ভূ-রাজনীতি-কেমন হবে ওসামা-উত্তর দুনিয়া by পেপে এসকোবার
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জনপ্রিয়তার পালে হাওয়া লেগেছে। তাঁর পুনর্নির্বাচন এখন অনেকটাই নিশ্চিত। বৈশ্বিক ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ (ওয়ার অল টেরর) জয়ের সর্ব-আমেরিকান উচ্ছ্বাসের আবহে তিনি নির্ভার বোধ করতেই পারেন। ‘ওয়ার অল টেরর’ নাম পাল্টে তাঁর প্রশাসন রেখেছে ‘ওভারসিজ কনটিনজেন্সি অপারেশনস’ (ওসিও)।
ওসামা বিন লাদেনকে যে কায়দায় হত্যা করা হলো, তা আসলেই ওসিও—ত্বরিত, বিদেশের মাটিতে ‘গতিশীল সামরিক অ্যাকশনের’ মাধ্যমে নানা অনিশ্চয়তা (যেমন তত্ত্বগতভাবে সার্বভৌম রাষ্ট্রের আকাশসীমা লঙ্ঘনের মতো বিষয়) অতিক্রম করে এগিয়েছে এই অভিযান।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে তাঁর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় আসলে জোর দিতে দেখা গেছে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ অনির্দিষ্টকাল ধরে চলতে থাকার ওপর। তাঁর এই বক্তব্য চেতনাগত জায়গায় পেন্টাগনের ‘দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ’ স্লোগানের প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছে। অত্যন্ত কৌশলগত আফগানিস্তান-পাকিস্তান রণাঙ্গনের ক্ষেত্রে এটা বিশেষভাবে প্রযোজ্য। মনে হয় যেন অন্যের গড়া গোলকধাঁধায় আটকে থাকা ছাড়া যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি ওবামার উপায় নেই।
গোলকধাঁধা থেকে বেরিয়ে আসতে ওয়াশিংটন নাইন-ইলেভেনের ক্ষত নির্মূল করার পথে গেল। জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসন সেই ক্ষত কাজে লাগিয়েছে যা কিছু খারাপ তাকেই হত্যার লাইসেন্স হিসেবে—তা সে খারাপ ব্যক্তিমানুষই হোক কিংবা কোনো অক্ষ; আর এভাবেই দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করেছে জেফারসনীয় স্বাধীনতা। ২০০১-০৮ পর্যন্ত কয়েক বছর এই অতি ক্ষমতাশালী পরাশক্তি এক ঐশ্বরিক মিশনে নেমে নানাভাবে পদদলিত করেছে আন্তর্জাতিক আইন।
মুক্তির পথে যাত্রায় আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধ কেবল প্রথম দুই যাত্রাবিরতির স্থান হওয়ার কথা ছিল (এরপর সেই একই পথে পড়বে দামেস্ক, তেহরান, এমনকি ত্রিপোলিও...)। ‘দ্য গ্রেটার মিডল ইস্ট’ প্রকল্প হিসেবে যাকে অভিহিত করা হয়, তা ‘সন্ত্রাস’ দমন এবং সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক সরকারগুলোকে ধ্বংস করার কথা; সেই অনুযায়ী আফগানিস্তানের তালেবান আর ইরাকের সাদ্দামপন্থীরা। বাদবাকিদের ডোমিনো-প্রভাবে একে একে ভেঙে পড়ার কথা।
নাইন-ইলেভেন হামলার প্রায় এক দশক পেরোনোর পর এবং ওসামাকে ‘জীবিত অথবা মৃত’ ধরতে বুশের প্রতিশ্রুতি অবশেষে টারমিনেটর-কায়দায় বাস্তবায়িত হওয়ায় এখন তবে কোন পথে চলবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র?
দাবার দান কৌশলগতভাবে সম্পূর্ণ উল্টে গেছে। আজকের দিনে যখন সবার জানা যে ২০১৬ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রকে ছাপিয়ে চীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতি হয়ে উঠবে, আর কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের কাছ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ঋণের বোঝায় নিমজ্জিত হচ্ছে, তখন তো অতিকায় পরাশক্তির একক কর্তৃত্ব চালিয়ে যাওয়া কঠিন। তারপর সামরিক বাহিনীর আকার অনেক বড় এবং অন্তহীন ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ (যুক্তরাষ্ট্রের আড়াইখানা যুদ্ধের কথা যদি বাদও দিই) চালাতে যে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় হচ্ছে, তা তো দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রেরই শীর্ষ ব্যাংকার চীন।
যদিও এখনো যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপ্রযুক্তির সৃষ্টিশীলতা অতুলনীয়, তথাপি যুক্তরাষ্ট্রের কোমল ক্ষমতা বা সফট পাওয়ার আর আগের মতো আবেদনময় নয়। আর উন্নয়নশীল দেশগুলোর কেউ ওয়াশিংটন কনসেনসাসের প্রতি আর আস্থা রাখে না।
এখন পর্যন্ত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এর পরিপ্রেক্ষিতে সবচেয়ে লাভবান হচ্ছে চীন। গত ২০ শতকের ১৮টিতেই চীনের অবস্থান ছিল শীর্ষে। আবার সেই শীর্ষবিন্দুর দ্বারপ্রান্তে চীন।
নানা অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারেন ওবামা। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী যুদ্ধ-ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত হওয়া হয়তো সেসবের অন্যতম। কিন্তু তিনি অত্যন্ত ধুরন্ধরও বটে। দেশের ভেতর জরিপ চালিয়েছেন তিনি; দেখেছেন, আমেরিকার অতিমাত্রায় সাম্রাজ্য বিস্তার কীভাবে সাম্রাজ্যের ক্ষয়কেই ত্বরান্বিত করেছে। আরও দেখেছেন, ‘ইসলামি সন্ত্রাসের’ ভূত দেখে এই প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে কীভাবে একেবারে ক্ষয়ে যাচ্ছিল। ওসামাকে কেন এই সময়ে হত্যা করা হলো, সেই জাদুকরি প্রশ্নের উত্তরও হয়তো পাওয়া যাবে এখান থেকে।
টুইন টাওয়ার হামলার সময়টাতে প্রখ্যাত সংগীতপ্রতিভা কার্লহেইঞ্চ স্টকহাউসেন বলেছিলেন, ‘এটা দুনিয়াবাসীর দেখা সবচেয়ে মহত্তম শিল্পকর্ম।’ লাখ লাখ আমেরিকান তাঁর বিরুদ্ধে তখন খেপে ওঠে। তাঁর কথার যৌক্তিকতা ছিল। মানবজাতির সামষ্টিক অচেতনে সেই হামলার প্রভাব ছিল প্রায় বিহ্বলতার পর্যায়ের। আলবার্ট স্পিয়ার ও ল্যানি রিফেনস্থাহলের অসাধারণ সৃষ্টিকর্ম ৯/১১-এর কাছে পর্যবসিত হয়েছে শিশুতোষ নাটকে।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্ম ৯/১১ ঘটার ফলে। এ কারণেই ওবামাকে প্রতীকীভাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হলে অভিযুক্ত অপরাধীকে (আক্ষরিকভাবেই) হত্যা করতেই হতো—তা সে বাস্তবিক অপরাধী হোক বা না হোক, দোষী হোক বা না হোক, কোনো ক্লোন হোক বা না হোক। তাই এই হামলা—ত্বরিত মৃতদেহ সরিয়ে ফেলা, আলোকচিত্র প্রকাশ না করা, টানটান চলচ্চিত্রিক আখ্যান। এই প্লটের পরিষ্কার ছিদ্রগুলো (হলিউডের যেকোনো ব্লকবাস্টারেও যেমন) অপ্রাসঙ্গিক বানিয়ে ফেলা হলো; প্রাসঙ্গিক শুধু বক্স-অফিসে সাফল্য পাওয়া গেল কি না। আর তারপর এগিয়ে চলা।
ওবামা সাব্যস্ত করলেন, প্রতিপক্ষকে একদম মেরে ফেলা নতুন করে যাত্রা শুরুর একমাত্র পথ। আফগানিস্তান ও ইরাকে যুদ্ধাবসান ঘটানো এবং যুক্তরাষ্ট্রের বড় উদ্বেগের জায়গা—শিক্ষা ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগ, অর্থনীতির করুণ দশা প্রভৃতির ওপর মনোযোগ দেওয়ার জন্য চেষ্টায়ও যা দরকারি। ওবামার ‘দাওয়াই’ কাজে দেবে, এর তো কোনো নিশ্চয়তা নেই।
ওবামার দাওয়াই বিরাট সব বৈপরীত্যের মুখে পড়বে। একদিকে ড্রোন হামলায় পাকিস্তানি উপজাতীয় এলাকায় নিহত হয় বেসামরিক ব্যক্তিরা, অন্যদিকে ন্যাটোর ‘মানবিক’ যুদ্ধ লিবিয়ায় হত্যা করে চলেছে বেসামরিক নাগরিকদের। বাহরাইনে ভয়ানক দমন-পীড়নের ভেতর মানবিক যুদ্ধ-ব্যবসায়ীরা নীরব, আর পারস্য উপসাগরজুড়ে সৌদ পরিবার গণতন্ত্রবিরোধী প্রতিবিপ্লব ঘটিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে।
ওসামা কিংবা মুয়াম্মার গাদ্দাফির ক্ষেত্রে যদি তাদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার কূটনীতি নেওয়া হয়, তাহলে মিয়ানমারের ভয়ংকর স্বৈরশাসক কিংবা উজবেকিস্তানের ইসলাম কারিমভ কেন নয়? তদুপরি, পেন্টাগন তার ‘দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ’ চিরকাল ধরে জারি রাখতে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই চালিয়ে যাবে।
বারাক ওবামা সবেমাত্র এক নতুন, ওসামা-উত্তর পৃথিবীকে ‘পরিশোধন’ করলেন। এবার তবে দেখা যাক আমেরিকা কী করে আর কী না করে।
এশিয়া টাইমস অনলাইন থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাুদ: আহসান হাবীব
পেপে এসকোবার: ব্রাজিলীয় সাংবাদিক।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে তাঁর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় আসলে জোর দিতে দেখা গেছে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ অনির্দিষ্টকাল ধরে চলতে থাকার ওপর। তাঁর এই বক্তব্য চেতনাগত জায়গায় পেন্টাগনের ‘দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ’ স্লোগানের প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছে। অত্যন্ত কৌশলগত আফগানিস্তান-পাকিস্তান রণাঙ্গনের ক্ষেত্রে এটা বিশেষভাবে প্রযোজ্য। মনে হয় যেন অন্যের গড়া গোলকধাঁধায় আটকে থাকা ছাড়া যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি ওবামার উপায় নেই।
গোলকধাঁধা থেকে বেরিয়ে আসতে ওয়াশিংটন নাইন-ইলেভেনের ক্ষত নির্মূল করার পথে গেল। জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসন সেই ক্ষত কাজে লাগিয়েছে যা কিছু খারাপ তাকেই হত্যার লাইসেন্স হিসেবে—তা সে খারাপ ব্যক্তিমানুষই হোক কিংবা কোনো অক্ষ; আর এভাবেই দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করেছে জেফারসনীয় স্বাধীনতা। ২০০১-০৮ পর্যন্ত কয়েক বছর এই অতি ক্ষমতাশালী পরাশক্তি এক ঐশ্বরিক মিশনে নেমে নানাভাবে পদদলিত করেছে আন্তর্জাতিক আইন।
মুক্তির পথে যাত্রায় আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধ কেবল প্রথম দুই যাত্রাবিরতির স্থান হওয়ার কথা ছিল (এরপর সেই একই পথে পড়বে দামেস্ক, তেহরান, এমনকি ত্রিপোলিও...)। ‘দ্য গ্রেটার মিডল ইস্ট’ প্রকল্প হিসেবে যাকে অভিহিত করা হয়, তা ‘সন্ত্রাস’ দমন এবং সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক সরকারগুলোকে ধ্বংস করার কথা; সেই অনুযায়ী আফগানিস্তানের তালেবান আর ইরাকের সাদ্দামপন্থীরা। বাদবাকিদের ডোমিনো-প্রভাবে একে একে ভেঙে পড়ার কথা।
নাইন-ইলেভেন হামলার প্রায় এক দশক পেরোনোর পর এবং ওসামাকে ‘জীবিত অথবা মৃত’ ধরতে বুশের প্রতিশ্রুতি অবশেষে টারমিনেটর-কায়দায় বাস্তবায়িত হওয়ায় এখন তবে কোন পথে চলবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র?
দাবার দান কৌশলগতভাবে সম্পূর্ণ উল্টে গেছে। আজকের দিনে যখন সবার জানা যে ২০১৬ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রকে ছাপিয়ে চীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতি হয়ে উঠবে, আর কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের কাছ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ঋণের বোঝায় নিমজ্জিত হচ্ছে, তখন তো অতিকায় পরাশক্তির একক কর্তৃত্ব চালিয়ে যাওয়া কঠিন। তারপর সামরিক বাহিনীর আকার অনেক বড় এবং অন্তহীন ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ (যুক্তরাষ্ট্রের আড়াইখানা যুদ্ধের কথা যদি বাদও দিই) চালাতে যে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় হচ্ছে, তা তো দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রেরই শীর্ষ ব্যাংকার চীন।
যদিও এখনো যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপ্রযুক্তির সৃষ্টিশীলতা অতুলনীয়, তথাপি যুক্তরাষ্ট্রের কোমল ক্ষমতা বা সফট পাওয়ার আর আগের মতো আবেদনময় নয়। আর উন্নয়নশীল দেশগুলোর কেউ ওয়াশিংটন কনসেনসাসের প্রতি আর আস্থা রাখে না।
এখন পর্যন্ত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এর পরিপ্রেক্ষিতে সবচেয়ে লাভবান হচ্ছে চীন। গত ২০ শতকের ১৮টিতেই চীনের অবস্থান ছিল শীর্ষে। আবার সেই শীর্ষবিন্দুর দ্বারপ্রান্তে চীন।
নানা অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারেন ওবামা। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী যুদ্ধ-ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত হওয়া হয়তো সেসবের অন্যতম। কিন্তু তিনি অত্যন্ত ধুরন্ধরও বটে। দেশের ভেতর জরিপ চালিয়েছেন তিনি; দেখেছেন, আমেরিকার অতিমাত্রায় সাম্রাজ্য বিস্তার কীভাবে সাম্রাজ্যের ক্ষয়কেই ত্বরান্বিত করেছে। আরও দেখেছেন, ‘ইসলামি সন্ত্রাসের’ ভূত দেখে এই প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে কীভাবে একেবারে ক্ষয়ে যাচ্ছিল। ওসামাকে কেন এই সময়ে হত্যা করা হলো, সেই জাদুকরি প্রশ্নের উত্তরও হয়তো পাওয়া যাবে এখান থেকে।
টুইন টাওয়ার হামলার সময়টাতে প্রখ্যাত সংগীতপ্রতিভা কার্লহেইঞ্চ স্টকহাউসেন বলেছিলেন, ‘এটা দুনিয়াবাসীর দেখা সবচেয়ে মহত্তম শিল্পকর্ম।’ লাখ লাখ আমেরিকান তাঁর বিরুদ্ধে তখন খেপে ওঠে। তাঁর কথার যৌক্তিকতা ছিল। মানবজাতির সামষ্টিক অচেতনে সেই হামলার প্রভাব ছিল প্রায় বিহ্বলতার পর্যায়ের। আলবার্ট স্পিয়ার ও ল্যানি রিফেনস্থাহলের অসাধারণ সৃষ্টিকর্ম ৯/১১-এর কাছে পর্যবসিত হয়েছে শিশুতোষ নাটকে।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্ম ৯/১১ ঘটার ফলে। এ কারণেই ওবামাকে প্রতীকীভাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হলে অভিযুক্ত অপরাধীকে (আক্ষরিকভাবেই) হত্যা করতেই হতো—তা সে বাস্তবিক অপরাধী হোক বা না হোক, দোষী হোক বা না হোক, কোনো ক্লোন হোক বা না হোক। তাই এই হামলা—ত্বরিত মৃতদেহ সরিয়ে ফেলা, আলোকচিত্র প্রকাশ না করা, টানটান চলচ্চিত্রিক আখ্যান। এই প্লটের পরিষ্কার ছিদ্রগুলো (হলিউডের যেকোনো ব্লকবাস্টারেও যেমন) অপ্রাসঙ্গিক বানিয়ে ফেলা হলো; প্রাসঙ্গিক শুধু বক্স-অফিসে সাফল্য পাওয়া গেল কি না। আর তারপর এগিয়ে চলা।
ওবামা সাব্যস্ত করলেন, প্রতিপক্ষকে একদম মেরে ফেলা নতুন করে যাত্রা শুরুর একমাত্র পথ। আফগানিস্তান ও ইরাকে যুদ্ধাবসান ঘটানো এবং যুক্তরাষ্ট্রের বড় উদ্বেগের জায়গা—শিক্ষা ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগ, অর্থনীতির করুণ দশা প্রভৃতির ওপর মনোযোগ দেওয়ার জন্য চেষ্টায়ও যা দরকারি। ওবামার ‘দাওয়াই’ কাজে দেবে, এর তো কোনো নিশ্চয়তা নেই।
ওবামার দাওয়াই বিরাট সব বৈপরীত্যের মুখে পড়বে। একদিকে ড্রোন হামলায় পাকিস্তানি উপজাতীয় এলাকায় নিহত হয় বেসামরিক ব্যক্তিরা, অন্যদিকে ন্যাটোর ‘মানবিক’ যুদ্ধ লিবিয়ায় হত্যা করে চলেছে বেসামরিক নাগরিকদের। বাহরাইনে ভয়ানক দমন-পীড়নের ভেতর মানবিক যুদ্ধ-ব্যবসায়ীরা নীরব, আর পারস্য উপসাগরজুড়ে সৌদ পরিবার গণতন্ত্রবিরোধী প্রতিবিপ্লব ঘটিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে।
ওসামা কিংবা মুয়াম্মার গাদ্দাফির ক্ষেত্রে যদি তাদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার কূটনীতি নেওয়া হয়, তাহলে মিয়ানমারের ভয়ংকর স্বৈরশাসক কিংবা উজবেকিস্তানের ইসলাম কারিমভ কেন নয়? তদুপরি, পেন্টাগন তার ‘দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ’ চিরকাল ধরে জারি রাখতে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই চালিয়ে যাবে।
বারাক ওবামা সবেমাত্র এক নতুন, ওসামা-উত্তর পৃথিবীকে ‘পরিশোধন’ করলেন। এবার তবে দেখা যাক আমেরিকা কী করে আর কী না করে।
এশিয়া টাইমস অনলাইন থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাুদ: আহসান হাবীব
পেপে এসকোবার: ব্রাজিলীয় সাংবাদিক।
No comments