বিশ্বমন্দা ও প্রধানমন্ত্রীর শান্তি পদক by এম এ নোমান
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) আওতায় বাংলাদেশকে দেয়া খাদ্য সহায়তা শতকরা আশি শতাংশ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ডব্লিউএফপির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানিয়েছে, চলমান বিশ্বমন্দার কারণে ডব্লিউএফপি নিজেই এখন সঙ্কটে পড়েছে।
ফলে বাংলাদেশকে দেয়া খাদ্য সহায়তা আগের মতো অব্যাহত রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কয়েক মাস আগে খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দিয়েছিলেন। বিশ্বমন্দায় ফান্ড ক্রাইসিসের কারণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সেবা সংস্থা ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাও তাদের কর্মসূচি গুটিয়ে এনেছে। বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিসহ নানা ধরনের উন্নয়ন কর্মসূচিতে যে পরিমাণ অর্থ সহায়তা দাতা সংস্থাসহ শিল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে দেয়া হতো, তাও এখন মোটামুটি বন্ধের পথে। এক্ষেত্রে দাতা সংস্থাগুলো বিশ্বমন্দার কথাই বলছে। মোট কথা, বিশ্বমন্দার প্রভাব সবকিছুতেই পড়েছে।
বিশ্বমন্দার প্রভাবের শিকার আমি নিজেও। এনভায়রনমেন্টাল ডাইরেক্টরি থেকে ওয়েব অ্যাড্রেস নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন ও সংস্থার সঙ্গে ইন্টারনেটে যোগাযোগ ছিল। ওই সূত্র ধরেই কানাডার নিউ ব্রান্সউইক প্রভিন্সের চেকভ্যালি মাউন এলিসান ইউনিভার্সিটি থেকে ‘ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড ওয়াটার বার্ডস’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের জন্য একটি প্রবন্ধ লেখার আমন্ত্রণ পাই। সে অনুযায়ী ওয়াটার বার্ডস : বাংলাদেশ পারসপেক্টিভ’ শিরোনামে একটি পেপার প্রস্তুত করে পাঠাই। বাংলাদেশ থেকে পাঠানো প্রবন্ধগুলো থেকে আমারটিই গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যা তাদের সম্মেলন স্মারকে প্রকাশ করে এবং আমাকে প্রবন্ধ উপস্থাপনের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। আশা-যাওয়ার বিমান ভাড়া, থাকা-খাওয়া, ফিল্ডট্রিপ, পকেট খরচসহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দেয়া সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেই আমি ২০০৩ সালে ১ আগস্ট থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত কানাডা সফর সম্পন্ন করি। ওই সম্মেলনের সূত্র ধরেই গত বছর মাঝামাঝি সময়ে আমেরিকার ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং অ্যান্ড সল্ট ওয়াটার ইন্ট্রুশন’ শীর্ষক সম্মেলনের জন্য একটি প্রবন্ধ পাঠানোর আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমি অনেক পরিশ্রম ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ করে ‘সল্ট ওয়াটার ইন্ট্রুশন : বাংলাদেশ পারসপেকটিভ’ শীর্ষক একটি নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ পাঠাই। বাংলাদেশ থেকে পাঠানো ৫টি প্রবন্ধের সঙ্গে আমারটিও গ্রহণ করা হয়। এটিও বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালে প্রকাশ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণপত্র অনুযায়ী আমেরিকার মাল্টিপল ভিসাও করি। ভিসা গ্রহণের পর আমেরিকা যাওয়ার যখন প্রস্তুতি নিচ্ছি, ঠিক সে মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানাল যে, ফ্লোরিডার নেপলস বিচ হোটেলে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা গেছে। তবে ফান্ড ক্রাইসিসের কারণে আসা-যাওয়ার এয়ার টিকিটের খরচ প্রোভাইড করা সম্ভব হচ্ছে না। নিজের উদ্যোগে ফান্ড সংগ্রহ করে যদি আসতে পার, তবে আমরা স্বাগত জানাব। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ চিঠিতে সেই বিশ্বমন্দার প্রভাবের কথাই ফুটে উঠল। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, আমার মতো অপর যারা ওই সম্মেলনে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তাদের সবারই একই অবস্থা। এরপর নরওয়ে ও আফ্রিকার দুটি পরিবেশবাদী সংগঠন থেকেও আমন্ত্রণ পেয়েছি। তারাও বিশ্বমন্দার কথা উল্লেখ করে ফান্ড ক্রাইসিসের কারণে যাতায়াত খরচ দিতে অপারগতা প্রকাশ করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের দেশের শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রিসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকে সর্বমোট ১৭টি পদক পেয়েছেন বলে গণমাধ্যমের বদৌলতে জানতে পেরেছি। এর মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের কৃষি সংস্থার দেয়া এফএও পদক। এ পদক পাওয়ার পর ওই সময়ে প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক ইত্তেফাকে শিরোনাম ছিল ‘প্রধানমন্ত্রীর ফাও পদক লাভ’। রিপোর্ট প্রকাশের দিন এ নিয়ে ব্যাপক হাস্যরসের সৃষ্টি হলে পরদিন একই রিপোর্ট ‘প্রধানমন্ত্রীর এফএও পদক লাভ’ শিরোনামে প্রকাশ করা হয়। কথাগুলো বললাম এ জন্য যে, ওই সময় বিশ্বের অর্থনীতি ছিল বেশ চাঙ্গা। এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী মোট ১৭টি ডক্টরেট ডিগ্রি ও পদক পেয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার এক বছর পার হলেও তিনি কোনো পদক কিংবা ডক্টরেট ডিগ্রি পাননি। আমার মনে একটি বদ্ধমূল ধারণা জন্মেছিল যে, প্রধানমন্ত্রী মনে হয় আমার মতোই বিশ্বমন্দার কবলে পড়েছেন। অবশেষে এক বছর ৮ দিন পার হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে প্রথম পদক পেলেন শেখ হাসিনা। তিনি সম্প্রতি ভারত সফরে গেলে সেদেশের রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল তাকে ইন্দিরা গান্ধী শান্তিপদকে ভূষিত করেন। ভারতে বসেই প্রধানমন্ত্রী ওই পদকের প্রাইজমানি বঙ্গবন্ধু কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণে ব্যয় করার ঘোষণা দিয়েছেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে ১৭টি পদক ও ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন তিনি। সে হিসেবে এবারের এক বছরের শাসনামলে তিনি কম করে হলেও তিনটি পদক বা ডক্টরেট ডিগ্রি পাওয়ার কথা ছিল। প্রথম বছরে কোনো পদক না পেলেও দ্বিতীয় বছরে পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একটি পদক পেয়েছেন। কাজেই বিশ্বমন্দার বিরূপ প্রভাব প্রধানমন্ত্রীর পদক প্রাপ্তির ক্ষেত্রে পড়েছে বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে। আমার এক সহকর্মী জানালেন, ভারত দখল করে নেয়ার আগে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র সিকিমের তত্কালীন রাষ্ট্র প্রধান মি. লেন্দুপ দর্জীকেও ভারত সরকার এ ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদকে ভূষিত করেছিল।
nomansalimbd@yahoo.com
No comments