শহীদ মিনার প্রস্তুত-নিথর 'দখিন হাওয়া'

কিংবদন্তি লেখক-নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদকে শেষ বিদায় জানাতে আজ সোমবার বুঝি পুরো রাজধানী শহরই ভেঙে পড়বে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। শোকার্ত মানুষের ঢল সামলাতে সার্বিক প্রস্তুতিও সম্পন্ন। একুশে ফেব্রুয়ারির রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতার আদলেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।


এদিকে শোকে স্তব্ধ দখিন হাওয়া। বাড়ির কর্তা-প্রাণপুরুষটির অবর্তমানে ধানমণ্ডির এই ফ্ল্যাট বাড়িটিতে কেবলই শূন্যতা আর নীরব হাহাকার।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে কেন্দ্র করে আশপাশের এলাকায় আজ যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকবে। এখানে জাতির বরেণ্য ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা নিবেদনের এই আয়োজনটি সাধারণত করে থাকে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। আজকের আয়োজকও এই সংগঠনটি। তবে এর সঙ্গে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন সংস্থাও যুক্ত হয়েছে। সমবেত ভক্ত-অনুরাগীদের তথ্য সরবরাহের জন্য গোটা এলাকায় মাইক্রোফোন সংযোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ আজ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি গোলাম কুদ্দুস জানান, শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব ও শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গোটা শহীদ মিনার এলাকাকে বাঁশের বেষ্টনীতে আবদ্ধ করা হয়েছে। সকাল থেকে শহীদ মিনারকে কেন্দ্র করে দোয়েল চত্বর-জগন্নাথ হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি-শিববাড়ি সড়কে যানবাহন বন্ধ করে দেওয়া হবে। কেবল দোয়েল চত্বর সড়ককে শহীদ মিনারের প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। শ্রদ্ধা জানাতে আসা দর্শনার্থীরা বাঁশের বেষ্টনীর ভেতর দিয়ে সারিবদ্ধভাবে শহীদ মিনারের পূর্ব দিক দিয়ে প্রবেশ করবেন। শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে রাখা প্রিয় মানুষের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করে তারা পশ্চিম দিক দিয়ে বের হয়ে আসবেন।
শহীদ মিনারের শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা গতকাল সকাল ১০টা ও রাত ৮টায় দুই দফা বৈঠক করেছেন। এতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নেতারা, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল চ্যানেল আই, বাংলা ভিশনসহ বিভিন্ন চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করবে বলে জানা গেছে।
নিস্তরঙ্গ দখিন হাওয়া : দখিন হাওয়া। ধানমণ্ডির এই ফ্ল্যাট বাড়িটিজুড়ে আজ কেবলই শূন্যতা, হাহাকার। সবকিছু স্থবির। বাড়ির কর্তা-প্রাণপুরুষটির অবর্তমানে সর্বত্র নিস্তরঙ্গ ভাব। উদাস হাওয়া বইছে দখিন হাওয়ায়। দেয়ালের পেইন্টিং, তাকের হাজারো বই- কোথাও লাগবে না সৃষ্টির তাড়নায় নিরন্তর ব্যাকুল মানুষটির হাতের পরশ।
ধানমণ্ডির ৩/৭ সড়কের ৪৮ নম্বরের এই বাড়িতে কিংবদন্তি লেখক-নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ বসবাস করেছেন জীবনের শেষ এক যুগ। এক হাজার ৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট বাড়িতেই কাটত তাঁর দিবস-রজনী। এখানেই সৃষ্টি হয়েছে বাংলা সাহিত্যের অনেক জননন্দিত উপন্যাস। হুমায়ূন আহমেদ ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর থেকে এই বাড়ির ফ্ল্যাটটি তালাবদ্ধ।
বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী মোহাম্মদ সোবহান জানান, 'স্যার মাঝে মধ্যে নুহাশ পল্লীতে না গেলে সব সময়ই এই বাড়িতে থাকতেন। ৩০টি ফ্ল্যাটের পুরো ভবনটির তিনিই ছিলেন প্রাণপুরুষ। তিনি মারা গেছেন, এটা জানার পর থেকে বাড়িটির সর্বত্রই দেখা দিয়েছে এক ধরনের শৈথিল্য, হাহাকার।'
পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুসারে এই বাড়িতে আজ সোমবার সকালে শেষবারের মতো আনা হতে পারে সদ্যপ্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ। তাঁর বয়োবৃদ্ধ মা আয়েশা ফয়েজকেও শেষবারের মতো এখানে দেখানো হতে পারে প্রিয় সন্তানের মুখ। কর্মসূচি অপরিবর্তিত থাকলে মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা আজ সকালে এই বাসায় উঠবেন।

No comments

Powered by Blogger.