জামায়াতের চার নেতার পক্ষে ১৫ হাজার সাক্ষী! by কুন্তল রায়
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর চার শীর্ষনেতার পক্ষে ১৫ হাজারেরও বেশি সাক্ষী দাঁড় করানো হচ্ছে! এর মধ্যে শুধু দলটির বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামীর পক্ষেই সাক্ষী হিসেবে ১০ হাজার ১১১ জনের নামের তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ, বিচার দীর্ঘায়িত করতে এটা আসামিপক্ষের একটি কৌশল। এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসামিপক্ষ বলেছে, আসামির নির্দোষিতা প্রমাণের জন্যই এত সাক্ষী দরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ট্রাইব্যুনাল-২-এ বিচারাধীন জামায়াতের চার নেতার পক্ষে সাক্ষীদের তালিকা ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জমা দিয়েছেন তাঁদের আইনজীবীরা। এর মধ্যে নিজামীর পক্ষে সাফাই সাক্ষী ১০ হাজার ১১১ জন। গতকাল রোববার এই বিপুলসংখ্যক সাক্ষীর তালিকা এবং অন্যান্য নথিপত্র ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে ১ জুলাই জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের পক্ষে দুই হাজার ৯৩৯ জন সাক্ষীর তালিকা জমা দেওয়া হয়। ১৬ জুলাই ট্রাইব্যুনাল-২-এ বিচারাধীন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের পক্ষে এক হাজার ৩৫৭ এবং আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার পক্ষে সাক্ষী হিসেবে ৯৬৫ জনের তালিকা জমা দেওয়া হয়। এ নিয়ে চার নেতার পক্ষে মোট সাক্ষীর সংখ্যা ১৫ হাজার ৩৭২ জন।
সূত্র আরও জানায়, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের পক্ষে সাক্ষী তালিকা প্রস্তুতির কাজ চলছে। ২৬ আগস্ট এ তালিকা দাখিলের দিন ধার্য আছে। আসামিপক্ষের একজন আইনজীবী জানান, মুজাহিদের পক্ষে সাক্ষীর সংখ্যা পাঁচ শতাধিক হতে পারে। তা হলে জামায়াতের পাঁচ নেতার পক্ষে সাক্ষীর সংখ্যা ১৬ হাজার হতে পারে।
জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি রানা দাশগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিচার প্রলম্বিত করার একটি কৌশল হিসেবে আসামিপক্ষ হাজার হাজার সাক্ষীর তালিকা দিচ্ছে। দেশের মানুষ চায় যত দ্রুত সম্ভব এই বিচার শেষ হোক। সেখানে আসামিপক্ষের কৌশল দ্রুত বিচারে বাধা তৈরি করার একটি অপচেষ্টা।’ তিনি বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের নৃশংসতার সঙ্গে তাদের এ দেশীয় সহযোগী বাহিনী ও রাজাকারদের জড়িত থাকার বিষয়ে দালিলিক সাক্ষ্য-প্রমাণ রয়েছে।
জামায়াতের চার শীর্ষনেতার পক্ষে ১৫ হাজারেরও বেশি সাক্ষী রাখার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে আসামিপক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগী বাহিনী রাজাকার, আলবদর, আলশামসের ঊর্ধ্বতন নেতা হিসেবে এসব বাহিনীর সব অপরাধের দায় (কমান্ডিং রেসপনসিবিলিটি) আসামিদের ওপর বর্তায় বলে রাষ্ট্রপক্ষ দাবি করেছে। এ জন্য তাঁদের নির্দোষিতা প্রমাণের জন্য ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে এই সাক্ষীদের দরকার।’
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী মাত্র ৪৮ জন হওয়ার কারণ হলো, তাঁর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এর ৪(১) ও ৪(২) ধারায় কোনো অভিযোগ (কমান্ডিং রেসপনসিবিলিটি) নেই।
প্রসঙ্গত, মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনে নেতৃত্বের দায় থাকলেও আসামিপক্ষে বিপুলসংখ্যক সাক্ষী দেওয়ার কোনো উদাহরণ আন্তর্জাতিকভাবে নেই। রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, এসসিএসএল-এ (স্পেশাল কোর্ট ফর সিয়েরা লিওন) মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দণ্ডিত লাইবেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট চার্লস টেলরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ৯১ জন সাক্ষীর বিপরীতে আসামিপক্ষের সাক্ষী ছিল মাত্র ২০ জন। আবার আইসিসিতে (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট) দণ্ডপ্রাপ্ত কঙ্গোর সাবেক প্রেসিডেন্ট টমাস লুবাঙ্গার বিপক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের ৩৬ জন সাক্ষীর বিপরীতে আসামিপক্ষের সাক্ষী ছিলেন মাত্র ২৪ জন। অথচ এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়দায়িত্ব আনা হয়েছিল।
জানতে চাইলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিচারকে প্রহসনে পরিণত করতে, বিচার বানচাল করতে যত ধরনের কৌশল আছে, আসামিপক্ষ সব কৌশল অবলম্বন করছে। এত বিপুলসংখ্যক সাক্ষীর তালিকা দেওয়া সেই কৌশলগুলোর একটি। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে বিশ্বের কোনো আদালতে এত বিপুলসংখ্যক সাক্ষী দেওয়ার নজির আসামিপক্ষ দেখাতে পারবে না।’
শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের কঠোর অবস্থান নেওয়া উচিত। রাষ্ট্রপক্ষ যত সংখ্যক সাক্ষী দিয়েছে, আসামিপক্ষ নীতিগতভাবে তার চেয়ে বেশি সংখ্যক সাক্ষী দিতে পারে না।’
জামায়াতের নেতারা ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষেও বিপুলসংখ্যক সাক্ষী রয়েছে। গত ২০ মে তাঁর আইনজীবীরা এক হাজার ১৫৩ জন সাক্ষীর তালিকা ট্রাইব্যুনালে জমা দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ট্রাইব্যুনাল-২-এ বিচারাধীন জামায়াতের চার নেতার পক্ষে সাক্ষীদের তালিকা ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জমা দিয়েছেন তাঁদের আইনজীবীরা। এর মধ্যে নিজামীর পক্ষে সাফাই সাক্ষী ১০ হাজার ১১১ জন। গতকাল রোববার এই বিপুলসংখ্যক সাক্ষীর তালিকা এবং অন্যান্য নথিপত্র ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে ১ জুলাই জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের পক্ষে দুই হাজার ৯৩৯ জন সাক্ষীর তালিকা জমা দেওয়া হয়। ১৬ জুলাই ট্রাইব্যুনাল-২-এ বিচারাধীন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের পক্ষে এক হাজার ৩৫৭ এবং আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার পক্ষে সাক্ষী হিসেবে ৯৬৫ জনের তালিকা জমা দেওয়া হয়। এ নিয়ে চার নেতার পক্ষে মোট সাক্ষীর সংখ্যা ১৫ হাজার ৩৭২ জন।
সূত্র আরও জানায়, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের পক্ষে সাক্ষী তালিকা প্রস্তুতির কাজ চলছে। ২৬ আগস্ট এ তালিকা দাখিলের দিন ধার্য আছে। আসামিপক্ষের একজন আইনজীবী জানান, মুজাহিদের পক্ষে সাক্ষীর সংখ্যা পাঁচ শতাধিক হতে পারে। তা হলে জামায়াতের পাঁচ নেতার পক্ষে সাক্ষীর সংখ্যা ১৬ হাজার হতে পারে।
জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি রানা দাশগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিচার প্রলম্বিত করার একটি কৌশল হিসেবে আসামিপক্ষ হাজার হাজার সাক্ষীর তালিকা দিচ্ছে। দেশের মানুষ চায় যত দ্রুত সম্ভব এই বিচার শেষ হোক। সেখানে আসামিপক্ষের কৌশল দ্রুত বিচারে বাধা তৈরি করার একটি অপচেষ্টা।’ তিনি বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের নৃশংসতার সঙ্গে তাদের এ দেশীয় সহযোগী বাহিনী ও রাজাকারদের জড়িত থাকার বিষয়ে দালিলিক সাক্ষ্য-প্রমাণ রয়েছে।
জামায়াতের চার শীর্ষনেতার পক্ষে ১৫ হাজারেরও বেশি সাক্ষী রাখার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে আসামিপক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগী বাহিনী রাজাকার, আলবদর, আলশামসের ঊর্ধ্বতন নেতা হিসেবে এসব বাহিনীর সব অপরাধের দায় (কমান্ডিং রেসপনসিবিলিটি) আসামিদের ওপর বর্তায় বলে রাষ্ট্রপক্ষ দাবি করেছে। এ জন্য তাঁদের নির্দোষিতা প্রমাণের জন্য ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে এই সাক্ষীদের দরকার।’
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী মাত্র ৪৮ জন হওয়ার কারণ হলো, তাঁর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এর ৪(১) ও ৪(২) ধারায় কোনো অভিযোগ (কমান্ডিং রেসপনসিবিলিটি) নেই।
প্রসঙ্গত, মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনে নেতৃত্বের দায় থাকলেও আসামিপক্ষে বিপুলসংখ্যক সাক্ষী দেওয়ার কোনো উদাহরণ আন্তর্জাতিকভাবে নেই। রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, এসসিএসএল-এ (স্পেশাল কোর্ট ফর সিয়েরা লিওন) মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দণ্ডিত লাইবেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট চার্লস টেলরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ৯১ জন সাক্ষীর বিপরীতে আসামিপক্ষের সাক্ষী ছিল মাত্র ২০ জন। আবার আইসিসিতে (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট) দণ্ডপ্রাপ্ত কঙ্গোর সাবেক প্রেসিডেন্ট টমাস লুবাঙ্গার বিপক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের ৩৬ জন সাক্ষীর বিপরীতে আসামিপক্ষের সাক্ষী ছিলেন মাত্র ২৪ জন। অথচ এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়দায়িত্ব আনা হয়েছিল।
জানতে চাইলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিচারকে প্রহসনে পরিণত করতে, বিচার বানচাল করতে যত ধরনের কৌশল আছে, আসামিপক্ষ সব কৌশল অবলম্বন করছে। এত বিপুলসংখ্যক সাক্ষীর তালিকা দেওয়া সেই কৌশলগুলোর একটি। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে বিশ্বের কোনো আদালতে এত বিপুলসংখ্যক সাক্ষী দেওয়ার নজির আসামিপক্ষ দেখাতে পারবে না।’
শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের কঠোর অবস্থান নেওয়া উচিত। রাষ্ট্রপক্ষ যত সংখ্যক সাক্ষী দিয়েছে, আসামিপক্ষ নীতিগতভাবে তার চেয়ে বেশি সংখ্যক সাক্ষী দিতে পারে না।’
জামায়াতের নেতারা ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষেও বিপুলসংখ্যক সাক্ষী রয়েছে। গত ২০ মে তাঁর আইনজীবীরা এক হাজার ১৫৩ জন সাক্ষীর তালিকা ট্রাইব্যুনালে জমা দেন।
No comments