খোকার বিরুদ্ধে মামলা-দিলকুশায় বহুতল বাণিজ্যিক-ভবন নির্মাণে দুর্নীতি

রাষ্ট্রের ৮২৭ কোটি টাকা ক্ষতি করার অভিযোগে ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলাটি করেন দুদকের উপপরিচালক হারুনার রশিদ।


মামলার বাদী বলেন, রাজধানীর দিলকুশা এলাকায় কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থাসহ একটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবন (সানমুন স্টার টাওয়ার) নির্মাণ প্রকল্পে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও ব্যক্তিগত লাভের জন্য রাষ্ট্রের ৮২৭ কোটি টাকা ক্ষতি করেছেন। তিনি বলেন, দুদকের দীর্ঘ তদন্ত শেষে দুদক আইনের দণ্ডবিধি ৪০৯/১০৯ ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাটি করা হয়েছে। মামলা নম্বর ৪১।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন ডিসিসির সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুল হক (বর্তমানে পদোন্নতি পেয়ে সচিব পদমর্যাদায় ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান), ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সেহাব উল্লাহ (বর্তমানে ডিসিসির ফেইস প্রকল্পের পরিচালক), নির্বাহী প্রকৌশলী মুনসুর আহম্মেদ, ফেইস প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মফিজুর রহমান, ডিসিসির অঞ্চল-৮-এর (মিরপুর) উপসহকারী প্রকৌশলী আমিনুর রহমান চৌধুরী ও ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান এমআর ট্রেডিংয়ের মালিক মিজানুর রহমান।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা যানজটমুক্ত রাখতে ২০০৫ সালে কিছু পদক্ষেপ নেয় ডিসিসি। এর মধ্যে বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে ৩৭ দিলকুশায় বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) প্রায় দুই বিঘা জমি নেয় ডিসিসি। চুক্তি অনুযায়ী ওই জায়গায় ডিসিসির অর্থায়নে সানমুন স্টার টাওয়ার' নামে ২৫ তলা ভবন নির্মিত হবে এবং সেখান থেকে বিজেএমসিকে একটি ফ্লোর ও ৩০টি গাড়ি পার্কিং সুবিধা বিনা ভাড়ায় দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী ২০০৭ সালের মধ্যে বহুতল বেসমেন্টসহ তৃতীয় তলার কাজ শেষ হয়। এ সময় ডিসিসি হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেয়, এ বিল্ডিংয়ের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করা হবে ডেভেলপার দিয়ে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভবনটি নির্মাণের জন্য ২০০৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে এমআর ট্রেডিং, সাজেদা এন্টারপ্রাইজ ও সিয়াম করপোরেশন দরপত্র দাখিল করে। দরপত্রের শর্ত ভঙ্গের কারণে প্রথমেই সাজেদা এন্টারপ্রাইজের দরপত্র বাতিল হয়।
ব্যাংক ড্রাফট বা পে অর্ডার বাধ্যতামূলক হলেও দরপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে এমআর ট্রেডিং জমা দেয় ব্যাংক গ্যারান্টি। এ অবস্থায় দরপত্র বাতিল হওয়ার কথা থাকলেও কার্যাদেশ পায় এমআর ট্রেডিং। এ ক্ষেত্রে ডিসিসির ২৫ ভাগ এবং এমআর ট্রেডিংকে ৭৫ ভাগ মালিকানা দেওয়ার চুক্তি করা হয়। এর ফলে এমআর ট্রেডিং পাঁচ লাখ ৭৩ হাজার ৭৫০ বর্গফুট এবং ডিসিসি পায় এক লাখ ৯১ হাজার ২৫০ বর্গফুট জায়গা।
এজাহারে আরো বলা হয়, চুক্তির পর এমআর ট্রেডিং অগ্রিম অর্থ নিয়ে ফ্ল্যাট বিক্রির মাধ্যমেই ভবন তৈরি করছে। তার প্রাপ্ত অংশের বর্তমান বাজারমূল্য এক হাজার ১৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা (প্রতি বর্গফুট ২০ হাজার টাকা করে)। অথচ এসব জায়গা নিজের অর্থায়নে নির্মাণ করলে নির্মাণ ব্যয় বাদে ডিসিসি পেত ৮২৭ কোটি টাকা। ফলে এই অর্থ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে ডিসিসি।
দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক মেয়র ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক খোকার বিরুদ্ধে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আরেকটি মামলা করে দুদক। এ মামলায় বনানীতে সিটি করপোরেশন মার্কেটের কার পার্কিংয়ের স্থান ইজারার ৩৭ লাখ ১৯ হাজার ৯০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। এতে ডিসিসির আরো তিন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়। এ মামলায় সাদেক হোসেন খোকা উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.