হুমায়ূনের মরদেহ আসছে আজ ॥ প্রতীক্ষায় শোকার্ত জাতি-০ এমিরেটস ফ্লাইট অবতরণ সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে ০ শহীদ মিনারে ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত শ্রদ্ধা নিবেদন ০ আড়াইটায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে জানাজা ০ আসছেন স্ত্রী সন্তানেরা, গুলতেকিনও আসছেন ০ দাফনের স্থান চূড়ান্ত হয়নি by মোরসালিন মিজান
হুমায়ূন আহমেদ মানেই হা হা একটা হাসি। বহু মন খারাপের ভূত তাড়িয়েছে তাঁর লেখা, নাটক আর চলচ্চিত্র। সহজ করে জীবন দেখা এবং দেখানোর এই মাস্টার দুঃখ নিয়ে কারবার করেননি কোনদিন। সকলকে সুখী করার আপ্রাণ চেষ্টা ছিল তাঁর। কিন্তু আজ এই মুহূর্তে তাঁর নামেই বাঁধভাঙ্গা কান্না! প্রিয় সন্তান হারিয়ে শোকার্ত দেশ।
গোটা জাতি অশ্রুসজল। কারণ আজ সকালেই কফিনবন্দী হয়ে ফিরছেন হুমায়ূন আহমেদ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আবেগঘন শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পরদিন মঙ্গলবার তাঁকে ঢাকায় সমাহিত করা হবে। তবে আরও কিছু বিবেচনায় আজই তাঁর দাফন সম্পন্ন হতে পারে বলে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে। অবশ্য লেখকের শেষ শয্যা কোথায় হচ্ছে সে ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত করা যায়নি। জানা যায়, হুমায়ূনের মরদেহ বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট নিউইয়র্ক সময় শনিবার রাত ১১টা ২৬ মিনিট এবং বাংলাদেশ সময় রবিবার সকাল ৯টা ২৬ মিনিটে জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর থেকে রওনা হয়। বিমানে রয়েছেন লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, শাশুড়ি তহুরা আলী, দুই সন্তান নিষাদ ও নিনিত, শ্যালিকা সেঁজুতি এম আফরোজ এবং হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে বেশি বইয়ের প্রকাশক স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম। বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে শত শত প্রবাসী ভক্ত-অনুরাগী তাঁদের প্রিয় লেখককে শেষ বিদায় জানান। অন্যদের মধ্যে এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি একে আবদুল মোমেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেত্রী সেলিনা মোমেন ও শাহানারা রহমান। অশ্রুসজল বিদায়ের ক্ষণ শেষ হলে বিমানে ওঠানো হয় মরদেহ। এমিরেটসের ফ্লাইটটি দুবাই হয়ে আজ সোমবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে। এখান থেকে বনানী, মহাখালী ও ফার্মগেট হয়ে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত রাখা হবে। পারিবারিক সূত্র জানায়, দুপুর আড়াইটায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এখান থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে বারডেমের মর্চুয়ারিতে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টায় হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে গাজীপুরের প্রিয় বাগানবাড়ি নুহাশ পল্লীতে। সেখানে তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাবেন সর্বস্তরের মানুষ। বাদ জোহর সেখানে সর্বশেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
ক্যান্সারে নয়, ভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যু ॥ ক্যান্সারে নয়, ভাইরাস সংক্রমণে হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন লেখকের ছোট ভাই ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। নিউইয়র্ক থেকে রবিবার সকালে ঢাকায় ফিরেছেন তিনি। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ক্যান্সার আক্রান্ত হলেও, এ রোগে মারা যাননি ভাই হুমায়ূন আহমেদ। ভাইরাস সংক্রমণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচারের পর হুমায়ূন আহমেদের শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে, যা আর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি।
দখিন হাওয়ায় শেষ দেখা হতে পারে মা- ছেলের ॥ প্রিয় পুত্রকে হারিয়ে দিশেহারা মা আয়েশা ফয়েজ। হুমায়ূন আহমেদের ছোটভাই আহসান হাবীবের মিরপুরের বাসায় এখন তিনি। ছেলেকে সুস্থ করে দেশে নিয়ে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু সে সুযোগ হয়নি। তাই বৃদ্ধা মার চোখে এখন শুধুই জল। নাওয়া-খাওয়া নেই। রবিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শোকের অথৈ সাগর যেন বইছে। প্রয়াত লেখকের ছোট ভাই আহসান হাবীব জানিয়েছেন, হুমায়ূন আহমেদকে গাজীপুরের নূহাশ পল্লীতে দাফন করা হলে সেখানেই বাকি জীবন কাটাবেন মা আয়েশা ফয়েজ। নিজের এ ইচ্ছের কথা ছোট ছেলেকে জানিয়েছেন তিনি। তার আগে ছেলের মুখ শেষবারের মতো দেখার অপেক্ষায় এখন মা। জানা যায়, ধানমণ্ডির ‘দখিন হাওয়া’য় শেষ দেখা হতে পারে মা ছেলের। সেভাবেই সবকিছু ভাবা হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কিছু জানাতে রাজি হয়নি পরিবারের সদস্যরা। সকলেই আয়েশা ফয়েজকে সান্ত¡না দেয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সন্তান হারানোর ব্যথা দূর করার মতো সান্ত¡না কি কারও জানা আছে?
দখিন হাওয়ায় হাওয়া নেই, শোক ॥ সারা দেশের মতো শোকের মাতম চলছে প্রয়াত লেখকের ধানম-ির বাসভবন দখিন হাওয়ায়। হুমায়ূনের উপস্থিতি যে বাড়ি অন্য সব বাড়ি থেকে আলাদা করেছিল সে বাড়ি এখন নিষ্প্রাণ। ররিবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতা। তালাবদ্ধ বাড়ি। সকল দরজা জানালা বন্ধ। কোন কোলাহল নেই। যেন বাড়িটিও বুঝে গেছে, খুব শখ করে যে তাকে তৈরি করেছিল সেই মালিক আর নেই। গেটে দাঁড়িয়ে থাকা প্রহরীরাও সে কথা জানেন। একজন বললেন, যাঁর জন্য এই বাড়ি সেই তিনি নেই। এখন আর সব বাড়ির মতো মনে হচ্ছে। এই কষ্ট কাউকে বোঝানো যাবে না। তবে আজ হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ দখিন হাওয়ায় আনা হবে কিনা সে ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি।
শেষ বিদায় জানাতে আসছেন গুলতেকিনও ॥ হুমায়ূনের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশজুড়ে আছেন প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন। জানা যায়, লেখকের মৃত্যুর সময় তিনি নিউইয়র্কেই ছিলেন। তবে প্রকাশ্যে আসেননি। হাসপাতাল কিংবা অন্য কোথাও তাঁকে দেখা যায়নি। তবে আজ সোমবার আলাদা ফ্লাইটে তিনি দেশে ফিরতে পারেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। হুমায়ূনকে শেষ বিদায় জানাতেই অভিমান ভুলে তিনি দেশে ফিরছেন বলে জানা যায়। সোমবার সকাল ১১টার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছার কথা রয়েছে তাঁর।
শোকগ্রস্ত মানুষের ঢল নামবে শহীদ মিনারে ॥ সোমবার সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য হুমায়ূনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলবে শ্রদ্ধা নিবেদন। দেশের বিশিষ্ট লেখক, কবি, সাংবাদিক, সরকারের মন্ত্রী, সচিব, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উর্ধতন কর্মকর্তাসহ হাজার হাজার ভক্ত অনুরাগী এখানে শেষবারের মতো প্রিয় লেখককে দেখতে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে ভিড় সামলানো মুশকিল হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। এ অবস্থায় বিশেষ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদ অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন লেখক, নাট্যকার ও পরিচালক। তাঁর মৃত্যুশোক মেনে নেয়া সত্যিই খুবই কঠিন। শহীদ মিনারে শোকগ্রস্ত মানুষের ঢল নামবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সেভাবেই প্রস্ততি নিয়েছি। শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানের ভাবগাম্ভীর্য যাতে কোন অবস্থাতেই নষ্ট না হতে পারে সে দিকে সকলকে দৃষ্টি দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠান নির্বিঘœ ও সুশৃঙ্খল করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানা গেছে। শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় শহীদ মিনারের আশপাশ এলাকায় যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। ডিএমপি সূত্র জানায়, দোয়েল চত্বর, ঢাকা মেডিক্যালের জরুরী বিভাগের গেট ও জগন্নাথ হলগেট পর্যন্ত এসে সকল গাড়ি থামতে হবে।
শ্রদ্ধা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী ॥ অসুস্থ হুমায়ূন আহমেদকে দারুণ সুখী করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিউইয়র্কের বাসায় গিয়ে তাঁকে সাহস যুগিয়েছিলেন। দেশের প্রধানমন্ত্রীর এমন ভালবাসায় আবেগাপ্লুত হুমায়ূন লিখেছিলেনÑ কোন প্রধানমন্ত্রীর এত কাছে বসা এই আমার প্রথম, এই নিশ্চয়ই শেষ। প্রধানমন্ত্রী নিজেও হয়ত ভাবেননি আসলেই জীবিত হুমায়ূনের সঙ্গে সেটি হবে শেষ সাক্ষাত। কিন্তু তাই হয়েছে। সূত্র জানায়, লেখকের মৃত্যু সারাদেশের মানুষের মতো প্রধানমন্ত্রীকেও শোকগ্রস্ত করেছে। হুমায়ূন আহমেদকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে চান তিনি। তবে কোথায় এর ব্যবস্থা করা হবে তা এখনও নিশ্চিত হয়নি। লেখকের নিজ বাসভবন ধানম-ির ‘দখিন হাওয়া’য় অথবা বারডেমের হিমঘরে শেখ হাসিনা তাঁকে দেখতে যেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কোথায় শেষ শয্যা ॥ অগণিত ভক্তের মতো পরিবারের সদস্যরাও আশায় বুক বেঁধেছিলেন, সুস্থ হয়ে হাসি মুখে দেশে ফিরবেন হুমায়ূন আহমেদ। কিন্তু সে আশা পূরণ হয়নি। অনেকটা আকস্মিকভাবেই চিকিৎসারত অবস্থায় পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেন বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল এই নক্ষত্র। এমন আকস্মিকতায় হতবিহ্বল পরিবারের সদস্যরা হুমায়ূনের শেষ শয্যা কোথায় হবে তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাচ্ছেন। লেখককে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে সমাহিত করার প্রাথমিক সিদ্ধান্তের কথা প্রথমে জানানো হলেও সে সিদ্ধান্ত বদলাতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন ছোট ভাই দেশের আরেক জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। রবিবার সকালে নিউইয়র্ক থেকে দেশে ফিরেছেন তিনি। ভাই আহসান হাবীবের মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বরের বাসায় বসে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন মা আয়েশা ফয়েজ, ভাই আহসান হাবীবসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে। তবে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। প্রয়াত লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন দেশে ফিরলে তাঁর সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে দুপুরে সাংবাদিকদের জানান তিনি। গাজীপুরের নূহাশ পল্লীকে কবরস্থান না বানানোর কথা জানিয়ে গিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ নিজেই। তাই সেখানে তাঁকে সমাহিত করা হবে না। ভাইকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, বনানী কবরস্থান অথবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দাফন করা হতে পারেÑ এমন সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন জাফর ইকবাল।
ক্যান্সারে নয়, ভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যু ॥ ক্যান্সারে নয়, ভাইরাস সংক্রমণে হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন লেখকের ছোট ভাই ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। নিউইয়র্ক থেকে রবিবার সকালে ঢাকায় ফিরেছেন তিনি। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ক্যান্সার আক্রান্ত হলেও, এ রোগে মারা যাননি ভাই হুমায়ূন আহমেদ। ভাইরাস সংক্রমণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচারের পর হুমায়ূন আহমেদের শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে, যা আর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি।
দখিন হাওয়ায় শেষ দেখা হতে পারে মা- ছেলের ॥ প্রিয় পুত্রকে হারিয়ে দিশেহারা মা আয়েশা ফয়েজ। হুমায়ূন আহমেদের ছোটভাই আহসান হাবীবের মিরপুরের বাসায় এখন তিনি। ছেলেকে সুস্থ করে দেশে নিয়ে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু সে সুযোগ হয়নি। তাই বৃদ্ধা মার চোখে এখন শুধুই জল। নাওয়া-খাওয়া নেই। রবিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শোকের অথৈ সাগর যেন বইছে। প্রয়াত লেখকের ছোট ভাই আহসান হাবীব জানিয়েছেন, হুমায়ূন আহমেদকে গাজীপুরের নূহাশ পল্লীতে দাফন করা হলে সেখানেই বাকি জীবন কাটাবেন মা আয়েশা ফয়েজ। নিজের এ ইচ্ছের কথা ছোট ছেলেকে জানিয়েছেন তিনি। তার আগে ছেলের মুখ শেষবারের মতো দেখার অপেক্ষায় এখন মা। জানা যায়, ধানমণ্ডির ‘দখিন হাওয়া’য় শেষ দেখা হতে পারে মা ছেলের। সেভাবেই সবকিছু ভাবা হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কিছু জানাতে রাজি হয়নি পরিবারের সদস্যরা। সকলেই আয়েশা ফয়েজকে সান্ত¡না দেয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সন্তান হারানোর ব্যথা দূর করার মতো সান্ত¡না কি কারও জানা আছে?
দখিন হাওয়ায় হাওয়া নেই, শোক ॥ সারা দেশের মতো শোকের মাতম চলছে প্রয়াত লেখকের ধানম-ির বাসভবন দখিন হাওয়ায়। হুমায়ূনের উপস্থিতি যে বাড়ি অন্য সব বাড়ি থেকে আলাদা করেছিল সে বাড়ি এখন নিষ্প্রাণ। ররিবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতা। তালাবদ্ধ বাড়ি। সকল দরজা জানালা বন্ধ। কোন কোলাহল নেই। যেন বাড়িটিও বুঝে গেছে, খুব শখ করে যে তাকে তৈরি করেছিল সেই মালিক আর নেই। গেটে দাঁড়িয়ে থাকা প্রহরীরাও সে কথা জানেন। একজন বললেন, যাঁর জন্য এই বাড়ি সেই তিনি নেই। এখন আর সব বাড়ির মতো মনে হচ্ছে। এই কষ্ট কাউকে বোঝানো যাবে না। তবে আজ হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ দখিন হাওয়ায় আনা হবে কিনা সে ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি।
শেষ বিদায় জানাতে আসছেন গুলতেকিনও ॥ হুমায়ূনের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশজুড়ে আছেন প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন। জানা যায়, লেখকের মৃত্যুর সময় তিনি নিউইয়র্কেই ছিলেন। তবে প্রকাশ্যে আসেননি। হাসপাতাল কিংবা অন্য কোথাও তাঁকে দেখা যায়নি। তবে আজ সোমবার আলাদা ফ্লাইটে তিনি দেশে ফিরতে পারেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। হুমায়ূনকে শেষ বিদায় জানাতেই অভিমান ভুলে তিনি দেশে ফিরছেন বলে জানা যায়। সোমবার সকাল ১১টার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছার কথা রয়েছে তাঁর।
শোকগ্রস্ত মানুষের ঢল নামবে শহীদ মিনারে ॥ সোমবার সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য হুমায়ূনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলবে শ্রদ্ধা নিবেদন। দেশের বিশিষ্ট লেখক, কবি, সাংবাদিক, সরকারের মন্ত্রী, সচিব, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উর্ধতন কর্মকর্তাসহ হাজার হাজার ভক্ত অনুরাগী এখানে শেষবারের মতো প্রিয় লেখককে দেখতে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে ভিড় সামলানো মুশকিল হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। এ অবস্থায় বিশেষ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদ অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন লেখক, নাট্যকার ও পরিচালক। তাঁর মৃত্যুশোক মেনে নেয়া সত্যিই খুবই কঠিন। শহীদ মিনারে শোকগ্রস্ত মানুষের ঢল নামবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সেভাবেই প্রস্ততি নিয়েছি। শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানের ভাবগাম্ভীর্য যাতে কোন অবস্থাতেই নষ্ট না হতে পারে সে দিকে সকলকে দৃষ্টি দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠান নির্বিঘœ ও সুশৃঙ্খল করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানা গেছে। শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় শহীদ মিনারের আশপাশ এলাকায় যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। ডিএমপি সূত্র জানায়, দোয়েল চত্বর, ঢাকা মেডিক্যালের জরুরী বিভাগের গেট ও জগন্নাথ হলগেট পর্যন্ত এসে সকল গাড়ি থামতে হবে।
শ্রদ্ধা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী ॥ অসুস্থ হুমায়ূন আহমেদকে দারুণ সুখী করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিউইয়র্কের বাসায় গিয়ে তাঁকে সাহস যুগিয়েছিলেন। দেশের প্রধানমন্ত্রীর এমন ভালবাসায় আবেগাপ্লুত হুমায়ূন লিখেছিলেনÑ কোন প্রধানমন্ত্রীর এত কাছে বসা এই আমার প্রথম, এই নিশ্চয়ই শেষ। প্রধানমন্ত্রী নিজেও হয়ত ভাবেননি আসলেই জীবিত হুমায়ূনের সঙ্গে সেটি হবে শেষ সাক্ষাত। কিন্তু তাই হয়েছে। সূত্র জানায়, লেখকের মৃত্যু সারাদেশের মানুষের মতো প্রধানমন্ত্রীকেও শোকগ্রস্ত করেছে। হুমায়ূন আহমেদকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে চান তিনি। তবে কোথায় এর ব্যবস্থা করা হবে তা এখনও নিশ্চিত হয়নি। লেখকের নিজ বাসভবন ধানম-ির ‘দখিন হাওয়া’য় অথবা বারডেমের হিমঘরে শেখ হাসিনা তাঁকে দেখতে যেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কোথায় শেষ শয্যা ॥ অগণিত ভক্তের মতো পরিবারের সদস্যরাও আশায় বুক বেঁধেছিলেন, সুস্থ হয়ে হাসি মুখে দেশে ফিরবেন হুমায়ূন আহমেদ। কিন্তু সে আশা পূরণ হয়নি। অনেকটা আকস্মিকভাবেই চিকিৎসারত অবস্থায় পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেন বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল এই নক্ষত্র। এমন আকস্মিকতায় হতবিহ্বল পরিবারের সদস্যরা হুমায়ূনের শেষ শয্যা কোথায় হবে তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাচ্ছেন। লেখককে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে সমাহিত করার প্রাথমিক সিদ্ধান্তের কথা প্রথমে জানানো হলেও সে সিদ্ধান্ত বদলাতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন ছোট ভাই দেশের আরেক জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। রবিবার সকালে নিউইয়র্ক থেকে দেশে ফিরেছেন তিনি। ভাই আহসান হাবীবের মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বরের বাসায় বসে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন মা আয়েশা ফয়েজ, ভাই আহসান হাবীবসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে। তবে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। প্রয়াত লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন দেশে ফিরলে তাঁর সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে দুপুরে সাংবাদিকদের জানান তিনি। গাজীপুরের নূহাশ পল্লীকে কবরস্থান না বানানোর কথা জানিয়ে গিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ নিজেই। তাই সেখানে তাঁকে সমাহিত করা হবে না। ভাইকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, বনানী কবরস্থান অথবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দাফন করা হতে পারেÑ এমন সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন জাফর ইকবাল।
No comments