তা যে দামেই কেনা হোক না কেন প্রতিনিয়ত পরিষ্কার করা উচিত নিয়ম করে। কেননা এর মাধ্যমেই রোগ জীবাণু ছড়াতে পারে। সম্ভব হলে প্রতিবার চামচ ধোয়ার সময় একটু লেবুররস মিশিয়ে দিলে তা চামচের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে। প্রতিবার ধোয়ার পর চামচগুলো ভালোভাবে মুছে রাখলে স্টিলের প্রলেপ নষ্ট হয় না। আর কাঠের চামচের ক্ষেত্রে তা ভালমতো শুকিয়ে রাখা উচিত। ভেজা থাকলে এই ধরনের চামচ খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। পিতলের চামচ হলে তেঁতুল পানিতে ধুয়ে ফেললে তা বাড়তি উজ্জ্বলতা প্রকাশ করবে।
এবার প্রাত্যহিক গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত আরেকটি জরুরী জিনিসের কথা তুলে ধরছি এটা হলো ডাস্টবিন। বাঁধিয়ে ঘরকন্নার এটা সেটা কিংবা পরিবারের মানুষের অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিছুটা সময়ের জন্য ধারণ করার জন্যই ডাস্টবিনের জন্ম। আর আজকের দিনের আধুনিক গৃহস্থের ঘরে ডাস্টবিন ছাড়া তো একদিনও চলে না। এছাড়া অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর হাসপাতাল থেকে শুরু করে বহু জায়গাতেই প্রয়োজন পড়ে ডাস্টবিনের। একটা সময় ছিল যখন গৃহস্থালির ফেলনা উচ্ছিষ্ট আবর্জনার বালতি বা মামুলি একটা ঝুড়ি দিয়েই ময়লা ফেলার কাজটি চালিয়ে নেয়া হতো। কিন্তু এখন গৃহস্থালির বাজারে একবার ঢুঁ মারলেই দেখা মেলে নানা ধরনের ডাস্টবিনের। এসব ডাস্টবিন দেখতে যেমন দৃষ্টিনন্দন তেমনি অনেকাংশে তা স্বাস্থ্যকরও বটে। বর্তমান বাজারে সেসব ডাস্টবিন পাওয়া তার মধ্যে প্লাস্টিক এবং মেটালের তৈরি ডাস্টবিনই বেশি জনপ্রিয়। এসব ডাস্টবিন আবার কাজের প্রয়োজনে নানা ধরনের হয়ে থাকে। যেমন পেডাল ডাস্টবিন, বোলিং হেড ডাস্টবিন বা স্টেইনলেস স্টিল ডাস্টবিন। এছাড়া একেবারে আমাদের দেশীয় ধাঁচের প্লাস্টিকের ঝুড়ি তো আছেই। যারা রান্নাঘরের ময়লা ফেলার জন্য ডাস্টবিন কিনতে চান তাদের জন্য পেডাল ডাস্টবিন বা স্টেইনলেস ডাস্টবিনই অধিক উপযোগী। পেডাল ডাস্টবিনের সুবিধা হলো, এটি সহজেই পায়ের চাপে খোলা যায় বলে রান্না করতে করতে সহজেই ময়লা ফেলা যায়। তাছাড়া এটি ডাকনাযুক্ত বলে ময়লার দুর্গন্ধ ছড়ায় না। একই সুবিধা পাওয়া যায় ঢাকনাযুক্ত স্টেইনলেস স্টিলের ডাস্টবিনেও। আমাদের দেশে বর্তমানে যেসব পেডাল ডাস্টবিন পাওয়া যায় সেগুলোর দাম পড়বে ৬০০ থেকে ১৫০০ টাকার মতো। ৬০০ টাকার পেডাল ডাস্টবিন দেশি হলেও বেশি দামি ডাস্টবিন বিদেশি হতে পারে। আর স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি এ ডাস্টবিনগুলো চাইলে রাখা যেতে পারে স্নান ঘরেও।
রান্নাঘর ছাড়া গৃহস্থালির অন্যান্য প্রয়োজনে যারা ডাস্টবিন ব্যবহার করতে চান তারা চাইলে কিনতে পারেন বোলিং হেড ডাস্টবিন। এসব ডাস্টবিনের উপরের ঢাকনা অংশটি ৩৬০ ডিগ্রি পর্যন্ত ঘুরে ময়লাকে ঢেকে রাখে। আকার ও আকৃতির ওপর নির্ভর করে এ ডাস্টবিনগুলোর দাম পড়বে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। আর যারা অফিসের কাজে কাগজ ফেলার জন্য মেটাল বা প্লাস্টিকের জালি দেয়া ডাস্টবিন কিনতে চান তাদের খরচ পড়বে যথাক্রমে মেটাল ওয়েস্ট পেপার ডাস্টবিনের জন্য ৪০০ থেকে ১০০০ টাকা আর প্লাস্টিকের পেপার ডাস্টবিনের জন্য ঢাকা শহরে খোঁজ করতে পারেন নিউ মার্কেট এলাকা কিংবা প্লাস্টিক তৈজসপত্র প্রস্তুতকারী বিভিন্ন কোম্পানির আউটলেটে, শোরুমে। আর অন্যান্য জেলা শহরগুলোতে স্টাইলিশ ডাস্টবিনের জন্য ঢুঁ মারতে হবে ভাল কোনো ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে।
এখন বর্ষার মৌসুম চলছে। বর্ষা এলেই নগর জীবনে মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। এখন মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ সবাই। বিশেষ করে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়ার মতো রোগের উৎস মশা হওয়ায় মশা নিয়ে দুশ্চিন্তার মাত্রাটাও আমাদের একটু বেশি। এক্ষেত্রে দুচিন্তা না করে যথাসময়ে প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। মশা থেকে কিভাবে নিজেকে এবং পরিবারের সবাইকে রক্ষা করতে পারেন তা এখন জানিয়ে দিচ্ছি।
কয়েল : মশার হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য কয়েল একটি পুরনো ও বহুল ব্যবহৃত প্রতিরোধক। আর সব শ্রেণীর মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকায় কয়েলের জনপ্রিয়তাও বেশি। সাধারণত একটি কয়েলের প্যাকেটে ১০টি কয়েল থাকে। নরম্যান, বুস্টার, পাওয়ার, কিং, সুপারসহ বিভিন্ন শ্রেণীতে রয়েছে এসব কয়েল।
এ্যারোসল : ঘরের চারপাশে এ্যারোসল স্প্রে করেও মশা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। বাজারে আমাদের দেশীয় বিভিন্ন কোম্পানির মানসম্পন্ন এ্যারোসল আছে।
মাসকিটো কিলার কাজ করে আলোর সাহায্যে। বিদ্যুতচালিত এ যন্ত্রের হাল্কা আলোক রশ্মি থাকার ফলেই মশা এত সহজে কাবু হয়ে যায়। বাজারে বিভিন্ন দামে উন্নতমানের সিঙ্গেল ও ডাবল টিউব সংবলিত মাসকিটো কিলার পাওয়া যায়।
মাসকিটো রিপেলার : এ যন্ত্রটি থেকে বের হওয়া শব্দ মশার কাছে পৌঁছামাত্র মশা দৌড়ে পালায়। আকারে ছোট এ যন্ত্রটি কাজ করে শব্দের সাহায্যে, ব্যবহারেও নেই তেমন কোন বিশেষ ঝামেলা। কেবল বিদ্যুত রোডের সকেটের সঙ্গে যন্ত্রটি গেঁথে দিলেই হয়।
ম্যাট : বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির দেশী-বিদেশী ম্যাট পাওয়া যায়। এগুলোও মশা তাড়াতে বেশ কার্যকরী।
মাসকিটো ব্যাট : ব্যাডমিন্টনের মতো দেখতে অনেকটা এ যন্ত্রটি আজকাল মশার কবল থেকে রক্ষা পেতে প্রায় ঘরে ঘরে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর নাম মাসকিটো ব্যাট। এ ধরনের ব্যাট দিয়ে মশা বংশ ধ্বংস করে অনেকটা আরাম লাভ করতে পারেন।
No comments