শ্রদ্ধাঞ্জলি-বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ by আরাফাত শাহরিয়ার
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আশপাশের সবাই আত্মগোপনে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। কেননা বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে পরবর্তী লক্ষ্য হবেন তাঁর কাছের মানুষরা। কিন্তু পালিয়ে বাঁচতে চাননি সময়ের অসীম সাহসী মানুষ তাজউদ্দীন আহমদ। অবশেষে সবার আশঙ্কাই হলো সত্যি।
১৫ আগস্ট প্রথমে গৃহবন্দি ও পরে ২২ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। পরিবারের সদস্যদের বলে গেলেন, 'ধরে নাও আজীবনের জন্য যাচ্ছি।' সেই তিনি আর পরিবারের মধ্যে ফিরে আসেননি। কারা অন্তরীণ অবস্থায় ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর হত্যা করা হয় তাজউদ্দীন আহমদকে।
অসীম দৃঢ়তার প্রতীক তাজউদ্দীন আহমদ জন্মেছিলেন কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই। বাবা মৌলবি ইয়াসিন খান ও মা মেহেরুন্নেসা খানম। বাবার কাছে আরবি শিক্ষার মাধ্যমে তাজউদ্দীন আহমদের পড়াশোনা শুরু। একই সময়ে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হন বাড়ির দুই কিলোমিটার দূরে ভুলেশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রথমবারেই প্রথম। দ্বিতীয় শ্রেণীতেও এ স্থান বজায় রাখেন তিনি। মায়ের ইচ্ছায় চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হন পাঁচ কিলোমিটার দূরে কাপাসিয়া মাইনর ইংলিশ স্কুলে। এরপর বিদ্যালয় পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় পড়েছেন কালিগঞ্জ সেন্ট নিকোলাস ইনস্টিটিউশন, ঢাকার মুসলিম বয়েজ হাই স্কুল ও সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুলে। এ সময় স্কাউট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন।
এমই স্কলারশিপ পরীক্ষায় ঢাকা জেলায় প্রথম স্থান লাভ করেন তিনি। প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায়ও। ১৯৪৪ সালে এই পরীক্ষায় অবিভক্ত বাংলায় দ্বাদশ স্থান লাভ করেন তিনি। এ সময়ই জড়িয়ে পড়েন মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে। হয়ে ওঠেন দলের সক্রিয় সদস্য। এ বছর নির্বাচনে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। যদিও মুসলিম লীগের গণবিচ্ছিন্ন রাজনীতির প্রতিবাদে পরবর্তী সময় দলের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেছিলেন। একই বছর কলকাতায় শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পরিচয় হয় তঁাঁর। ভালো পড়াশোনার ধারাবাহিকতা বজায় ছিল উচ্চ মাধ্যমিকেও। ঢাকা বোর্ডে অর্জন করেন চতুর্থ স্থান এবং ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। উচ্চ শিক্ষায় তাঁর বিষয় ছিল অর্থনীতি। এমনই মেধা-উজ্জ্বল শিক্ষাজীবনের ধারক ছিলেন এই অনন্য ব্যক্তিত্ব। ১৯৫৯ সালের ২৬ এপ্রিল সৈয়দা জোহরা খাতুন লিলির সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন তিনি। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত পূর্ব বাংলা ছাত্রলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের উদ্যোক্তাদের একজন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে ঢাকা উত্তর-পূর্ব আসনে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থী হন তাজউদ্দীন। প্রতিপক্ষকে ১৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দেন।
১৯৬৪ সালে সাংগঠনিক সম্পাদক হন আওয়ামী লীগের। ছয় দফার ঐতিহাসিক ১৯৬৬ সালে হন সাধারণ সম্পাদক। শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে শেখ মুজিবের অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আর নিজে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১০ এপ্রিল সরকার গঠন করেন এবং ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বদ্যিনাথতলার আম্রকাননে শপথ নেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে এলে মন্ত্রিপরিষদশাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। তাজউদ্দীন আহমদ হন নয়া সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী। রাজনৈতিকভাবে সফল ও আদর্শ এই ব্যক্তি সারা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন দেশ ও দেশের মানুষের কথা ভেবে।
আরাফাত শাহরিয়ার
অসীম দৃঢ়তার প্রতীক তাজউদ্দীন আহমদ জন্মেছিলেন কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই। বাবা মৌলবি ইয়াসিন খান ও মা মেহেরুন্নেসা খানম। বাবার কাছে আরবি শিক্ষার মাধ্যমে তাজউদ্দীন আহমদের পড়াশোনা শুরু। একই সময়ে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হন বাড়ির দুই কিলোমিটার দূরে ভুলেশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রথমবারেই প্রথম। দ্বিতীয় শ্রেণীতেও এ স্থান বজায় রাখেন তিনি। মায়ের ইচ্ছায় চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হন পাঁচ কিলোমিটার দূরে কাপাসিয়া মাইনর ইংলিশ স্কুলে। এরপর বিদ্যালয় পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় পড়েছেন কালিগঞ্জ সেন্ট নিকোলাস ইনস্টিটিউশন, ঢাকার মুসলিম বয়েজ হাই স্কুল ও সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুলে। এ সময় স্কাউট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন।
এমই স্কলারশিপ পরীক্ষায় ঢাকা জেলায় প্রথম স্থান লাভ করেন তিনি। প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায়ও। ১৯৪৪ সালে এই পরীক্ষায় অবিভক্ত বাংলায় দ্বাদশ স্থান লাভ করেন তিনি। এ সময়ই জড়িয়ে পড়েন মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে। হয়ে ওঠেন দলের সক্রিয় সদস্য। এ বছর নির্বাচনে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। যদিও মুসলিম লীগের গণবিচ্ছিন্ন রাজনীতির প্রতিবাদে পরবর্তী সময় দলের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেছিলেন। একই বছর কলকাতায় শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পরিচয় হয় তঁাঁর। ভালো পড়াশোনার ধারাবাহিকতা বজায় ছিল উচ্চ মাধ্যমিকেও। ঢাকা বোর্ডে অর্জন করেন চতুর্থ স্থান এবং ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। উচ্চ শিক্ষায় তাঁর বিষয় ছিল অর্থনীতি। এমনই মেধা-উজ্জ্বল শিক্ষাজীবনের ধারক ছিলেন এই অনন্য ব্যক্তিত্ব। ১৯৫৯ সালের ২৬ এপ্রিল সৈয়দা জোহরা খাতুন লিলির সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন তিনি। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত পূর্ব বাংলা ছাত্রলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের উদ্যোক্তাদের একজন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে ঢাকা উত্তর-পূর্ব আসনে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থী হন তাজউদ্দীন। প্রতিপক্ষকে ১৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দেন।
১৯৬৪ সালে সাংগঠনিক সম্পাদক হন আওয়ামী লীগের। ছয় দফার ঐতিহাসিক ১৯৬৬ সালে হন সাধারণ সম্পাদক। শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে শেখ মুজিবের অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আর নিজে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১০ এপ্রিল সরকার গঠন করেন এবং ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বদ্যিনাথতলার আম্রকাননে শপথ নেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে এলে মন্ত্রিপরিষদশাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। তাজউদ্দীন আহমদ হন নয়া সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী। রাজনৈতিকভাবে সফল ও আদর্শ এই ব্যক্তি সারা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন দেশ ও দেশের মানুষের কথা ভেবে।
আরাফাত শাহরিয়ার
No comments